০০৭. সূরা
আল আ’রাফ
আয়াতঃ ২০৬; রুকুঃ ২৪; মাক্কী
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে
﴿المص﴾
১। আলিফ,লাম,মীম, ছোয়াদ।
﴿كِتَابٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ
فَلَا يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ﴾
২। এটি
তোমার প্রতি নাযিল করা একটি কিতাব।১ কাজেই তোমার মনে যেন এর
সম্পর্কে কোন সংকোচ না থাকে।২ এটি নাযিল করার উদ্দেশ্য
হচ্ছে, এর মাধ্যমে
তুমি (অস্বীকারকারীদেরকে)ভয় দেখাবে এবং
মুমিনদের জন্যে এটি হবে একটি স্মারক।৩
﴿اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم
مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا مَّا
تَذَكَّرُونَ﴾
৩। হে মানব
সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু
নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদের
অনুসরণ করো না।৪ কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ
মেনে থাকো।
﴿وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا
فَجَاءَهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا أَوْ هُمْ قَائِلُونَ﴾
৪। কত জনপদ
আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের
ওপর আমার আযাব অকস্মাত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাতের বলা অথবা দিনের বেলা যখন তারা
বিশ্রামরত ছিল।
﴿فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ
إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا إِلَّا أَن قَالُوا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ﴾
৫। আর যখন
আমার আযাব তাদের ওপর আপতিত হয়েছিল তখন তাদের মুখে এ ছাড়া আর কোন কথাই ছিল না যে, সত্যিই আমরা জালেম ছিলাম।৫
﴿فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ
أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ﴾
৬। কাজেই
যাদের কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি তাদেরকে অবশ্যি জিজ্ঞাসাবাদ করবো।৬ এবং রাসূলকেও জিজ্ঞাসা করবো (তারা
পয়গাম পৌছিয়ে দেবার দায়িত্ব কতটুকু সম্পাদন করেছে এবং এর কি জবাব পেয়েছে)৭
﴿فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم
بِعِلْمٍ ۖ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ﴾
৭। তারপর
আমি নিজেই পূর্ণ জ্ঞান সহকারে সমুদয় কার্যাবিবরণী তাদের সামনে পেশ করবো। আমি তো
আর সেখানে অনুপস্থিত ছিলাম না!
﴿وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ ۚ فَمَن
ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
৮। আর ওজন
হবে সেদিন যথার্থ সত্য।৮
﴿وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ
فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ﴾
৯। যাদের
পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা নিজেরাই হবে
নিজেদের ক্ষতি সাধনকারী।৯ কারণ তারা আমার আয়াতের সাথে
জালেম সূলভ আচরণ চালিয়ে গিয়েছিল।
﴿وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ فِي
الْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ﴾
১০। তোমাদেরকে
আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার সহকারে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এবং
তোমাদের জন্যে এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করেছি।কিন্তু
তোমরা খুব কমই শোকর গুজারী করে থাকো।
﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ
صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا
إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ﴾
১১। আমি
তোমাদের সৃষ্টির সূচনা করলাম তারপর তোমাদের আকৃতি দান করলাম অতপর ফেরেশতাদের
বললাম,আদমকে
সিজদা করো।১০ এ নির্দেশ অনুযায়ী সবাই সিজদা
করলো। কিন্তু ইবলীস সিজদাকারীদের
অন্তরভুক্ত হলো না।
﴿قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا
تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن
نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ﴾
১২। আল্লাহ
জিজ্ঞেস করলেন, “আমি যখন তোকে হুকুম দিয়েছিলাম তখন সিজদা করতে তোকে
বাধা দিয়েছিল কিসে”?সে জবাব
দিলঃ “আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আমাকে
আগুন থেকে সৃষ্টি করেছো এবং ওকে সৃষ্টি করেছো মাটি থেকে”।
﴿قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا
فَمَا يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ﴾
১৩। তিনি
বললেনঃ “ঠিক আছে, তুই এখান থেকে নীচে নেমে যা। এখানে
অহংকার করার অধিকার তোর নেই। বের হয়ে
যা। আসলে তুই এমন লোকদের অন্তরভুক্ত, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে
লাঞ্ছিত করতে চায়”।১১
﴿قَالَ أَنظِرْنِي إِلَىٰ
يَوْمِ يُبْعَثُونَ﴾
১৪। সে বললঃ “আমাকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যখন এদের সবাইকে পুনর্বার ওঠানো হবে”।
﴿قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ﴾
১৫। তিনি
বললেনঃ “তোকে অবকাশ দেয়া হলো”।
﴿قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي
لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ﴾
১৬। সে
বললোঃ “তুমি যেমন আমাকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করছো
তেমনি আমি ও এখন তোমার সরল-সত্য পথে এ লোকদের জন্যে ওঁত পেতে বসে থাকবো,১২
﴿ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن
بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا
تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ﴾
১৭। সামনে-পেছনে, ডাইনে-বাঁয়ে, সবদিক থেকে এদেরকে ঘিরে ধরবো
এবং এদের অধিকাংশকে তুমি শোকর গুজার পাবে না”।
﴿قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا
مَّدْحُورًا ۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ
أَجْمَعِينَ﴾
১৮। আল্লাহ
বললেনঃ “বের হয়ে যা এখান থেকে লাঞ্ছিত ও ধিকৃত অবস্থায়। নিশ্চিতভাবে
জেনে রাখিস, এদের মধ্য
থেকে যারাই তোর অনুসরণ করবে তাদেরকে এবং তোকে দিয়ে আমি জাহান্নাম ভরে দেবো।
﴿وَيَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ
وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ الشَّجَرَةَ
فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ﴾
১৯। আর হে
আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী তোমরা দুজনাই এ জান্নাতে
থাকো। যেখানে যা তোমাদের
ইচ্ছা হয় খাও,কিন্তু এ গাছটির কাছে যেয়ো না, অন্যথায় তোমরা জালেমদের
অন্তরভূক্ত হয়ে যাবে”।
﴿فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ
لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِن سَوْآتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا
رَبُّكُمَا عَنْ هَٰذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا
مِنَ الْخَالِدِينَ﴾
২০। তারপর
তাদের লজ্জাস্থান,যা তাদের পরষ্পর থেকে গোপন রাখা হয়েছিল, তাদের সামনে উন্মুক্ত করে
দেবার জন্যে শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল। সে
তাদেরকে বললোঃ “তোমাদের রব যে, তোমাদের এ গাছটির কাছে যেতে
নিষেধ করেছেন তার পেছনে এ ছাড়া আর কোন কারণই নেই যে, পাছে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাও
অথবা তোমরা চিরন্তন জীবনের অধিকারী হয়ে পড়ো”।
﴿وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا
لَمِنَ النَّاصِحِينَ﴾
২১। আর সে
কসম খেয়ে তাদেরকে বললো, আমি তোমাদের যথার্থ কল্যাণকামী।
﴿فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ ۚ فَلَمَّا
ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا
مِن وَرَقِ الْجَنَّةِ ۖ وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَا أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَن
تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَا إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِينٌ﴾
২২। এভাবে
প্রতারণা করে সে তাদের দুজনকে ধীরে ধীরে নিজের পথে নিয়ে এলো। অবশেষে
যখন তারা সেই গাছের ফল আস্বাদন করলো, তাদের লজ্জা স্থান পরস্পরের
সামনে খুলে গেলো এবং তারা নিজেদের শরীর ঢাকতে লাগলো জান্নাতের পাতা দিয়ে।তখন তাদের
রব তাদেরকে ডেকে বললোঃ “আমি কি তোমাদের এ গাছটির কাছে
যেতে নিষেধ করিনি এবং তোমাদের বলিনি যে,শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য
শত্রু”?
﴿قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا
أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾
২৩। তারা
দুজন বলে উঠলোঃ “হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। এখন যদি
তুমি আমাদের ক্ষমা না করো, এবং আমাদের প্রতি রহম না করো, তাহলে নিসন্দেহে আমরা ধ্বংস
হয়ে যাবো।”১৩
﴿قَالَ اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ
لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ
حِينٍ﴾
২৪। তিনি বললেনঃ “নেমে যাও,১৪ তোমরা পরষ্পরের শত্রু এবং
তোমাদের জন্য একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত পৃথিবীতেই রয়েছে বসবাসের জায়গা ও জীবন
যাপনের উপকরণ।”
﴿قَالَ فِيهَا تَحْيَوْنَ
وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ﴾
২৫। আর
বললেনঃ “সেখানেই তোমাদের জীবন যাপন করতে এবং সেখানেই
মরতে হবে এবং সেখান থেকেই তোমাদের সবশেষে আবার বের করে আনা হবে।”
﴿يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا
عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ
ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ﴾
২৬। হে বনী
আদম!১৫ তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার
এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য
পোশাক নাযিল করেছি। আর
তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। এই
আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
﴿يَا بَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ
الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا
لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا ۗ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ
لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ
لَا يُؤْمِنُونَ﴾
২৭। হে বনী
আদম! শয়তান যেন তোমাদের আবার ঠিক তেমনিভাবে
বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ না করে যেমনভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে
বের করেছিল এবং তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেবার জন্যে তাদেরকে
বিবস্ত্র করেছিল। সে ও তার
সাথীরা তোমাদেরকে এমন জায়গা থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। এ
শয়তানদেরকে আমি যারা ঈমান আনে না তাদের অভিভাবক করে দিয়েছি।১৬
﴿وَإِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً
قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا ۗ قُلْ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ ۖ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ
مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
২৮। তারা যখন
কোন অশ্লিল কাজ করে তখন বলে, আমাদের বাপ-দাদারদেকে আমরা এভাবেই করতে
দেখেছি এবং আল্লাহই আমাদের এমনটি করার হুকুম দিয়েছেন।১৭ তাদেরকে বলে দাও আল্লাহ কখনো
নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার হুকুম দেন না।১৮ তোমরা কি আল্লাহর নাম নিয়ে
এমন কথা বলো যাকে তোমরা আল্লাহর কথা বলে জানো না?
﴿قُلْ أَمَرَ رَبِّي بِالْقِسْطِ ۖ وَأَقِيمُوا
وُجُوهَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَادْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ۚ كَمَا
بَدَأَكُمْ تَعُودُونَ﴾
২৯। হে
মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও আমার রব তো সততা ও ইনসাফের
হুকুম দিয়েছেন।তাঁর হুকুম হচ্ছে, প্রত্যেক ইবাদত নিজের লক্ষ্য
ঠিক রাখো এবং নিজের দীনকে একান্তভাবে তাঁর জন্য করে নিয়ে তাঁকেই ডাকো। যেভাবে
তিনি এখান তোমাদের সৃষ্টি করেছেন ঠিক তেমনিভাবে তোমাদের আবার সৃষ্টি করা হবেও১৯
﴿فَرِيقًا هَدَىٰ وَفَرِيقًا
حَقَّ عَلَيْهِمُ الضَّلَالَةُ ۗ إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ
مِن دُونِ اللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ﴾
৩০। একটি
দলকে তিনি সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অন্য দলটির ওপর গোমরাহী সত্য হয়ে চেপেই
বসেছে। কারণ তারা আল্লাহকে
বাদ দিয়ে শয়তানদেরকে নিজেদের অভিভাবকে পরিণত করেছে এবং তারা মনে করছে, আমরা সঠিক পথেই আছি।
﴿يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ
عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا
يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ﴾
৩১। হে বনী
আদম! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে
সজ্জিত হও।২০ আর খাও ও পান করো কিন্তু
সীমা অতিক্রম করে যেয়ো না, আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন
না।২১
﴿قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ
اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ ۚ قُلْ
هِيَ لِلَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ كَذَٰلِكَ
نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ﴾
৩২। হে
মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে
যেসব সৌন্দর্য সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো কে হারাম করেছে? আর আল্লাহর দেয়া পবিত্র
জিনিসগুলো কে নিষিদ্ধ করেছে?২২ বলো, দুনিয়ার জীবনেও এ সমস্ত জিনিস
ঈমানদাদের জন্যে, আর
কিয়ামতের দিনে এগুলো তো একান্তাভাবে তাদেরই জন্যে হবে।২৩ এভাবে যারা জ্ঞানের অধিকারী
তাদের জন্যে আমার কথাগুলো আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বর্ণনা করে থাকি।
﴿قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ
الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ
وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى
اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
৩৩। হে
মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহ যেসব জিনিস হারাম
করেছেন সেগুলো হচ্ছেঃ প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা,২৪ গোনাহ,২৫ সত্যের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি২৬ আল্লাহর সাথে তোমাদের কাউকে
শরীক করা যার স্বপক্ষে তিনি কোন সনদ পাঠাননি এবং আল্লাহর নামে তোমাদের এমন কোন
কথা বলা, যা মূলত
তিনি বলেছেন বলে তোমাদের জানা নেই।
﴿وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۖ فَإِذَا
جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ﴾
৩৪। প্রত্যেক
জাতির জন্য অবকাশের একটি সময় নির্দিষ্ট রয়েছে। তারপর
যখন কোন জাতির সময় পূর্ণ হয়ে যাবে তখন এক মুহূর্তকালের জন্যেও তাকে বিলম্বিত বা
ত্বরান্বিত করা হবে না।২৭
﴿يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ
رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي ۙ فَمَنِ اتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ
فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾
৩৫। (আর
সৃষ্টির সূচনাপূর্বেই আল্লাহ একথা পরিষ্কার বলে দিয়েছেনঃ) হে বনী
আদম! মনে রেখো, যদি তোমাদের কাছে তোমাদের
মধ্য থেকে কোন রাসূল এসে তোমাদেরকে আমার আয়াত শুনাতে থাকে, তাহলে যে ব্যক্তি আমার
নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকবে এবং নিজের কর্মনীতির সংশোধন করে নেবে, তার কোন ভয় এবং দুঃখের কারণ
নেই।
﴿وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا
وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
৩৬। আর যারা
আমার আয়াতকে মিথ্যা বলবে এবং তার সাথে বিদ্রোহত্মাক আচরণ করবে, তারাই হবে জাহান্নামের
অধিবাসী, সেখানে
থাকবে তারা চিরকাল।২৮
﴿فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ
افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۚ أُولَٰئِكَ يَنَالُهُمْ
نَصِيبُهُم مِّنَ الْكِتَابِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ
قَالُوا أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ قَالُوا ضَلُّوا
عَنَّا وَشَهِدُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا كَافِرِينَ﴾
৩৭। একথা
সুস্পষ্ট, যে ব্যক্তি
ডাহা মিথ্যা কথা বানিয়ে আল্লাহর কথা হিসেবে প্রচার করে অথবা আল্লাহর সত্য আয়াত
সমূহকে মিথ্যা বলে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে? এ ধরনের লোকেরা নিজেদের
তকদীরের লিখন অনুযায়ী তাদের অংশ পেতে থাকবে২৯ অবশেষে সেই সময় উপস্থিত হবে
যখন আমার পাঠানো ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করার জন্যে তাদের কাছে এসে যাবে। সে সময়
তারা (ফেরেশতারা) তাদেরকে
জিজ্ঞেস করবে, বলো এখন তোমাদের সেই মাবুদরা কোথায়, যাদেরকে তোমরা ডাকতে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে? তারা বলবে, সবাই আমাদের কাছ থেকে
অন্তর্হিত হয়ে গেছে এবং তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, বাস্তবিক পক্ষেই তারা সত্য
অস্বীকারকারী ছিল।
﴿قَالَ ادْخُلُوا فِي أُمَمٍ
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ فِي النَّارِ ۖ كُلَّمَا
دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا ۖ حَتَّىٰ إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا
جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَٰؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآتِهِمْ
عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ ۖ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ﴾
৩৮। আল্লাহ
বলবেনঃ যাও, তোমরাও
সেই জাহান্নামে চলে যাও, যেখানে চলে গেছে তোমাদের পূর্বের অতিক্রান্ত জিন ও
মানবগোষ্ঠী। প্রত্যেকটি দলই নিজের
পূর্ববর্তী দলের প্রতি অভিসম্পাত করতে করতে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অবশেষে
যখন সবাই সেখানে একত্র হয়ে যাবে তখন পরবর্তী প্রত্যেকটি দল পূর্ববর্তী দলের
ব্যাপারে বলবে, হে আমাদের রব! এরাই
আমাদের গোমরাহ করেছে, কাজেই এদেরকে আগুনের দ্বিগুণ শাস্তি দাও। জওয়াবে
বলা হবে, প্রত্যেকের
জন্য দ্বিগুণ শাস্তিই রয়েছে কিন্তু তোমরা জানো না।৩০
﴿وَقَالَتْ أُولَاهُمْ لِأُخْرَاهُمْ
فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ﴾
৩৯। প্রথম
দলাটি দ্বিতীয় দলকে বলবেঃ (যদি আমরা দোষী হয়ে থাকি) তাহলে তোমরা কোন দিক দিয়ে আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ছিলে? এখন নিজেদের কৃতকর্মের
ফলস্বরূপ আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো।৩১
﴿إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا
بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا
يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ
نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ﴾
৪০। নিশ্চিতভাবে
জেনে রাখো, যারা আমার আয়াত
সমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, তাদের জন্য কখনো আকাশের দরজা
খুলবে না। তাদের জান্নাতে প্রবেশ এমনই
অসম্ভব ব্যাপার যেমন সূঁচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করানো। অপরাধীরা
আমার কাছে এভাবেই বদলা পেয়ে থাকে।
﴿لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌ
وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ﴾
৪১। তাদের
জন্য বিছানাও হবে জাহান্নামের এবং ওপরের আচ্ছাদনও হবে জাহান্নামের। এ
প্রতিফল আমি জালেমদেরকে দিয়ে থাকি।
﴿وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا
الصَّالِحَاتِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ
فِيهَا خَالِدُونَ﴾
৪২। অন্যদিকে
যারা আমার আয়াত মেনে নিয়েছে এবং সৎকাজ করেছে-আর এ পর্যায়ে
আমি কাউকে তার সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করি না-তারা হচ্ছে জান্নাতবাসী। সেখানে
তারা থাকবে চিরকাল।
﴿وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم
مِّنْ غِلٍّ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ ۖ وَقَالُوا الْحَمْدُ
لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا
اللَّهُ ۖ لَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ ۖ وَنُودُوا
أَن تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
৪৩। তাদের
মনে পরষ্পরের বিরুদ্ধে যা কিছু গ্লানি থাকবে তা আমি বের করে দেবো।৩২ তাদের নিম্নদেশে ঝরণাধারা
প্রবাহিত হবে এবং তারা বলবেঃ “প্রশংসা সব আল্লাহরই
জন্য, যিনি
আমাদের এ পথ দেখিয়েছেন। আমরা
নিজেরা পথের সন্ধান পেতাম না যদি না আল্লাহ আমাদের পথ দেখাতেন্ আমাদের রবের
পাঠানো রাসূলগণ যথার্থ সত্য নিয়েই এসেছিলেন।” সে সময়
আওয়াজ ধ্বনিত হবেঃ “তোমাদেরকে এই যে জান্নাতের
উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে, এটা তোমরা লাভ করেছো সেই সমস্ত কাজের
প্রতিদানে যেগুলো তোমরা অব্যাহতভাবে করতে।”৩৩
﴿وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ
أَصْحَابَ النَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم
مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ۖ قَالُوا نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ
بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ﴾
৪৪। তারপর
জান্নাতের অধিবাসীরা জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে ডেকে বলবেঃ “আমাদের রব আমাদের সাথে যে সমস্ত ওয়াদা করেছিলেন তার সবগুলোকেই আমরা সঠিক
পেয়েছি, তোমাদের
রব যেসব ওয়াদা করেছিলেন, তোমরাও কি সেগুলোকে সঠিক পেয়েছো?৩৪
﴿الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن
سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِالْآخِرَةِ كَافِرُونَ﴾
৪৫। তারা জবাবে
বলবেঃ “হাঁ”, তখন একজন ঘোষণাকারী তাদের
মধ্য ঘোষণা করবেঃ “আল্লাহর লানত সেই জালেমদের ওপর, যারা মানুষকে আল্লাহর পথে
চলতে বাধা দিতো এবং তাকে বাঁকা করে দিতে চাইতো আর তারা ছিল আখেরাত অস্বীকারকারী।”
﴿وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ ۚ وَعَلَى
الْأَعْرَافِ رِجَالٌ يَعْرِفُونَ كُلًّا بِسِيمَاهُمْ ۚ وَنَادَوْا أَصْحَابَ
الْجَنَّةِ أَن سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۚ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ﴾
৪৬। এ উভয়
দলের মাঝখানে থাকবে একটি অন্তরাল। এর উচু
স্থানে (আ’রাফ) অপর কিছু
লোক থাকবে। তারা
জান্নাতে প্রবেশ করেনি ঠিকই কিন্তু তারা হবে তার প্রার্থী।
﴿وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَارُهُمْ
تِلْقَاءَ أَصْحَابِ النَّارِ قَالُوا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
৪৭। তারা
প্রত্যেককে তার লক্ষণের সাহায্যে চিনে নেবে। জান্নাতবাসীদেরকে
ডেকে তারা বলবেঃ “তোমাদের প্রতি শান্তি হোক!” আর যখন
তাদের দৃষ্টি জাহান্নামবাসীদের দিকে ফিরবে, তারা বলবেঃ “হে
আমাদের রব! এ জালেমের সাথে আমাদের শামিল করো না।”
﴿وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْأَعْرَافِ
رِجَالًا يَعْرِفُونَهُم بِسِيمَاهُمْ قَالُوا مَا أَغْنَىٰ عَنكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا
كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ﴾
৪৮। আবার এ
আরাফের লোকেরা জাহান্নামের কয়েকজন বড় বড় ব্যক্তিকে তাদের আলামত দেখে চিনে নিয়ে
ডেকে বলবেঃ “দেখলে তো তোমরা, আজ তোমাদের দলবলও তোমাদের
কোন কাজে লাগলো না। আর
তোমাদের যেই সাজ-সরঞ্জামকে তোমরা অনেক বড় মনে করতে তাও কোন উপকারে আসলো না।
﴿أَهَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ
لَا يَنَالُهُمُ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ ۚ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ
وَلَا أَنتُمْ تَحْزَنُونَ﴾
৪৯। আর এ
জান্নাতের অধিবাসীরা কি তারাই নয়, যাদের সম্পর্কে তোমরা কসম
খেয়ে বলতে, এদেরকে তো
আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে কিছুই দেবেন না? আজ তাদেরকেই বলা হয়েছে, প্রবেশ করো
জান্নাতে-তোমাদের কোন ভয়ও নেই, দুঃখও নেই।”
﴿وَنَادَىٰ أَصْحَابُ النَّارِ
أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا عَلَيْنَا مِنَ الْمَاءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ
اللَّهُ ۚ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ﴾
৫০। আর
জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবেঃ “সামান্য
একটু পানি আমাদের উপর ঢেলে দাও না। অথবা
আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দান করেছেন তা থেকেই কিছু ফেলে দাও না।” তারা
জবাবে বলবেঃ “আল্লাহ এ দু’টি জিনিসই সত্য
অস্বীকারকারীদের জন্য হারাম করেছেন,
﴿الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ
لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ
كَمَا نَسُوا لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَٰذَا وَمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ﴾
৫১। যারা
নিজেদের দীনকে খেলা ও কৌতুকের ব্যাপারে বানিয়ে নিয়েছিল এবং দুনিয়ার জীবন যাদেরকে
প্রতারণায় নিমজ্জিত করেছিল।” আল্লাহ
বলেন, “আজ আমিও
তাদেরকে ঠিক তেমনিভাবে ভুলে যাবো যেভাবে তারা এ দিনটির মুখোমুখী হওয়ার কথা ভুলে
গিয়েছিল এবং আমার আয়াত সমূহ অস্বীকার করেছিল।”৩৫
﴿وَلَقَدْ جِئْنَاهُم بِكِتَابٍ
فَصَّلْنَاهُ عَلَىٰ عِلْمٍ هُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ﴾
৫২। আমি এদের
কাছে এমন একটি কিতাব নিয়ে এসেছি যাকে পূর্ণ জ্ঞানের ভিত্তিতে বিশদ ব্যাখ্যামূলক
করেছি৩৬ এবং যা ঈমানদরদের জন্য পথনির্দেশন ও রহমতস্বরূপ৩৭
﴿هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا تَأْوِيلَهُ ۚ يَوْمَ
يَأْتِي تَأْوِيلُهُ يَقُولُ الَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا
بِالْحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَاءَ فَيَشْفَعُوا لَنَا أَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ
غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ ۚ قَدْ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُم
مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ﴾
৫৩। এখন এরা
কি এর পরিবর্তে এ কিতাব যে পরিমাণের খবর দিচ্ছে তার প্রতীক্ষায় আছে?৩৮ যেদিন সেই পরিনাম সামনে এসে
যাবে সেদিন যারা তাকে উপেক্ষা করেছিল তারাই বলবেঃ “যথার্থই
আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন। এখন কি
আমরা এমন কিছু সুপারিশকারী পাবো যারা আমাদের পক্ষে সুপারিশ করবে? অথবা আমাদের পুনরায় ফিরে যেতে
দেয়া হবে, যাতে
পূর্বে আমরা যা কিছু করতাম তা পরিবর্তে এখন অন্য পদ্ধতিতে কাজ করে দেখাতে পারি?”৩৯ তারা নিজেরাই নিজেদেরকে
ক্ষতিগ্রস্থ করেছে এবং যে মিথ্যা তারা রচনা করেছিল তাদের সবটুকুই আজ তাদের কাছ
থেকে উদাও হয়ে গেছে।
﴿إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ
الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى
الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ
وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ
اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ﴾
৫৪। প্রকৃতপক্ষে
আল্লাহই তোমাদের রব, যিনি আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি
করেছেন।৪০ তারপর তিনি নিজের কর্তৃত্বের
আসনে সমাসীন হন।৪১ তিনি রাত দিয়ে দিনকে ঢেকে দেন
তারপর রাতের পেছনে দিন দৌড়িয়ে চলে আসে। তিনি
সূর্য, চন্দ্র ও
তারকারাজী সৃষ্টি করেন। সবাই
তাঁর নির্দেশের আনুগত।জেনে রাখো, সৃষ্টি তারই এবং নির্দেশও
তাঁরই।৪২ আল্লাহ বড়ই বরকতের অধিকারী৪৩ তিনি সমগ্র বিশ্ব জাহানের
মালিক ও প্রতিপালক।
﴿ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا
وَخُفْيَةً ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ﴾
৫৫। তোমাদের
রবকে ডাকো কান্নাজড়িত কণ্ঠে ও চুপে চুপে। অবশ্যি
তিনি সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
﴿وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ
بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا ۚ إِنَّ رَحْمَتَ اللَّهِ
قَرِيبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِينَ﴾
৫৬। দুনিয়ায়
সুস্থ পরিবেশ বহাল করার পর আর সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।৪৪ আল্লাহকেই ডাকো ভীতি ও আশা
সহকারে।৪৫ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর রহমত
সৎকর্মশীল লোকদের নিকবর্তী।
﴿وَهُوَ الَّذِي يُرْسِلُ
الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا أَقَلَّتْ
سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنزَلْنَا بِهِ الْمَاءَ فَأَخْرَجْنَا
بِهِ مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۚ كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ
تَذَكَّرُونَ﴾
৫৭। আর
আল্লাহই বায়ুকে নিজের অনুগ্রহের পূর্বাহ্নে সুসংবদবাহীরূপে পাঠান। তারপর
যখন সে পানি ভরা মেঘ বহন করে তখন কোন মৃত ভুখণ্ডের দিকে তাকে চালিয়ে দেন এবং
সেখানে বারি বর্ষণ করে(সেই মৃত ভুখণ্ড থেকে) নানা
প্রকার ফল উৎপাদন করেন। দেখো, এভাবে আমি মৃতদেরকে মৃত্যুর
অবস্থা থেকে বের করে আনি। হয়তো এ
চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ থেকে তোমরা শিক্ষা লাভ করবে।
﴿وَالْبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخْرُجُ
نَبَاتُهُ بِإِذْنِ رَبِّهِ ۖ وَالَّذِي خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا ۚ كَذَٰلِكَ
نُصَرِّفُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَشْكُرُونَ﴾
৫৮। উৎকৃষ্ট
ভুমি নিজের রবের নির্দেশ প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে এবং নিকৃষ্ট ভুমি থেকে নিকৃষ্ট
ধরনের ফসল ছাড়া আর কিছুই ফলে না।৪৬ এভাবেই আমি কৃতজ্ঞ জনগোষ্ঠির
জন্য বারবার নিদর্শনসমূহ পেশ করে থাকি।
﴿لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا
إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ
إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
৫৯। নুহকে
আমি তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই।৪৭ সে বলেঃ হে আমার স্বগোত্রীয়
ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন
ইলাহ নেই।৪৮ আমি তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ
দিনের আযাবের আশংকা করছি।
﴿قَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِهِ
إِنَّا لَنَرَاكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
৬০। তার
সম্প্রদায়ের প্রধানরা জবাব দেয়ঃ আমরা তো দেখতে পাচ্ছি তুমি সুষ্পষ্ট গোমরাহীতে
লিপ্ত হয়েছো।
﴿قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ
بِي ضَلَالَةٌ وَلَٰكِنِّي رَسُولٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ﴾
৬১। নূহ বলেঃ
হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা!আমি কোন গোমরাহীতে লিপ্ত হইনি বরং আমি রাব্বুল
আলামীনের রাসূল।
﴿أُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ
رَبِّي وَأَنصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
৬২। তোমাদের
কাছে আমার রবের বানী পৌঁছে দিচ্ছি। আমি
তোমাদের কল্যাণকামী। আল্লাহর
পক্ষ থেকে আমি এমন সব কিছু জানি যা তোমার জান না।
﴿أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَاءَكُمْ
ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوا وَلَعَلَّكُمْ
تُرْحَمُونَ﴾
৬৩। তোমরা
কি এ জন্য অবাক হচ্ছো যে, তোমাদের কাছে তোমাদের স্বীয়
সম্প্রদায়েরই এক ব্যক্তির মাধ্যমে তোমাদের রবের স্মারক এসেছে, তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্যে যাতে
তোমরা ভূল পথে চলা থেকে রক্ষা পাও এবং তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়?৪৯
﴿فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَيْنَاهُ
وَالَّذِينَ مَعَهُ فِي الْفُلْكِ وَأَغْرَقْنَا الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ إِنَّهُمْ
كَانُوا قَوْمًا عَمِينَ﴾
৬৪। কিন্তু
তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করলো। অবশেষে
আমি তাকে ও তার সাথীদেরকে একটি নৌকায় (আরোহণ করিয়ে) রক্ষা করি এবং আমার আয়াতকে যারা মিথ্যা বলেছিল তাদেরকে ডুবিয়ে দেই।৫০ নিসন্দেহে তারা ছিল
দৃষ্টিশক্তিহীন জনগোষ্ঠি।
﴿وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ
هُودًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۚ أَفَلَا
تَتَّقُونَ﴾
৬৫। আর আদ (জাতি)র৫১ কাছে আমি পাঠাই তাদের ভাই
হূদকে। সে বলেঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা!তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি
ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। এরপরও কি
তোমরা ভুল পথে চলার ব্যাপারে সাবধান হবে না?”
﴿قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ
كَفَرُوا مِن قَوْمِهِ إِنَّا لَنَرَاكَ فِي سَفَاهَةٍ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾
৬৬। তার
সম্প্রদায়ের প্রধানরা যারা তার কথা মানতে অস্বীকার করছিল, তারা বললোঃ “আমরা
তো তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত মনে করি এবং আমাদের ধারণা তুমি মিথ্যুক।”
﴿قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ
بِي سَفَاهَةٌ وَلَٰكِنِّي رَسُولٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ﴾
৬৭। সে
বললোঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা!আমি নির্বুদ্ধিতায়
লিপ্ত নই। বরং আমি রাব্বুল
আলামীনের রাসূল,
﴿أُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ
رَبِّي وَأَنَا لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ﴾
৬৮। আমার
রবের বাণী তোমাদের কাছে পৌছাই এবং আমি তোমাদের এমন হিতাকাংখী যার ওপর ভরসা করা
যেতে পারে।”
﴿أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَاءَكُمْ
ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ ۚ وَاذْكُرُوا
إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِن بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍ وَزَادَكُمْ فِي الْخَلْقِ بَسْطَةً ۖ فَاذْكُرُوا
آلَاءَ اللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
৬৯। তোমরা
কি এ জন্য অবাক হচ্ছো যে, তোমাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে
তোমাদেরই স্বগোত্রীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে তোমাদের রবের স্মারক তোমাদের কাছে
এসেছে? ভুলে যেয়ো
না, তোমাদের
রব নূহের সম্প্রদায়ের পর তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেন এবং অত্যন্ত
স্বাস্থ্যবান, ও সুঠাম
দেহের অধিকারী করেন। কাজেই
আল্লাহর অপরিসীম শক্তির কথা স্মরণ রাখো,৫২ আশা করা যায় তোমরা সফলকাম
হবে।
﴿قَالُوا أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ
اللَّهَ وَحْدَهُ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُنَا ۖ فَأْتِنَا بِمَا
تَعِدُنَا إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
৭০। তারা
জবাব দিলোঃ “তুমি কি আমাদের কাছে এ জন্য এসেছো যে, আমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত
করবো। এবং আমাদের বাপ-দাদারা যাদের
ইবাদত করে এসেছে তাদেরকে পরিহার করবো?৫৩ বেশ, যদি তুমি সত্যবাদী হও, তাহলে আমাদের যে আযাবের হুমকি
দিচ্ছো, তা নিয়ে
এসো।”
﴿قَالَ قَدْ وَقَعَ عَلَيْكُم
مِّن رَّبِّكُمْ رِجْسٌ وَغَضَبٌ ۖ أَتُجَادِلُونَنِي فِي أَسْمَاءٍ سَمَّيْتُمُوهَا
أَنتُمْ وَآبَاؤُكُم مَّا نَزَّلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ ۚ فَانتَظِرُوا
إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ﴾
৭১। সে
বললোঃ “তোমাদের রবের অভিসম্পাত পড়েছে তোমাদের ওপর
এবং তাঁর গযবও। তোমরা
কি আমার সাথে এমন কিছু নাম নিয়ে বিতর্ক করছো, যেগুলো তৈরী করেছো তোমরা ও
তোমাদের বাপ-দাদারা৫৪ এবং যেগুলোর স্বপক্ষে আল্লাহ
কোন সনদ নাযিল করেননি?৫৫ ঠিক আছে, তোমরা অপেক্ষা করো এবং আমিও
তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।”
﴿فَأَنجَيْنَاهُ وَالَّذِينَ
مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۖ وَمَا
كَانُوا مُؤْمِنِينَ﴾
৭২। অবশেষে
নিজ অনুগ্রহে আমি হূদ ও তার সাথীদেরকে উদ্ধার করি এবং আমার আয়াতকে যারা মিথ্যা
বলেছিল এবং যারা ঈমান আনেনি তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেই।৫৬
﴿وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ
صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ
غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ هَٰذِهِ
نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ ۖ وَلَا
تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
৭৩। আর
সামূদের৫৭ কাছে পাঠাই তাদের ভাই সালেহকে। সে বলেঃ
হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর ইবাদত
করো। তিনি ছাড়া তোমাদের
আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের
কাছে তোমাদের রবের সুষ্পষ্ট প্রমাণ এসে গেছে। আল্লাহর
এ উটনীটি তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন।৫৮ কাজেই তাকে আল্লাহর জমিতে চরে
খাবার জন্যে ছেড়ে দাও। কোন
অসদুদ্দেশ্যে এর গায়ে হাত দিয়ো না। অন্যথায়
একটি যন্ত্রনাদায়ক আযাব তোমাদের ওপর আপতিত হবে।
﴿وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ
خُلَفَاءَ مِن بَعْدِ عَادٍ وَبَوَّأَكُمْ فِي الْأَرْضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا
قُصُورًا وَتَنْحِتُونَ الْجِبَالَ بُيُوتًا ۖ فَاذْكُرُوا آلَاءَ اللَّهِ
وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ﴾
৭৪। স্মরণ
করো সেই সময়ের কথা যখন আল্লাহ আদ জাতির পর তোমাদেরকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন এবং
পৃথিবীতে তোমাদেরকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন যার ফলে আজ তোমরা তাদের সমতলভূমিতে
বিপুলায়তন প্রাসাদ ও তার পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করছো।৫৯ কাজেই তাঁর সর্বময় ক্ষমতার
স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যেয়ো না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।৬০
﴿قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ
اسْتَكْبَرُوا مِن قَوْمِهِ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِمَنْ آمَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ
أَنَّ صَالِحًا مُّرْسَلٌ مِّن رَّبِّهِ ۚ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلَ
بِهِ مُؤْمِنُونَ﴾
৭৫। তার
সম্প্রদায়ের স্বঘোষিত প্রতাপশালী নেতারা দুর্বল শ্রেনীর মুমিনদেরকে বললোঃ “তোমরা কি সত্যি জানো, সালেহ ও তার রবের প্রেরিত নবী?” তারা জবাব দিলোঃ “নিশ্চয়ই, যে বাণী সহকারে তাঁকে পাঠানো
হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি।”
﴿قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا
إِنَّا بِالَّذِي آمَنتُم بِهِ كَافِرُونَ﴾
৭৬। ঐ
শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদাররা বললো, “তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অস্বীকার
করি।”
﴿فَعَقَرُوا النَّاقَةَ وَعَتَوْا
عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِن كُنتَ مِنَ
الْمُرْسَلِينَ﴾
৭৭। তারপর
তারা সেই উটনীটিকে মেরে ফেললো,৬১ পূর্ণদাম্ভিকতা সহকারে
নিজেদের রবের হুকুম অমান্য করলোএবং সালেহকে বললোঃ “নিয়ে
এসো সেই আযাব যার হুকমি তুমি আমাদের দিয়ে থাকো, যদি সত্যিই তুমি নবী হয়ে
থাকো।”
﴿فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ
فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ﴾
৭৮। অবশেষে
একটি প্রলয়ংকর দুর্যোগ তাদেরকে গ্রাস করলো৬২ এবং তারা নিজেদের ঘরের মধ্যে
মুখ থুবড়ে পড়ে রইল।
﴿فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ
يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَٰكِن لَّا
تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ﴾
৭৯। আর সালেহ
একথা বলতে বলতে তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে গেলোঃ “হে
আমার সম্প্রদায়! আমার রবের বাণী আমি তোমাদের কাছে
পৌছিয়ে দিয়েছি এবং আমি তোমাদের জন্য যথেষ্ট কল্যাণ কামনা করেছি। কিন্তু
আমি কি করবো, তোমরা তো নিজেদের হিতাকাংখীকে পসন্দই কর না।”
﴿وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ
أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِينَ﴾
৮০। আর লূতকে
আমি পয়গম্বর করে পাঠাই। তারপর
স্মরণ করো, যখন সে
নিজের সম্প্রদায়ের৬৩ লোকদেরকে বললোঃ “তোমরা
কি এতই নির্লজ্জ হয়ে গেলে যে, দুনিয়ার ইতিপূর্বে কেউ কখনো করেনি এমন
অশ্লীল কাজ করে চলেছো?
﴿إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ
شَهْوَةً مِّن دُونِ النِّسَاءِ ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ﴾
৮১। তোমরা
মেয়েদের বাদ দিয়ে পুরুষদের দ্বারা কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করছো?৬৪ প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই
সীমালংঘনকারী গোষ্ঠী।”
﴿وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ
إِلَّا أَن قَالُوا أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ ۖ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ
يَتَطَهَّرُونَ﴾
৮২। কিন্তু
তার সম্প্রদায়ের জওয়াব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, “এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে
বের করে দাও। এরা বড়ই পবিত্রার
ধ্বজাধারী হয়েছে।”৬৫
﴿فَأَنجَيْنَاهُ وَأَهْلَهُ
إِلَّا امْرَأَتَهُ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ﴾
৮৩। শেষ
পর্যন্ত আমি লুতের স্ত্রীকে ছাড়া-যে পেছনে অবস্থানকারীদের
অন্তরভুক্ত ছিল৬৬ তাকে ও তার পরিবারবর্গকে
উদ্ধার করে নিয়ে আসি
﴿وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم
مَّطَرًا ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِينَ﴾
৮৪। এবং এ
সম্প্রদায়ের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করি।৬৭ তারপর সেই অপরাধীদের কী
পরিণাম হয়েছিল দেখো।৬৮
﴿وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ
شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ
غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا
الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا
فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم
مُّؤْمِنِينَ﴾
৮৫। আর
মাদইয়ানবাসীদের৬৯ কাছে আমি তাদের ভাই শোআইবকে
পাঠাই। সে বলেঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর ইবাদত
করো, তিনি ছাড়া
তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের
কাছে তোমাদের রবের সুষ্পষ্ট পথনির্দশনা এসে গেছে। কাজেই
ওজন ও পরিমাপ পুরোপুরি দাও, লোকদের পাওনা জিনিস কম করে দিয়ো না।৭০ এবং পৃথিবী পরিশুদ্ধ হয়ে
যাওয়ার পর তার মধ্যে আর বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।৭১ এরই মধ্যে রয়েছে তোমাদের
কল্যাণ,যদি তোমরা
যথার্থ মুমিন হয়ে থাকো।”৭২
﴿وَلَا تَقْعُدُوا بِكُلِّ
صِرَاطٍ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِهِ وَتَبْغُونَهَا
عِوَجًا ۚ وَاذْكُرُوا إِذْ كُنتُمْ قَلِيلًا فَكَثَّرَكُمْ ۖ وَانظُرُوا
كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ﴾
৮৬। আর
লোকদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করার,ঈমানদারদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেবার
এবং সোজা পথকে বাঁকা করার জন্য (জীবনের)প্রতিটি পথে
লুটেরা হয়ে বসে থাকো না। স্মরণ
করো, সেই সময়ের
কথা যখন তোমরা ছিলে স্বল্প সংখ্যক।তারপর
আল্লাহ তোমাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। আর
বিপর্যয় সৃষ্টিকারীরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হয়েছে তা একবার চোখ মেলে
তাকিয়ে দেখো।
﴿وَإِن كَانَ طَائِفَةٌ مِّنكُمْ
آمَنُوا بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ وَطَائِفَةٌ لَّمْ يُؤْمِنُوا فَاصْبِرُوا حَتَّىٰ
يَحْكُمَ اللَّهُ بَيْنَنَا ۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ﴾
৮৭। যে
শিক্ষা সহকারে আমাকে পাঠানো হয়েছে, তোমাদের মধ্য থেকে কোন একটি
দল যদি তার প্রতি ঈমান আনে এবং অন্য একটি দল যদি তার প্রতি ঈমান না আনে তাহলে
ধৈর্যসহকারে দেখতে থাকো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেন। আর তিনিই
সবচেয়ে ভাল ফায়সালাকারী।
﴿قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ
اسْتَكْبَرُوا مِن قَوْمِهِ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَكَ
مِن قَرْيَتِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا ۚ قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا
كَارِهِينَ﴾
৮৮। নিজেদের
শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মত্ত গোত্রপতিরা তাকে বললোঃ “হে
শোআইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে
তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেবো। অন্যথায়
তোমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের ধর্মে।” শোআইব
জবাব দিলোঃ “আমরা রাজি না হলেও কি আমাদের জোর করে
ফিরিয়ে আনা হবে? তোমাদের ধর্ম থেকে আল্লাহ আমাদের উদ্ধার করার পর
আবার যদি আমরা তাতে ফিরে আসি তাহলে
﴿قَدِ افْتَرَيْنَا عَلَى
اللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِي مِلَّتِكُم بَعْدَ إِذْ نَجَّانَا اللَّهُ مِنْهَا ۚ وَمَا
يَكُونُ لَنَا أَن نَّعُودَ فِيهَا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّنَا ۚ وَسِعَ
رَبُّنَا كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا ۚ عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا ۚ رَبَّنَا
افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ﴾
৮৯। আমরা
আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপকারী বিবেচিত হবো। আমাদের
রব আল্লাহ যদি না চান, তাহলে আমাদের পক্ষে সে দিকে ফিরে যাওয়া আর
কোনক্রমেই সম্ভব নয়।৭৩ আমাদের রবের জ্ঞান সমস্ত
জিনিসকে ঘিরে আছে। আমরা তাঁরই ওপর
নির্ভর করি। হে
আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে
যথাযথভাবে ফায়সালা করে দাও এবং তুমি সবচেয়ে ভাল ফায়সালাকারী।”
﴿وَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ
كَفَرُوا مِن قَوْمِهِ لَئِنِ اتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا إِنَّكُمْ إِذًا لَّخَاسِرُونَ﴾
৯০। তার
সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল, পরস্পরকে বললোঃ “যদি
তোমরা শোআইবের আনুগত্য মেনে নাও, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে।”৭৪
﴿فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ
فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ﴾
৯১। কিন্তু
সহসা একটি প্রলয়ংকারী বিপদ তাদেরকে পাকড়াও করে এবং তারা নিজেদের ঘরের মধ্য মুখ
থুবড়ে পড়ে থাকে,
﴿الَّذِينَ كَذَّبُوا شُعَيْبًا
كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا فِيهَا ۚ الَّذِينَ كَذَّبُوا شُعَيْبًا كَانُوا هُمُ
الْخَاسِرِينَ﴾
৯২। যারা
শোআইবকে মিথ্যা বলেছিল তারা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় যেন সেই সব গৃহে কোনদিন
তার বসবাসই করতো না। শোআইবকে
যারা মিথ্যা বলেছিল অবশেষে তারা ধ্বংস হয়ে যায়।৭৫
﴿فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ
يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ ۖ فَكَيْفَ
آسَىٰ عَلَىٰ قَوْمٍ كَافِرِينَ﴾
৯৩। আর
শোআইব একথা বলতে বলতে তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে যায়-“হে আমাদর জাতির লোকেরা! আমি আমার রবের বাণী তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছে এবং তোমাদের কল্যাণ
কামনার হক আদায় করেছি। এখন আমি
এমন জাতির জন্য দুঃখ করবো কেন,যারা সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করে?”৭৬
﴿وَمَا أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ
مِّن نَّبِيٍّ إِلَّا أَخَذْنَا أَهْلَهَا بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ
يَضَّرَّعُونَ﴾
৯৪। আমি যখনই
কোন জনপদে নবী পাঠিয়েছি, সেখানকার লোকেদেরকে প্রথমে অর্থকষ্ট ও
দুঃখ-দুর্দশায় সম্মুখীন করেছি, একথা ভেবে যে, হয়তো তারা বিনম্র হবে ও নতি
স্বীকার করবে।
﴿ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ
السَّيِّئَةِ الْحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَوا وَّقَالُوا قَدْ مَسَّ آبَاءَنَا الضَّرَّاءُ
وَالسَّرَّاءُ فَأَخَذْنَاهُم بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾
৯৫। তারপর তাদের
দুরবস্থাকে সমৃদ্ধিতে ভরে দিয়েছি। ফলে তারা
প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং বলতে শুরু করেছে আমাদের পূর্বপুরুষদের ওপরও
দুর্দিন ও সুদিনের আনাগোনা চলতো। অবশেষে
আমি তাদেরকে সহসাই পাকড়াও করেছি। অথচ তারা
জানতেও পারেনি।৭৭
﴿وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ
آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ
وَلَٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ﴾
৯৬। যদি
জনপদের লোকেরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও
পৃথিবীর রবকতসমূহের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু
তারা তো প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই
তারা যে অসৎকাজ করে যাচ্ছিলো তার জন্যে আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি।
﴿أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ
أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُونَ﴾
৯৭। জনপদের
লোকেরা কি এখন এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার শাস্তি কখনো অকস্মাত
রাত্রিকালে তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা থাকবে নিদ্রামগ্ন?
﴿أَوَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ
أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ﴾
৯৮। অথবা
তারা নিশ্চিন্তে হয়ে গেছে যে, আমাদের মজবুত হাত কখনো দিনের বেলা তাদের ওপর
এসে পড়বে না, যখন তারা
খেলা ধুলায় মেতে থাকবে?
﴿أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ ۚ فَلَا
يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ﴾
৯৯। এরা কি
আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে নির্ভীক হয়ে গেছে?৭৮ অথচ যে সব সম্প্রায়ের ধ্বংস
অবধারিত তারা ছাড়া আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে আর কেউ নির্ভীক হয় না।
﴿أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ
يَرِثُونَ الْأَرْضَ مِن بَعْدِ أَهْلِهَا أَن لَّوْ نَشَاءُ أَصَبْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ ۚ وَنَطْبَعُ
عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ﴾
১০০। পৃথিবীর
পূর্ববর্তী অধিবাসীদের পর যারা তার উত্তরাধিকারী হয়, তারা কি এ বাস্তবতা থেকে
ততটুকুও শেখেনি যে আমি চাইলে তাদের অপরাধের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করতে পারি।৭৯ (কিন্তু তারা শিক্ষনীয়
বিষয়াবলীর ব্যাপারে অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শন করে থাকে।) আর আমি
তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেই। ফলে তার
কিছুই শোনে না।৮০
﴿تِلْكَ الْقُرَىٰ نَقُصُّ
عَلَيْكَ مِنْ أَنبَائِهَا ۚ وَلَقَدْ جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ
فَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا بِمَا كَذَّبُوا مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ
اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ الْكَافِرِينَ﴾
১০১। যেসব
জাতির কাহিনী আমি তোমাদের শুনাচ্ছি (যাদের দৃষ্টান্ত
তোমাদের সামনে রয়েছে) তাদের রাসূলগণ সুষ্পষ্ট প্রমাণসহ
তাদের কাছে আসে, কিন্তু যে জিনিসকে তারাএকবার মিথ্যা বলেছিল তাকে আবার
মেনে নেবার পাত্র তারা ছিল না। দেখো, এভাবে আমি সত্য
অস্বীকারকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই।৮১
﴿وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم
مِّنْ عَهْدٍ ۖ وَإِن وَجَدْنَا أَكْثَرَهُمْ لَفَاسِقِينَ﴾
১০২। তাদের
অধিকাংশের মধ্যে আমি অংগীকার পালনের মনোভাব পাইনি। বরং
অধিকাংশকেই পেয়েছি ফাসেক ও নাফরমান।৮২
﴿ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِم
مُّوسَىٰ بِآيَاتِنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَظَلَمُوا بِهَا ۖ فَانظُرْ
كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ﴾
১০৩। তারপর এ
জাতিগুলোর পর (যাদের কথা ওপরে বলা হয়েছে) আমার নিদর্শনসমূহ সহকারে মূসাকে পাঠাই ফেরাউন ও তার জাতির প্রধানদের কাছে।৮৩ কিন্তু তারাও আমার
নিদর্শনসমূহের ওপর জুলুম করে।৮৪ ফলতঃ এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের
পরিণাম কি হয়েছিল একবার দেখো।
﴿وَقَالَ مُوسَىٰ يَا فِرْعَوْنُ
إِنِّي رَسُولٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১০৪। মূসা
বললোঃ “হে ফেরাউন!৮৫ আমি বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট
থেকে প্রেরিত।
﴿حَقِيقٌ عَلَىٰ أَن لَّا
أَقُولَ عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ ۚ قَدْ جِئْتُكُم بِبَيِّنَةٍ مِّن
رَّبِّكُمْ فَأَرْسِلْ مَعِيَ بَنِي إِسْرَائِيلَ﴾
১০৫। আমার
দায়িত্বই হচ্ছে,আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবো না। আমি
তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিযুক্তির সুষ্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছি। কাজেই
তুমি বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।”৮৬
﴿قَالَ إِن كُنتَ جِئْتَ بِآيَةٍ
فَأْتِ بِهَا إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
১০৬। ফেরাউন
বললোঃ “তুমি যদি কোন প্রমাণ এনে থাকো এবং নিজের
দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী হও, তাহলে তা পেশ করো।”
﴿فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا
هِيَ ثُعْبَانٌ مُّبِينٌ﴾
১০৭। মূসা
নিজের লাঠিটি ছুড়ে দিল। অমনি তা
একটি জ্বলজ্যান্ত অজগরের রূপ ধারণ করলো।
﴿وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا
هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ﴾
১০৮। সে নিজের
হাত বের করলো তৎক্ষণাত দেখা গেলো সেটি দর্শকদের সামনে চমকাচ্ছে।৮৭
﴿قَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِ
فِرْعَوْنَ إِنَّ هَٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ﴾
১০৯। এ দৃশ্য
দেখে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের প্রধানরা পরষ্পরকে বললোঃ নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি একজন
অত্যন্ত দক্ষ যাদুকর,
﴿يُرِيدُ أَن يُخْرِجَكُم
مِّنْ أَرْضِكُمْ ۖ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ﴾
১১০। তোমাদেরকে
তোমাদের দেশ থেকে বে-দখল করতে চায়।৮৮ এখন তোমরা কি বলবে বলো?
﴿قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ
وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ﴾
১১১। তখন তারা
সবাই ফেরউনকে পরামর্শ দিলো, তাকে ও তার ভাইকে অপেক্ষারত রাখুন এবং
নগরে নগরে সংগ্রাহক পাঠান।
﴿يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ
عَلِيمٍ﴾
১১২। তারা
প্রত্যেক সুদক্ষ যাদুকরকে আপনার কাছে নিয়ে আসবে।৮৯
﴿وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ
قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِن كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ﴾
১১৩। অবশেষে
যাদুকরেরা ফেরাউনের কাছে এলো। তারা
বললোঃ “যদি আমরা বিজয়ী হই, তাহলে অবশ্যি এর প্রতিদান পাবো
তো?”
﴿قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ
لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ﴾
১১৪। ফেরাউন
জবাব দিলোঃ “হাঁ তাছাড়া তোমরা আমার দরবারের ঘনিষ্ঠ
জনেও পরিণত হবে।”
﴿قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا
أَن تُلْقِيَ وَإِمَّا أَن نَّكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ﴾
১১৫। তখন তারা
মূসাকে বললোঃ “তুমি ছুড়ঁবে না, না আমরা ছুঁড়বো?”
﴿قَالَ أَلْقُوا ۖ فَلَمَّا
أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ﴾
১১৬। মূসা
জবাব দিলোঃ “তোমরাই ছোঁড়ো।” তারা
যখনই নিজেদের যাদুর বাণ ছুঁড়লো তখনই তা লোকদের চোখে যাদু করলো, মনে আতংক ছড়ালো এবং তারা বড়ই
জবরদস্ত যাদু দেখালো।
﴿وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ
أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ﴾
১১৭। মূসাকে
আমি ইংগিত করলাম, তোমর লাঠিটা ছুঁড়ে দাও। তার লাঠি
ছোঁড়ার সাথে সাথেই তা এক নিমিষেই তাদের মিথ্যা যাদু কর্মগুলোকে গিলে ফেলতে
লাগলো।৯০
﴿فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ
مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
১১৮। এভাবে যা
সত্য ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো এবং যা কিছু তারা বানিয়ে রেখেছিল তা মিথ্যা
প্রতিপন্ন হলো।
﴿فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا
صَاغِرِينَ﴾
১১৯। ফেরাউন ও
তার সাথীরা মোকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং (বিজয়ী
হবার পরিবর্তে) উল্টো তারা লাঞ্ছিত হলো।
﴿وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ﴾
১২০। আর
যাদুকরদের অবস্থা হলো এই-যেন কোন জিনিস ভিতর থেকে তাদেরকে
সিজদানত করে দিলো।
﴿قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ
الْعَالَمِينَ﴾
১২১। তারা
বলতে লাগলোঃ “আমরা ঈমান আনলাম বিশ্বজাহানের রবের প্রতি,
﴿رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ﴾
১২২। যিনি
মূসা ও হারুণেরও রব।”৯১
﴿قَالَ فِرْعَوْنُ آمَنتُم
بِهِ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّ هَٰذَا لَمَكْرٌ مَّكَرْتُمُوهُ فِي
الْمَدِينَةِ لِتُخْرِجُوا مِنْهَا أَهْلَهَا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ﴾
১২৩। ফেরাউন
বললোঃ “আমার অনুমতি দেবার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান
আনলে? নিশ্চয়ই
এটা কোন গোপন চক্রান্ত ছিল। তোমরা এ
রাজধানীতে বসে এ চক্রান্ত এঁটেছো এর মালিকদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে। বেশ, এখন এর পরিণাম তোমরা জানতে
পারবে।
﴿لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ
وَأَرْجُلَكُم مِّنْ خِلَافٍ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ﴾
১২৪। তোমাদের
হাত-পা আমি কেটে ফেলবো বিপরীত দিক থেকে এবং তারপর তোমাদের
সবাইকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করবো।”
﴿قَالُوا إِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا
مُنقَلِبُونَ﴾
১২৫। তারা
জবাব দিলোঃ “সে যাই হোক আমাদের রবের দিকেই তো আমাদের
ফিরতে হবে।
﴿وَمَا تَنقِمُ مِنَّا إِلَّا
أَنْ آمَنَّا بِآيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَاءَتْنَا ۚ رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا
صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ﴾
১২৬। তুমি যে
ব্যাপারে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছো, তা এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, আমাদের রবের নিদর্শসমূহ যখন
আমাদের সামনে এসেছে তখন আমরা তা মেনে নিয়েছি। হে
আমাদের রব! আমাদের সবর দান করোএবং তোমার আনুগত্য থাকা
অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও।”৯২
﴿وَقَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِ
فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآلِهَتَكَ ۚ قَالَ
سَنُقَتِّلُ أَبْنَاءَهُمْ وَنَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُونَ﴾
১২৭। ফেরাউনকে
তার জাতির প্রধানরা বললোঃ “তুমি কি মূসা ও তার জাতিকে এমনিই
ছেড়ে দেবে যে, তারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াক এবংতোমার ও
তোমার মাবুদের বন্দেগী পরিত্যাগ করুক?”ফেরউন জবাব দিলঃ “আমি
তাদের পুত্রদের হত্যা করবো এবং তাদের কন্যাদের জীবিত রাখবো।৯৩ আমরা তাদের ওপর প্রবল
কর্তৃত্বের অধিকারী।”
﴿قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ
اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا ۖ إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا
مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ﴾
১২৮। মূসা তার
জাতিকে বললোঃ “আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং সবর করো। এ পৃথীবী
তো আল্লাহরই। তিনি
নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান তাকে এর উত্তরাধিকারী করেন। আর যারা
তাঁকে ভয় করে কাজ করে চুড়ান্ত সাফল্য তাদের জন্যে নির্ধারিত।”
﴿قَالُوا أُوذِينَا مِن قَبْلِ
أَن تَأْتِيَنَا وَمِن بَعْدِ مَا جِئْتَنَا ۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن
يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ﴾
১২৯। তার
জাতির লোকেরা বললোঃ “তোমার আসার আগেও আমরা নির্যাতিত
হয়েছি এবং এখন তোমার আসার পরও নির্যাতিত হচ্ছি।” সে জবাব
দিলঃ “শীঘ্রই তোমাদের রব তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করে
দেবেন এবং পৃথিবীতে তোমাদের খলীফা করবেন, তারপর তোমরা কেমন কাজ করো
তা তিনি দেখবেন।”
﴿وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ
بِالسِّنِينَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ﴾
১৩০। ফেরাউনের
লোকদেরকে আমি কয়েক বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও ফসলহানিতে আক্রান্ত করেছি এ উদ্দেশ্যে
যে, হয়তো
তাদের চেতনা ফিরে আসবে।
﴿فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ
قَالُوا لَنَا هَٰذِهِ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوا بِمُوسَىٰ
وَمَن مَّعَهُ ۗ أَلَا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِندَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ
لَا يَعْلَمُونَ﴾
১৩১। কিন্তু
তাদের এমনি অবস্থা ছিল যে, ভাল সময় এলে তারা বলতো এটা তো আমাদের
প্রাপ্য।আর খারপ সময় এসে মূসা ও তার সাথীদেরকে
নিজেদের জন্য কূলক্ষুণে গণ্য করতো। অথচ
তাদের কুলক্ষণ তো আল্লাহর কাছে ছিল। কিন্তু
তাদের অধিকাংশই ছিল অজ্ঞ।
﴿وَقَالُوا مَهْمَا تَأْتِنَا
بِهِ مِنْ آيَةٍ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ﴾
১৩২। তারা
মূসাকে বললোঃ আমাদের যাদু করার জন্যে তুমি যে কোন নিদর্শনই আনো না কেন, আমরা তোমার কথা মেনে নেবো
না।৯৪
﴿فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ
الطُّوفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ آيَاتٍ مُّفَصَّلَاتٍ
فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُّجْرِمِينَ﴾
১৩৩। অবশেষে
আমি তাদের ওপর দুর্যোগ পাঠালাম,৯৫ পংগপাল ছেড়ে দিলাম, উকুন৯৬ ছড়িয়ে দিলাম, ব্যাংগের উপদ্রব সৃষ্টি করলাম, এবং রক্ত বর্ষণ করলাম। এসব
নিদর্শন আলাদা আলাদা করে দেখালাম।কিন্তু
তারা অহংকারে মেতে রইলো এবং তারা ছিল বড়ই অপরাধপ্রবণ সম্প্রদায়।
﴿وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ
الرِّجْزُ قَالُوا يَا مُوسَى ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ ۖ لَئِن
كَشَفْتَ عَنَّا الرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِي إِسْرَائِيلَ﴾
১৩৪। যখনই তাদের
ওপর বিপদ আসতো তারা বলতোঃ হে মূসা! তোমার রবের কাছে
তুমি যে মর্যাদার অধিকারী তার ভিত্তিতে তুমি আমাদের জন্য দোয়া করো। যদি এবার
তুমি আমাদের ওপর থেকে ও দুর্যোগ হটিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কথা মেনে
নেবো এবং বনী ইসরাঈলকে তোমার সাথে পাঠিয়ে দেবো।
﴿فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ
الرِّجْزَ إِلَىٰ أَجَلٍ هُم بَالِغُوهُ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ﴾
১৩৫। কিন্তু
যখনই তাদের ওপর থেকে আযাব সরিয়ে নিতাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অমনি, তারা সেই অংগীকার ভংগ করতো।
﴿فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ
فِي الْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ﴾
১৩৬। তাই আমি
তাদের থেকে বদলা নিয়েছি এবং তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছি। কারণ
তারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলেছিল এবং সেগুলোর ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে
গিয়েছিল।
﴿وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ
الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا
فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ
بِمَا صَبَرُوا ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ
وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ﴾
১৩৭। আর তাদের
জায়গায় আমি প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম দুর্বল ও অধোপতিত করে রাখা মানব গোষ্ঠীকে। অতপর যে
ভুখণ্ডে আমি প্রাচুর্যে ভরে দিয়েছিলাম, তার পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে
তাদেরই করতালগত করে দিয়েছিলাম।৯৭ এভাবে বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে
তোমার রবের কল্যানের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে। কারণ
তারা সবর করেছিল। আর
ফেরাউন ও তার জাতি যা কিছু তৈরী করেছিল ও উচূ করছিল তা সব ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
﴿وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ
الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَىٰ قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَىٰ أَصْنَامٍ لَّهُمْ ۚ قَالُوا
يَا مُوسَى اجْعَل لَّنَا إِلَٰهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ ۚ قَالَ إِنَّكُمْ
قَوْمٌ تَجْهَلُونَ﴾
১৩৮। বনী
ইসরাঈলকে আমি সাগর পার করে দিয়েছি। তারপর
তারা চলতে চলতে এমন একটি জাতির কাছে উপস্থিত হলো যারা নিজেদের কতিপয় মূর্তির
পূজায় লিপ্ত ছিল। বনী
ইসরাঈল বলতে লাগলোঃ হে মূসা! এদের মাবূদের মত আমাদের
জন্যো একটা মাবূদ বানিয়ে দাও।৯৮ মূসা বললোঃ তোমরা বড়ই
অজ্ঞের মত কথা বলছো।
﴿إِنَّ هَٰؤُلَاءِ مُتَبَّرٌ
مَّا هُمْ فِيهِ وَبَاطِلٌ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
১৩৯। এরা যে
পদ্ধতির অনুসরণ করছে তাতে ধ্বংস হবে এবং যে কাজ এরা করেছে তা সম্পূর্ণ বাতিল।
﴿قَالَ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِيكُمْ
إِلَٰهًا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ﴾
১৪০। মূসা
আরো বললোঃ আমি কি তোমাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ খুজবো? অথচ আল্লাহই সারা দুনিয়ার
সমস্ত জাতি গোষ্ঠির ওপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
﴿وَإِذْ أَنجَيْنَاكُم مِّنْ
آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ ۖ يُقَتِّلُونَ أَبْنَاءَكُمْ
وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُم بَلَاءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ﴾
১৪১। আর (আল্লাহ বলেন) সেই সময়ের কথা স্মরণ করো যখন
আমি ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি
দিতো, তোমাদের
ছেলেদের হত্যা করতো এবং মেয়েদের জীবিত রাখতো। আর এর
মধ্যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য ছিল মহা পরীক্ষা।
﴿وَوَاعَدْنَا مُوسَىٰ ثَلَاثِينَ
لَيْلَةً وَأَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيقَاتُ رَبِّهِ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ۚ وَقَالَ
مُوسَىٰ لِأَخِيهِ هَارُونَ اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ
الْمُفْسِدِينَ﴾
১৪২। মূসাকে
আমি তিরিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের ওপর) ডাকলাম এবং পরে দশ দিন আরো বাড়িয়ে দিলাম। এভাবে
তার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো।৯৯ যাওয়ার সময় মূসা তার ভাই
হারুনকে বললোঃ আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার জাতির মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সঠিক কাজ করতে থাকবে এবং
বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথে চলবে না।১০০
﴿وَلَمَّا جَاءَ مُوسَىٰ لِمِيقَاتِنَا
وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ ۚ قَالَ لَن تَرَانِي
وَلَٰكِنِ انظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي ۚ فَلَمَّا
تَجَلَّىٰ رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًا ۚ فَلَمَّا
أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১৪৩। অতপর
মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন তখন সে
আকূল আবেদন জানালো, হে প্রভু! আমাকে
দর্শনের শক্তি দাও, আমি তোমাকে দেখবো।তিনি
বললেনঃ তুমি আমাকে দেখতেপারো না। হাঁ
সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও। সেটি যদি
নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যি তুমি আমাকে দেখতে পাবে। কাজেই
তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং
মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো। সংজ্ঞা
ফিরে পেয়ে মূসা বললোঃ পাক-পবিত্র তোমার সত্তা। আমি
তোমার কাছে তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন।
﴿قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنِّي
اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالَاتِي وَبِكَلَامِي فَخُذْ مَا آتَيْتُكَ وَكُن
مِّنَ الشَّاكِرِينَ﴾
১৪৪। বললেন হে
মূসা! আমি সমস্ত লোকদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে তোমাকে
নির্বাচিত করেছি যেন আমার নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে পারো এবং আমার সাথে কথা
বলতে পারো। কাজেই
আমি তোমাকে যা কিছু দেই তা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।
﴿وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الْأَلْوَاحِ
مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْعِظَةً وَتَفْصِيلًا لِّكُلِّ شَيْءٍ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَأْمُرْ
قَوْمَكَ يَأْخُذُوا بِأَحْسَنِهَا ۚ سَأُرِيكُمْ دَارَ الْفَاسِقِينَ﴾
১৪৫। এরপর আমি
মূসাকে কতকগুলো ফলকে জীবনের সকল বিভাগ সম্পর্কে উপদেশ এবং প্রত্যেকটি দিক
সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ লিখে দিলাম১০১ এবং তাকে বললামঃ “এগুলো
শক্ত হাতে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার জাতিকে এর উত্তম তাৎপর্যের অনুসরণ করার
হুকুম দাও।১০২ শীঘ্রই আমি তোমাদের দেখাবো
ফাসেকদের গৃহ।”১০৩
﴿سَأَصْرِفُ عَنْ آيَاتِيَ
الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَإِن يَرَوْا كُلَّ آيَةٍ
لَّا يُؤْمِنُوا بِهَا وَإِن يَرَوْا سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا
وَإِن يَرَوْا سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ
كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ﴾
১৪৬। কোন
প্রকার অধিকার ছাড়াই যারা পৃথিবীতে বড়াই করে বেড়ায়,১০৪ শীঘ্রই আমার নিদর্শনসমূহ থেকে
আমি তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবো। তারা
আমার যে কোন নিদর্শন দেখলেও তার প্রতি ঈমান আনবে না। তাদের
সামনে যদি সোজা পথ এসে যায় তাহলে তারা তা গ্রহণ করবেনা। আর যদি
বাঁকা পথ দেখতে পায় তাহলে তারা ওপর চলতে আরম্ভ করবে। কারণ
তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং সেগুলোর ব্যাপারে বেপরোয়া থেকেছে।
﴿وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا
وَلِقَاءِ الْآخِرَةِ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ ۚ هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا
كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
১৪৭। আমার
নিদর্শনসমূহকে যারাই মিথ্যা বলছে এবং আখেরাতের সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেছে তাদের
সমস্ত কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়ে গেছে।১০৫ যেমন কর্ম তেমন ফল-এ ছাড়া
লোকেরা কি আর কোন প্রতিদান পেতে পারে?
﴿وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَىٰ
مِن بَعْدِهِ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهُ خُوَارٌ ۚ أَلَمْ يَرَوْا
أَنَّهُ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًا ۘ اتَّخَذُوهُ وَكَانُوا
ظَالِمِينَ﴾
১৪৮। মূসার
অনুপস্থিতিতে১০৬ তার জাতির লোকেরা নিজেদের
অলংকার দিয়ে বাছুরের মুর্তি তৈরী করলো। তার মুখ
দিয়ে গরুর মত হাম্বা রব বের হতো। তারা কি
দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথাও বলে না আর কোন ব্যাপারে
তাদের কে পথনির্দেশনাও দেয় না? কিন্তু এরপর ও তাকে মাবুদে পরিণত করলো। বস্তুত
তারা ছিল বড়ই জালেম।১০৭
﴿وَلَمَّا سُقِطَ فِي أَيْدِيهِمْ
وَرَأَوْا أَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّوا قَالُوا لَئِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ
لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾
১৪৯। তারপর
যখন তাদের প্রতারণার জাল ছিন্ন হয়ে গেলো এবং তারা দেখতে পেলো যে, আসলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে
তখন বলতে লাগলোঃ যদি আমাদের রব আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না
করেন, তাহলে আমরা
ধ্বংস হয়ে যাবো।
﴿وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰ
إِلَىٰ قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُونِي مِن بَعْدِي ۖ أَعَجِلْتُمْ
أَمْرَ رَبِّكُمْ ۖ وَأَلْقَى الْأَلْوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِ يَجُرُّهُ
إِلَيْهِ ۚ قَالَ ابْنَ أُمَّ إِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُونِي وَكَادُوا
يَقْتُلُونَنِي فَلَا تُشْمِتْ بِيَ الْأَعْدَاءَ وَلَا تَجْعَلْنِي مَعَ الْقَوْمِ
الظَّالِمِينَ﴾
১৫০। ওদিকে
মূসা ফিরে এলেন তার জাতির কাছে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ অবস্থায়। এসেই
বললেনঃ আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার বড়ই নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করছো! তোমরা কি নিজেদের রবের হুকুমের অপেক্ষা করার মত এতটুকু সবরও করতে পারলে না? সে ফলকগুলো ছুঁড়ে দিল এবং
নিজের ভাইয়ের (হারুন) মাথার
চুল ধরে টেনে আনলো। হারুন
বললোঃ হে আমার সহোদর! এ লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে
ফেলেছিল এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম করেছিল। কাজেই
তুমি শত্রুর কাছে আমাকে হাস্যম্পদ করো না এবং আমাকে এ জালেম সম্প্রদায়ের
অন্তর্ভুক্ত করো না।১০৮
﴿قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي
وَلِأَخِي وَأَدْخِلْنَا فِي رَحْمَتِكَ ۖ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ﴾
১৫১। তখন মূসা
বললোঃ হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং
তোমার অনুগ্রহের মধ্যে আমাদের দাখিল করে নাও, তুমি সবচাইতে বেশী
অনুগ্রহকারী।
﴿إِنَّ الَّذِينَ اتَّخَذُوا
الْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَكَذَٰلِكَ
نَجْزِي الْمُفْتَرِينَ﴾
১৫২। (জওয়াবে
বলা হলো) যারা বাছুরকে মাবুদ বানিয়েছে তারা
নিশ্চয়ই নিজেদের রবের ক্রোধের শিকার হবেই এবং দুনিয়ার জীবন লাঞ্ছিত হবে। মিথ্যা
রচনাকারীদেরকে আমি এমনি ধরনের শাস্তিই দিয়ে থাকি।
﴿وَالَّذِينَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ
ثُمَّ تَابُوا مِن بَعْدِهَا وَآمَنُوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
১৫৩। আর যারা
খারাপ কাজ করে তারপর তাওবা করে নেয় এবং ঈমান আনে, এ ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে এ
তাওবা ও ঈমানের পর তোমার রব ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
﴿وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى
الْغَضَبُ أَخَذَ الْأَلْوَاحَ ۖ وَفِي نُسْخَتِهَا هُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِينَ
هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ﴾
১৫৪। তারপর
মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলে সে ফলকগুলি উঠিয়ে নিল। যারা
নিজেদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য ঐ সব ফলকে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত।
﴿وَاخْتَارَ مُوسَىٰ قَوْمَهُ
سَبْعِينَ رَجُلًا لِّمِيقَاتِنَا ۖ فَلَمَّا أَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ قَالَ
رَبِّ لَوْ شِئْتَ أَهْلَكْتَهُم مِّن قَبْلُ وَإِيَّايَ ۖ أَتُهْلِكُنَا
بِمَا فَعَلَ السُّفَهَاءُ مِنَّا ۖ إِنْ هِيَ إِلَّا فِتْنَتُكَ تُضِلُّ
بِهَا مَن تَشَاءُ وَتَهْدِي مَن تَشَاءُ ۖ أَنتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا
وَارْحَمْنَا ۖ وَأَنتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ﴾
১৫৫। আর মূসা (তার সাথে) আমার নির্ধারিত সময়ে হাযির হবার
জন্যে নিজের জাতির সত্তর জন লোককে নির্বাচিত করলো।১০৯ যখন তারা একটি ভয়াবহ
ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলো তখন মূসা বললোঃ হে প্রভূ! তুমি
চাইলে আগেই এদেরকে ও আমাকে ধ্বংস করে দিতে পারতে। আমাদের
মধ্য থেকে কিছু নির্বোধ লোক যে অপরাধ করেছিল সে জন্যে কি তুমি আমাদের সবাইকে
ধ্বংস করে দেবে? এটি তো ছিল তোমার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা, এর মাধ্যমে তুমি যাকে চাও
পথভ্রষ্ট করো আবার যাকে চাও হেদায়াত দান করো।১১০ তুমিই তো আমাদের অভিভাবক। কাজেই
আমাদের মাফ করে দাও এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করো। ক্ষমাশীলদের
মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ।
﴿وَاكْتُبْ لَنَا فِي هَٰذِهِ
الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ إِنَّا هُدْنَا إِلَيْكَ ۚ قَالَ عَذَابِي
أُصِيبُ بِهِ مَنْ أَشَاءُ ۖ وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ ۚ فَسَأَكْتُبُهَا
لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُم بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ﴾
১৫৬। আর
আমাদের জন্য এ দুনিয়ার কল্যাণ লিখে দাও এবং আখেরাতেরও, আমরা তোমার দিকে ফিরেছি। জওয়াবে
বলা হলোঃ শাস্তি তো আমি যাকে চাই তাকে দিয়ে থাকি কিন্তু আমার অনুগ্রহ সব জিনিসের
ওপর পরিব্যপ্ত হয়ে আছে।১১১ কাজেই তা আমি এমন লোকদের
নামে লিখবো যারা নাফরমানী থেকে দূরে থাকবে, যাকাত দেবে এবং আমার আয়াতের
প্রতি ঈমান আনবে।
﴿الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ
النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ
وَالْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُحِلُّ
لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ
وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ ۚ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ
وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنزِلَ مَعَهُ ۙ أُولَٰئِكَ
هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
১৫৭। (আজ তারাই
এ রহমতের অংশীদার)যারা এ প্রেরিত উম্মী নবীর আনুগত্য করে,১১২ যার উল্লেখ নিকট এখানে তাওরাত
ও ইনজীলে লিখিত অবস্থায় পাওয়া যায়।১১৩ সে তাদের সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজের থেকে বিরত রাখে, তাদের জন্য পাক পবিত্র
জিনিসগুলো হালাল ও নাপাক জিনিসগুলো হারাম করে১১৪ এবং তাদের ওপর থেকে এমন সব
বোঝা নামিয়ে দেয়।যা তাদের ওপর চাপানো ছিল আর এমন সব বাঁধন
থেকে তাদেরকে মুক্ত করে যাতে করে আবদ্ধ ছিল।১১৫ কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান
আনে, তাকে
সাহায্য সহায়তা দান করে এবং তার সাথে অবতীর্ণ আলোকে রশ্মির অনুসরণ করে তারাই
সফলতা লাভের অধিকারী।
﴿قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ
إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ لَا
إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ
تَهْتَدُونَ﴾
১৫৮। হে
মুহাম্মাদ! বলে দাও,হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের জন্য সেই
আল্লাহর রাসূল হিসেবে এসেছি, যিনি পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলীর সার্বভৌম
কর্তৃত্বের অধিকারী। তিনি
ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই
জীবন দান করেন এবং তিনি মৃত্যু ঘটান। কাজেই
ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তার প্রেরিত সেই নিরক্ষর নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীর প্রতি
ঈমান আনে এবং তার আনুগত্য করে। আশা করা
যায়,এভাবে
তোমরা সঠিক পথ পেয়ে যাবে।
﴿وَمِن قَوْمِ مُوسَىٰ أُمَّةٌ
يَهْدُونَ بِالْحَقِّ وَبِهِ يَعْدِلُونَ﴾
১৫৯। মূসার১১৬ জাতির মধ্যে এমন একটি দলও ছিল
যারা সত্য অনুযায়ী পথনির্দেশ দিতো এবং সত্য অনুযায়ী ইনসাফ করতো।১১৭
﴿وَقَطَّعْنَاهُمُ اثْنَتَيْ
عَشْرَةَ أَسْبَاطًا أُمَمًا ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ إِذِ اسْتَسْقَاهُ
قَوْمُهُ أَنِ اضْرِب بِّعَصَاكَ الْحَجَرَ ۖ فَانبَجَسَتْ مِنْهُ اثْنَتَا
عَشْرَةَ عَيْنًا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْ ۚ وَظَلَّلْنَا
عَلَيْهِمُ الْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْهِمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا
مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ
يَظْلِمُونَ﴾
১৬০। আর তার
জাতিকে আমি বারোটি পরিবারে বিভক্ত করে তাদেরকে স্বতন্ত্র গোত্রের রূপ দিয়েছিলাম।১১৮ আর যখন মূসার কাছে তার জাতি
পানি চাইলো তখন আমি তাকে ইঙ্গিত করলাম,অমুক পাথরে তোমরা লাঠি দিয়ে আঘাত করো। ফলে সেই
পাথরটি থেকে অকস্মাত বারোটি ঝরণাধারা প্রবাহিত হলো এবং প্রত্যকটি দল তাদের পানি গ্রহণ
করার জায়গা নির্দিষ্ট করে নিল।আমি তাদের
ওপর মেঘমালার ছায়া দান করলাম এবং তাদের ওপর অবতীর্ণ করলাম মান্না ও সালওয়া১১৯ -যেসব ভাল ও পাক জিনিস
তোমাদের দিয়েছি সেগুলো খাও। কিন্তু
এরপর তারা যা কিছু করেছে তাতে আমার ওপর জুলুম করেনি বরং নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম
করেছে।
﴿وَإِذْ قِيلَ لَهُمُ اسْكُنُوا
هَٰذِهِ الْقَرْيَةَ وَكُلُوا مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ وَقُولُوا حِطَّةٌ وَادْخُلُوا
الْبَابَ سُجَّدًا نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطِيئَاتِكُمْ ۚ سَنَزِيدُ الْمُحْسِنِينَ﴾
১৬১। স্মরণ
করো১২০ সেই সময়ের কথা যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, এ জনপদে গিয়ে বসবাস করো, সেখানে উৎপাদিত ফসল থেকে
নিজেদের ইচ্ছামত আহার্য করো, হিত্তাতুন,হিত্তাতুন বলতে বলতে যাও এবং
শহরের দরজা দিয়ে সিজদানত হয়ে প্রবেশ করতে থাকো। তাহলে
আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবো এবং সৎকর্মপরায়ণদেরকে অতিরিক্ত অনুগ্রহ দান
করবো।
﴿فَبَدَّلَ الَّذِينَ ظَلَمُوا
مِنْهُمْ قَوْلًا غَيْرَ الَّذِي قِيلَ لَهُمْ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِجْزًا مِّنَ
السَّمَاءِ بِمَا كَانُوا يَظْلِمُونَ﴾
১৬২। কিন্তু
তাদের মধ্যে যারা জালেম ছিল তারা তাদেরকে যে কথা বলা হয়েছিল তা পরিবর্তিত করে
ফেললো। এর ফলে তাদের জুলুমের
বদলায় আমি আকাশ থেকে তাদের প্রতি আযাব পাঠিয়ে দিলাম।১২১
﴿وَاسْأَلْهُمْ عَنِ الْقَرْيَةِ
الَّتِي كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِي السَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ
حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ ۙ لَا
تَأْتِيهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَبْلُوهُم بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ﴾
১৬৩। আর
সমুদ্রের তীরে যে জনপদটি অবস্থিত ছিল তার অবস্থা সম্পর্কেও তাদেরকে একটু জিজ্ঞেস
করো।১২২ তাদের সেই ঘটনার কথা স্মরণ
করিয়ে দাও যে, সেখানকার
লোকেরা শনিবারে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতো এবং শনিবারেই মাছেরা পানিতে ভেসে ভেসে
তাদের সামনে আসতো।১২৩ অথচ শনিবার ছাড়া অন্য দিন
আসতো না। তাদের নাফরমানীর কারণে তাদেরকে
আমি ক্রমাগত পরীক্ষার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছিলাম বলেই এমনটি হতো।১২৪
﴿وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ
لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا ۙ اللَّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا
شَدِيدًا ۖ قَالُوا مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ﴾
১৬৪। আর তাদের
একথাও স্মরণ করিয়ে দাও, যখন তাদের একটি দল অন্য দলকে বলেছিল, তোমরা এমন লোকদের উপদেশ
দিচ্ছো কেন যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করবেন বা কঠোর শাস্তি দেবেন? জবাবে তারা বলেছিল, এসব কিছু এ জন্যেই করছি যেন
আমরা তোমাদের রবের সামনে নিজেদের ওপর পেশ করতে পারি এবং এ আশায় করছি যে, হয়তো এ লোকেরা তাঁর
নাফরমানী করা ছেড়ে দেবে।
﴿فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا
بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا
بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ﴾
১৬৫। শেষ
পর্যন্ত তাদেরকে যে সমস্ত হেদায়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিল তারা যখন সেগুলো
সম্পূর্ণ ভুলে গেলো তখন যারা খারাপ কাজে বাধা দিতো তাদেরকে আমি বাঁচিয়ে নিলাম
এবং বাকি লোক যারা দোষী ছিল তাদের নাফরমানীর জন্য তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিলাম।১২৫
﴿فَلَمَّا عَتَوْا عَن مَّا
نُهُوا عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ﴾
১৬৬। তারপর যে
কাজ থেকে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়েছিল তাই যখন তারা পূর্ণ ঔদ্ধত্যসহকারে করে যেতে
লাগলো তখন আমি বললাম, তোমরা লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।১২৬
﴿وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ
لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَن يَسُومُهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ ۗ إِنَّ
رَبَّكَ لَسَرِيعُ الْعِقَابِ ۖ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
১৬৭। আর স্মরণ
করো যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন১২৭ কিয়ামত পর্যন্ত তিনি সবসময়
বনী ইসরাঈলীদের ওপর এমন সব লোককে চাপিয়ে দিয়ে যেতে থাকবেন যারা তাদেরকে দেবে
কঠিনতম শাস্তি।১২৮ নিসন্দেহে তোমাদে রব দ্রুত
শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চিতভাবেই তিনি ক্ষমাশীল ও করুনাময়ও।
﴿وَقَطَّعْنَاهُمْ فِي الْأَرْضِ
أُمَمًا ۖ مِّنْهُمُ الصَّالِحُونَ وَمِنْهُمْ دُونَ ذَٰلِكَ ۖ وَبَلَوْنَاهُم
بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
১৬৮। আমি
তাদেরকে পৃথিবীতে খন্ড বিখন্ড করে বহু সংখ্যক জাতিতে বিভক্ত করে দিয়েছি। তাদের
মধ্যে কিছু লোক ছিল সৎ এবং কিছু লোক অন্য রকম। আর আমি
ভাল ও খারাপ অবস্থায় নিক্ষেপ করার মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষা করতে থাকি, হয়তো তারা ফিরে আসবে।
﴿فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ
خَلْفٌ وَرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَٰذَا الْأَدْنَىٰ وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ
لَنَا وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهُ يَأْخُذُوهُ ۚ أَلَمْ يُؤْخَذْ
عَلَيْهِم مِّيثَاقُ الْكِتَابِ أَن لَّا يَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ
وَدَرَسُوا مَا فِيهِ ۗ وَالدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا
تَعْقِلُونَ﴾
১৬৯। তারপর
পরবর্তী বংশদরদের পর এমন কিছু অযোগ্য লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় যারা আল্লাহর
কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়ে এ তুচ্ছ দুনিয়ার স্বার্থ আহরণে
লিপ্ত হয় এবং বলতে থাকে আশা করা যায়, আমাদের ক্ষমা করা হবে। পরক্ষনেই
সেই ধরনের পার্থিব সামগ্রী যদি আবার তাদের সামনে এসে যায় তাহলে তৎক্ষনাৎ দৌড়ে গিয়ে
তা লুফে নেয়।১২৯ তাদের কাছ থেকে কি কিতাবের
অংগীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর নামে কেবলমাত্র সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবে
না? আর কিতাবে
যা লেখা আছে তাতো তারা নিজেরাই পড়ে নিয়েছে।১৩০ আখারাতের আবাস তো আল্লাহর
ভয়ে ভীত লোকদেরই জন্য ভাল১৩১ -এতটুকু কথাও কি তোমরা বুঝো
না?
﴿وَالَّذِينَ يُمَسِّكُونَ
بِالْكِتَابِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُصْلِحِينَ﴾
১৭০। যারা
কিতাবের বিধান যথাযথভাবে মেনে চলে এবং নামায কায়েম করে, নিসন্দেহে এহেন সৎকর্মশীল
লোকেদের কর্মফল আমি নষ্ট করবো না।
﴿وَإِذْ نَتَقْنَا الْجَبَلَ
فَوْقَهُمْ كَأَنَّهُ ظُلَّةٌ وَظَنُّوا أَنَّهُ وَاقِعٌ بِهِمْ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم
بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
১৭১। তাদের কি
সেই সময়টার কথা কিছু মনে আছে যখন আমি পাহাড়কে হেলিয়ে তাদের ওপর ছাতার মত এমনভাবে
বিস্তৃত করে দিয়েছিলাম, যে তারা ধারণা করেছিল, তা বুঝি তাদের ওপর পতিত হবে? সে সময় আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমাদেরকে আমি যে কিতাব
দিচ্ছি তাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তাতে যা কিছু লেখা আছে তা স্মরণ রাখো, আশা করা যায়, তোমরা ভূল পথ অবলম্বন করা
থেকে বাঁচতে পারবে।১৩২
﴿وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِن
بَنِي آدَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ
بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَا ۛ أَن تَقُولُوا
يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَٰذَا غَافِلِينَ﴾
১৭২। আর হে
নবী!১৩৩ লোকদের স্মরণ করিয়ে দাও সেই
সময়ের কথা যখন তোমাদের রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করিয়েছিলেন
এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ আমি কি তোমাদের
রব নই? তারা
বলেছিলঃ নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব, আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি।১৩৪ এটা আমি এ জন্য করেছিলাম যাতে
কিয়ামতের দিন তোমরা না বলে বসো, আমরা তো একথা জানতাম না।
﴿أَوْ تَقُولُوا إِنَّمَا
أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِن قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِّن بَعْدِهِمْ ۖ أَفَتُهْلِكُنَا
بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُونَ﴾
১৭৩। অথবা না বলে
ওঠো, শিরকের
সূচনা তো আমাদের বাপ-দাদারা আমাদের পূর্বেই করেছিলেন এবং
পরবর্তীকালে তাদের বংশে আমাদের জন্ম হয়েছে। তবে কি
ভ্রষ্টাচারী লোকেরা যে অপরাধ করেছিল সে জন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করছো?১৩৫
﴿وَكَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ
وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
১৭৪। দেখো, এভাবে আমি নিদর্শনসমূহ
সুষ্পষ্টভাবে পেশ করে থাকি।১৩৬ আর এ জন্য করে থাকি যাতে তারা
ফিরে আসে।১৩৭
﴿وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ
الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ
مِنَ الْغَاوِينَ﴾
১৭৫। আর হে
মুহাম্মাদ! এদের সামনে সেই ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করো
যাকে আমি দান করেছিলাম আমার আয়াতের জ্ঞান।১৩৮ কিন্তু সে তা যথাযথভাবে মেনে
চলা থেকে দূরে সরে যায়। অবশেষে
শয়তান তার পিছনে লাগে। শেষ
পর্যন্ত সে বিপথগামীদের অন্তরভুক্ত হয়েই যায়।
﴿وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ
بِهَا وَلَٰكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ ۚ فَمَثَلُهُ
كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ
مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ
لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ﴾
১৭৬। আমি
চাইলে ঐ আয়াত গুলোর সাহায্যে তাকে উচ্চ মর্যাদ দান করতাম কিন্তু সে তো দুনিয়ার
প্রতিই ঝুঁকে রইল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। কাজেই তা
অবস্থা হয়ে গেল কুকুরের মত, তার ওপর আক্রমণ করলেও সে জিভ ঝুলিয়ে রাখে
আর আক্রমণ না করলেও জিভ ঝুলিয়ে রাখে।১৩৯ যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা
সাব্যস্ত করে তাদের দৃষ্টান্ত এটাই। তুমি এ
কাহিনী তাদেরকে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা-ভাবনা করবে।
﴿سَاءَ مَثَلًا الْقَوْمُ
الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَأَنفُسَهُمْ كَانُوا يَظْلِمُونَ﴾
১৭৭। যারা
আমার আয়াতকে মিথ্যা বলেছে তাদের দৃষ্টান্ত বড়ই খারাপ এবং তার নিজেরাই নিজেদের
প্রতি জুলুম চালিয়ে গেছে।
﴿مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ
الْمُهْتَدِي ۖ وَمَن يُضْلِلْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ﴾
১৭৮। আল্লাহ
যাকে সুপথ দেখান সে-ই সঠীক পথ পেয়ে যায় এবং যাকে আল্লাহ নিজের পথনির্দশনা থেকে বঞ্চিত
করেন সে-ই ব্যর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
﴿وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ
كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا
وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَٰئِكَ
كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ﴾
১৭৯। আর এটি
একটি অকাট্য সত্য যে, বহু জিন ও মানুষ এমন আছে যাদেরকে আমি
জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি।১৪০ তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা
দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না। তাদের
চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। তাদের
কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না।তারা পশুর
মত বরং তাদের চাইতেও অধম। তারা চরম
গাফলতির মধ্যে হারিয়ে গেছে।
﴿وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ
فَادْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ
مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
১৮০। ভাল
নামগুলো১৪১ আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। সুতরাং
ভাল নামেই তাঁকে ডাকো এবং তাঁর নাম রাখার ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে
যায় তাদেরকে বর্জন কর। তারা যা
কিছু করে এসেছে। তার ফল
অবশ্যি পাবে।১৪২
﴿وَمِمَّنْ خَلَقْنَا أُمَّةٌ
يَهْدُونَ بِالْحَقِّ وَبِهِ يَعْدِلُونَ﴾
১৮১। আমার
সৃষ্টির মধ্যে একটি দল এমনও আছে যে, যথার্থ সত্য অনুযায়ী
পথনির্দেশ দেয় এবং সত্য অনুযায়ী বিচার করে।
﴿وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا
سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ﴾
১৮২। আর যারা
আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলেছে তাদেরকে আমি এমন পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের দিকে
নিয়ে যাবো যে, তারা জানতেও পারবে না।
﴿وَأُمْلِي لَهُمْ ۚ إِنَّ
كَيْدِي مَتِينٌ﴾
১৮৩। আমি
তাদেরকে ঢিল দিচ্ছি। আমার
কৌশল অব্যর্থ।
﴿أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا ۗ مَا
بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ﴾
১৮৪। তারা কি
কখনো চিন্তা করে না, তাদের সাথীর ওপর উন্মাদনার কোন প্রভাব
নেই? সে তো
একজন সতর্ককারী মাত্র, (অশুভ পরিণতির উদ্ভব হবার আগেই) সুষ্পষ্টভাবে
সতর্ক করে দিচ্ছি।
﴿أَوَلَمْ يَنظُرُوا فِي مَلَكُوتِ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ وَأَنْ عَسَىٰ أَن يَكُونَ
قَدِ اقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ ۖ فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ﴾
১৮৫। তারা কি
কখনো আকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে চিন্তা করেনি এবং আল্লাহর সৃষ্ট কোন
জিনিসের দিকে চোখ মেলে তাকায়নি?১৪৩ আর তারা কি এটাও ভেবে দেখেনি
যে, সম্ভবত
তাদের জীবনের অবকাশেকাল পূর্ণ হবার সময় ঘনিয়ে এসেছে?১৪৪
﴿مَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَا
هَادِيَ لَهُ ۚ وَيَذَرُهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ﴾
১৮৬। তাহলে
নবীর এ সতর্কীকরণের পর আর এমন কি কথা থাকতে পারে যার প্রতি তারা ঈমান আনবে?আল্লাহ যাকে পথনির্দশনা থেকে
বঞ্চিত করেন তার জন্যে আর কোন পথ নির্দেশক নেই। আর
আল্লাহ তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবার জন্যে ছেড়ে দেন।
﴿يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ
أَيَّانَ مُرْسَاهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي ۖ لَا
يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا
تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ
إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾
১৮৭। তারা
তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিয়ামত কবে ও কখন হবে? বলে দাও, একমাত্র আমার রবই এর জ্ঞান
রাখেন। সঠিক সময়ে তিনিই তা প্রকাশ করবেন। আকাশ ও
পৃথিবীতে তা হবে ভয়ংকর কঠিন সময়। সহসাই তা
তোমাদের ওপর এসে পড়বে। তারা
তোমার কাছে এ ব্যাপারে এমনভাবে জিজ্ঞেস করছে যেন তুমি তার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছ? বলে দাও, একমাত্র আল্লাহরই এর জ্ঞান
রাখেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক এ সত্যটি
জানে না।
﴿قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي
نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ
الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ ۚ إِنْ
أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ﴾
১৮৮। হে
মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো,নিজের জন্য লাভ-ক্ষতির কোন
ইখতিয়ার আমার নেই। একমাত্র
আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়। আর যদি
আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে
পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না।১৪৫ আমি তো যারা আমার কথা মেনে
নেয় তাদের জন্য নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা মাত্র।
﴿هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن
نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ۖ فَلَمَّا
تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ ۖ فَلَمَّا أَثْقَلَت
دَّعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا صَالِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ﴾
১৮৯। আল্লাহই
তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে এবং তারই প্রজাতি থেকে তার জুড়ি বানিয়েছেন, যাতে করে তার কাছে প্রশান্তি
লাভ করতে পারে।তারপর যখন পুরুষ নারীকে ঢেকে ফেলে তখন সে
হালকা গর্ভধারণ করে। তাকে বহন
করে সে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন
ভারি হয়ে যায় তখন তারা দুজনে মিলে এক সাথে তাদের রব আল্লাহর কাছো দোয়া করেঃ যদি
তুমি আমাদের একটি ভাল সন্তান দাও তাহলে আমরা তোমার শোকরগুজারী করবো।
﴿فَلَمَّا آتَاهُمَا صَالِحًا
جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آتَاهُمَا ۚ فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
১৯০। কিন্তু
যখন আল্লাহ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করেন,তখন তারা তাঁর এ দান ও
অনুগ্রহে অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করতে থাকে। তারা
যেসব মুশরিকী কথাবার্তা বলে আল্লাহ তার অনেক উর্ধে।১৪৬
﴿أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ
شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ﴾
১৯১। কি ধরনের
নির্বোধ লোক এরা! আল্লাহর শরীক গণ্য করে তাদেরকে, যা কোন জিনিস সৃষ্টি করেনি
বরং নিজেরাই সৃষ্ট।
﴿وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ
نَصْرًا وَلَا أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ﴾
১৯২। যারা
তাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এবং নিজেরাও নিজেদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না।
﴿وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى
الْهُدَىٰ لَا يَتَّبِعُوكُمْ ۚ سَوَاءٌ عَلَيْكُمْ أَدَعَوْتُمُوهُمْ أَمْ
أَنتُمْ صَامِتُونَ﴾
১৯৩। যদি
তোমরা তাদেরকে সত্য-সরল পথে আসার দাওয়াত দাও তাহলে তারা
তোমাদের পেছনে আসবে না, তোমরা তাদেরকে ডাকো বা চুপ করে থাকো
উভয় অবস্থায়ই ফল তোমাদের জন্য সমানই থাকবে।১৪৭
﴿إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ
مِن دُونِ اللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ۖ فَادْعُوهُمْ فَلْيَسْتَجِيبُوا
لَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾
১৯৪। তোমরা
আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকো তারা তো তোমাদের মতই বান্দা। তাদের
কাছে দোয়া চেয়ে দেখো, তাদের সম্পর্কে তোমাদের ধারণা যদি সত্য
হয়ে থাকে, তবে তারা তোমাদের
দোয়ায় সাড়া দিক। তাদের কি পা আছে, যা দিয়ে তারা চলতে পারে?
﴿أَلَهُمْ أَرْجُلٌ يَمْشُونَ
بِهَا ۖ أَمْ لَهُمْ أَيْدٍ يَبْطِشُونَ بِهَا ۖ أَمْ لَهُمْ أَعْيُنٌ
يُبْصِرُونَ بِهَا ۖ أَمْ لَهُمْ آذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا ۗ قُلِ
ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ كِيدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ﴾
১৯৫। তাদের কি
হাত আছে যা দিয়ে তারা ধরতে পারে? তাদের কি চোখ আছে যা সাহায্যে তারা দেখতে
পারে? তাদের কি
কান আছে যা দিয়ে তারা শুনতে পারে?১৪৮ হে মুহাম্মাদ! এদেরকে
বলো, তোমাদের
বানানো শরীকদেরকে ডেকে নাও তারপর তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করো
এবং আমাকে একদম অবকাশ দিয়ো না।
﴿إِنَّ وَلِيِّيَ اللَّهُ
الَّذِي نَزَّلَ الْكِتَابَ ۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِينَ﴾
১৯৬। আমার
সহায় ও সাহায্যকারী সেই আল্লাহ যিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং তিনি সৎ লোকদের
সহায়তা করে থাকেন।১৪৯
﴿وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن
دُونِهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلَا أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ﴾
১৯৭। অন্যদিকে
তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডেকে থাকো তারা তোমাদের ও সাহায্য করতে পারে
না এবং নিজেরাও নিজেদের সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না।
﴿وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى
الْهُدَىٰ لَا يَسْمَعُوا ۖ وَتَرَاهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ وَهُمْ لَا
يُبْصِرُونَ﴾
১৯৮। বরং
তোমরা যদি তাদেরকে সত্য-সঠিক পথে আসতে বলো তাহলে তারা তোমাদের কথা শুনতেও পাবে
না। বাহ্যত তোমরা দেখছো, তারা তোমাদের দিকে তাকিয়ে
আছে কিন্তু আসলে তারা কিছুই দেখছে না।
﴿خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ
بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ﴾
১৯৯। হে নবী! কোমলতা ও ক্ষমার পথ অবলম্বন করো। সৎকাজের
উপদেশ দিতে থাকো এবং মূর্খদের সাথে বিতর্কে জড়িও না।
﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ
الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۚ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾
২০০। যদি
কখনো শয়তান তোমাকে উত্তেজিত করে তাহলে আল্লাহর আশ্রয় চাও। তিনি
সবকিছু শোনেন এবং জানেন।
﴿إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا
إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ﴾
২০১। প্রকৃতপক্ষে
যারা মুক্তাকী, তাদেরকে যদি কখনো শয়তানের প্রভাবে অসৎ চিন্তা
স্পর্শও করে যায় তাহলে তারা তখনই সতর্ক হয়ে উঠে তারপর তারা নিজেদের সঠিক
কর্মপদ্ধতি পরিষ্কার দেখতে পায়।
﴿وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ
فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ﴾
২০২। আর তাদের
অর্থাৎ (শয়তানের) ভাই-বন্ধুরা
তো তাদেরকে তাদের বাঁকা পথেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করার
ব্যাপারে তারা কোন ত্রুটি করে না।১৫০
﴿وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِم بِآيَةٍ
قَالُوا لَوْلَا اجْتَبَيْتَهَا ۚ قُلْ إِنَّمَا أَتَّبِعُ مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ
مِن رَّبِّي ۚ هَٰذَا بَصَائِرُ مِن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّقَوْمٍ
يُؤْمِنُونَ﴾
২০৩। হে
নবী!যখন তুমি তাদের সামনে কোন নিদর্শন (অর্থাৎ
মুজিযা)পেশ করো না তখন তারা বলে, তুমি নিজের জন্য কোন নিদর্শন
বেছে নাওনি কেন?১৫১ তাদেরকে বলে দাও, আমি তো কেবল সেই অহীরই
আনুগত্য করি যা আমার রব আমার কাছে পাঠান। এটি তো
অন্তরদৃষ্টির আলো তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং হেদায়াত ও রহমত তাদের জন্য যারা
একে গ্রহণ করে।১৫২
﴿وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ
فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾
২০৪। যখন
কুরআন, তোমাদের
সামনে পড়া হয়, তা শোনো
মনোযোগ সহকারে এবং নীরব থাকো, হয়তো তোমাদের প্রতিও রহমত বর্ষিত হবে।১৫৩
﴿وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ
تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا
تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ﴾
২০৫। হে নবী!তোমার
রবকে স্মারণ করো সকাল-সাঁঝে মনে মনে কান্নাজড়িত স্বরে ও ভীতি বিহ্বল চিত্তে এবং
অনুচ্চ কণ্ঠে। তুমি
তাদের অন্তরভুক্ত হয়ো না যারা গাফলতির মধ্যে ডুবে আছে।১৫৪
﴿إِنَّ الَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ
لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُونَ ﴾
২০৬। তোমার
রবের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে অবস্থানকারী ফেরেশতাগণ কখনো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে
তাঁর ইবাদতে বিরত হয় না১৫৫ বরঞ্চ তারা তাঁরই মহিমা
ঘোষণা করে১৫৬ এবং তাঁর সামনে বিনত থাকে।১৫৭
--- সমাপ্ত ---
কোন মন্তব্য নেই
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।