০২৮. সূরা আল কাসাস
আয়াতঃ ৮৮; রুকুঃ ০৯; মাক্কী
﴿بِسْمِ اللَّهِ
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে
﴿طسم﴾
১। ত্বা-সীন-মীম।
﴿تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ
الْمُبِينِ﴾
২। এগুলো
সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
﴿نَتْلُو عَلَيْكَ مِن نَّبَإِ
مُوسَىٰ وَفِرْعَوْنَ بِالْحَقِّ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ﴾
৩। আমি মূসা
ও ফেরাউনের কিছু যথাযথ বৃত্তান্ত তোমাকে শুনাচ্ছি১ এমনসব লোকদের সুবিধার্থে যারা
ঈমান আনে।২
﴿إِنَّ فِرْعَوْنَ عَلَا فِي
الْأَرْضِ وَجَعَلَ أَهْلَهَا شِيَعًا يَسْتَضْعِفُ طَائِفَةً مِّنْهُمْ يُذَبِّحُ
أَبْنَاءَهُمْ وَيَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ﴾
৪। প্রকৃত
ঘটনা হচ্ছে, ফেরাউন
পৃথিবীতে বিদ্রোহ করে৩ এবং তার
অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়।৪ তাদের মধ্য থেকে একটি দলকে সে
লাঞ্ছিত করতো,তাদের
ছেলেদের হত্যা করতো এবং মেয়েদের জীবিত রাখতো।৫ আসলে সে বিপর্যয়
সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
﴿وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى
الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ﴾
৫। আমি
সংকল্প করেছিলাম, যাদেরকে
পৃথিবীতে লাঞ্ছিত করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবো,তাদেরকে নেতৃত্ব দান করবো,(৬ তাদেরকেই
উত্তরাধিকারী করবো৭
﴿وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ
وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ﴾
৬। পৃথিবীতে
তাদেরকে কর্তৃত্ব দান করবো। এবং তাদের থেকে ফেরাউন, হামান৮ ও তার সৈন্যদেরকে সে সবকিছুই
দেখিয়ে দেবো, যার আশংকা
তারা করতো।
﴿وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّ
مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ ۖ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا
تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي ۖ إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ﴾
৭। আমি৯ মূসার মাকে ইশারা করলাম, “একে স্তন্যদান করো, তারপর যখন এর প্রাণের ভয় করবে
তখন একে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেবে এবং কোন ভয় ও দুঃখ করবে না, তাকে তোমারই কাছে ফিরিয়ে আনবো
এবং তাকে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করবো।”১০
﴿فَالْتَقَطَهُ آلُ فِرْعَوْنَ
لِيَكُونَ لَهُمْ عَدُوًّا وَحَزَنًا ۗ إِنَّ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا
كَانُوا خَاطِئِينَ﴾
৮। শেষ
পর্যন্ত ফেরাউনের পরিবারবর্গ তাকে (দরিয়া থেকে)
উঠিয়ে নিল,যাতে সে
তাদের শত্রু এবং তাদের দুঃখের কারণ হয়।১১ যথার্থই ফেরাউন, হামান ও তার সৈন্যরা (তাদের
ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ) ছিল বড়ই অপরাধী।
﴿وَقَالَتِ امْرَأَتُ فِرْعَوْنَ
قُرَّتُ عَيْنٍ لِّي وَلَكَ ۖ لَا تَقْتُلُوهُ عَسَىٰ أَن يَنفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ
وَلَدًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾
৯। ফেরাউনের
স্ত্রী (তাকে) বললো, “এ শিশুটি আমার ও তোমার চোখ
জুড়িয়েছে। কাজেই একে হত্যা করো না, বিচিত্র কি সে আমাদের জন্য
উপকারী প্রমাণিত হতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান
হিসেবেই গ্রহণ করতে পারি।”১২ আর তারা (এর পরিণাম) জানতো না।
﴿وَأَصْبَحَ فُؤَادُ أُمِّ
مُوسَىٰ فَارِغًا ۖ إِن كَادَتْ لَتُبْدِي بِهِ لَوْلَا أَن رَّبَطْنَا عَلَىٰ قَلْبِهَا
لِتَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১০। ওদিকে
মূসার মায়ের মন অস্থির হয়ে পড়েছিল। সে তার
রহস্য প্রকাশ করে দিতো যদি আমি তার মন সুদৃঢ় না করে দিতাম, যাতে সে (আমার অংগীকারের
প্রতি) বিশ্বাস স্থাপনকারীদের একজন হয়।
﴿وَقَالَتْ لِأُخْتِهِ قُصِّيهِ
ۖ فَبَصُرَتْ بِهِ عَن جُنُبٍ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾
১১। সে শিশুর
বোনকে বললো, এর পিছনে
পিছনে যাও। কাজেই সে তাদের (শত্রুদের ) অজ্ঞাতসারে
তাকে দেখতে থাকলো।১৩
﴿وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ الْمَرَاضِعَ
مِن قَبْلُ فَقَالَتْ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ أَهْلِ بَيْتٍ يَكْفُلُونَهُ لَكُمْ
وَهُمْ لَهُ نَاصِحُونَ﴾
১২। আর আমি
পূর্বেই শিশুর জন্য স্তন্য দানকারিনীদের স্তন পান হারাম করে রেখেছিলাম।১৪ (এ অবস্থা দেখে) সে মেয়েটি তাদেরকে বললো, “আমি তোমাদের এমন পরিবারের
সন্ধান দেবো যারা এর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবে এবং এর কল্যাণকামী হবে?”১৫
﴿فَرَدَدْنَاهُ إِلَىٰ أُمِّهِ
كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ وَلِتَعْلَمَ أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَٰكِنَّ
أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾
১৩। এভাবে আমি
মূসাকে১৬ তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে আনলাম, যাতে তার চোখ শীতল হয়, সে দুঃখ ভারাক্রান্ত না হয়
এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য বলে জেনে নেয়।১৭ কিন্তু অধিকাংশ লোক একথা
জানে না।
﴿وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ
وَاسْتَوَىٰ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ﴾
১৪। মূসা যখন
পূর্ণ যৌবনে পৌঁছে গেলো এবং তার বিকাশ পূর্ণতা লাভ করলো১৮ তখন আমি তাকে হুকুম ও জ্ঞান
দান করলাম,১৯ সৎলোকদেরকে আমি এ ধরনেরই
প্রতিদান দিয়ে থাকে।
﴿وَدَخَلَ الْمَدِينَةَ عَلَىٰ
حِينِ غَفْلَةٍ مِّنْ أَهْلِهَا فَوَجَدَ فِيهَا رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِ هَٰذَا مِن
شِيعَتِهِ وَهَٰذَا مِنْ عَدُوِّهِ ۖ فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِي مِن شِيعَتِهِ عَلَى الَّذِي
مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوسَىٰ فَقَضَىٰ عَلَيْهِ ۖ قَالَ هَٰذَا مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ
ۖ إِنَّهُ عَدُوٌّ مُّضِلٌّ مُّبِينٌ﴾
১৫।
(একদিন) সে শহরে এমন সময় প্রবেশ করলো যখন
শহরবাসী উদাসীন ছিল।২০ সেখানে সে দেখলো দু’জন লোক
লড়াই করছে। একজন তার নিজের সম্প্রদায়ের এবং অন্যজন
তার শত্রু সম্প্রদায়ের। তার সম্প্রদায়ের লোকটি
শত্রু সম্প্রদায়ের লোকটির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার জন্য ডাক দিল। মূসা তাকে
একটি ঘুষি মারলো২১ এবং তাকে
মেরে ফেললো। (এ কাণ্ড ঘটে যেতেই) মূসা বললো, “এটা শয়তানের কাজ, সে ভয়ংকর শত্রু এবং প্রকাশ্য
পথভ্রষ্টকারী।”২২
﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ
نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَغَفَرَ لَهُ ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ﴾
১৬। তারপর সে
বলতে লাগলো, “হে আমার
রব! আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও?”২৩ তখন আল্লাহ
তাকে ক্ষমা করে দিলেন তিনি ক্ষমাশীল মেহেরবান।২৪
﴿قَالَ رَبِّ بِمَا أَنْعَمْتَ
عَلَيَّ فَلَنْ أَكُونَ ظَهِيرًا لِّلْمُجْرِمِينَ﴾
১৭। মূসা শপথ
করলো, “হে আমার
রব! তুমি আমার প্রতি এই যে অনুগ্রহ করেছো২৫ এরপর আমি আর অপরাধীদের
সাহায্যকারী হবো না।”২৬
﴿فَأَصْبَحَ فِي الْمَدِينَةِ
خَائِفًا يَتَرَقَّبُ فَإِذَا الَّذِي اسْتَنصَرَهُ بِالْأَمْسِ يَسْتَصْرِخُهُ ۚ قَالَ
لَهُ مُوسَىٰ إِنَّكَ لَغَوِيٌّ مُّبِينٌ﴾
১৮। দ্বিতীয়
দিন অতি প্রত্যুষে সে ভয়ে ভয়ে এবং সর্বদিক থেকে বিপদের আশংকা করতে করতে শহরের
মধ্যে চলছিল। সহসা দেখলো কি, সেই ব্যক্তি যে গতকাল
সাহায্যের জন্য তাকে ডেকেছিল আজ আবার তাকে ডাকছে। মূসা
বললো, “তুমি তো
দেখছি স্পষ্টতই বিভ্রান্ত।”২৭
﴿فَلَمَّا أَنْ أَرَادَ أَن
يَبْطِشَ بِالَّذِي هُوَ عَدُوٌّ لَّهُمَا قَالَ يَا مُوسَىٰ أَتُرِيدُ أَن تَقْتُلَنِي
كَمَا قَتَلْتَ نَفْسًا بِالْأَمْسِ ۖ إِن تُرِيدُ إِلَّا أَن تَكُونَ جَبَّارًا فِي
الْأَرْضِ وَمَا تُرِيدُ أَن تَكُونَ مِنَ الْمُصْلِحِينَ﴾
১৯। তারপর
মূসা যখন শত্রু সম্প্রদায়ের লোকটিকে আক্রমণ করতে চাইলো২৮ তখন সে চিৎকার করে উঠলো,২৯ “হে মূসা!
তুমি কি আজকে আমাকে ঠিক তেমনিভাবে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছো যেভাবে গতকাল একজনকে
হত্যা করেছিলে?” তুমি তো
দেখছি এদেশে স্বেচ্ছাচারী হয়ে থাকতে চাও, সংস্কারক হতে চাও না?
﴿وَجَاءَ رَجُلٌ مِّنْ أَقْصَى
الْمَدِينَةِ يَسْعَىٰ قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنَّ الْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ
فَاخْرُجْ إِنِّي لَكَ مِنَ النَّاصِحِينَ﴾
২০। এরপর এক
ব্যক্তি নগরীর দূর প্রান্ত থেকে ছুটে এলো৩০ এবং বললো, “হে মূসা! সরদারদের মধ্যে
তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ চলছে। এখান থেকে
বের হয়ে যাও। আমি তোমার মঙ্গলাকাংখী।”
﴿فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا
يَتَرَقَّبُ ۖ قَالَ رَبِّ نَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
২১। এ খবর
শুনতেই মূসা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লো এবং সে দোয়া করলো, “হে আমার রব! আমাকে জালেমদের
হাত থেকে বাঁচাও।”
﴿وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَاءَ
مَدْيَنَ قَالَ عَسَىٰ رَبِّي أَن يَهْدِيَنِي سَوَاءَ السَّبِيلِ﴾
২২। (মিসর
থেকে বের হয়ে) যখন মূসা মাদয়ানের দিকে
রওয়ানা হলো৩১ তখন সে বললো, “আশা করি আমার রব আমাকে সঠিক
পথে চালিত করবেন।”৩২
﴿وَلَمَّا وَرَدَ مَاءَ مَدْيَنَ
وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُونَ وَوَجَدَ مِن دُونِهِمُ امْرَأَتَيْنِ
تَذُودَانِ ۖ قَالَ مَا خَطْبُكُمَا ۖ قَالَتَا لَا نَسْقِي حَتَّىٰ يُصْدِرَ الرِّعَاءُ
ۖ وَأَبُونَا شَيْخٌ كَبِيرٌ﴾
২৩। আর যখন সে
মাদয়ানের কুয়ার কাছে পৌঁছুল,৩৩ সে দেখলো, অনেক লোক তাদের পশুদের পানি
পান করাচ্ছে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে একদিকে দু’টি মেয়ে নিজেদের পশুগুলো আগলে
রাখছে। মূসা মেয়ে দু’টিকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের সমস্যা কি?” তারা বললো, “আমরা আমাদের জানোয়ারগুলোকে
পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ না এ রাখালেরা তাদের জানোয়ারগুলো সরিয়ে নিয়ে যায়, আর আমাদের পিতা একজন অতি
বৃদ্ধ ব্যক্তি।”৩৪
﴿فَسَقَىٰ لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّىٰ
إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ﴾
২৪। একথা শুনে
মূসা তাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করিয়ে দিল। তারপর সে
একটি ছায়ায় গিয়ে বসলো এবং বললো, “হে আমার প্রতিপালক! যে কল্যাণই তুমি আমার
প্রতি নাযিল করবে আমি তার মুখাপেক্ষী।”
﴿فَجَاءَتْهُ إِحْدَاهُمَا
تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ قَالَتْ إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ لِيَجْزِيَكَ أَجْرَ مَا
سَقَيْتَ لَنَا ۚ فَلَمَّا جَاءَهُ وَقَصَّ عَلَيْهِ الْقَصَصَ قَالَ لَا تَخَفْ ۖ
نَجَوْتَ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
২৫। (বেশিক্ষণ
অতিবাহিত হয়নি এমন সময়) ঐ দু’টি মেয়ের
মধ্য থেকে একজন লজ্জাজড়িত পদ বিক্ষেপে তার কাছে এলো৩৫ এবং বলতে লাগলো, “আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, আপনি আমাদের জানোয়ারগুলোকে
যে পানি পান করিয়েছেন আপনাকে তার পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য।”৩৬ মূসা যখন তার কাছে পৌঁছুল এবং
নিজের সমস্ত কাহিনী তাকে শুনালো তখন সে বললো, “ভয় করো না, এখন তুমি জালেমদের হাত থেকে
বেঁচে গেছো।”
﴿قَالَتْ إِحْدَاهُمَا يَا
أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ ۖ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ﴾
২৬। মেয়ে দু’জনের
একজন তার পিতাকে বললো, “আব্বাজান! একে চাকরিতে নিয়োগ করো, কর্মচারী হিসেবে ব্যক্তিই
উত্তম হতে পারে যে বলশালী ও আমানতদার।”৩৭
﴿قَالَ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ
أُنكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلَىٰ أَن تَأْجُرَنِي ثَمَانِيَ حِجَجٍ ۖ
فَإِنْ أَتْمَمْتَ عَشْرًا فَمِنْ عِندِكَ ۖ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أَشُقَّ عَلَيْكَ ۚ
سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّالِحِينَ﴾
২৭। তার পিতা
(মূসাকে) বললো,৩৮ “আমি আমার এ
দু’মেয়ের মধ্য
থেকে একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই।শর্ত হচ্ছে, তোমাকে আট বছর আমার এখানে
চাকরি করতে হবে। আর যদি দশ বছর পুরো করে দাও, তাহলে তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমার
ওপর কড়াকড়ি করতে চাই না। তুমি ইনশাআল্লাহ আমাকে
সৎলোক হিসেবেই পাবে।
﴿قَالَ ذَٰلِكَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ
ۖ أَيَّمَا الْأَجَلَيْنِ قَضَيْتُ فَلَا عُدْوَانَ عَلَيَّ ۖ وَاللَّهُ عَلَىٰ مَا
نَقُولُ وَكِيلٌ﴾
২৮। মূসা জবাব
দিল,“আমার ও
আপনার মধ্যে একথা স্থিরীকৃত হয়ে গেলো, এ দু’টি মেয়াদের মধ্য থেকে যেটাই আমি পূরণ
করে দেবো তারপর আমার ওপর যেন কোন চাপ দেয়া না হয়। আর যা
কিছু দাবী ও অঙ্গীকার আমরা করছি আল্লাহ তার তত্বাবধায়ক।”৩৯
﴿فَلَمَّا قَضَىٰ مُوسَى الْأَجَلَ
وَسَارَ بِأَهْلِهِ آنَسَ مِن جَانِبِ الطُّورِ نَارًا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا
إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّي آتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ
لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ﴾
২৯। মূসা যখন
মেয়াদ পূর্ণ করে দিল,৪০ এবং নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে
চললো তখন তূর পাহাড়ের দিক থেকে একটি আগুন দেখতে পেলো।৪১ সে তার পরিবারবর্গকে বললো, “থামো! আমি একটি আগুন দেখছি, হয়তো আমি সেখান থেকে কোন খবর
আনতে পারি অথবা সেই আগুন থেকে কোন অংগারই
﴿فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ
مِن شَاطِئِ الْوَادِ الْأَيْمَنِ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ
أَن يَا مُوسَىٰ إِنِّي أَنَا اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ﴾
৩০। সেখানে
পৌঁছার পর উপত্যকার ডান কিনারায়৪২ পবিত্র
ভূখণ্ডে৪৩ একটি বৃক্ষ থেকে আহ্বান এলো, “হে মূসা! আমিই আল্লাহ। সমগ্র
বিশ্বের অধিপতি।”
﴿وَأَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ
فَلَمَّا رَآهَا تَهْتَزُّ كَأَنَّهَا جَانٌّ وَلَّىٰ مُدْبِرًا وَلَمْ يُعَقِّبْ ۚ
يَا مُوسَىٰ أَقْبِلْ وَلَا تَخَفْ ۖ إِنَّكَ مِنَ الْآمِنِينَ﴾
৩১। আর (হুকুম দেয়া হলো) ছুঁড়ে দাও তোমার লাঠিটি। যখনই মূসা
দেখলো লাঠিটি সাপের মতো মোচড় খাচ্ছে তখনই সে পেছন ফিরে ছুটতে লাগলো এবং একবার
ফিরেও তাকালো না। বলা হলো,”হে মূসা! ফিরে এসো এবং ভয়
করো না, তুমি
সম্পূর্ন নিরাপদ।
﴿اسْلُكْ يَدَكَ فِي جَيْبِكَ
تَخْرُجْ بَيْضَاءَ مِنْ غَيْرِ سُوءٍ وَاضْمُمْ إِلَيْكَ جَنَاحَكَ مِنَ الرَّهْبِ
ۖ فَذَانِكَ بُرْهَانَانِ مِن رَّبِّكَ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا
قَوْمًا فَاسِقِينَ﴾
৩২। তোমার
হাত বগলে রাখো উজ্জল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার কষ্ট ছাড়াই।৪৪ এবং ভীতিমুক্ত হবার জন্য
নিজের হাত দু’টি চেপে ধরো।৪৫ এ দু’টি উজ্জল নিদর্শন তোমার
রবের পক্ষ থেকে ফেরাউন ও তার সভাসদদের সামনে পেশ করার জন্য, তারা বড়ই নাফরমান।”৪৬
﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي قَتَلْتُ
مِنْهُمْ نَفْسًا فَأَخَافُ أَن يَقْتُلُونِ﴾
৩৩। মূসা
নিবেদন করলো, “হে আমার
প্রভু! আমি যে তাদের একজন লোককে হত্যা করে ফেলেছি, ভয় হচ্ছে, তারা আমাকে মেরে ফেলবে।”৪৭
﴿وَأَخِي هَارُونُ هُوَ أَفْصَحُ
مِنِّي لِسَانًا فَأَرْسِلْهُ مَعِيَ رِدْءًا يُصَدِّقُنِي ۖ إِنِّي أَخَافُ أَن يُكَذِّبُونِ﴾
৩৪। আর আমার
ভাই হারূন আমার চেয় বেশী বাকপটু, তাকে সাহায্যকারী হিসেবে আমার সাথে পাঠাও, যাতে সে আমাকে সমর্থন দেয়, আমার ভয় হচ্ছে, তারা আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ
করবে।”
﴿قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَكَ
بِأَخِيكَ وَنَجْعَلُ لَكُمَا سُلْطَانًا فَلَا يَصِلُونَ إِلَيْكُمَا ۚ بِآيَاتِنَا
أَنتُمَا وَمَنِ اتَّبَعَكُمَا الْغَالِبُونَ﴾
৩৫। বললেন, তোমার ভাইয়ের সাহায্যে আমি
তোমার শক্তি বৃদ্ধি করবো এবং তোমাদের দু’জনকে এমনই প্রতিপত্তি দান করবো যে, তারা তোমাদের কোন ক্ষতি
করতে পারবে না। আমার নিদর্শনগুলোর জোরে তোমার ও
তোমাদের অনুসারীরাই বিজয় লাভ করবে।”৪৮
﴿فَلَمَّا جَاءَهُم مُّوسَىٰ
بِآيَاتِنَا بَيِّنَاتٍ قَالُوا مَا هَٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُّفْتَرًى وَمَا سَمِعْنَا
بِهَٰذَا فِي آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ﴾
৩৬। তারপর
মূসা যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে পৌঁছুলো তখন তারা বললো, এসব বানোয়াট যাদু ছাড়া আর
কিছুই নয়।৪৯ আর এসব কথা
তো আমরা আমাদের বাপ-দাদার কালে কখনো শুনিনি।৫০
﴿وَقَالَ مُوسَىٰ رَبِّي أَعْلَمُ
بِمَن جَاءَ بِالْهُدَىٰ مِنْ عِندِهِ وَمَن تَكُونُ لَهُ عَاقِبَةُ الدَّارِ ۖ إِنَّهُ
لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ﴾
৩৭। মূসা জবাব
দিল, “আমার রব
তার অবস্থা ভালো জানেন, যে তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশনা নিয়ে এসেছে এবং কার শেষ পরিণতি
ভালো হবে তাও তিনিই ভালো জানেন, আসলে জালেম কখনো সফলকাম হয় না।”৫১
﴿وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا أَيُّهَا
الْمَلَأُ مَا عَلِمْتُ لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرِي فَأَوْقِدْ لِي يَا هَامَانُ عَلَى
الطِّينِ فَاجْعَل لِّي صَرْحًا لَّعَلِّي أَطَّلِعُ إِلَىٰ إِلَٰهِ مُوسَىٰ وَإِنِّي
لَأَظُنُّهُ مِنَ الْكَاذِبِينَ﴾
৩৮। আর ফেরাউন
বললো, “হে
সভাসদবর্গ! তো আমি নিজেকে ছাড়া তোমাদের আর কোন প্রভু আছে বলে জানি না।৫২ ওহে হামান! আমার জন্য ইঁট পুড়িয়ে
একটি উঁচু প্রাসাদ তৈরি করো, হয়তো তাতে উঠে আমি মূসার প্রভুকে দেখতে
পাবো, আমিতো
তাকে মিথ্যুক মনে করি।”৫৩
﴿وَاسْتَكْبَرَ هُوَ وَجُنُودُهُ
فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ إِلَيْنَا لَا يُرْجَعُونَ﴾
৩৯। সে এবং
তার সৈন্যরা পৃথিবীতে কোন সত্য ছাড়াই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করলো৫৪ এবং মনে করলো তাদের কখনো
আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না।৫৫
﴿فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ
فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ﴾
৪০। শেষে আমি
তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম।৫৬ এমন এ জালেমদের পরিণাম কি
হয়েছে দেখে নাও।
﴿وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً
يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنصَرُونَ﴾
৪১। তাদেরকে
আমি জাহান্নামের দিকে আহবানকারী নেতা করেছিলাম৫৭ এবং কিয়ামতের দিন তারা কোথাও
থেকে কোন সাহায্য লাভ করতে পারবে না।
﴿وَأَتْبَعْنَاهُمْ فِي هَٰذِهِ
الدُّنْيَا لَعْنَةً ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ هُم مِّنَ الْمَقْبُوحِينَ﴾
৪২। এ দুনিয়ায়
আমি তাদের পেছনে লাগিয়ে দিয়েছি অভিসম্পাত এবং কিয়ামতের দিন তারা হবে বড়ই ঘৃণার্হ ও
ধিকৃত।৫৮
﴿وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى
الْكِتَابَ مِن بَعْدِ مَا أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ الْأُولَىٰ بَصَائِرَ لِلنَّاسِ
وَهُدًى وَرَحْمَةً لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ﴾
৪৩।
পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোকে ধ্বংস করার পর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম লোকদের জন্য
আত্মজ্ঞান লাভের সহায়ক, পথনির্দেশনা ও রহমত হিসেবে, যাতে লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে।৫৯
﴿وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ
إِذْ قَضَيْنَا إِلَىٰ مُوسَى الْأَمْرَ وَمَا كُنتَ مِنَ الشَّاهِدِينَ﴾
৪৪। (হে
মুহাম্মদ!) তুমি সে সময় পশ্চিম প্রান্তে
উপস্থিত ছিলে না।৬০ যখন মূসাকে
এ শরীয়াত দান করেছিলাম এবং তুমি সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না।৬১
﴿وَلَٰكِنَّا أَنشَأْنَا قُرُونًا
فَتَطَاوَلَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ ۚ وَمَا كُنتَ ثَاوِيًا فِي أَهْلِ مَدْيَنَ تَتْلُو
عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَلَٰكِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ﴾
৪৫। বরং এরপর
(তোমার যুগ পর্যন্ত) আমি বহু প্রজন্মের
উদ্ভব ঘটিয়েছি এবং তাদের ওপর অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।৬২ তুমি মাদয়ানবাসীদের মধ্যেও
উপস্থিত ছিলে না, যাতে
তাদেরকে আমার আয়াত শুনাতে পারতে৬৩ কিন্তু আমি
সে সময়কার এসব তথ্য জানাচ্ছি।
﴿وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الطُّورِ
إِذْ نَادَيْنَا وَلَٰكِن رَّحْمَةً مِّن رَّبِّكَ لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أَتَاهُم
مِّن نَّذِيرٍ مِّن قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ﴾
৪৬। আর তুমি
তূর পাহাড়ের পাশেও তখন উপস্থিত ছিলে না যখন আমি (মূসাকে প্রথমবার) ডেকেছিলাম। কিন্তু
এটা তোমার রবের অনুগ্রহ (যার ফলে তোমাকে এসব তথ্য দেয়া হচ্ছে)৬৪ যাতে তুমি তাদেরকে সতর্ক করো
যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি,৬৫ হয়েতা তারা
সচেতন হয়ে যাবে।
﴿وَلَوْلَا أَن تُصِيبَهُم
مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَيَقُولُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا
رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
৪৭। (আর আমি
এজন্য করেছি যাতে) এমনটি যেন না হয় যে, তাদের নিজেদের কৃতকর্মের
বদৌলতে কোন বিপদ তাদের ওপর এসে যায়, আর তারা বলে, “হে আমাদের রব! তুমি কেন
আমাদের কাছে কোন রাসূল পাঠাওনি? তাহলে তো আমরা তোমার আয়াত মেনে চলতাম এবং
ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।৬৬
﴿فَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ
مِنْ عِندِنَا قَالُوا لَوْلَا أُوتِيَ مِثْلَ مَا أُوتِيَ مُوسَىٰ ۚ أَوَلَمْ يَكْفُرُوا
بِمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ مِن قَبْلُ ۖ قَالُوا سِحْرَانِ تَظَاهَرَا وَقَالُوا إِنَّا
بِكُلٍّ كَافِرُونَ﴾
৪৮। কিন্তু
যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের কাছে পৌঁছে গেলো তখন তারা বলতে লাগলো, মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল কেন
তাকে সে সব দেয়া হলো না?৬৭ এর আগে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল
তা কি তারা অস্বীকার করেনি?৬৮ তারা বললো, “দু’টোই যাদু,৬৯ যা একে
অন্যকে সাহায্য করে।” আর বললো, “আমরা কোনটাই মানি না।”
﴿قُلْ فَأْتُوا بِكِتَابٍ
مِّنْ عِندِ اللَّهِ هُوَ أَهْدَىٰ مِنْهُمَا أَتَّبِعْهُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾
৪৯। (হে নবী?) তাদেরকে
বলো, “বেশ, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে আনো আল্লাহর পক্ষ থেকে
কোন কিতাব, যা এ দু’টির
চাইতে বেশী হিদায়াতদানকারী হবে; আমি তারই অনুসরণ করবো।”৭০
﴿فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا
لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ
هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾
৫০। এখন যদি
তারা তোমার এ দাবী পূর্ণ না করে, তাহলে জেনে রাখো, তারা আসলে নিজেদর প্রবৃত্তির
অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত ছাড়াই
নিছক নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হবে? আল্লাহ এ ধরনের জালেমদেরকে
কখনো হিদায়াত দান করেন না।
﴿وَلَقَدْ وَصَّلْنَا لَهُمُ
الْقَوْلَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ﴾
৫১। আর আমি
তো অনবরত তাদের কাছে (উপদেশ বাণী)
পৌঁছিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা গাফলতি থেকে সজাগ হয়ে যায়।৭১
﴿الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ
مِن قَبْلِهِ هُم بِهِ يُؤْمِنُونَ﴾
৫২। যাদেরকে
আমি এর আগে কিতাব দিয়েছিলাম তারা এর (কুরআন )
প্রতি ঈমান আনে।৭২
﴿وَإِذَا يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ
قَالُوا آمَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِن قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ﴾
৫৩। আর যখন
তাদেরকে এটা শুনানো হয়, তারা বলো, “আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এটি যথার্থই সত্য আমাদের রবের
পক্ষ থেকে, আমরা তো
আগে থেকেই মুসলিম।”৭৩
﴿أُولَٰئِكَ يُؤْتَوْنَ أَجْرَهُم
مَّرَّتَيْنِ بِمَا صَبَرُوا وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ
يُنفِقُونَ﴾
৫৪। তারা এমন
লোক যাদেরকে দু’বার পারিশ্রমিক দেয়া হবে৭৪ এমন অবিচলতার প্রতিদানে যা
তারা দেখিয়েছে।৭৫ তারা ভালো
দিয়ে মন্দের মোকাবিলা করেছে৭৬ এবং আমি
তাদেরকে যা কিছু রিযিক দিয়েছি তা ব্যয় করে।৭৭
﴿وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ
أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ
لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ﴾
৫৫। আর যখন
তারা বাজে কথা শুনেছে,৭৮ একথা বলে তা থেকে আলাদা হয়ে
গেছে যে, “আমাদের
কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য এবং তোমাদের কর্মকাণ্ড তোমাদের জন্য, তোমাদের প্রতি সালাম, আমরা মূর্খদের মতো পথ
অবলম্বন করতে চাই না।”
﴿إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ
أَحْبَبْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ﴾
৫৬। হে নবী!
তুমি যাকে চাও তাকে হিদায়াত দান করতে পারো না কিন্তু আল্লাহ যাকে চান তাকে
হিদায়াত দান করেন এবং যারা হিদায়াত গ্রহণ করে তাদেরকে তিনি খুব ভাল করেই জানেন।৭৯
﴿وَقَالُوا إِن نَّتَّبِعِ
الْهُدَىٰ مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ أَرْضِنَا ۚ أَوَلَمْ نُمَكِّن لَّهُمْ حَرَمًا
آمِنًا يُجْبَىٰ إِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّن لَّدُنَّا وَلَٰكِنَّ
أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾
৫৭। তারা বলে, “যদি আমরা তোমার সাথে এ
হেদায়াতের অনুসরণ করি তাহলে নিজেদের দেশ থেকে আমাদেরকে উৎখাত করে দেয়া হবে।”৮০ এটা কি সত্য নয়, একটি নিরাপদ হারমকে আমি তাদের
জন্য অবস্থানস্থলে পরিণত করেছি, যেদিকে সব ধরনের ফলমূল চলে আসে আমার পক্ষ
থেকে রিযিক হিসেবে? কিন্তু
তাদের অধিকাংশই জানে না।৮১
﴿وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ
بَطِرَتْ مَعِيشَتَهَا ۖ فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَن مِّن بَعْدِهِمْ إِلَّا
قَلِيلًا ۖ وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِينَ﴾
৫৮। আর এমন কত
জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি যেখানকার লোকেরা তাদের সম্পদ-সম্পত্তির দম্ভ করতো। কাজেই
দেখে নাও, ঐসব তাদের
ঘরবাড়ি পড়ে আছে, যেগুলোর
মধ্যে তাদের পরে কদাচিত কেউ বসবাস করেছে, শেষ পর্যন্ত আমিই হয়েছি
উত্তরাধিকারী।৮২
﴿وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ
الْقُرَىٰ حَتَّىٰ يَبْعَثَ فِي أُمِّهَا رَسُولًا يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا ۚ
وَمَا كُنَّا مُهْلِكِي الْقُرَىٰ إِلَّا وَأَهْلُهَا ظَالِمُونَ﴾
৫৯। আর তোমার
রব জনপদগুলো ধ্বংস করেন না যতক্ষণ না তাদের কেন্দ্রে একজন রাসূল পাঠান, যে তাদের কাছে আমার আয়াত
শুনায়। আর আমি জনপদগুলো ধ্বংস করি না যতক্ষণ না
সেগুলোর বাসিন্দারা জালেম হয়ে যায়।৮৩
﴿وَمَا أُوتِيتُم مِّن شَيْءٍ
فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَزِينَتُهَا ۚ وَمَا عِندَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾
৬০। তোমাদের
যা কিছুই দেয়া হয়েছে তা নিছক দুনিয়ার জীবনের সাজ-সরঞ্জাম এবং তার সৌন্দর্য-শোভা
আর যা কিছু আল্লাহর কাছে আছে তা হচ্ছে তার চেয়ে ভালো এবং অধিকতর স্থায়ী। তোমার কি
বিবেচনা করবে না?
﴿أَفَمَن وَعَدْنَاهُ وَعْدًا
حَسَنًا فَهُوَ لَاقِيهِ كَمَن مَّتَّعْنَاهُ مَتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ
هُوَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْمُحْضَرِينَ﴾
৬১। আচ্ছা, যাকে আমি উত্তম প্রতিশ্রুতি
দিয়েছি এবং সে তা পেতে যাচ্ছে, সে ব্যক্তি কি কখনো এমন ব্যক্তির মতো
হতে পারে, যাকে আমি
কেবলমাত্র দুনিয়ার জীবনের সাজ-সরঞ্জাম দিয়েছি এবং তারপর কিয়ামতের দিনের শাস্তির
জন্য তাকে হাজির করা হবে?৮৪
﴿وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ
أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنتُمْ تَزْعُمُونَ﴾
৬২। আর (তারা
যেন ভুলে না যায়) সে দিনটি যখন তিনি
তাদেরকে ডাকবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, “কোথায় তারা যাদেরকে তোমরা আমার শরীক বলে
মনে করতে?”৮৫
﴿قَالَ الَّذِينَ حَقَّ عَلَيْهِمُ
الْقَوْلُ رَبَّنَا هَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَغْوَيْنَا أَغْوَيْنَاهُمْ كَمَا غَوَيْنَا
ۖ تَبَرَّأْنَا إِلَيْكَ ۖ مَا كَانُوا إِيَّانَا يَعْبُدُونَ﴾
৬৩। এ উক্তি
যাদের ওপর প্রযোজ্য হবে৮৬ তারা বলবে, “হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই এ
লোকদেরকেই আমরা গোমরাহ করেছিলাম। এদেরকে
ঠিক সেভাবেই গোমরাহ করেছিলাম যেভাবে আমরা নিজেরা গোমরাহ হয়েছিলাম। আমরা
আপনার সামনে দায় মুক্তির কথা প্রকাশ করছি।৮৭ এরা তো আমাদের বন্দেগী করতো
না।”৮৮
﴿وَقِيلَ ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ
فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَرَأَوُا الْعَذَابَ ۚ لَوْ أَنَّهُمْ كَانُوا
يَهْتَدُونَ﴾
৬৪। তারপর
তাদেরকে বলা হবে, এবার
তোমরা যাদেরকে শরীক বানিয়েছিলে তাদেরকে ডাকো।৮৯ এরা তাদেরকে ডাকবে কিন্তু
তারা এদের কোন জবাব দেবে না এবং এরা আযাব দেখে নেবে। হায়! এরা
যদি হিদায়াত গ্রহণকারী হতো!
﴿وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ
مَاذَا أَجَبْتُمُ الْمُرْسَلِينَ﴾
৬৫। আর তারা
(যেন না ভুলে যায়) সেদিনের কথা যেদিন তিনি
ডাকবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, “যে রাসূল পাঠানো হয়েছিল তাদেরকে তোমরা কি জবাব দিয়েছিলে?”
﴿فَعَمِيَتْ عَلَيْهِمُ الْأَنبَاءُ
يَوْمَئِذٍ فَهُمْ لَا يَتَسَاءَلُونَ﴾
৬৬। সেদিন
তাদের কোন জবাব থাকবে না, তারা নিজেদের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে না।
﴿فَأَمَّا مَن تَابَ وَآمَنَ
وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسَىٰ أَن يَكُونَ مِنَ الْمُفْلِحِينَ﴾
৬৭। তবে যে
ব্যক্তি আজ তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে সে-ই সাফল্যলাভের আশা করতে পারে।
﴿وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ
وَيَخْتَارُ ۗ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ وَتَعَالَىٰ عَمَّا
يُشْرِكُونَ﴾
৬৮। তোমার রব
যা চান সৃষ্টি করেন এবং (তিনি নিজেই নিজের কাজের জন্য যাকে চান) নির্বাচিত করে
﴿وَرَبُّكَ يَعْلَمُ مَا تُكِنُّ
صُدُورُهُمْ وَمَا يُعْلِنُونَ﴾
৬৯। তোমার রব
জানেন যা কিছু তারা মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে এবং যা কিছু তারা প্রকাশ করে।৯১
﴿وَهُوَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ
إِلَّا هُوَ ۖ لَهُ الْحَمْدُ فِي الْأُولَىٰ وَالْآخِرَةِ ۖ وَلَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ
تُرْجَعُونَ﴾
৭০। তিনিই এক
আল্লাহ যিনি ছাড়া ইবাদাতের আর কোন হকদার নেই। তাঁরই
জন্য প্রশংসা দুনিয়ায়ও, আখেরাতেও। শাসন
কর্তৃত্ব তাঁরই এবং তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে।
﴿قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ
اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَٰهٌ غَيْرُ
اللَّهِ يَأْتِيكُم بِضِيَاءٍ ۖ أَفَلَا تَسْمَعُونَ﴾
৭১। হে নবী!
তাদেরকে বলো, তোমরা কি
কখনো চিন্তা করেছো, আল্লাহ যদি কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের ওপর চিরকালের জন্য
রাত্রিকে অব্যাহত রাখেন, তাহলে আল্লাহ ছাড়া আর কোন্ মাবুদ আছে তোমদের আলো এনে
দেবে? তোমরা কি
শুনছো না?
﴿قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ
اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَٰهٌ
غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُم بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ﴾
৭২। তাদেরকে
জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি
কখনো ভেবে দেখেছো, আল্লাহ যদি
কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের ওপর চিরকালের জন্য দিবস অব্যাহত রাখেন তাহলে আল্লাহ ছাড়া
আর কোন মাবুদ আছে তোমাদের রাত্রি এনে দেবে, যাতে তোমরা তার মধ্যে বিশ্রাম
করতে পারো? তোমরা কি
ভেবে দেখছো না? এটা ছিল
﴿وَمِن رَّحْمَتِهِ جَعَلَ
لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ
تَشْكُرُونَ﴾
৭৩। তাঁরই
অনুগ্রহ, তিনি
তোমাদের জন্য তৈরী করেছেন রাত ও দিন, যাতে তোমরা (রাতে) শান্তি এবং (দিনে) নিজের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো, হয়তো তোমরা শোকরগুজার হবে।
﴿وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ
أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنتُمْ تَزْعُمُونَ﴾
৭৪। (তারা যেন
স্মরণ রাখে) সেদিনে কথা যখন তিনি তাদেরকে
ডাকবেন, তারপর
তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, “কোথায় তারা যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করতে?
﴿وَنَزَعْنَا مِن كُلِّ أُمَّةٍ
شَهِيدًا فَقُلْنَا هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ فَعَلِمُوا أَنَّ الْحَقَّ لِلَّهِ وَضَلَّ
عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ﴾
৭৫। আর আমি
প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন সাক্ষী বের করে আনবো৯২ তারপর বলবো, “আনো এবার তোমাদের প্রমাণগুলো।”৯৩ সেসময় তারা জানবে,সত্য রয়েছে আল্লাহর কাছে এবং
তারা যা কিছু মিথ্যা বানিয়ে রেখেছিল তা সবই উধাও হয়ে যাবে।
﴿إِنَّ قَارُونَ كَانَ مِن
قَوْمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَيْهِمْ ۖ وَآتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوزِ مَا إِنَّ مَفَاتِحَهُ
لَتَنُوءُ بِالْعُصْبَةِ أُولِي الْقُوَّةِ إِذْ قَالَ لَهُ قَوْمُهُ لَا تَفْرَحْ
ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِينَ﴾
৭৬। একথা সত্য,৯৪ কারূণ ছিল মূসার সম্প্রদায়ের
লোক, তারপর সে
নিজের সম্প্রদায়ে বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠলো।৯৫ আর আমি তাকে এতটা ধনরত্ন দিয়ে
রেখেছিলাম যে, তাদের
চাবিগুলো বলবান লোকদের একটি দল বড় কষ্টে বহন করতে পারতো।৯৬ একবার যখন এ সম্প্রদায়ের লোকেরা
তাকে বললো, “অহংকার
করো না, আল্লাহ
অহংকারকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
﴿وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ
اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ ۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا ۖ وَأَحْسِن
كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ ۖ إِنَّ
اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ﴾
৭৭। আল্লাহ
তোমাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা দিয়ে আখেরাতের ঘর তৈরি করার কথা চিন্তা করো এবং
দুনিয়া থেকেও নিজের অংশ ভুলে যেয়ো না। অনুগ্রহ
করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার
চেস্টা করো না। আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ
করেন না।”
﴿قَالَ إِنَّمَا أُوتِيتُهُ
عَلَىٰ عِلْمٍ عِندِي ۚ أَوَلَمْ يَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَهْلَكَ مِن قَبْلِهِ
مِنَ الْقُرُونِ مَنْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُ قُوَّةً وَأَكْثَرُ جَمْعًا ۚ وَلَا يُسْأَلُ
عَن ذُنُوبِهِمُ الْمُجْرِمُونَ﴾
৭৮। এতে সে
বললো, “এসব কিছু
তো আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি তার ভিত্তিতে আমাকে দেয়া হয়েছে।”৯৭ --সে কি এ কথা জানতো না যে, আল্লাহ এর পূর্বে এমন বহু
লোককে ধ্বংস করে দিয়েছেন যারা এর চেয়ে বেশী বাহুবল ও জনবলের অধিকারী ছিল?৯৮ অপরাধীদেরকে
তো তাদের গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় না।৯৯
﴿فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوْمِهِ
فِي زِينَتِهِ ۖ قَالَ الَّذِينَ يُرِيدُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا لَيْتَ لَنَا
مِثْلَ مَا أُوتِيَ قَارُونُ إِنَّهُ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٍ﴾
৭৯। একদিন সে
সম্প্রদায়ের সামনে বের হলো পূর্ণ জাঁকজমক সহকারে। যারা
দুনিয়ার জীবনের ঐশ্বর্যের জন্য লালায়িত ছিল তারা তাকে দেখে বললো, “আহা! কারূনকে যা দেয়া হয়েছে
তা যদি আমরাও পেতাম! সে তো বড়ই সৌভাগ্যবান।”
﴿وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا
الْعِلْمَ وَيْلَكُمْ ثَوَابُ اللَّهِ خَيْرٌ لِّمَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا وَلَا
يُلَقَّاهَا إِلَّا الصَّابِرُونَ﴾
৮০। কিন্তু
যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলতে লাগলো, “তোমাদের ভাবগতিক দেখে আফসোস
হয়। আল্লাহর সওয়াব তার জন্য ভালো যে ঈমান
আনে ও সৎকাজ করে, আর এ সম্পদ
সবরকারীরা ছাড়া আর কেউ লাভ করে না।”১০০
﴿فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ
الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِن فِئَةٍ يَنصُرُونَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ
مِنَ الْمُنتَصِرِينَ﴾
৮১। শেষ
পর্যন্ত আমি তাকে ও তার গৃহকে ভূগর্ভে পুতে ফেললাম। তখন
আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার মতো সাহায্যকারীদের কোন দল ছিল
না এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে পারলো না।
﴿وَأَصْبَحَ الَّذِينَ تَمَنَّوْا
مَكَانَهُ بِالْأَمْسِ يَقُولُونَ وَيْكَأَنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ
مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ ۖ لَوْلَا أَن مَّنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا لَخَسَفَ بِنَا
ۖ وَيْكَأَنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ﴾
৮২। যারা আগের
দিন তার মতো মর্যাদালাভের আকাংখা পোষণ করছিল তারা বলতে লাগলো, “আফসোস, আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য
থেকে যাকে ইচ্ছা তার রিযিক প্রসারিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে সীমিত রিযিক দেন।১০১ যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি
অনুগ্রহ না করতেন, তাহলে
আমাদেরও ভূগর্ভে পুতে ফেলতেন। আফসোস, আমাদের মনে ছিল না, কাফেররা সফলকাম হয় না”১০২
﴿تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ
نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا ۚ وَالْعَاقِبَةُ
لِلْمُتَّقِينَ﴾
৮৩। সে
আখেরাতের১০৩ গৃহ তো আমি তাদের জন্য
নির্দিষ্ট করে দেবো যারা পৃথিবীতে নিজেদের বড়াই চায় না১০৪ এবং চায় না বিপর্যয় সৃষ্টি
করতে।১০৫ আর শুভ পরিণাম রয়েছে মুত্তাকীদের জন্যই।১০৬
﴿مَن جَاءَ بِالْحَسَنَةِ
فَلَهُ خَيْرٌ مِّنْهَا ۖ وَمَن جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى الَّذِينَ عَمِلُوا
السَّيِّئَاتِ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
৮৪। যে কেউ
ভাল কাজ নিয়ে আসবে তার জন্য রয়েছে তার চেয়ে ভাল ফল এবং যে কেউ খারাপ কাজ নিয়ে আসে
তার জানা উচিৎ যে, অসৎ
কর্মশীলরা যেমন কাজ করতো তেমনটিই প্রতিদান পাবে।
﴿إِنَّ الَّذِي فَرَضَ عَلَيْكَ
الْقُرْآنَ لَرَادُّكَ إِلَىٰ مَعَادٍ ۚ قُل رَّبِّي أَعْلَمُ مَن جَاءَ بِالْهُدَىٰ
وَمَنْ هُوَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
৮৫। হে নবী!
নিশ্চিত জেনো, যিনি এ
কুরআন তোমার ওপর ন্যস্ত করেছেন১০৭ তিনি তোমাকে একটি উত্তম পরিণতিতে পৌঁছিয়ে দেবেন।১০৮ তাদেরকে বলে দাও, “আমার রব ভালো করেই জানেন কে
হিদায়াত নিয়ে এসেছে এবং কে প্রকাশ্য গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছে।”
﴿وَمَا كُنتَ تَرْجُو أَن
يُلْقَىٰ إِلَيْكَ الْكِتَابُ إِلَّا رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۖ فَلَا تَكُونَنَّ ظَهِيرًا
لِّلْكَافِرِينَ﴾
৮৬। তুমি
মোটেই আশা করোনি যে, তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করা হবে। এতো নিছক
তোমার রবের
﴿وَلَا يَصُدُّنَّكَ عَنْ
آيَاتِ اللَّهِ بَعْدَ إِذْ أُنزِلَتْ إِلَيْكَ ۖ وَادْعُ إِلَىٰ رَبِّكَ ۖ وَلَا تَكُونَنَّ
مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
৮৭। আর এমনটি
যেন কখনো না হয় যে, আল্লাহর
আয়াত যখন তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয় তখন কাফেররা তোমাকে তা থেকে বিরত রাখে।১১১ নিজের রবের দিকে দাওয়াত দাও
এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না
﴿وَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ
إِلَٰهًا آخَرَ ۘ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ
ۚ لَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾
৮৮। এবং
আল্লাহর সাথে অন্য মাবুদদেরকে ডেকো না। তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। সব জিনিসই
ধ্বংস হবে কেবলমাত্র তাঁর সত্ত্বা ছাড়া। শাসন
কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই১১২ এবং তাঁরই দিকে তোমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে।
--- সমাপ্ত ---
কোন মন্তব্য নেই
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।