সূরা আল কালাম-বাংলা অনুবাদ

Share:

 

০৬৮. সূরা আল কালাম

আয়াতঃ ৫২;  রুকুঃ ০২; মাক্কী

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾

পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে

﴿نٓ ۚ وَٱلْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُونَ﴾

নূন, শপথ কলমের এবং লেখকরা যা লিখে চলেছে তার

﴿مَآ أَنتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُونٍۢ﴾

তোমার রবের অনুগ্রহে তুমি পাগল নও

﴿وَإِنَّ لَكَ لَأَجْرًا غَيْرَ مَمْنُونٍۢ﴾

আর নিশ্চিতভাবেই তোমার জন্য এমন পুরস্কার রয়েছে যা কখনো ফুরাবে না

﴿وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍۢ﴾

নিঃসন্দেহে তুমি নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন 

﴿فَسَتُبْصِرُ وَيُبْصِرُونَ﴾

অচিরে তুমিও দেখতে পাবে এবং তারাও দেখতে পাবে যে,

﴿بِأَييِّكُمُ ٱلْمَفْتُونُ﴾

তোমাদের উভয়ের মধ্যে কারা পাগলামীতে লিপ্ত 

﴿إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعْلَمُ بِٱلْمُهْتَدِينَ﴾

তোমার রব তাদেরকেও ভাল করে জানেন যারা তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে আর তাদেরকেও ভাল করে জানেন যারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়েছে 

﴿فَلَا تُطِعِ ٱلْمُكَذِّبِينَ﴾

কাজেই তুমি মিথ্যাচরীদের অনুসরণ করো না 

﴿وَدُّوا۟ لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ﴾

তারা তো চায় তুমি নমনীয়তা দেখালে তারাও নমনীয়তা দেখাবে

﴿وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍۢ مَّهِينٍ﴾

১০ তুমি অবদমিত হয়ো না তার দ্বারা যে কথায় কথায় শপথ করে, যে মর্যাদাহীন,

﴿هَمَّازٍۢ مَّشَّآءٍۭ بِنَمِيمٍۢ﴾

১১ যে গীবত করে, চোগল খোরী করে বেড়ায়

﴿مَّنَّاعٍۢ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ﴾

১২ কল্যাণের কাজে বাধা দেয়, জুলুম ও বাড়াবাড়িতে সীমালংঘন করে,

﴿عُتُلٍّۭ بَعْدَ ذَٰلِكَ زَنِيمٍ﴾

১৩ চরম পাপিষ্ঠ ঝগড়াটে ও হিংস্র এবং সর্বোপরি বজ্জাত

﴿أَن كَانَ ذَا مَالٍۢ وَبَنِينَ﴾

১৪ কারণ সে সম্পদশালী ও অনেক সন্তানের পিতা১০

﴿إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِ ءَايَـٰتُنَا قَالَ أَسَـٰطِيرُ ٱلْأَوَّلِينَ﴾

১৫ তাকে যখন আমার আয়াত সমূহ শোনানো হয় তখন সে বলে এ তো প্রাচীনকালের কিস্সা-কাহিনী

﴿سَنَسِمُهُۥ عَلَى ٱلْخُرْطُومِ﴾

১৬ শিগগীরই আমি তার শুঁড় দাগিয়ে দেবো১১

﴿إِنَّا بَلَوْنَـٰهُمْ كَمَا بَلَوْنَآ أَصْحَـٰبَ ٱلْجَنَّةِ إِذْ أَقْسَمُوا۟ لَيَصْرِمُنَّهَا مُصْبِحِينَ﴾

১৭ আমি এদের (মক্কাবাসী)-কে পরীক্ষায় ফেলেছি যেভাবে পরীক্ষায় ফেলেছিলাম১২ বাগানের মালিকদেরকে, যখন তারা শপথ করেছিল যে, তারা খুব ভোরে গিয়ে অবশ্যি নিজেদের বাগানের ফল আহরণ করবে

﴿وَلَا يَسْتَثْنُونَ﴾

১৮ তারা এ ব্যাপারে কোন ব্যতিক্রমের সম্ভাবনা স্বীকার করছিলো না১৩

﴿فَطَافَ عَلَيْهَا طَآئِفٌۭ مِّن رَّبِّكَ وَهُمْ نَآئِمُونَ﴾

১৯ অতঃপর তোমার রবের পক্ষ থেকে একটি বিপর্যয় এসে সে বাগানে চড়াও হলো তখন তারা ছিলো নিদ্রিত 

﴿فَأَصْبَحَتْ كَٱلصَّرِيمِ﴾

২০ বাগানের অবস্থা হয়ে গেলো কর্তিত ফসলের ন্যায়

﴿فَتَنَادَوْا۟ مُصْبِحِينَ﴾

২১ ভোরে তারা একে অপরকে ডেকে বললোঃ 

﴿أَنِ ٱغْدُوا۟ عَلَىٰ حَرْثِكُمْ إِن كُنتُمْ صَـٰرِمِينَ﴾

২২ তোমরা যদি ফল আহরণ করতে চাও তাহলে সকাল সকাল ফসলের মাঠের দিকে বেরিয়ে পড়ো১৪

﴿فَٱنطَلَقُوا۟ وَهُمْ يَتَخَـٰفَتُونَ﴾

২৩ সুতরাং তারা বেরিয়ে পড়লো তারা নীচু গলায় একে অপরকে বলছিলো

﴿أَن لَّا يَدْخُلَنَّهَا ٱلْيَوْمَ عَلَيْكُم مِّسْكِينٌۭ﴾

২৪ আজ যেন কোন অভাবী লোক বাগানে তোমাদের কাছে না আসতে পারে 

﴿وَغَدَوْا۟ عَلَىٰ حَرْدٍۢ قَـٰدِرِينَ﴾

২৫ তারা কিছুই না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব ভোরে এমনভাবে দ্রুত১৫ সেখানে গেল যেন তারা (ফল আহরণ করতে) সক্ষম হয়

﴿فَلَمَّا رَأَوْهَا قَالُوٓا۟ إِنَّا لَضَآلُّونَ﴾

২৬ কিন্তু বাগানের অবস্থা দেখার পর বলে উঠলোঃ আমরা রাস্তা ভুলে গিয়েছি 

﴿بَلْ نَحْنُ مَحْرُومُونَ﴾

২৭ তাও না- আমার বরং বঞ্চিত হয়েছি১৬

﴿قَالَ أَوْسَطُهُمْ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ لَوْلَا تُسَبِّحُونَ﴾

২৮ তাদের মধ্যকার সবচেয়ে ভাল লোকটি বললোঃ “আমি কি তোমাদের বলিনি তোমরা ‘তাসবীহ’ করছো না কেন?১৭

﴿قَالُوا۟ سُبْحَـٰنَ رَبِّنَآ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِينَ﴾

২৯ তখন তারা বলে উঠলোঃ আমাদের রব অতি পবিত্র বাস্তবিকই আমরা গোনাহগার ছিলাম 

فَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ يَتَلَـٰوَمُونَ﴾

৩০ এরপর তারা সবাই একে অপরকে তিরষ্কার করতে লাগলো১৮

﴿قَالُوا۟ يَـٰوَيْلَنَآ إِنَّا كُنَّا طَـٰغِينَ﴾

৩১ অবশেষে তারা বললোঃ “আমাদের এ অবস্থার জন্য আফসোস! আমরা তো বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিলাম 

﴿عَسَىٰ رَبُّنَآ أَن يُبْدِلَنَا خَيْرًۭا مِّنْهَآ إِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا رَٰغِبُونَ﴾

৩২ বিনিময়ে আমাদের রব হয়তো এর চেয়েও ভাল বাগান আমাদের দান করবেন আমরা আমাদের রবের দিকে রুজু করছি 

﴿كَذَٰلِكَ ٱلْعَذَابُ ۖ وَلَعَذَابُ ٱلْـَٔاخِرَةِ أَكْبَرُ ۚ لَوْ كَانُوا۟ يَعْلَمُونَ﴾

৩৩ আযাব এরূপই হয়ে থাকে আখেরাতের আযাব এর চেয়েও বড় হায়! যদি তারা জানতো 

﴿إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّـٰتِ ٱلنَّعِيمِ﴾

৩৪ নিশ্চিতভাবে১৯ মুত্তাকীদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে নিয়ামত ভরা জান্নাত

﴿أَفَنَجْعَلُ ٱلْمُسْلِمِينَ كَٱلْمُجْرِمِينَ﴾

৩৫ আমি কি অনুগতদের অবস্থা অপরাধীদের মতো করবো?

﴿مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ﴾

৩৬ কি হয়েছে তোমাদের? এ কেমন বিচার তোমরা করছো?২০

﴿أَمْ لَكُمْ كِتَـٰبٌۭ فِيهِ تَدْرُسُونَ﴾

৩৭ তোমাদের কাছে কি কোন কিতাব ২১ আছে যাতে তোমরা পাঠ করে থাকো যে,

﴿إِنَّ لَكُمْ فِيهِ لَمَا تَخَيَّرُونَ﴾

৩৮ তোমাদের জন্য সেখানে তাই আছে যা তোমরা পছন্দ করো 

﴿أَمْ لَكُمْ أَيْمَـٰنٌ عَلَيْنَا بَـٰلِغَةٌ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ ۙ إِنَّ لَكُمْ لَمَا تَحْكُمُونَ﴾

৩৯ তোমাদের সাথে কি আমার কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ এমন কোন চুক্তি আছে যে, তোমরা নিজের জন্য যা চাইবে সেখানে তাই পাবে

﴿سَلْهُمْ أَيُّهُم بِذَٰلِكَ زَعِيمٌ﴾

৪০ তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো এ ব্যাপারে কে দায়িত্বশীল?২২

﴿أَمْ لَهُمْ شُرَكَآءُ فَلْيَأْتُوا۟ بِشُرَكَآئِهِمْ إِن كَانُوا۟ صَـٰدِقِينَ﴾

৪১ কিংবা তাদের স্বনিয়োজিত কিছু অংশীদার আছে কি (যারা এ বিষয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে)? তারা তাদের সেসব অংশীদারদের নিয়ে আসুক যদি তারা সত্যবাদী২৩ হয়ে থাকে

﴿يَوْمَ يُكْشَفُ عَن سَاقٍۢ وَيُدْعَوْنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ﴾

৪২ যেদিন কঠিন সময় এসে পড়বে২৪ এবং সিজদা করার জন্য লোকদেরকে ডাকা হবে কিন্তু তারা সিজদা করতে সক্ষম হবে না

﴿خَـٰشِعَةً أَبْصَـٰرُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌۭ ۖ وَقَدْ كَانُوا۟ يُدْعَوْنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ وَهُمْ سَـٰلِمُونَ﴾

৪৩ তাদের দৃষ্টি হবে অবনত হীনতা ও অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে এর আগে যখন তারা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলো তখন সিজদার জন্য তাদেরকে ডাকা হতো (কিন্তু তারা অস্বীকৃতি জানাতো)২৫

﴿فَذَرْنِى وَمَن يُكَذِّبُ بِهَـٰذَا ٱلْحَدِيثِ ۖ سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ﴾

৪৪ তাই হে নবী! এ বাণী অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে আমার ওপর ছেড়ে দাও২৬ আমি ধীরে ধীরে এমনভাবে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো যে, তারা বুঝতেই পারবে না২৭

﴿وَأُمْلِى لَهُمْ ۚ إِنَّ كَيْدِى مَتِينٌ﴾

৪৫ আমি এদের রশি ঢিলে করে দিচ্ছি আমার কৌশল২৮ অত্যন্ত মজবুত

﴿أَمْ تَسْـَٔلُهُمْ أَجْرًۭا فَهُم مِّن مَّغْرَمٍۢ مُّثْقَلُونَ﴾

৪৬ তুমি কি এদের কাছে কোন পারিশ্রমিক দাবী করছো যে, সে জরিমানার বোঝা তাদের কাছে দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে?২৯

﴿أَمْ عِندَهُمُ ٱلْغَيْبُ فَهُمْ يَكْتُبُونَ﴾

৪৭ তাদের কি গায়েবের বিষয় জানা আছে, যা তারা লিখে রাখছে?৩০

﴿فَٱصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تَكُن كَصَاحِبِ ٱلْحُوتِ إِذْ نَادَىٰ وَهُوَ مَكْظُومٌۭ﴾

৪৮ অতএব তোমার রবের চূড়ান্ত ফায়সালা পর্যন্ত ধের্য্যসহ অপেক্ষা করো৩১ এবং মাছওয়ালার (ইউনুস আ.) মতো৩২ হয়ো না, যখন সে বিষাদ ভারাক্রান্ত৩৩ হয়ে ডেকেছিলো

﴿لَّوْلَآ أَن تَدَٰرَكَهُۥ نِعْمَةٌۭ مِّن رَّبِّهِۦ لَنُبِذَ بِٱلْعَرَآءِ وَهُوَ مَذْمُومٌۭ﴾

৪৯ তার রবের অনুগ্রহ যদি তার সহায়ক না হতো তাহলে সে অপমানিত হয়ে খোলা প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত হতো৩৪

﴿فَٱجْتَبَـٰهُ رَبُّهُۥ فَجَعَلَهُۥ مِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ﴾

৫০ অবশেষে তার রব তাকে বেছে নিলেন এবং নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করলেন

﴿وَإِن يَكَادُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَـٰرِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا۟ ٱلذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُۥ لَمَجْنُونٌۭ﴾

৫১ এ কাফেররা যখন উপদেশবাণী (কুরআন) শোনে তখন এমনভাবে তোমার দিকে তাকায় যেন তোমার পদযুগল উৎপাটিত করে ফেলবে৩৫ আর বলে যে, এ তো অবশ্যি পাগল

﴿وَمَا هُوَ إِلَّا ذِكْرٌۭ لِّلْعَـٰلَمِينَ﴾

৫২ অথচ তা সারা বিশ্ব-জাহানের জন্য উপদেশ ছাড়া আর কিছুই নয়

--- সমাপ্ত ---

কোন মন্তব্য নেই

মতামতের জন্য ধন্যবাদ।