০২৫. সূরা আল
ফুরকান
আয়াতঃ ৭৭; রুকুঃ ০৬; মাক্কী
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
পরম
করুণাময়
মেহেরবানী আল্লাহর নামে
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِى
نَزَّلَ ٱلْفُرْقَانَ عَلَىٰ عَبْدِهِۦ لِيَكُونَ لِلْعَـٰلَمِينَ نَذِيرًا﴾
১। বড়ই বরকত
সম্পন্ন১ তিনি যিনি এ ফুরকান২ তাঁর
বান্দার ওপর নাযিল করেছেন৩ যাতে সে
সারা বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হয়।৪
﴿ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ
وَٱلْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًۭا وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ شَرِيكٌۭ فِى ٱلْمُلْكِ
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍۢ فَقَدَّرَهُۥ تَقْدِيرًۭا﴾
২। যিনি
পৃথিবী ও আকাশের রাজত্বের মালিক,৫ যিনি
কাউকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি,৬ যাঁর
সাথে রাজত্বে কেউ শরীক নেই,৭ যিনি
প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন তারপর তার একটি তাকদীর নির্ধারিত করে দিয়েছেন।৮
﴿وَٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ
ءَالِهَةًۭ لَّا يَخْلُقُونَ شَيْـًۭٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ وَلَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ
ضَرًّۭا وَلَا نَفْعًۭا وَلَا يَمْلِكُونَ مَوْتًۭا وَلَا حَيَوٰةًۭ وَلَا نُشُورًۭا﴾
৩। লোকেরা
তাঁকে বাদ দিয়ে এমন সব উপাস্য তৈরি করে নিয়েছে যারা কোন জিনিস সৃষ্টি করে না বরং
নিজেরাই সৃষ্ট,৯ যারা নিজেদের জন্যও
কোন উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না, যারা না
জীবন-মৃত্যু দান করতে পারে আর না মৃতদেরকে আবার জীবিত করতে পারে।১০
﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟
إِنْ هَـٰذَآ إِلَّآ إِفْكٌ ٱفْتَرَىٰهُ وَأَعَانَهُۥ عَلَيْهِ قَوْمٌ ءَاخَرُونَ
ۖ فَقَدْ جَآءُو ظُلْمًۭا وَزُورًۭا﴾
৪। যারা নবীর
কথা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা বলে, এ ফুরকান একটি মনগড়া
জিনিস, যাকে এ ব্যক্তি নিজেই তৈরি করেছে এবং অপর কিছু লোক
তার এ কাজে তাকে সাহায্য করেছে। বড়ই জুলুম১১ ও ডাহা
মিথ্যায় তারা এসে পৌঁছেছে।
﴿وَقَالُوٓا۟ أَسَـٰطِيرُ
ٱلْأَوَّلِينَ ٱكْتَتَبَهَا فَهِىَ تُمْلَىٰ عَلَيْهِ بُكْرَةًۭ وَأَصِيلًۭا﴾
৫। বলে, এসব পুরাতন
লোকদের লেখা জিনিস- যেগুলো এ ব্যক্তি লিখিয়ে নিয়েছে এবং তা তাকে সকাল-সাঁঝে শুনানো
হয়।
﴿قُلْ أَنزَلَهُ ٱلَّذِى يَعْلَمُ
ٱلسِّرَّ فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ غَفُورًۭا رَّحِيمًۭا﴾
৬। হে
মুহাম্মাদ! বলো, “একে নাযিল করেছেন তিনিই যিনি পৃথিবী ও
আকাশমণ্ডলীর রহস্য জানেন।”১২ আসলে
তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়ার্দ্র।১৩
﴿وَقَالُوا۟ مَالِ هَـٰذَا
ٱلرَّسُولِ يَأْكُلُ ٱلطَّعَامَ وَيَمْشِى فِى ٱلْأَسْوَاقِ ۙ لَوْلَآ أُنزِلَ إِلَيْهِ
مَلَكٌۭ فَيَكُونَ مَعَهُۥ نَذِيرًا﴾
৭। তার বলে, “এ কেমন রাসূল,
যে খাবার খায় এবং হাটে বাজারে ঘুরে বেড়ায়?১৪ কেন তার
কাছে কোন ফেরেশতা পাঠানো হয়নি, যে তার সাথে থাকতো এবং
(অস্বীকারকারীদেরকে)১৫ ধমক দিতো?
﴿أَوْ يُلْقَىٰٓ إِلَيْهِ
كَنزٌ أَوْ تَكُونُ لَهُۥ جَنَّةٌۭ يَأْكُلُ مِنْهَا ۚ وَقَالَ ٱلظَّـٰلِمُونَ إِن
تَتَّبِعُونَ إِلَّا رَجُلًۭا مَّسْحُورًا﴾
৮। অথবা আর
কিছু না হলেও তাঁর জন্য অন্তত কিছু ধন-সম্পদ অবতীর্ণ করা হতো অথবা তাঁর কাছে থাকতো
অন্তত কোন বাগান, যা থেকে সে (নিশ্চিন্তে) রুজি সংগ্রহ করতো?”১৬ আর
জালেমরা বলে, “তোমরা তো একজন যাদুগ্রস্ত১৭ ব্যক্তির
অনুসরণ করছো।”
﴿ٱنظُرْ كَيْفَ ضَرَبُوا۟
لَكَ ٱلْأَمْثَـٰلَ فَضَلُّوا۟ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ سَبِيلًۭا﴾
৯। দেখো, কেমন সব
উদ্ভট ধরনের যুক্তি তারা তোমার সামনে খাড়া করেছে, তারা এমন
বিভ্রান্ত হয়েছে যে, কোন কাজের কথাই তাদের মাথায় আসছে না।১৮
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِىٓ إِن شَآءَ
جَعَلَ لَكَ خَيْرًۭا مِّن ذَٰلِكَ جَنَّـٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ
وَيَجْعَل لَّكَ قُصُورًۢا﴾
১০। বড়ই বরকত
সম্পন্ন তিনি১৯ যিনি চাইলে তাঁর
নির্ধারিত জিনিস থেকে অনেক বেশী ও উৎকৃষ্টতর জিনিস তোমাকে দিতে পারেন, (একটি নয়) অনেকগুলো বাগান যেগুলোর পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বড় বড় প্রাসাদ।
﴿بَلْ كَذَّبُوا۟ بِٱلسَّاعَةِ
ۖ وَأَعْتَدْنَا لِمَن كَذَّبَ بِٱلسَّاعَةِ سَعِيرًا﴾
১১। আসল কথা
হচ্ছে, এরা “সে সময়টিকে”২০ মিথ্যা
বলেছে২১ এবং যে সে সময়কে
মিথ্যা বলে তার জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন তৈরি করে রেখেছি।
﴿إِذَا رَأَتْهُم مِّن مَّكَانٍۭ
بَعِيدٍۢ سَمِعُوا۟ لَهَا تَغَيُّظًۭا وَزَفِيرًۭا﴾
১২। আগুন যখন
দূর থেকে এদের দেখবে২২ তখন এরা তার ক্রুদ্ধ
ও উত্তেজিত চিৎকার শুনতে পাবে।
﴿وَإِذَآ أُلْقُوا۟ مِنْهَا
مَكَانًۭا ضَيِّقًۭا مُّقَرَّنِينَ دَعَوْا۟ هُنَالِكَ ثُبُورًۭا﴾
১৩। আর যখন
এরা শৃংখলিত অবস্থায় তার মধ্যে একটি সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে তখন নিজেদের
মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে।
﴿لَّا تَدْعُوا۟ ٱلْيَوْمَ
ثُبُورًۭا وَٰحِدًۭا وَٱدْعُوا۟ ثُبُورًۭا كَثِيرًۭا﴾
১৪। (তখন
তাদের বলা হবে) আজ একটি মৃত্যুকে নয় বরং বহু মৃত্যুকে ডাকো।
﴿قُلْ أَذَٰلِكَ خَيْرٌ أَمْ
جَنَّةُ ٱلْخُلْدِ ٱلَّتِى وُعِدَ ٱلْمُتَّقُونَ ۚ كَانَتْ لَهُمْ جَزَآءًۭ وَمَصِيرًۭا﴾
১৫। এদের বলো, এ পরিণাম
ভালো অথবা সেই চিরন্তন জান্নাত যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছ মুত্তাকীদেরকে? সেটি হবে তাদের কর্মফল এবং তাদের সফরের শেষ মঞ্জিল।
﴿لَّهُمْ فِيهَا مَا يَشَآءُونَ
خَـٰلِدِينَ ۚ كَانَ عَلَىٰ رَبِّكَ وَعْدًۭا مَّسْـُٔولًۭا﴾
১৬। সেখানে
তাদের প্রত্যেকটি ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তার মধ্যে
তারা থাকবে চিরকাল। তা প্রদান করা হবে তোমার
রবের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত একটি অবশ্য পালনীয় প্রতিশ্রুতি।২৩
﴿وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ وَمَا
يَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَقُولُ ءَأَنتُمْ أَضْلَلْتُمْ عِبَادِى هَـٰٓؤُلَآءِ
أَمْ هُمْ ضَلُّوا۟ ٱلسَّبِيلَ﴾
১৭। আর সেদিনই
(তোমার রব) তাদেরও ঘিরে আনবেন এবং তাদের উপাস্যদেরও২৪ আল্লাহকে
বাদ দিয়ে আজ তারা যাদের পূজা করছে। তারপর
তিনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা কি আমার এ বান্দাদের গোমরাহ
করেছিলে? অথবা এরা নিজেরাই সহজ সরল সত্য পথ থেকে বিচ্যূত হয়ে
পড়েছিল?”২৫
﴿قَالُوا۟ سُبْحَـٰنَكَ مَا
كَانَ يَنۢبَغِى لَنَآ أَن نَّتَّخِذَ مِن دُونِكَ مِنْ أَوْلِيَآءَ وَلَـٰكِن مَّتَّعْتَهُمْ
وَءَابَآءَهُمْ حَتَّىٰ نَسُوا۟ ٱلذِّكْرَ وَكَانُوا۟ قَوْمًۢا بُورًۭا﴾
১৮। তারা বলবে, “পাক-পবিত্র
আপনার সত্তা! আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করার ক্ষমতাও তো
আমাদের ছিল না কিন্তু আপনি এদের এবং এদের বাপ-দাদাদের খুব বেশী জীবনোপকরণ দিয়েছেন,
এমনকি এরা শিক্ষা ভুলে গিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যপীড়িত হয়েছে।২৬
﴿فَقَدْ كَذَّبُوكُم بِمَا
تَقُولُونَ فَمَا تَسْتَطِيعُونَ صَرْفًۭا وَلَا نَصْرًۭا ۚ وَمَن يَظْلِم مِّنكُمْ
نُذِقْهُ عَذَابًۭا كَبِيرًۭا﴾
১৯। এভাবে
মিথ্যা সাব্যস্ত করবে তারা (তোমাদের উপাস্যরা) তোমাদের কথাগুলোকে যা আজ তোমরা বলছো,২৭ তারপর না
তোমরা নিজেদের দুর্ভাগ্যকে ঠেকাতে পারবে, না পারবে কোথাও
থেকে সাহায্য লাভ করতে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে-ই জুলুম করবে২৮ তাকে আমি
কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো।
﴿وَمَآ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ
مِنَ ٱلْمُرْسَلِينَ إِلَّآ إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ ٱلطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِى ٱلْأَسْوَاقِ
ۗ وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍۢ فِتْنَةً أَتَصْبِرُونَ ۗ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيرًۭا﴾
২০। হে
মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে যে রাসূলই আমি পাঠিয়েছি তারা সবাই আহার করতো ও বাজারে
চলাফেরা করতো।২৯ আসলে আমি
তোমাদের পরস্পরকে পরস্পরের জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে পরিণত করেছি।৩০ তোমরা কি
সবর করবে?৩১ তোমাদের রব সবকিছু
দেখেন।৩২
﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَرْجُونَ
لِقَآءَنَا لَوْلَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ أَوْ نَرَىٰ رَبَّنَا ۗ لَقَدِ
ٱسْتَكْبَرُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ وَعَتَوْ عُتُوًّۭا كَبِيرًۭا۞﴾
২১। যারা আমার
সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে, “কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা
পাঠানো হয় না?৩৩ অথবা আমরা আমাদের
রবকে দেখি না কেন?৩৪ বড়ই অহংকার করে তারা
নিজেদের মনে মনে৩৫ এবং সীমা অতিক্রম করে
গেছে তারা অবাধ্যতায়।
﴿يَوْمَ يَرَوْنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةَ
لَا بُشْرَىٰ يَوْمَئِذٍۢ لِّلْمُجْرِمِينَ وَيَقُولُونَ حِجْرًۭا مَّحْجُورًۭا﴾
২২। যেদিন
তারা ফেরেশতাদের দেখবে সেটা অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদের দিন হবে না।৩৬ চিৎকার
করে উঠবে তারা, “হে আল্লাহ! বাচাও, বাচাও”
﴿وَقَدِمْنَآ إِلَىٰ مَا
عَمِلُوا۟ مِنْ عَمَلٍۢ فَجَعَلْنَـٰهُ هَبَآءًۭ مَّنثُورًا﴾
২৩। এবং তাদের
সমস্ত কৃতকর্ম নিয়ে আমি ধূলোর মতো উড়িয়ে দেবো।৩৭
﴿أَصْحَـٰبُ ٱلْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ
خَيْرٌۭ مُّسْتَقَرًّۭا وَأَحْسَنُ مَقِيلًۭا﴾
২৪। সেদিন
যারা জান্নাতের অধিকারী হবে তারাই উৎকৃষ্ট স্থানে অবস্থান করবে এবং দুপুর কাটাবার
জন্য চমৎকার জায়গা পাবে।৩৮
﴿وَيَوْمَ تَشَقَّقُ ٱلسَّمَآءُ
بِٱلْغَمَـٰمِ وَنُزِّلَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ تَنزِيلًا﴾
২৫। আকাশ
ফুঁড়ে একটি মেঘমালার সেদিন উদয় হবে এবং ফেরেশতাদের দলে দলে নামিয়ে দেয়া হবে।
﴿ٱلْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ ٱلْحَقُّ
لِلرَّحْمَـٰنِ ۚ وَكَانَ يَوْمًا عَلَى ٱلْكَـٰفِرِينَ عَسِيرًۭا﴾
২৬। সেদিন
প্রকৃত রাজত্ব হবে শুধুমাত্র দয়াময়ের৩৯ এবং সেটি
হবে অস্বীকারকারীদের জন্য বড়ই কঠিন দিন।
﴿وَيَوْمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ
عَلَىٰ يَدَيْهِ يَقُولُ يَـٰلَيْتَنِى ٱتَّخَذْتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلًۭا﴾
২৭। জালেমরা
সেদিন নিজেদের হাত কামড়াতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, “হায়! যদি
আমি রাসুলের সহযোগী হতাম।
﴿يَـٰوَيْلَتَىٰ لَيْتَنِى
لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًۭا﴾
২৮। হায়! আমার
দুর্ভাগ্য, হায়! যদি আমি অমুক লোককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ
না করতাম।
﴿لَّقَدْ أَضَلَّنِى عَنِ
ٱلذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَآءَنِى ۗ وَكَانَ ٱلشَّيْطَـٰنُ لِلْإِنسَـٰنِ خَذُولًۭا﴾
২৯। তার
প্ররোচনার কারণে আমার কাছে আসা উপদেশ আমি মানিনি। মানুষের
জন্য শয়তান বড়ই বিশ্বাসঘাতক প্রমাণিত হয়েছে।”৪০
﴿وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَـٰرَبِّ
إِنَّ قَوْمِى ٱتَّخَذُوا۟ هَـٰذَا ٱلْقُرْءَانَ مَهْجُورًۭا﴾
৩০। আর রাসূল
বলবে, “হে আমার রব! আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কুরআনকে
হাসি-ঠাট্টার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল।”৪১
﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ
نَبِىٍّ عَدُوًّۭا مِّنَ ٱلْمُجْرِمِينَ ۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيًۭا وَنَصِيرًۭا﴾
৩১। হে
মুহাম্মাদ! আমিতো এভাবে অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রুতে পরিণত করেছি৪২ এবং
তোমার জন্য তোমার রবই পথ দেখানোর ও সাহায্য দানের জন্য যথেষ্ট।৪৩
﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟
لَوْلَا نُزِّلَ عَلَيْهِ ٱلْقُرْءَانُ جُمْلَةًۭ وَٰحِدَةًۭ ۚ كَذَٰلِكَ لِنُثَبِّتَ
بِهِۦ فُؤَادَكَ ۖ وَرَتَّلْنَـٰهُ تَرْتِيلًۭا﴾
৩২।
অস্বীকারকারীরা বলে, “এ ব্যক্তির কাছে সমগ্র কুরআন একই সাথে
নাযিল করা হলো না কেন?”৪৪ ---হ্যাঁ,
এমন করা হয়েছে এজন্য, যাতে আমি একে ভালোভাবে
তোমার মনে গেঁথে দিতে থাকি৪৫ এবং (এ
উদ্দেশ্যে) একে একটি বিশেষ ক্রমধারা অনুযায়ী আলাদা আলাদা অংশে সাজিয়ে দিয়েছি।
﴿وَلَا يَأْتُونَكَ بِمَثَلٍ
إِلَّا جِئْنَـٰكَ بِٱلْحَقِّ وَأَحْسَنَ تَفْسِيرًا﴾
৩৩। আর (এর
মধ্যে এ কল্যাণকর উদ্দেশ্যও রয়েছে যে) যখনই তারা তোমার সামনে কোন অভিনব কথা (অথবা
অদ্ভূত ধরনের প্রশ্ন) নিয়ে এসেছে তার সঠিক জবাব যথাসময়ে আমি তোমাকে দিয়েছি এবং
সর্বোত্তম পদ্ধতিতে বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছি।৪৬
﴿ٱلَّذِينَ يُحْشَرُونَ عَلَىٰ
وُجُوهِهِمْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ أُو۟لَـٰٓئِكَ شَرٌّۭ مَّكَانًۭا وَأَضَلُّ سَبِيلًۭا﴾
৩৪।
---যাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়া হবে তাদের অবস্থান বড়ই খারাপ এবং
তাদের পথ সীমাহীন ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ।৪৭
﴿وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا مُوسَى
ٱلْكِتَـٰبَ وَجَعَلْنَا مَعَهُۥٓ أَخَاهُ هَـٰرُونَ وَزِيرًۭا﴾
৩৫। আমি
মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম৪৮ এবং তাঁর সাথে তাঁর
ভাই হারুনকে সাহায্যকারী হিসেবে লাগিয়েছিলাম
﴿فَقُلْنَا ٱذْهَبَآ إِلَى
ٱلْقَوْمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا فَدَمَّرْنَـٰهُمْ تَدْمِيرًۭا﴾
৩৬। আর তাদের
বলেছিলাম, যাও সেই সম্প্রদায়ের কাছে যারা আমার আয়াতকে
মিথ্যা বলেছে।৪৯ শেষ
পর্যন্ত তাদের আমি ধ্বংস করে দিলাম।
﴿وَقَوْمَ نُوحٍۢ لَّمَّا
كَذَّبُوا۟ ٱلرُّسُلَ أَغْرَقْنَـٰهُمْ وَجَعَلْنَـٰهُمْ لِلنَّاسِ ءَايَةًۭ ۖ وَأَعْتَدْنَا
لِلظَّـٰلِمِينَ عَذَابًا أَلِيمًۭا﴾
৩৭। একই
অবস্থা হলো নূহের সম্প্রদায়েরও যখন তারা রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো,৫০ আমি
তাদের ডুবিয়ে দিলাম এবং সারা দুনিয়ার লোকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত
করলাম, আর এ জালেমদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ঠিক করে
রেখেছি।৫১
﴿وَعَادًۭا وَثَمُودَا۟ وَأَصْحَـٰبَ
ٱلرَّسِّ وَقُرُونًۢا بَيْنَ ذَٰلِكَ كَثِيرًۭا﴾
৩৮। এভাবে আদ
ও সামূদ এবং আসহাবুর রস্৫২ ও মাঝখানের
শতাব্দীগুলোর বহু লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
﴿وَكُلًّۭا ضَرَبْنَا لَهُ
ٱلْأَمْثَـٰلَ ۖ وَكُلًّۭا تَبَّرْنَا تَتْبِيرًۭا﴾
৩৯। তাদের
প্রত্যেককে আমি (পূর্বে ধ্বংস প্রাপ্তদের) দৃষ্টান্ত দিয়ে দিয়ে বুঝিয়েছি এবং শেষ
পর্যন্ত প্রত্যেককে ধ্বংস করে দিয়েছি।
﴿وَلَقَدْ أَتَوْا۟ عَلَى
ٱلْقَرْيَةِ ٱلَّتِىٓ أُمْطِرَتْ مَطَرَ ٱلسَّوْءِ ۚ أَفَلَمْ يَكُونُوا۟ يَرَوْنَهَا
ۚ بَلْ كَانُوا۟ لَا يَرْجُونَ نُشُورًۭا﴾
৪০। আর সেই
জনপদের ওপর দিয়ে তো তারা যাতায়াত করেছে যার ওপর নিকৃষ্টতম বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিল।৫৩ তারা কি
তার অবস্থা দেখে থাকেনি? কিন্তু তারা মৃত্যুর পরের জীবনের
আশাই করে না।৫৪
﴿وَإِذَا رَأَوْكَ إِن يَتَّخِذُونَكَ
إِلَّا هُزُوًا أَهَـٰذَا ٱلَّذِى بَعَثَ ٱللَّهُ رَسُولًا﴾
৪১। তারা যখন
তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে। (বলে), “এ লোককে
আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন?
﴿إِن كَادَ لَيُضِلُّنَا عَنْ
ءَالِهَتِنَا لَوْلَآ أَن صَبَرْنَا عَلَيْهَا ۚ وَسَوْفَ يَعْلَمُونَ حِينَ يَرَوْنَ
ٱلْعَذَابَ مَنْ أَضَلُّ سَبِيلًا﴾
৪২। এতো আমাদের পথভ্রষ্ট করে নিজেদের
দেবতাদের থেকেই সরিয়ে দিতো যদি না আমরা তাদের প্রতি অটল বিশ্বাসী হয়ে থাকতাম।৫৫ বেশ,
সে সময় দূরে নয় যখন শাস্তি দেখে তারা নিজেরাই জানবে ভ্রষ্টতায় কে
দূরে চলে গিয়েছিল।
﴿أَرَءَيْتَ مَنِ ٱتَّخَذَ
إِلَـٰهَهُۥ هَوَىٰهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا﴾
৪৩। কখনো কি
তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির
কামনাকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে?৫৬ তুমি কি
এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পার?
﴿أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ
يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ ۚ إِنْ هُمْ إِلَّا كَٱلْأَنْعَـٰمِ ۖ بَلْ هُمْ أَضَلُّ
سَبِيلًا﴾
৪৪। তুমি কি
মনে করো তাদের অধিকাংশ লোক শোনে ও বোঝে? তারা পশুর মতো বরং তারও
অধম।৫৭
﴿أَلَمْ تَرَ إِلَىٰ رَبِّكَ
كَيْفَ مَدَّ ٱلظِّلَّ وَلَوْ شَآءَ لَجَعَلَهُۥ سَاكِنًۭا ثُمَّ جَعَلْنَا ٱلشَّمْسَ
عَلَيْهِ دَلِيلًۭا﴾
৪৫। তুমি কি
দেখ না কিভাবে তোমার রব ছায়া বিস্তার করেন? তিনি চাইলে
একে চিরন্তন ছায়ায় পরিণত করতেন। আমি
সূর্যকে করেছি তার পথ-নির্দেশক।৫৮
﴿ثُمَّ قَبَضْنَـٰهُ إِلَيْنَا
قَبْضًۭا يَسِيرًۭا﴾
৪৬। তারপর
(যতই সূর্য উঠতে থাকে) আমি এ ছায়াকে ধীরে ধীরে নিজের দিকে গুটিয়ে নিতে থাকি।৫৯
﴿وَهُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ
ٱلَّيْلَ لِبَاسًۭا وَٱلنَّوْمَ سُبَاتًۭا وَجَعَلَ ٱلنَّهَارَ نُشُورًۭا﴾
৪৭। আর তিনিই
রাতকে তোমাদের জন্য পোশাক,৬০ ঘুমকে মৃত্যুর
শান্তি এবং দিনকে জীবন্ত হয়ে উঠার সময়ে পরিণত করেছেন।৬১
﴿وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ
ٱلرِّيَـٰحَ بُشْرًۢا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِۦ ۚ وَأَنزَلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ
طَهُورًۭا﴾
৪৮। আর নিজের
রহমতের আগেভাগে বাতাসকে সুসংবাদদাতারুপে পাঠান। তারপর
আকাশ থেকে বর্ষণ করেন বিশুদ্ধ পানি৬২
﴿لِّنُحْـِۧىَ بِهِۦ بَلْدَةًۭ
مَّيْتًۭا وَنُسْقِيَهُۥ مِمَّا خَلَقْنَآ أَنْعَـٰمًۭا وَأَنَاسِىَّ كَثِيرًۭا﴾
৪৯। একটি মৃত
এলাকাকে তার মাধ্যমে জীবন দান করার এবং নিজের সৃষ্টির মধ্য থেকে বহুতর পশু ও
মানুষকে তা পান করবার জন্য।৬৩
﴿وَلَقَدْ صَرَّفْنَـٰهُ بَيْنَهُمْ
لِيَذَّكَّرُوا۟ فَأَبَىٰٓ أَكْثَرُ ٱلنَّاسِ إِلَّا كُفُورًۭا﴾
৫০। এ
বিস্ময়কর কার্যকলাপ আমি বার বার তাদের সামনে আনি৬৪ যাতে
তারা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে কিন্তু অধিকাংশ লোক কুফরী ও অকৃতজ্ঞতা ছাড়া অন্য কোন
মনোভাব পোষণ করতে অস্বীকার করে।৬৫
﴿وَلَوْ شِئْنَا لَبَعَثْنَا
فِى كُلِّ قَرْيَةٍۢ نَّذِيرًۭا﴾
৫১। যদি আমি
চাইতাম তাহলে এক একটি জনবসতিতে এক একজন ভীতি প্রদর্শনকারী পাঠাতে পারতাম।”৬৬
﴿فَلَا تُطِعِ ٱلْكَـٰفِرِينَ
وَجَـٰهِدْهُم بِهِۦ جِهَادًۭا كَبِيرًۭا﴾
৫২। কাজেই হে
নবী, কাফেরদের কথা কখনো মেনে নিয়ো না এবং এ
কুরআন নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তম জিহাদ করো।৬৭
﴿وَهُوَ ٱلَّذِى مَرَجَ ٱلْبَحْرَيْنِ
هَـٰذَا عَذْبٌۭ فُرَاتٌۭ وَهَـٰذَا مِلْحٌ أُجَاجٌۭ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًۭا
وَحِجْرًۭا مَّحْجُورًۭا۞﴾
৫৩। আর তিনিই
দুই সাগরকে মিলিত করেছেন। একটি সুস্বাদু ও মিষ্ট এবং
অন্যটি লোনা ও খার। আর দু’য়ের মাঝে একটি অন্তরাল
রয়েছে, একটি বাঁধা তাদের একাকার হবার পথে
প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে রেখেছে।৬৮
﴿وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ مِنَ
ٱلْمَآءِ بَشَرًۭا فَجَعَلَهُۥ نَسَبًۭا وَصِهْرًۭا ۗ وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًۭا﴾
৫৪। আর তিনিই
পানি থেকে একটি মানুষ তৈরি করেছেন, আবার তার থেকে বংশীয় ও
শ্বশুরালয়ের দু’টি আলাদা ধারা চালিয়েছেন।৬৯ তোমার রব
বড়ই শক্তি সম্পন্ন।
﴿وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ
ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُهُمْ وَلَا يَضُرُّهُمْ ۗ وَكَانَ ٱلْكَافِرُ عَلَىٰ رَبِّهِۦ
ظَهِيرًۭا﴾
৫৫। এক
আল্লাহকে বাদ দিয়ে লোকেরা এমন সব সত্তার পূজা করছে যারা না তাদের উপকার করতে পারে, না অপকার। আবার
অতিরিক্ত হচ্ছে এই যে, কাফের নিজের রবের মোকাবিলায় প্রত্যেক
বিদ্রোহীর সাহায্যকারী হয়ে আছে।৭০
﴿وَمَآ أَرْسَلْنَـٰكَ إِلَّا
مُبَشِّرًۭا وَنَذِيرًۭا﴾
৫৬। হে
মুহাম্মাদ। তোমাকে তো আমি শুধুমাত্র একজন সুসংবাদ
দানকারী ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি।৭১
﴿قُلْ مَآ أَسْـَٔلُكُمْ
عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِلَّا مَن شَآءَ أَن يَتَّخِذَ إِلَىٰ رَبِّهِۦ سَبِيلًۭا﴾
৫৭। এদের বলে
দাও “এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না, যে চায় সে
তার নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক, এটিই আমার প্রতিদান।৭১ (ক)
﴿وَتَوَكَّلْ عَلَى ٱلْحَىِّ
ٱلَّذِى لَا يَمُوتُ وَسَبِّحْ بِحَمْدِهِۦ ۚ وَكَفَىٰ بِهِۦ بِذُنُوبِ عِبَادِهِۦ
خَبِيرًا﴾
৫৮। হে
মুহাম্মাদ! ভরসা করো এমন আল্লাহর প্রতি যিনি জীবিত এবং কখনো মরবেন না। তাঁর
সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করো। নিজের
বান্দাদের গোনাহের ব্যাপারে কেবল তাঁরই জানা যথেষ্ট
﴿ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ
وَٱلْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِى سِتَّةِ أَيَّامٍۢ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ
ۚ ٱلرَّحْمَـٰنُ فَسْـَٔلْ بِهِۦ خَبِيرًۭا﴾
৫৯। তিনিই ছয়
দিনে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে সব তৈরি করে রেখে দিয়েছেন, তারপর তিনিই
(বিশ্ব-জাহানের সিংহাসন) আরশে সমাসীন হয়েছেন,৭২ তিনিই রাহমান,
যে জানে তাকে জিজ্ঞেস করো তাঁর অবস্থা সম্পর্কে।
﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱسْجُدُوا۟
لِلرَّحْمَـٰنِ قَالُوا۟ وَمَا ٱلرَّحْمَـٰنُ أَنَسْجُدُ لِمَا تَأْمُرُنَا وَزَادَهُمْ
نُفُورًۭا﴾
৬০। তাদেরকে
যখন বলা হয়, এই রাহমানকে সিজদাহ করো তখন তারা বলে,
“রাহমান কি? তুমি যার কথা বলবে তাকেই কি আমারা
সিজদা করতে থাকবো?”৭৩ এ
উপদেশটি উল্টো তাদের ঘৃণা আরো বাড়িয়ে দেয়।৭৪
﴿تَبَارَكَ ٱلَّذِى جَعَلَ
فِى ٱلسَّمَآءِ بُرُوجًۭا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَٰجًۭا وَقَمَرًۭا مُّنِيرًۭا﴾
৬১। অসীম বরকত
সম্পন্ন তিনি যিনি আকাশে বুরুজ নির্মাণ করেছেন৭৫ এবং তার
মধ্যে একটি প্রদীপ৭৬ ও একটি আলোকময় চাঁদ
উজ্জ্বল করেছেন।
﴿وَهُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ ٱلَّيْلَ
وَٱلنَّهَارَ خِلْفَةًۭ لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًۭا﴾
৬২। তিনিই রাত
ও দিনকে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ
করতে অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায়।৭৭
﴿وَعِبَادُ ٱلرَّحْمَـٰنِ
ٱلَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى ٱلْأَرْضِ هَوْنًۭا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ ٱلْجَـٰهِلُونَ
قَالُوا۟ سَلَـٰمًۭا﴾
৬৩। রাহমানের
(আসল) বান্দা তারাই৭৮ যারা পৃথিবীর বুকে
নম্রভাবে চলাফেরা করে৭৯ এবং
মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়,
﴿وَٱلَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ
سُجَّدًۭا وَقِيَـٰمًۭا﴾
৬৪। তোমাদের
সালাম।৮০ তারা নিজেদের রবের
সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়।৮১
﴿وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا
ٱصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا﴾
৬৫। তারা দোয়া
করতে থাকেঃ “হে আমাদের রব! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আযাব তো
সর্বনাশা।
﴿إِنَّهَا سَآءَتْ مُسْتَقَرًّۭا
وَمُقَامًۭا﴾
৬৬। আশ্রয়স্থল
ও আবাস হিসেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা।৮২
﴿وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُوا۟
لَمْ يُسْرِفُوا۟ وَلَمْ يَقْتُرُوا۟ وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًۭا﴾
৬৭। তারা যখন
ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি
তাদের ব্যয় ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।৮৩
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدْعُونَ
مَعَ ٱللَّهِ إِلَـٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ ٱلنَّفْسَ ٱلَّتِى حَرَّمَ ٱللَّهُ
إِلَّا بِٱلْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًۭا﴾
৬৮। তারা
আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রাণকে হারাম
করেছেন কোন সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না।৮৪ এসব যে-ই
করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে।
﴿يُضَـٰعَفْ لَهُ ٱلْعَذَابُ
يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِۦ مُهَانًا﴾
৬৯। কিয়ামতের
দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে৮৫ এবং
সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়।
﴿إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ
وَعَمِلَ عَمَلًۭا صَـٰلِحًۭا فَأُو۟لَـٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمْ حَسَنَـٰتٍۢ
ۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورًۭا رَّحِيمًۭا﴾
৭০। তবে তারা
ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং ইমান এনে সৎকাজ করতে থেকেছে।৮৬ এ ধরনের
লোকদের অসৎ কাজগুলোকে আল্লাহ সৎকাজের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন৮৭ এবং
আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।
﴿وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَـٰلِحًۭا
فَإِنَّهُۥ يَتُوبُ إِلَى ٱللَّهِ مَتَابًۭا﴾
৭১। যে
ব্যক্তি তাওবা করে সৎকাজের পথ অবলম্বন করে, সে তো
আল্লাহর দিকে ফিরে আসার মতই ফিরে আসে।৮৮
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ
ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا۟ بِٱللَّغْوِ مَرُّوا۟ كِرَامًۭا﴾
৭২। ---(আর রাহমানের
বান্দা হচ্ছে তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না৮৯ এবং কোন
বাজে জিনিসের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মত অতিক্রম করে যায়।৯০
﴿وَٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا۟
بِـَٔايَـٰتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا۟ عَلَيْهَا صُمًّۭا وَعُمْيَانًۭا﴾
৭৩। তাদের যদি
তাদের রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয়া হয় তাহলে তারা তার প্রতি অন্ধ বধির হয়ে থাকে না।৯১
﴿وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا
هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَٰجِنَا وَذُرِّيَّـٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍۢ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ
إِمَامًا﴾
৭৪। তারা
প্রার্থনা করে থাকে, “হে আমাদের রব! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও
নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও৯২ এবং
আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম।”৯৩
﴿أُو۟لَـٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ
ٱلْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا۟ وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةًۭ وَسَلَـٰمًا﴾
৭৫। (এরাই
নিজেদের সবরের৯৪ ফল উন্নত মনজিলের
আকারে পাবে।৯৫ অভিবাদন
ও সালাম সহকারে তাদের সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে।
﴿خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۚ حَسُنَتْ
مُسْتَقَرًّۭا وَمُقَامًۭا﴾
৭৬। তারা
সেখানে থাকবে চিরকাল। কী চমৎকার সেই আশ্রয় এবং সেই
আবাস!
﴿قُلْ مَا يَعْبَؤُا۟ بِكُمْ
رَبِّى لَوْلَا دُعَآؤُكُمْ ۖ فَقَدْ كَذَّبْتُمْ فَسَوْفَ يَكُونُ لِزَامًۢا﴾
৭৭। হে
মুহাম্মাদ! লোকদের বলো, “আমার রবের তোমাদের কি প্রয়োজন,
যদি তোমারা তাঁকে না ডাকো।৯৬ এখন যে
তোমরা মিথ্যা আরোপ করেছো, শিগগীর এমন শাস্তি পাবে যে,
তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হবে না।”
--- সমাপ্ত ---
কোন মন্তব্য নেই
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।