০১৩. সূরা আর রা’দ
আয়াতঃ ৪৩; রুকুঃ ০৬; মাক্কী
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
পরম
করুণাময়
মেহেরবানী আল্লাহর নামে
﴿المر ۚ تِلْكَ آيَاتُ
الْكِتَابِ ۗ وَالَّذِي أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ وَلَٰكِنَّ
أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
১। আলিম-লাম-মীম-রা। এগুলোর
আল্লাহর কিতাবের আয়াত। আর তোমরা রবের পক্ষ থেকে
তোমার প্রতি যাকিছু নাযিল হয়েছে তা প্রকৃত সত্য কিন্তু (তোমার কওমের) অধিকাংশ লোক
তা বিশ্বাস করে না।১
﴿اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ
بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ
وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ
لَعَلَّكُم بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ﴾
২। আল্লাহই
আকাশসমূহ স্থাপন করেছেন এমন কোন স্তম্ভ ছাড়াই যা তোমরা দেখতে পাও।২ তারপর তিনি নিজের শাসন
কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন হয়েছে।৩ আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে
একটি আইনের অধীন করেছেন।৪ এ সমগ্র ব্যবস্থার প্রত্যেকটি
জিনিস একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে।৫ আল্লাহই এ সমস্ত কাজের
ব্যবস্থাপনা করছেন। তিনি নিদর্শনাবলী খুলে খুলে
বর্ণনা করেন,৬ সম্ভবত তোমরা নিজের রবের সাথে
সাক্ষাতের ব্যাপারটি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করবে।৭
﴿وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ
وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا ۖ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا
زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ
لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
৩। আর তিনিই
এ ভূতলকে বিছিয়ে রেখেছেন, এর মধ্যে পাহাড়ের খুঁটি গেড়ে দিয়েছেন এবং নদী প্রবাহিত
করেছেন। তিনিই সব রকম ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায়
জোড়ায় এবং তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে ফেলেন।৮ এ সমস্ত জিনিসের মধ্যে বহুতর
নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে।
﴿وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ
وَجَنَّاتٌ مِّنْ أَعْنَابٍ وَزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ
بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ
لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ﴾
৪। আর দেখো, পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন
আলাদা আলাদা ভূখণ্ড,৯ রয়েছে আংগুর বাগান, শস্যক্ষেত, খেজুর গাছ- কিছু একাধিক
কাণ্ডবিশিষ্ট আবার কিছু এক কাণ্ড বিশিষ্ট,১০ সবাই
সিঞ্চিত একই পানিতে কিন্তু স্বাদের ক্ষেত্রে আমি করে দেই তাদের কোনটাকে বেশী ভালো
এবং কোনটাকে কম ভালো। এসব জিনিসের মধ্যে যারা
বুদ্ধিকে কাজে লাগায় তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নির্দশন।১১
﴿وَإِن تَعْجَبْ فَعَجَبٌ
قَوْلُهُمْ أَإِذَا كُنَّا تُرَابًا أَإِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ
كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ
أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
৫। এখন যদি
তুমি বিস্মিত হও, তাহলে
লোকদের একথাটিই বিস্ময়করঃ “মরে মাটিতে মিশে যাবার পর কি আমাদের আবার নতুন করে পয়দা
করা হবে?” এরা এমনসব লোক যারা নিজেদের রবের সাথে কুফরী করেছে।১২ এরা এমনসব লোক যাদের গলায়
শেকল পরানো আছে।১৩ এরা
জাহান্নামী এবং চিরকাল জাহান্নামেই থাকবে।
﴿وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالسَّيِّئَةِ
قَبْلَ الْحَسَنَةِ وَقَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِمُ الْمَثُلَاتُ ۗ وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو
مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلَىٰ ظُلْمِهِمْ ۖ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
৬। এ লোকেরা
ভালোর পূর্বে মন্দের জন্য তাড়াহুড়ো করছে।১৪ অথচ এদের আগে (যারাই এ নীতি
অবলম্বন করেছে তাদের ওপর আল্লাহর আযাবের) বহু শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত অতীত হয়ে গেছে। একথা সত্য, তোমার রব লোকদের বাড়াবাড়ি
সত্ত্বেও ও তাদের প্রতি ক্ষমাশীল আবার একথাও সত্য যে, তোমার রবর কঠোর শাস্তিদাতা।
﴿وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا
لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۗ إِنَّمَا أَنتَ مُنذِرٌ ۖ وَلِكُلِّ
قَوْمٍ هَادٍ﴾
৭। যারা
তোমার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা বলে, “এ ব্যক্তির ওপর এর রবের পক্ষ
থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন?”১৫ -তুমি তো
শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী, আর প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক।১৬
﴿اللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ
كُلُّ أُنثَىٰ وَمَا تَغِيضُ الْأَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ۖ وَكُلُّ شَيْءٍ عِندَهُ
بِمِقْدَارٍ﴾
৮। আল্লাহ
প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভ সম্পর্কে জানেন। যাকিছু
তার মধ্যে গঠিত হয় তাও তিনি জানেন এবং যাকিছু তার মধ্যে কমবেশী হয় সে সম্পর্কেও
তিনি খবর রাখেন।১৭ তাঁর কাছে
প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি পরিমাণ নির্দিষ্ট রয়েছে।
﴿عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ
الْكَبِيرُ الْمُتَعَالِ﴾
৯। তিনি
অদৃশ্য ও দৃশ্যমান প্রত্যেক জিনিসের জ্ঞান রাখেন। তিনি মহান
ও সর্বাবস্থায় সবার ওপর অবস্থান করেন।
﴿سَوَاءٌ مِّنكُم مَّنْ أَسَرَّ
الْقَوْلَ وَمَن جَهَرَ بِهِ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ بِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ بِالنَّهَارِ﴾
১০। তোমাদের
মধ্যে কোন ব্যক্তি জোরে কথা বলুক বা নীচু স্বরে এবং কেউ রাতের আঁধারে লুকিয়ে থাকুক
বা দিনের আলোয় চলতে থাকুক।
﴿لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ
يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ
مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ
سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ﴾
১১। তাঁর জন্য
সবই সমান। প্রত্যেক ব্যক্তির সামনে ও পেছনে তাঁর
নিযুক্ত পাহারাদার লেগে রয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমে তার দেখাশুনা করছে।১৮ আসলে আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত
কোন জাতির অবস্থা বদলান না যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের গুণাবলী বদলে ফেলে। আর আল্লাহ
যখন কোন জাতিকে দুর্ভাগ্য কবলিত করার ফায়সালা করে ফেলেন তখন কারো রদ করায় তা রদ
হতে পারে না এবং আল্লাহর মোকাবিলায় এমন জাতির কোন সহায় ও সাহায্যকারী হতে পারে না।১৯
﴿هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ
خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ﴾
১২। তিনিই
তোমাদের সামনে বিজলী চমকান, যা দেখে তোমাদের মধ্যে আংশকার সঞ্চার হয়
আবার আশাও জাগে।
﴿وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ
وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاءُ
وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ﴾
১৩। তিনিই
পানিভরা মেঘ উঠান। মেঘের গর্জন তাঁর প্রশংসা সহকারে তাঁর
পবিত্রতা বর্ণনা করে২০ এবং
ফেরেশতারা তাঁর ভয়ে কম্পিত হয়ে তাঁর তাস্বীহ করে।২১ তিনি বজ্রপাত করেন এবং (অনেক
সময়) তাকে যার ওপর চান, ঠিক সে যখন আল্লাহ সম্পর্কে বিতণ্ডায় লিপ্ত তখনই নিক্ষেপ
করেন। আসলে তাঁর কৌশল বড়ই জবরদস্ত।২২
﴿لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ ۖ
وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ لَا يَسْتَجِيبُونَ لَهُم بِشَيْءٍ إِلَّا كَبَاسِطِ
كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ ۚ وَمَا دُعَاءُ
الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ﴾
১৪। একমাত্র
তাঁকেই ডাকা সঠিক।২৩ আর
অন্যান্য সত্তাসমূহ, আল্লাহকে
বাদ দিয়ে যাদেরকে এ লোকেরা ডাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় কোন সাড়া দিতে পারে
না। তাদেরকে ডাকা তো ঠিক এমনি ধরনের যেমন কোন
ব্যক্তি পানির দিকে হাত বাড়িয়ে তার কাছে আবেদন জানায়, তুমি আমার মুখে পৌঁছে যাও, অথচ পানি তার মুখে পৌঁছতে
সক্ষম নয়। ঠিক এমনিভাবে কাফেরদের দোয়াও একটি
লক্ষভ্রষ্ট তীর ছাড়া আর কিছু নয়।
﴿وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَن فِي
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُهُم بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ
﴾
১৫। আল্লহাকে
সিজ্দা করছে পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি বস্তু ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায়২৪ এবং প্রত্যেক বস্তুর ছায়া
সকাল-সাঁঝে তাঁর সামনে নত হয়।২৫
﴿قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ قُلِ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لَا يَمْلِكُونَ
لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ
أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ ۗ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا
كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ ۚ قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ
وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾
১৬। এদেরকে
জিজ্ঞেস করো, আকাশ ও
পৃথিবীর রব কে?-বলো আল্লাহ!২৬ তারপর
এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আসল
ব্যাপার যখন এই তখন তোমরা কি তাঁকে বাদ দিয়ে এমন মাবুদদেরকে নিজেদের
কার্যসম্পাদনকারী বানিয়ে নিয়েছো যারা তাদের নিজেদের জন্যও কোন লাভ ও ক্ষতি করার
ক্ষমতা রাখে না? বলো অন্ধ ও চক্ষুস্মান কি সমান হয়ে থাকে?২৭ আলো ও আঁধার কি এক রকম হয়?২৮ যদি এমন না হয়, তাহলে তাদের বানানো শরীকরাও
কি আল্লাহর মতো কিছু সৃষ্টি করেছে, যে কারণে তারাও সৃষ্টি ক্ষমতার অধিকারী
বলে সন্দেহ হয়েছে?২৯ -বলো, প্রত্যেকটি জিনিসের স্রষ্টা
একমাত্র আল্লাহ। তিনি একক ও সবার ওপর পরাক্রমশালী।৩০
﴿أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ
مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ
وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ
مِّثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ
فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ
يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ﴾
১৭। আল্লাহ
আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং প্রত্যেক নদী-নালা নিজের সাধ্য অনুযায়ী তা নিয়ে
প্রবাহিত হয়। তারপর যখন প্লাবন আসে তখন ফেনা পানির
ওপরে ভাসতে থাকে।৩১ আর লোকেরা
অলংকার ও তৈজসপত্রাদি নির্মাণের জন্য যেসব ধাতু গরম করে তার ওপরও ঠিক এমনি ফেনা
ভেসে ওঠে।৩২ এ উপমার
সাহায্যে আল্লাহ হক ও বাতিলের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দেন। ফেনারাশি
উড়ে যায় এবং যে বস্তুটি মানুষের জন্য উপকারী হয় তা যমীনে থেকে যায়। এভাবে
আল্লাহ উপমার সাহায্যে নিজের কথা বুঝিয়ে থাকেন।
﴿لِلَّذِينَ اسْتَجَابُوا
لِرَبِّهِمُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَالَّذِينَ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُ لَوْ أَنَّ لَهُم مَّا
فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ سُوءُ
الْحِسَابِ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمِهَادُ﴾
১৮। যারা
নিজেদের রবের দাওয়াত গ্রহণ করেছে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে আর যারা তা গ্রহণ করেনি
তারা যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের মালিক হয়ে যায় এবং এ পরিমাণ আরো সংগ্রহ করে নেয়
তাহলেও তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাচাঁর জন্য এ সমস্তকে মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দিতে
তৈরী হয়ে যাবে।৩৩ এদের হিসেব
নেয়া হবে নিকৃষ্টভাবে৩৪ এবং এদের
আবাস হয়ে জাহান্নাম, বড়ই
নিকৃষ্ট আবাস।
﴿أَفَمَن يَعْلَمُ أَنَّمَا
أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَىٰ ۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ
أُولُو الْأَلْبَابِ﴾
১৯। আচ্ছা
তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার ওপর যে কিতাব নাযিল হয়েছে, তাকে যে ব্যক্তি সত্য মনে করে
আর যে ব্যক্তি এ সত্যটির ব্যাপারে অন্ধ, তারা দু’জন সমান হবে, এটা কেমন করে সম্ভব?৩৫ উপদেশ তো শুধু বিবেকবান
লোকেরাই গ্রহণ করে।৩৬
﴿الَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهْدِ
اللَّهِ وَلَا يَنقُضُونَ الْمِيثَاقَ﴾
২০। আর তাদের
কর্মপদ্ধতি এমন হয় যে, তারা আল্লাহকে প্রদত্ত নিজেদের অংগীকার পালন করে এবং তাকে
মজতুব করে বাঁধার পর ভেঙ্গে ফেলে না।৩৭
﴿وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا
أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ﴾
২১। তাদের
নীতি হয়, আল্লাহ
যেসব সম্পর্ক ও বন্ধন অক্ষণ্ন রাখার হুকুম দিয়েছেন।৩৮ সেগুলো তারা অক্ষুণ্ন রাখে, নিজেদের রবকে ভয় করে এবং
তাদের থেকে কড়া হিসেব না নেয়া হয় এই ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে।
﴿وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ
وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا
وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى
الدَّارِ﴾
২২। তাদের
অবস্থা হয় এই যে, নিজেদের
রবের সন্তুষ্টির জন্য তারা সবর করে,৩৯ নামায
কায়েম করে, আমার দেয়া
রিযিক থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে খচর করে এবং ভালো দিয়ে মন্দ দূরীভূত করে।৪০ আখেরাতের গৃহ হচ্ছে তাদের
জন্যই। অর্থাৎ এমন সব বাগান যা হবে তাদের
চিরস্থায়ী আবাস।
﴿جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا
وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ
يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ﴾
২৩। তারা
নিজেরা তার মধ্যে প্রবেশ করবে এবং তাদের বাপ-দাদারা ও স্ত্রী-সন্তানদের মধ্য থেকে
যারা সৎকর্মশীল হবে তারাও তাদের সাথে সেখানে যাবে। ফেরেশতারা
সব দিক থেকে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য আসবে
﴿سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا
صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ﴾
২৪। এবং
তাদেরকে বলবেঃ “তোমাদের প্রতি শান্তি।৪১ তোমরা দুনিয়ায় যেভাবে সবর করে
এসেছো তার বিনিময়ে আজ তোমরা এর অধিকারী হয়েছো।”-কাজেই
কতই চমৎকার এ আখেরাতের গৃহ!
﴿وَالَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ
اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ
وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۙ أُولَٰئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ﴾
২৫। আর যারা
আল্লাহর অংগীকারে মজবুতভাবে আবদ্ধ হবার পর তা ভেঙে ফেলে, আল্লাহ যেসব সম্পর্ক জোড়া
দেবার হুকুম দিয়েছেন সেগুলো ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তারা
লানতের অধিকারী এবং তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতে বড়ই খারাপ আবাস।
﴿اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ
لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا
فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ﴾
২৬। আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা রিযিক সম্প্রসারিত করেন এবং যাকে চান মাপাজোকো রিযিক দান করেন।৪২ এরা দুনিয়ার জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখেরাতের
তুলনায় সামান্য সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।
﴿وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا
لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۗ قُلْ إِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَن يَشَاءُ
وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ أَنَابَ﴾
২৭। যারা
(মুহাম্মদ সা. রিসালাত মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে তারা বলে, “এ ব্যক্তির কাছে এর রবের পক্ষ
থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন?”৪৩ বলো, আল্লাহ যাকে চান গোমরাহ করে
দেন এবং তিনি তাকেই তাঁর দিকে আসার পথ দেখান যে তাঁর দিকে রুজু করে।৪৪
﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ
قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ﴾
২৮। তারাই এ
ধরনের লোক যারা (এ নবীর দাওয়াত) গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের চিত্ত
প্রশান্ত হয়। সাবধান হয়ে যাও। আল্লাহর
স্মরণই হচ্ছে এমন জিনিস যার সাহায্যে চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে।
﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا
الصَّالِحَاتِ طُوبَىٰ لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ﴾
২৯। তারপর
যারা সত্যের দাওয়াত মেনে নিয়েছে এবং সৎকাজ করেছে তারা সৌভাগ্যবান এবং তাদের জন্য
রয়েছে শুভ পরিণাম।
﴿كَذَٰلِكَ أَرْسَلْنَاكَ
فِي أُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهَا أُمَمٌ لِّتَتْلُوَ عَلَيْهِمُ الَّذِي أَوْحَيْنَا
إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَٰنِ ۚ قُلْ هُوَ رَبِّي لَا إِلَٰهَ إِلَّا
هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ﴾
৩০। হে
মুহাম্মদ! এহেন মাহাত্ম সহকারে আমি তোমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি৪৫ এমন এক জাতির মধ্যে যার আগে
বহু জাতি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, যাতে তোমার কাছে আমি যে পয়গাম অবতীর্ণ
করেছি তা তুমি এদেরকে শুনিয়ে দাও, এমন অবস্থায় যখন এরা নিজেদের পরম দয়াময়
আল্লাহকে অস্বীকার করছে।৪৬ এদেরকে বলে দাও, তিনিই আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তাঁরই ওপর আমি ভরসা করেছি এবং
তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে।
﴿وَلَوْ أَنَّ قُرْآنًا سُيِّرَتْ
بِهِ الْجِبَالُ أَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الْأَرْضُ أَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتَىٰ ۗ بَل
لِّلَّهِ الْأَمْرُ جَمِيعًا ۗ أَفَلَمْ يَيْأَسِ الَّذِينَ آمَنُوا أَن لَّوْ يَشَاءُ
اللَّهُ لَهَدَى النَّاسَ جَمِيعًا ۗ وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُوا تُصِيبُهُم
بِمَا صَنَعُوا قَارِعَةٌ أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِّن دَارِهِمْ حَتَّىٰ يَأْتِيَ وَعْدُ
اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ﴾
৩১। আর কী হতো, যদি এমন কোন কুরআন নাযিল করা
হতো যার শক্তিতে পাহাড় চলতে থাকতো অথবা পৃথিবী বিদীর্ণ হতো কিংবা মৃত কবর থেকে বের
হয়ে কথা বলতে থাকতো?”৪৭ (এ ধরনের নিদর্শন দেখিয়ে দেয়া
তেমন কঠিন কাজ নয়) বরং সমস্ত ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই হাতে কেন্দ্রীভূত।৪৮ তাহলে ঈমানদাররা কি (এখানো
পর্যন্ত কাফেরদের চাওয়ার জবাবে কোন নিদর্শন প্রকাশের আশায় বসে আছে এবং তারা একথা
জেনে) হতাশ হয়ে যায়নি যে, যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে সমগ্র মানব জাতিকে হেয়াদাত দিয়ে
দিতেন?৪৯ যারা
আল্লাহ সাথে কুফরীর নীতি অবলম্বন করে রেখেছে তাদের ওপর তাদের কৃতকর্মের দরুন কোন
না কোন বিপর্যয় আসতেই থাকে অথবা তাদের ঘরের কাছেই কোথাও তা অবতীর্ণ হয়। এ
ধারাবাহিকতা চলতেই থাকবে যে পর্যন্ত না আল্লাহর ওয়াদা পূর্ণ হয়ে যায়। অবশ্যি
আল্লাহ নিজের ওয়াদার ব্যতিক্রম করেন না।
﴿وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ
مِّن قَبْلِكَ فَأَمْلَيْتُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ
عِقَابِ﴾
৩২। তোমার
আগেও অনেক রাসূলকে বিদ্রূপ করা হয়েছে। কিন্তু
আমি সবসময় অমান্যকারীদেরকে ঢিল দিয়ে এসেছি এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে পাকড়াও করেছি। তাহলে
দেখো আমার শাস্তি কেমন কঠোর ছিল।
﴿أَفَمَنْ هُوَ قَائِمٌ عَلَىٰ
كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ ۗ وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ قُلْ سَمُّوهُمْ ۚ أَمْ
تُنَبِّئُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ أَم بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ ۗ
بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا عَنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَن يُضْلِلِ
اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ﴾
৩৩। তবে কি
যিনি প্রত্যেক ব্যক্তির উপার্জনের প্রতি নজর রাখেন৫০ (তাঁরা মোকাবিলায় এ দুঃসাহস
করা হচ্ছে যে)৫১ লোকেরা
তাঁর কিছু শরীক ঠিক করে রেখেছে? হে নবী ! এদেরকে বলো, (যদি তারা সত্যিই আল্লাহর
বানানো শরীক হয়ে থাকে তাহলে) তাদের পরিচয় দাও, তারা কারা? না কি তোমরা আল্লাহকে এমন
একটি নতুন খবর দিচ্ছো যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে তাঁর অজানাই রয়ে গেছে? অথবা তোমরা এমনি যা মুখে আসে
বলে দাও?৫২ আসলে যারা
সত্যের দাওয়াত মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য তাদের প্রতারণাসমূহকে৫৩ সুসজ্জিত করে দেয়া হয়েছে এবং
তাদেরকে সত্য-সঠিক পথ থেকে নিবৃত্ত করা হয়েছে।৫৪ তারপর আল্লাহ যাকে গোমরাহীতে
লিপ্ত করেন তাকে পথ দেখাবার কেউ নেই।
﴿لَّهُمْ عَذَابٌ فِي الْحَيَاةِ
الدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَقُّ ۖ وَمَا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مِن وَاقٍ﴾
৩৪। এ ধরনের
লোকদের জন্য দুনিয়ার জীবনেই রয়েছে আযাব এবং আখেরাতের আযাব এর চেয়েও বেশী কঠিন। তাদেরকে
আল্লাহর হাত থেকে বাঁচাবার কেউ নেই।
﴿مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي
وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ أُكُلُهَا دَائِمٌ وَظِلُّهَا
ۚ تِلْكَ عُقْبَى الَّذِينَ اتَّقَوا ۖ وَّعُقْبَى الْكَافِرِينَ النَّارُ﴾
৩৫। যারা
আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে তার অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার পাদদেশে নদী প্রবাহিত
হচ্ছে, তার ফলসমূহ
চিরস্থায়ী এবং তার ছায়ার বিনাশ নেই। এ হচ্ছে
মুত্তাকীদের পরিণাম। অন্যদিকে সত্য অমান্যকারীদের
পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন।
﴿وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ
الْكِتَابَ يَفْرَحُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ ۖ وَمِنَ الْأَحْزَابِ مَن يُنكِرُ
بَعْضَهُ ۚ قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ وَلَا أُشْرِكَ بِهِ ۚ إِلَيْهِ
أَدْعُو وَإِلَيْهِ مَآبِ﴾
৩৬। হে নবী!
যাদেরকে আমি আগে কিতাব দিয়েছিলাম তারা তোমার প্রতি আমি যে কিতাব নাযিল করেছি তাতে
আনন্দিত। আর বিভিন্ন দলে এমন কিছু লোক আছে যারা এর
কোন কোন কথা মানে না। তুমি পরিষ্কার বলে দাও, “আমাকে তো শুধুমাত্র আল্লাহর
বন্দেগী করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই আমি
তাঁরই দিকে আহবান জানাচ্ছি এবং তাঁরই কাছে আমার প্রত্যাবর্তন।”৫৫
﴿وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ
حُكْمًا عَرَبِيًّا ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَمَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ
مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ﴾
৩৭। এ
হেদায়াতের সাথে আমি এ আরবী ফরমান তোমার প্রতি নাযিল করেছি। এখন তোমার
কাছে যে জ্ঞান এসে গেছে তা সত্ত্বেও যদি তুমি লোকদের খেয়াল খুশীর তাবেদারী করো
তাহলে আল্লাহর মোকাবিলায় তোমার কোন সহায়ও থাকবে না, আর কেউ তাঁর পাকড়াও থেকেও
তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا
مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً ۚ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ
أَن يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ﴾
৩৮। তোমার
আগেও আমি অনেক রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান সন্তুতি দিয়েছি।৫৬ আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া নিজেই
কোন নিদর্শন এনে দেখাবার শক্তি কোন রাসূলেরও ছিল না।৫৭ প্রত্যেক যুগের জন্য একটি
কিতাব রয়েছে।
﴿يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ
وَيُثْبِتُ ۖ وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ﴾
৩৯। আল্লাহ যা
চান নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং যা চান কায়েম রাখেন। উম্মুল
কিতাব তাঁর কাছেই আছে।৫৮
﴿وَإِن مَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ
الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا
الْحِسَابُ﴾
৪০। হে নবী!
আমি এদেরকে যে অশুভ পরিণামের ভয় দেখাচ্ছি চাই তার কোন অংশ আমি তোমার জীবিতাবস্থায়
তোমাকে দেখিয়ে দেই অথবা তা প্রকাশ হবার আগেই তোমাকে উঠিয়ে নিই- সর্বাবস্থায় তোমার
কাজই হবে শুধুমাত্র পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া আর হিসেব নেয়া হলো আমার কাজ।৫৯
﴿أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا
نَأْتِي الْأَرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ وَاللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ
لِحُكْمِهِ ۚ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ﴾
৪১। এরা কি
দেখে না আমি এ ভূখণ্ডের ওপর এগিয়ে চলছি এবং এর গণ্ডী চতুরদিক থেকে সংকুচিত করে
আনছি?৬০ আল্লাহ
রাজত্ব করছেন, তাঁর
সিদ্ধান্ত পুনরবিবেচনা করার কেউ নেই এবং তাঁর হিসেব নিতে একটুও দেরী হয় না।
﴿وَقَدْ مَكَرَ الَّذِينَ
مِن قَبْلِهِمْ فَلِلَّهِ الْمَكْرُ جَمِيعًا ۖ يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ
ۗ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ﴾
৪২। এদের আগে
যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তারাও বড় বড় চক্রান্ত করেছিল৬১ কিন্তু আসল সিদ্ধান্তকর কৌশল
তো পুরোপুরি আল্লাহর হাতে রয়েছে। তিনি
জানেন কে কি উপার্জন করছে এবং শীঘ্রই এ সত্য অস্বীকারকারীরা দেখে নেবে কার পরিণাম
ভালো হয়।
﴿وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا
لَسْتَ مُرْسَلًا ۚ قُلْ كَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِندَهُ
عِلْمُ الْكِتَابِ﴾
৪৩। এ
অস্বীকারকারীরা বলে, তুমি
আল্লাহর প্রেরিত নও। বলো, “আমার ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহর
সাক্ষ্য যথেষ্ট এবং তারপর আসমানী কিতাবের জ্ঞান রাখে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির সাক্ষ্য।”৬২
--- সমাপ্ত ---
কোন মন্তব্য নেই
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।