সূরা আদ দুখান-বাংলা অনুবাদ

Share:

 

০৪৪. সূরা আদ দুখান

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾

পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে

﴿حمٓ﴾

হা-মীম 

﴿وَٱلْكِتَـٰبِ ٱلْمُبِينِ﴾

এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ

﴿إِنَّآ أَنزَلْنَـٰهُ فِى لَيْلَةٍۢ مُّبَـٰرَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ﴾

আমি এটি এক বরকত ও কল্যাণময় রাতে নাযিল করেছি কারণ, আমি মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম 

﴿فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ﴾

এটা ছিল সেই রাত যে রাতে আমার নির্দেশে প্রতিটি বিষয়ের বিজ্ঞোচিত ফায়সালা দেয়া হয়ে থাকে 

﴿أَمْرًۭا مِّنْ عِندِنَآ ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ﴾

আমি একজন রাসূল পাঠাতে যাচ্ছিলাম, তোমার রবের রহমত স্বরূপ

﴿رَحْمَةًۭ مِّن رَّبِّكَ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ﴾

নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী 

﴿رَبِّ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَآ ۖ إِن كُنتُم مُّوقِنِينَ﴾

তিনি আসমান ও যমীনের মাঝখানের প্রতিটি জিনিসের রব, যদি তোমরা সত্যিই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণকারী হও 

﴿لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ ۖ رَبُّكُمْ وَرَبُّ ءَابَآئِكُمُ ٱلْأَوَّلِينَ﴾

তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান তোমাদের রব ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের রব যারা অতীত হয়ে গিয়েছেন 

﴿بَلْ هُمْ فِى شَكٍّۢ يَلْعَبُونَ﴾

(কিন্তু বাস্তবে এসব লোকের দৃঢ় বিশ্বাস নেই) বরং তারা নিজেদের সন্দেহের মধ্যে পড়ে খেলছে১০ 

﴿فَٱرْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِى ٱلسَّمَآءُ بِدُخَانٍۢ مُّبِينٍۢ﴾

১০ বেশ তো! সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করো, যে দিন আসমান পরিষ্কার ধোঁয়া নিয়ে আসবে

﴿يَغْشَى ٱلنَّاسَ ۖ هَـٰذَا عَذَابٌ أَلِيمٌۭ﴾

১১ এবং তা মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে এটা কষ্টদায়ক শাস্তি 

﴿رَّبَّنَا ٱكْشِفْ عَنَّا ٱلْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ﴾

১২ (এখন এরা বলে) হে প্রভু, আমাদের ওপর থেকে আযাব সরিয়ে দাও আমরা ঈমান আনবো 

﴿أَنَّىٰ لَهُمُ ٱلذِّكْرَىٰ وَقَدْ جَآءَهُمْ رَسُولٌۭ مُّبِينٌۭ﴾

১৩ কোথায় এদের গাফলতি দূর হচ্ছে? এদের অবস্থা তো এই যে, এদের কাছে ‘রাসূলে মুবীন’ এসেছেন১১ 

﴿ثُمَّ تَوَلَّوْا۟ عَنْهُ وَقَالُوا۟ مُعَلَّمٌۭ مَّجْنُونٌ﴾

১৪ তা সত্ত্বেও এরা তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি এবং বলেছেঃ এতো শিখিয়ে নেয়া পাগল১২ 

﴿إِنَّا كَاشِفُوا۟ ٱلْعَذَابِ قَلِيلًا ۚ إِنَّكُمْ عَآئِدُونَ﴾

১৫ আমি আযাব কিছুটা সরিয়ে নিচ্ছি এরপরও তোমরা যা আগে করছিলে তাই করবে

﴿يَوْمَ نَبْطِشُ ٱلْبَطْشَةَ ٱلْكُبْرَىٰٓ إِنَّا مُنتَقِمُونَ﴾

১৬ যেদিন আমি বড় আঘাত করবো, সেদিন আমি তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবো১৩ 

﴿وَلَقَدْ فَتَنَّا قَبْلَهُمْ قَوْمَ فِرْعَوْنَ وَجَآءَهُمْ رَسُولٌۭ كَرِيمٌ﴾

১৭ আমি এর আগে ফেরাউনের কওমকেও এই পরীক্ষায় ফেলেছিলাম তাদের কাছে একজন সম্ভ্রান্ত রাসূল এসেছিলেন১৪ 

﴿أَنْ أَدُّوٓا۟ إِلَىَّ عِبَادَ ٱللَّهِ ۖ إِنِّى لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌۭ﴾

১৮ তিনি বললেনঃ১৫ আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার কাছে সোপর্দ করো১৬ আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসূল১৭ 

﴿وَأَن لَّا تَعْلُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ ۖ إِنِّىٓ ءَاتِيكُم بِسُلْطَـٰنٍۢ مُّبِينٍۢ﴾

১৯ আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না আমি তোমাদের কাছে (আমার নিযুক্তির) স্পষ্ট সনদ পেশ করছি১৮ 

﴿وَإِنِّى عُذْتُ بِرَبِّى وَرَبِّكُمْ أَن تَرْجُمُونِ﴾

২০ তোমরা আমার ওপরে হামলা করে বসবে, এ ব্যাপার আমি আমার ও তোমাদের রবের আশ্রয় নিয়েছি

﴿وَإِن لَّمْ تُؤْمِنُوا۟ لِى فَٱعْتَزِلُونِ﴾

২১ তোমরা যদি আমার কথা না মানো, তাহলে আমাকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকো১৯ 

﴿فَدَعَا رَبَّهُۥٓ أَنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ قَوْمٌۭ مُّجْرِمُونَ﴾

২২ অবশেষে তিনি তাঁর রবকে ডেকে বললেন, এসব লোক অপরাধী২০ 

﴿فَأَسْرِ بِعِبَادِى لَيْلًا إِنَّكُم مُّتَّبَعُونَ﴾

২৩ (জবাব দেয়া হলো) বেশ তাহলে রাতের মধ্যেই আমার বান্দাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ো২১ তোমাদের পিছু ধাওয়া করা হবে২২ 

﴿وَٱتْرُكِ ٱلْبَحْرَ رَهْوًا ۖ إِنَّهُمْ جُندٌۭ مُّغْرَقُونَ﴾

২৪ সমুদ্রকে আপন অবস্থায় উন্মুক্ত থাকতে দাও এই পুরো সেনাবাহিনী নিমজ্জিত হবে২৩

﴿كَمْ تَرَكُوا۟ مِن جَنَّـٰتٍۢ وَعُيُونٍۢ﴾

২৫ কত বাগ-বাগীচা, ঝর্ণাধারা,

﴿وَزُرُوعٍۢ وَمَقَامٍۢ كَرِيمٍۢ﴾

২৬ ফসল ও জমকালো প্রাসাদ তারা ছেড়ে গিয়েছে 

﴿وَنَعْمَةٍۢ كَانُوا۟ فِيهَا فَـٰكِهِينَ﴾

২৭ তাদের পিছনে কত ভোগের উপকরণ পড়ে রইলো যা নিয়ে তারা ফুর্তিতে মেতে থাকতো 

﴿كَذَٰلِكَ ۖ وَأَوْرَثْنَـٰهَا قَوْمًا ءَاخَرِينَ﴾

২৮ এই হয়েছে তাদের পরিণাম আমি অন্যদেরকে এসব জিনিসের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছি২৪ 

﴿فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ ٱلسَّمَآءُ وَٱلْأَرْضُ وَمَا كَانُوا۟ مُنظَرِينَ﴾

২৯ অতঃপর না আসমান তাদের জন্য কেঁদেছে না যমীন২৫ এবং সামান্যতম অবকাশও তাদের দেয়া হয়নি 

﴿وَلَقَدْ نَجَّيْنَا بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ مِنَ ٱلْعَذَابِ ٱلْمُهِينِ﴾

৩০ এভাবে আমি বন্দি বনী ইসরাঈলদের কঠিন অপমানজনক আযাব, ফেরাউন২৬ থেকে নাযাত দিয়েছিলাম

﴿مِن فِرْعَوْنَ ۚ إِنَّهُۥ كَانَ عَالِيًۭا مِّنَ ٱلْمُسْرِفِينَ﴾

৩১ সীমালংঘনকারীদের মধ্যে সে ছিল প্রকৃতই উচ্চ পর্যায়ের লোক২৭ 

﴿وَلَقَدِ ٱخْتَرْنَـٰهُمْ عَلَىٰ عِلْمٍ عَلَى ٱلْعَـٰلَمِينَ﴾

৩২ তাদের অবস্থা জেনে শুনেই আমি দুনিয়ার অন্য সব জাতির ওপর তাদের অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম২৮ 

﴿وَءَاتَيْنَـٰهُم مِّنَ ٱلْـَٔايَـٰتِ مَا فِيهِ بَلَـٰٓؤٌۭا۟ مُّبِينٌ﴾

৩৩ তাদেরকে এমন সব নিদর্শন দেখিয়েছিলাম যার মধ্যে সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিল২৯ 

﴿إِنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ لَيَقُولُونَ﴾

৩৪ এরা বলেঃ আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই নেই 

﴿إِنْ هِىَ إِلَّا مَوْتَتُنَا ٱلْأُولَىٰ وَمَا نَحْنُ بِمُنشَرِينَ﴾

৩৫ এরপর আমাদের পুনরায় আর উঠানো হবে না৩০

﴿فَأْتُوا۟ بِـَٔابَآئِنَآ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ﴾

৩৬ “যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে আমাদের বাপ-দাদাদের জীবিত করে আনো৩১ 

﴿أَهُمْ خَيْرٌ أَمْ قَوْمُ تُبَّعٍۢ وَٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ أَهْلَكْنَـٰهُمْ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ مُجْرِمِينَ﴾

৩৭ ‘এরাই উত্তম না তুব্বা’ কওম৩২ এবং তাদের পূর্ববর্তী লোকেরা? আমি তাদের ধ্বংস করেছিলাম কারণ তারা অপরাধী হয়ে গিয়েছিলো৩৩ 

﴿وَمَا خَلَقْنَا ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَـٰعِبِينَ﴾

৩৮ আমি এ আসমান ও যমীন এবং এর কাছের সমস্ত জিনিস খেলাচ্ছলে তৈরি করিনি 

﴿مَا خَلَقْنَـٰهُمَآ إِلَّا بِٱلْحَقِّ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾

৩৯ এসবই আমি যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না৩৪ 

﴿إِنَّ يَوْمَ ٱلْفَصْلِ مِيقَـٰتُهُمْ أَجْمَعِينَ﴾

৪০ এদের সবার পুনরুজ্জীবনের জন্য নির্ধারিত সময়টিই এদের ফায়সালার দিন৩৫

﴿يَوْمَ لَا يُغْنِى مَوْلًى عَن مَّوْلًۭى شَيْـًۭٔا وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ﴾

৪১ সেটি এমন দিন যেদিন কোন নিকটতম প্রিয়জনও৩৬ কোন নিকটতম প্রিয়জনের কাজে আসবে না 

﴿إِلَّا مَن رَّحِمَ ٱللَّهُ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلرَّحِيمُ﴾

৪২ এবং আল্লাহ‌ যাকে রহমত দান করবেন সে ছাড়া তারা কোথাও থেকে কোন সাহায্য লাভ করবে না তিনি মহাপরাক্রমশালী ও অত্যন্ত দয়াবান৩৭ 

﴿إِنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ﴾

৪৩ যাককূম৩৮ 

﴿طَعَامُ ٱلْأَثِيمِ﴾

৪৪ গাছ হবে গোনাগারদের খাদ্য 

﴿كَٱلْمُهْلِ يَغْلِى فِى ٱلْبُطُونِ﴾

৪৫ তেলের তলানির মত৩৯

﴿كَغَلْىِ ٱلْحَمِيمِ﴾

৪৬ পেটের মধ্যে এমনভাবে উথলাতে থাকবে যেমন ফুটন্তপানি উথলায় 

﴿خُذُوهُ فَٱعْتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَآءِ ٱلْجَحِيمِ﴾

৪৭ পাকড়াও করো একে এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যখানে 

﴿ثُمَّ صُبُّوا۟ فَوْقَ رَأْسِهِۦ مِنْ عَذَابِ ٱلْحَمِيمِ﴾

৪৮ তারপর ঢেলে দাও তার মাথার ওপর ফুটন্ত পানির আযাব 

﴿ذُقْ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْكَرِيمُ﴾

৪৯ এখন এর মজা চাখো তুমি বড় সম্মানী ব্যক্তি কিনা, তাই 

﴿إِنَّ هَـٰذَا مَا كُنتُم بِهِۦ تَمْتَرُونَ﴾

৫০ এটা সেই জিনিস যার আমার ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করতে

﴿إِنَّ ٱلْمُتَّقِينَ فِى مَقَامٍ أَمِينٍۢ﴾

৫১ আল্লাহভীরু লোকেরা শান্তি ও নিরাপত্তার জায়গায় থাকবে৪০ 

﴿فِى جَنَّـٰتٍۢ وَعُيُونٍۢ﴾

৫২ বাগান ও ঝর্ণা ঘেরা জায়গায় 

﴿يَلْبَسُونَ مِن سُندُسٍۢ وَإِسْتَبْرَقٍۢ مُّتَقَـٰبِلِينَ﴾

৫৩ তারা রেশম ও মখমলের৪১ পোশাক পরে সামনাসামনি বসবে 

﴿كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَـٰهُم بِحُورٍ عِينٍۢ﴾

৫৪ এটা হবে তাদের অবস্থা আমি সুন্দরী হরিণ নয়না৪২ নারীদের সাথে তাদের বিয়ে দেবো 

﴿يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَـٰكِهَةٍ ءَامِنِينَ﴾

৫৫ সেখানে তারা নিশ্চিন্তে মনের সুখে সবরকম সুস্বাদু জিনিস চেয়ে চেয়ে নেবে৪৩

﴿لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلْمَوْتَ إِلَّا ٱلْمَوْتَةَ ٱلْأُولَىٰ ۖ وَوَقَىٰهُمْ عَذَابَ ٱلْجَحِيمِ﴾

৫৬ সেখানে তারা কখনো মৃত্যুর স্বাদ চাখবে না 

﴿فَضْلًۭا مِّن رَّبِّكَ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ﴾

৫৭ তবে দুনিয়াতে যে মৃত্যু এসেছিলো তা তো এসেই গেছে আর আল্লাহ‌ তাঁর করুণায় তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন৪৪ এটাই বড় সফলতা 

৫৮ হে নবী, আমি এই কিতাবকে তোমার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি যাতে এই লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে 

﴿فَٱرْتَقِبْ إِنَّهُم مُّرْتَقِبُونَ﴾

৫৯ এখন তুমিও অপেক্ষা করো, এরাও অপেক্ষা করছে৪৫

--- সমাপ্ত ---

কোন মন্তব্য নেই

মতামতের জন্য ধন্যবাদ।