০৫৭. সূরা আল হাদীদ
আয়াতঃ ২৯; রুকুঃ ০৪; মাদানী
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
পরম
করুণাময়
মেহেরবানী আল্লাহর নামে
﴿سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِى
ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ﴾
১। যশীন ও
আসমান সমূহের প্রতিটি জিনিসই আল্লাহর তাসবীহ করেছে।১ তিনি
মহাপরাক্রমশালী ও অতিশয় বিজ্ঞ।২
﴿لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ
وَٱلْأَرْضِ ۖ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌ﴾
২। পৃথিবী ও
আকাশ সাম্রাজ্যের সার্বভৌম মালিক তিনি। তিনিই
জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
﴿هُوَ ٱلْأَوَّلُ وَٱلْـَٔاخِرُ
وَٱلظَّـٰهِرُ وَٱلْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ﴾
৩। তিনিই আদি
তিনি অন্ত এবং তিনিই প্রকাশিত তিনিই গোপন।৩ তিনি সব
বিষয়ে অবহিত।
﴿هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ
وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍۢ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ ۚ يَعْلَمُ مَا
يَلِجُ فِى ٱلْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنزِلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ وَمَا
يَعْرُجُ فِيهَا ۖ وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ ۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ
بَصِيرٌۭ﴾
৪। তিনি আসমান
ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তারপর আরশে সমাসীন হয়েছেন।৪ যা কিছু
মাটির মধ্যে প্রবেশ করে, যা কিছু তা থেকে বেরিয়ে আসে এবং যা
কিছু আসমান থেকে অবতীর্ণ হয় আর যা কিছু আকাশে উঠে যায়৫ তা তিনি
জানেন। তোমরা যেখানই থাক তিনি তোমাদের সাথে আছেন।৬ তোমরা যা
করছো আল্লাহ তা দেখছেন।
﴿لَّهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ
وَٱلْأَرْضِ ۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ﴾
৫। আসমান ও
যশীনের নিরংকুশ ও সার্বভৌম মালিকানা একমাত্র তাঁরই। সিব
ব্যাপারের ফায়সালার জন্য তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হয়।
﴿يُولِجُ ٱلَّيْلَ فِى ٱلنَّهَارِ
وَيُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِى ٱلَّيْلِ ۚ وَهُوَ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ﴾
৬। তিনিই
রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন। তিনি
অন্তরের গোপন কথা পর্যন্ত জানেন।
﴿ءَامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ
وَأَنفِقُوا۟ مِمَّا جَعَلَكُم مُّسْتَخْلَفِينَ فِيهِ ۖ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مِنكُمْ
وَأَنفَقُوا۟ لَهُمْ أَجْرٌۭ كَبِيرٌۭ﴾
৭। আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের৭ প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
কর এবং ব্যয় কর৮ সে জিনিস যার
প্রতিনিধিত্বমূলক মালিকানা তিনি তোমাদের দিয়েছেন।৯ তোমাদের
মধ্যে যারা ঈমান আনবে ও অর্থ-সম্পদ খরচ করবে১০ তাদের
জন্য বড় প্রতিদান রয়েছে।
﴿وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُونَ
بِٱللَّهِ ۙ وَٱلرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ لِتُؤْمِنُوا۟ بِرَبِّكُمْ وَقَدْ أَخَذَ مِيثَـٰقَكُمْ
إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾
৮। তোমাদের
কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান
আনছো না। অথচ তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আনার জন্য
রাসূল তোমাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন১১ অথচ তিনি
তোমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন।১২ যদি তোমরা
সত্যিই স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত হও।
﴿هُوَ ٱلَّذِى يُنَزِّلُ عَلَىٰ
عَبْدِهِۦٓ ءَايَـٰتٍۭ بَيِّنَـٰتٍۢ لِّيُخْرِجَكُم مِّنَ ٱلظُّلُمَـٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ
ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ بِكُمْ لَرَءُوفٌۭ رَّحِيمٌۭ﴾
৯। সেই মহান
সত্তা তো তিনিই যিনি তাঁর বান্দার কাছে স্পষ্ট আয়াত সমূহ নাযিল করছেন যাতে
তোমাদেরকে অন্ধাকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতীব দয়ালু ও মেহেরবান।
﴿وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا۟
فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ لَا يَسْتَوِى
مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ ٱلْفَتْحِ وَقَـٰتَلَ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةًۭ
مِّنَ ٱلَّذِينَ أَنفَقُوا۟ مِنۢ بَعْدُ وَقَـٰتَلُوا۟ ۚ وَكُلًّۭا وَعَدَ ٱللَّهُ
ٱلْحُسْنَىٰ ۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌۭ﴾
১০। কি ব্যাপার
যে, তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করছো না, অথচ যমীন ও আসমানের উত্তরাধিকার তাঁরই।১৩ তোমাদের
মধ্যে যারা বিজয়ের পরে অর্থ ব্যয় করবে ও জিহাদ করবে তারা কখনো সেসব বিজয়ের সমকক্ষ
হতে পারে না যারা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে। বিজয়ের
পরে ব্যয়কারী ও জিহাদকারীদের তুলনায় তাদের মর্যাদা অনেক বেশী। যদিও
আল্লাহ উভয়কে ভাল প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।১৪ তোমরা
যা করছো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।১৫
﴿مَّن ذَا ٱلَّذِى يُقْرِضُ
ٱللَّهَ قَرْضًا حَسَنًۭا فَيُضَـٰعِفَهُۥ لَهُۥ وَلَهُۥٓ أَجْرٌۭ كَرِيمٌۭ﴾
১১। এমন কেউ কি
আছে যে আল্লাহকে ঋণ দিতে পারে? উত্তম ঋণ যাতে আল্লাহ তা
কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেন। আর সেদিন
তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান১৬
﴿يَوْمَ تَرَى ٱلْمُؤْمِنِينَ
وَٱلْمُؤْمِنَـٰتِ يَسْعَىٰ نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَـٰنِهِم بُشْرَىٰكُمُ
ٱلْيَوْمَ جَنَّـٰتٌۭ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ خَـٰلِدِينَ فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ
هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ﴾
১২। যেদিন
তোমরা ঈমানদার নারী ও পুরুষদের দেখবে, তাদের ‘নূর’ তাদের সামনে
ও ডান দিকে দৌড়াচ্ছে।১৭ (তাদেরকে
বলা হবে) “আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ।”
জান্নাতসমূহ থাকবে যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। যেখানে
তারা চিরকাল থাকবে। এটাই বড় সফলতা।
﴿يَوْمَ يَقُولُ ٱلْمُنَـٰفِقُونَ
وَٱلْمُنَـٰفِقَـٰتُ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱنظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِن نُّورِكُمْ قِيلَ
ٱرْجِعُوا۟ وَرَآءَكُمْ فَٱلْتَمِسُوا۟ نُورًۭا فَضُرِبَ بَيْنَهُم بِسُورٍۢ لَّهُۥ
بَابٌۢ بَاطِنُهُۥ فِيهِ ٱلرَّحْمَةُ وَظَـٰهِرُهُۥ مِن قِبَلِهِ ٱلْعَذَابُ﴾
১৩। সেদিন
মুনাফিক নারী পুরুষের অবস্থা হবে এই যে, তারা মু’মিনদের বলবেঃ
আমাদের প্রতি একটু লক্ষ্য কর যাতে তোমাদের ‘নূর’ থেকে আমরা কিছু উপকৃত হতে পারি।১৮ কিন্তু
তাদের বলা হবেঃ পেছনে চলে যাও। অন্য
কোথাও নিজেদের ‘নূর’ তালাশ কর। অতঃপর একটি প্রাচীর দিয়ে
তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তাতে একটি দরজা থাকবে। সে দরজার
ভেতরে থাকবে রহমত আর বাইরে থাকবে আযাব।১৯
﴿يُنَادُونَهُمْ أَلَمْ نَكُن
مَّعَكُمْ ۖ قَالُوا۟ بَلَىٰ وَلَـٰكِنَّكُمْ فَتَنتُمْ أَنفُسَكُمْ وَتَرَبَّصْتُمْ
وَٱرْتَبْتُمْ وَغَرَّتْكُمُ ٱلْأَمَانِىُّ حَتَّىٰ جَآءَ أَمْرُ ٱللَّهِ وَغَرَّكُم
بِٱللَّهِ ٱلْغَرُورُ﴾
১৪। তারা
ঈমানদারদের ডেকে ডেকে বলবে আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?২০ ঈমানদাররা
জওয়াব দেবে হ্যাঁ, তবে তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ফিতনার
মধ্যে নিক্ষেপ করেছিলে,২১ সুযোগের
সন্ধানে ছিলে,২২ সন্দেহে নিপতিত ছিলে২৩ এবং
মিথ্যা আশা-আকাংখা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিলো। শেষ
পর্যন্ত আল্লাহর ফায়সালা এসে হাজির হলো২৪ এবং শেষ
মুহুর্ত পর্যন্ত সে বড় প্রতারক২৫ আল্লাহর
ব্যাপারে প্রতারণা করে চললো।
﴿فَٱلْيَوْمَ لَا يُؤْخَذُ
مِنكُمْ فِدْيَةٌۭ وَلَا مِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ۚ مَأْوَىٰكُمُ ٱلنَّارُ ۖ هِىَ
مَوْلَىٰكُمْ ۖ وَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ﴾
১৫। অতএব, তোমাদের
নিকট থেকে আর কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না। আর তাদের
নিকট থেকেও গ্রহণ করা হবে না যারা সুস্পষ্টভাবে কুফরীরতে লিপ্ত ছিল।২৬ তোমাদের
ঠিকানা জাহান্নাম। সে (জাহান্নাম) তোমাদের
খোঁজ খবর নেবে।২৭ এটা
অত্যন্ত নিকৃষ্ট পরিণতি।
﴿أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ
ءَامَنُوٓا۟ أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلْحَقِّ
وَلَا يَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَـٰبَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ
ٱلْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ ۖ وَكَثِيرٌۭ مِّنْهُمْ فَـٰسِقُونَ﴾
১৬। ঈমান গ্রহণকারীদের
জন্য এখনো কি সে সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে তাদের মন
বিগলিত হবে, তাঁর নাযিলকৃত মহা সত্যের সামনে অবনত হবে২৮ এবং তারা
সেসব লোকদের মত হবে না যাদেরকে ইতিপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সময়
অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের মন কঠোর হয়ে গিয়েছে এবং আজ তাদের অধিকাংশই ফাসেক হয়ে
গেছে।২৯
﴿ٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ
يُحْىِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ ٱلْـَٔايَـٰتِ لَعَلَّكُمْ
تَعْقِلُونَ﴾
১৭। খুব ভাল
করে জেনে নাও, আল্লাহ ভূ-পৃষ্ঠকে মৃত হয়ে যাওয়ার পর জীবন
দান করেন। আমরা তোমাদেরকে স্পষ্টভাবে নির্দশনসমূহ
দেখিয়ে দিয়েছি যাতে তোমরা বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগাও।৩০
﴿إِنَّ ٱلْمُصَّدِّقِينَ وَٱلْمُصَّدِّقَـٰتِ
وَأَقْرَضُوا۟ ٱللَّهَ قَرْضًا حَسَنًۭا يُضَـٰعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌۭ كَرِيمٌۭ﴾
১৮। দান সাদকা
প্রদানকারী নারী ও পুরুষ৩১ এবং যারা আল্লাহকে
উত্তম ঋণ দান করে, নিশ্চয়ই কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে তাদেরকে ফেরত
দেয়া হবে। তাছাড়াও তাদের জন্য আছে সর্বোত্তম
প্রতিদান।
﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ
وَرُسُلِهِۦٓ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلصِّدِّيقُونَ ۖ وَٱلشُّهَدَآءُ عِندَ رَبِّهِمْ
لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُورُهُمْ ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَكَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَآ
أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ ٱلْجَحِيمِ﴾
১৯। যারা
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে৩২ তারাই
তাদের রবের কাছে ‘সিদ্দীক’৩৩ ও ‘শহীদ’৩৪ বলে গণ্য। তাদের
জন্য তাদের পুরস্কার ও ‘নূর’ রয়েছে।৩৫ আর যারা
কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে তারাই দোযখের বাসিন্দা।
﴿ٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّمَا ٱلْحَيَوٰةُ
ٱلدُّنْيَا لَعِبٌۭ وَلَهْوٌۭ وَزِينَةٌۭ وَتَفَاخُرٌۢ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌۭ فِى
ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَوْلَـٰدِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ ٱلْكُفَّارَ نَبَاتُهُۥ ثُمَّ
يَهِيجُ فَتَرَىٰهُ مُصْفَرًّۭا ثُمَّ يَكُونُ حُطَـٰمًۭا ۖ وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ عَذَابٌۭ
شَدِيدٌۭ وَمَغْفِرَةٌۭ مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنٌۭ ۚ وَمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَآ
إِلَّا مَتَـٰعُ ٱلْغُرُورِ﴾
২০। ভালভাবে
জেনে রাখো দুনিয়ার এ জীবন, একটা খেলা, হাসি তামাসা, বাহ্যিক চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব ও অহংকার এবং সন্তান-সন্ততি ও অর্থ-সম্পদে
পরস্পরকে অতিক্রম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর উপমা
হচ্ছে, বৃষ্টি হয়ে গেল এবং তার ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি
দেখে কৃষক আনন্দে উৎফূল্ল হয়ে উঠলো। তারপর সে
ফসল পেকে যায় এবং তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলদে বর্ণ ধারণ করে
এবং পরে তা ভূষিতে পরিণত হয়।
পক্ষান্তরে আখেরাত এমন স্থান যেখানে রয়েছে কঠিন
﴿سَابِقُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍۢ
مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ
ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ ٱللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُ
ۚ وَٱللَّهُ ذُو ٱلْفَضْلِ ٱلْعَظِيمِ﴾
২১। দৌড়াও এবং
একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করো৩৭ - তোমার
রবের মাগফিরাতের দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের মত।৩৮ তা
প্রস্তুত রাখা হয়েছে সে লোকদের জন্য যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান
এনেছে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। যাকে
ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল।
﴿مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍۢ
فِى ٱلْأَرْضِ وَلَا فِىٓ أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِى كِتَـٰبٍۢ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَآ
ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٌۭ﴾
২২। পৃথিবীতে
এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি
সৃষ্টি করার পূর্বে৩৯ একটি গ্রন্থে
লিখে রাখিনি।৪০ এমনটি
করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ কাজ।৪১
﴿لِّكَيْلَا تَأْسَوْا۟ عَلَىٰ
مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا۟ بِمَآ ءَاتَىٰكُمْ ۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ
مُخْتَالٍۢ فَخُورٍ﴾
২৩। (এ সবই
এজন্য) যাতে যে ক্ষতিই তোমাদের হয়ে থাকুক তাতে তোমরা মনক্ষুন্ন না হও। আর আল্লাহ
তোমাদের যা দান করেছেন। সেজন্য গর্বিত না হও।৪২ যারা
নিজেরা নিজেদের বড় মনে করে এবং অহংকার করে,
﴿ٱلَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ
ٱلنَّاسَ بِٱلْبُخْلِ ۗ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْغَنِىُّ ٱلْحَمِيدُ﴾
২৪। নিজেরাও
কৃপণতা করে এবং মানুষকেও কৃপণতা করতে উৎসাহ দেয়৪৩ আল্লাহ
তাদের পছন্দ করেন না। এরপরও যদি কেউ মুখ ফিরিয়ে
নেয় তাহলে আল্লাহ অভাবশূন্য ও অতি প্রশংসিত।৪৪
﴿لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا
بِٱلْبَيِّنَـٰتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْمِيزَانَ لِيَقُومَ ٱلنَّاسُ
بِٱلْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا ٱلْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌۭ شَدِيدٌۭ وَمَنَـٰفِعُ لِلنَّاسِ
وَلِيَعْلَمَ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥ وَرُسُلَهُۥ بِٱلْغَيْبِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِىٌّ
عَزِيزٌۭ﴾
২৫। আমি আমার
রাসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং হিদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। তাদের
সাথে কিতাব ও মিযান নাযিল করেছি যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।৪৫ আর লোহা
নাযিল করেছি যার মধ্যে বিরাট শক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে।৪৬ এটা করা
হয়েছে এজন্য যে, আল্লাহ জেনে নিতে চান কে তাঁকে না দেখেই
তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে।
নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ অত্যন্ত শক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।৪৭
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًۭا
وَإِبْرَٰهِيمَ وَجَعَلْنَا فِى ذُرِّيَّتِهِمَا ٱلنُّبُوَّةَ وَٱلْكِتَـٰبَ ۖ فَمِنْهُم
مُّهْتَدٍۢ ۖ وَكَثِيرٌۭ مِّنْهُمْ فَـٰسِقُونَ﴾
২৬। আমি৪৮ নূহকে ও ইবরাহীমকে পাঠিয়ে
ছিলাম এবং তাদের উভয়ের বংশধরের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাবের প্রচলন করেছিলাম।৪৯ তারপর
তাদের বংশধরদের কেউ কেউ হিদায়াত গ্রহণ করেছিল এবং অনেকেই ফাসেক হয়ে গিয়েছিল৫০
﴿ثُمَّ قَفَّيْنَا عَلَىٰٓ
ءَاثَـٰرِهِم بِرُسُلِنَا وَقَفَّيْنَا بِعِيسَى ٱبْنِ مَرْيَمَ وَءَاتَيْنَـٰهُ ٱلْإِنجِيلَ
وَجَعَلْنَا فِى قُلُوبِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ رَأْفَةًۭ وَرَحْمَةًۭ وَرَهْبَانِيَّةً
ٱبْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَـٰهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ٱبْتِغَآءَ رِضْوَٰنِ ٱللَّهِ
فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا ۖ فَـَٔاتَيْنَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مِنْهُمْ
أَجْرَهُمْ ۖ وَكَثِيرٌۭ مِّنْهُمْ فَـٰسِقُونَ﴾
২৭। তাদের পর
আমি একের পর এক আমার রাসূলগণকে পাঠিয়েছি। তাদের
সবার শেষে মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি, তাঁকে ইনজীল
দিয়েছি এবং তাঁর অনুসারীদের মনে দয়া ও করুণার সৃষ্টি করেছি।৫১ আর বৈরাগ্যবাদ তো তারা
নিজেরাই উদ্ভাবন করে নিয়েছে।৫২ আমি ওটা তাদের ওপর চাপিয়ে
দেইনি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারা
নিজেরাই এ বিদয়াত বানিয়ে নিয়েছে।৫৩ তারপর সেটি যেভাবে মেনে চলা
দরকার, সেভাবে মেনেও চলেনি।৫৪ তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল, তাদের
﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَءَامِنُوا۟ بِرَسُولِهِۦ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن
رَّحْمَتِهِۦ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُورًۭا تَمْشُونَ بِهِۦ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَٱللَّهُ
غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ﴾
২৮। হে
ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূল (মুহাম্মাদ সা.) ---এর ওপর ঈমান আনো।৫৫ তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে
দ্বিগুণ রহমত দান করবেন, তোমাদেরকে সেই জ্যোতি দান করবেন
যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে৫৬ এবং তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি
মাফ করে দেবেন।৫৭ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও
দয়ালু।
﴿لِّئَلَّا يَعْلَمَ أَهْلُ
ٱلْكِتَـٰبِ أَلَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَىْءٍۢ مِّن فَضْلِ ٱللَّهِ ۙ وَأَنَّ ٱلْفَضْلَ
بِيَدِ ٱللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ ذُو ٱلْفَضْلِ ٱلْعَظِيمِ﴾
২৯। (তোমাদের
এ নীতি অবলম্বন করা উচিত) যাতে কিতাবধারীরা জানতে পারে যে, আল্লাহর অনুগ্রহের
ওপর তাদের একচেটিয়া অধিকার নেই, বরং আল্লাহর অনুগ্রহ
নিরংকুশভাবে আল্লাহরই হাতে নিবদ্ধ। তিনি যাকে
চান তা দেন। তিনি বড়ই অনুগ্রহশীল।
--- সমাপ্ত ---
কোন মন্তব্য নেই
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।