০৪৬. সূরা আল আহক্বাফ
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
পরম
করুণাময়
মেহেরবানী আল্লাহর নামে
﴿حمٓ﴾
১। হা-মী-ম।
﴿تَنزِيلُ ٱلْكِتَـٰبِ مِنَ
ٱللَّهِ ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ﴾
২। এই কিতাব মহাপরাক্রমশালী
ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।১
﴿مَا خَلَقْنَا ٱلسَّمَـٰوَٰتِ
وَٱلْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَآ إِلَّا بِٱلْحَقِّ وَأَجَلٍۢ مُّسَمًّۭى ۚ وَٱلَّذِينَ
كَفَرُوا۟ عَمَّآ أُنذِرُوا۟ مُعْرِضُونَ﴾
৩। আমি যমীন ও
আসমান এবং দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে যথার্থ সত্যের ভিত্তিতে বিশেষ সময় নির্ধারিত করে
সৃষ্টি করেছি।২ কিন্তু
যে বিষয়ে এই কাফেরদের সাবধান করা হয়েছে তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে আছে।৩
﴿قُلْ أَرَءَيْتُم مَّا تَدْعُونَ
مِن دُونِ ٱللَّهِ أَرُونِى مَاذَا خَلَقُوا۟ مِنَ ٱلْأَرْضِ أَمْ لَهُمْ شِرْكٌۭ فِى
ٱلسَّمَـٰوَٰتِ ۖ ٱئْتُونِى بِكِتَـٰبٍۢ مِّن قَبْلِ هَـٰذَآ أَوْ أَثَـٰرَةٍۢ مِّنْ
عِلْمٍ إِن كُنتُمْ صَـٰدِقِينَ﴾
৪। হে নবী, এদের বলে দাও,
“তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ডেকে থাকো কখনো কি তাদের ব্যাপারে
ভেবে দেখেছো? আমাকে একটু দেখাও তো পৃথিবীতে তারা কি সৃষ্টি
করেছে কিংবা আসমানসমূহের সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনায় তাদের কী অংশ আছে। যদি তোমরা
সত্যবাদী হও তাহলে ইতিপূর্বে প্রেরিত কোন কিতাব কিংবা জ্ঞানের কোন অবশিষ্টাংশ (এসব
আকীদা-বিশ্বাসের সমর্থনে) তোমাদের কাছে থাকলে নিয়ে এসো।”৪
﴿وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُوا۟
مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسْتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ وَهُمْ
عَن دُعَآئِهِمْ غَـٰفِلُونَ﴾
৫। সেই
ব্যক্তির চেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট কে যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব সত্তাকে ডাকে যারা
কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিতে সক্ষম নয়।৫ এমনকি
আহ্বানকারী যে তাকে আহবান করছে সে বিষয়েও সে অজ্ঞ।৬
﴿وَإِذَا حُشِرَ ٱلنَّاسُ
كَانُوا۟ لَهُمْ أَعْدَآءًۭ وَكَانُوا۟ بِعِبَادَتِهِمْ كَـٰفِرِينَ﴾
৬। যখন সমস্ত
মানুষকে সমবেত করা হবে তখন তারা নিজেদের আহ্বানকারীর দুশমন হয়ে যাবে এবং
ইবাদতকারীদের অস্বীকার করবে।৭
﴿وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ
ءَايَـٰتُنَا بَيِّنَـٰتٍۢ قَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لِلْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ
هَـٰذَا سِحْرٌۭ مُّبِينٌ﴾
৭। যখন এসব
লোকদের আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ শুনানো হয় এবং সত্য তাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করে
তখন এই কাফেররা বলে এতো পরিষ্কার যাদু।৮
﴿أَمْ يَقُولُونَ ٱفْتَرَىٰهُ
ۖ قُلْ إِنِ ٱفْتَرَيْتُهُۥ فَلَا تَمْلِكُونَ لِى مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا ۖ هُوَ أَعْلَمُ
بِمَا تُفِيضُونَ فِيهِ ۖ كَفَىٰ بِهِۦ شَهِيدًۢا بَيْنِى وَبَيْنَكُمْ ۖ وَهُوَ ٱلْغَفُورُ
ٱلرَّحِيمُ﴾
৮। তারা কি
বলতে চায় যে রাসূল নিজেই এসব রচনা করেছেন?৯ তাদের
বলে দাওঃ “আমি নিজেই যদি তা রচনা করে থাকি তাহলে কোন কিছু আমাকে আল্লাহর পাকড়াও
থেকে রক্ষা করতে পারবে না। যেসব কথা
তোমরা তৈরী করছো আল্লাহ তা ভাল করেই জানেন। আমার ও
তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তিনিই যথেষ্ট।১০ তিনি
অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু।১১
﴿قُلْ مَا كُنتُ بِدْعًۭا
مِّنَ ٱلرُّسُلِ وَمَآ أَدْرِى مَا يُفْعَلُ بِى وَلَا بِكُمْ ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا
مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ وَمَآ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌۭ مُّبِينٌۭ﴾
৯। এদের বলো, আমি কোন
অভিনব রাসূল নই। কাল তোমাদের সাথে কী আচরণ
করা হবে এবং আমার সাথেই বা কী আচরণ করা হবে তা আমি জানি না। আমি তো
কেবল সেই অহীর অনুসরণ করি যা আমার কাছে পাঠানো হয় এবং আমি সুস্পষ্ট সাবধানকারী
ছাড়া আর কিছুই নই।১২
﴿قُلْ أَرَءَيْتُمْ إِن كَانَ
مِنْ عِندِ ٱللَّهِ وَكَفَرْتُم بِهِۦ وَشَهِدَ شَاهِدٌۭ مِّنۢ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ
عَلَىٰ مِثْلِهِۦ فَـَٔامَنَ وَٱسْتَكْبَرْتُمْ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ
ٱلظَّـٰلِمِينَ﴾
১০। হে নবী
সা.! তাদের বলো, তোমরা কি কখনো একথা ভেবে দেখেছো, যদি এই বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসে থাকে আর তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করো
(তাহলে তোমাদের পরিণাম কী হবে)?১৩ এ রকম
একটি বাণী সম্পর্কে তো বনী ইসরাঈলদের একজন সাক্ষী সাক্ষ্যও দিয়েছে। সে ঈমান
এনেছে। কিন্তু তোমরা আত্মম্ভরিতায় ডুবে আছো।১৪ এ রকম
জালেমদের আল্লাহ হিদায়াত দান করেন না।
﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟
لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَوْ كَانَ خَيْرًۭا مَّا سَبَقُونَآ إِلَيْهِ ۚ وَإِذْ لَمْ
يَهْتَدُوا۟ بِهِۦ فَسَيَقُولُونَ هَـٰذَآ إِفْكٌۭ قَدِيمٌۭ﴾
১১। যারা মানতে
অস্বীকার করেছে তারা মু’মিনদের সম্পর্কে বলে, এই কিতাব
মেনে নেয়া যদি কোন ভাল কাজ হতো তাহলে এ ব্যাপারে এসব লোক আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হতে
পারতো না।১৫ যেহেতু
এরা তা থেকে হিদায়াত লাভ করেনি তাই তারা অবশ্যই বলবে, এটা
পুরনো মিথ্যা।১৬
﴿وَمِن قَبْلِهِۦ كِتَـٰبُ
مُوسَىٰٓ إِمَامًۭا وَرَحْمَةًۭ ۚ وَهَـٰذَا كِتَـٰبٌۭ مُّصَدِّقٌۭ لِّسَانًا عَرَبِيًّۭا
لِّيُنذِرَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ وَبُشْرَىٰ لِلْمُحْسِنِينَ﴾
১২। অথচ এর
পূর্বে মূসার কিতাব পথ-প্রদর্শক ও রহমত হয়ে এসেছিলো। আর এ
কিতাবে তার সত্যায়নকারী, আরবী ভাষায় এসেছে যাতে জালেমদের
সাবধান করে দেয়১৭ এবং সৎ আচরণ গ্রহণ-কারীদের
সুসংবাদ দান করে।
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُوا۟
رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسْتَقَـٰمُوا۟ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾
১৩। যারা ঘোষণা
করেছে আল্লাহই আমাদের রব, অতঃপর তার ওপরে স্থির থেকেছে নিশ্চয়ই
তাদের জন্য কোন ভয় নেই এবং তারা মন মরা ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে না।১৮
﴿أُو۟لَـٰٓئِكَ أَصْحَـٰبُ
ٱلْجَنَّةِ خَـٰلِدِينَ فِيهَا جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ﴾
১৪। এ ধরনের সব
মানুষ জান্নাতে যাবে। তারা সেখানে চিরদিন থাকবে, তাদের সেই
কাজের বিনিময়ে যা তারা পৃথিবীতে করেছিলো।
﴿وَوَصَّيْنَا ٱلْإِنسَـٰنَ
بِوَٰلِدَيْهِ إِحْسَـٰنًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُۥ كُرْهًۭا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًۭا ۖ
وَحَمْلُهُۥ وَفِصَـٰلُهُۥ ثَلَـٰثُونَ شَهْرًا ۚ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُۥ
وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةًۭ قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ ٱلَّتِىٓ
أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَـٰلِحًۭا تَرْضَىٰهُ وَأَصْلِحْ
لِى فِى ذُرِّيَّتِىٓ ۖ إِنِّى تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّى مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ﴾
১৫। আমি
মানুষকে এই মর্মে নির্দেশনা দিয়েছি যে, তারা যেন পিতা-মাতার সাথে
সদ্ব্যবহার করে। তার মা কষ্ট করে তাকে গর্ভে
ধারণ করেছিলো এবং কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছিলো। তাকে
গর্ভে ধারণ ও দুধপান করাতে ত্রিশ মাস লেগেছে।১৯ এমন কি
যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌঁছেছে এবং তারপর চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়েছে তখন বলেছেঃ “হে
আমার রব, তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যেসব নিয়ামত দান
করেছো আমাকে তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও। আর এমন সৎ
কাজ করার তাওফীক দাও যা তুমি পছন্দ করো।২০ আমার
সন্তানদেরকে সৎ বানিয়ে আমাকে সুখ দাও। আমি
﴿أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ
نَتَقَبَّلُ عَنْهُمْ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا۟ وَنَتَجَاوَزُ عَن سَيِّـَٔاتِهِمْ فِىٓ
أَصْحَـٰبِ ٱلْجَنَّةِ ۖ وَعْدَ ٱلصِّدْقِ ٱلَّذِى كَانُوا۟ يُوعَدُونَ﴾
১৬। এ ধরনের
মানুষের কাছে থেকে তাদের উত্তম আমলসমূহ আমি গ্রহণ করে থাকি, তাদের মন্দ
কাজসমূহ ক্ষমা করে দিই।২১ যে
প্রতিশ্রুতি তাদের দিয়ে আসা হয়েছে তা ছিলো সত্য প্রতিশ্রুতি। সেই
প্রতিশ্রুতি অনুসারে এরা জান্নাতী লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
﴿وَٱلَّذِى قَالَ لِوَٰلِدَيْهِ
أُفٍّۢ لَّكُمَآ أَتَعِدَانِنِىٓ أَنْ أُخْرَجَ وَقَدْ خَلَتِ ٱلْقُرُونُ مِن قَبْلِى
وَهُمَا يَسْتَغِيثَانِ ٱللَّهَ وَيْلَكَ ءَامِنْ إِنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّۭ فَيَقُولُ
مَا هَـٰذَآ إِلَّآ أَسَـٰطِيرُ ٱلْأَوَّلِينَ﴾
১৭। আর যে
ব্যক্তি তার পিতা মাতাকে বললোঃ “আহ! তোমরা বিরক্তির একশেষ করে দিলে। তোমরা কি
আমাকে এ ভয় দেখাচ্ছো যে, মৃত্যুর পর আমি আবার কবর থেকে
উত্তোলিত হবো? আমার পূর্বে তো আরো বহু মানুষ চলে গেছে। (তাদের
কেউ তো জীবিত হয়ে ফিরে আসেনি)।” মা-বাপ আল্লাহর দোহাই দিয়ে
বলেঃ “আরে হতভাগা, বিশ্বাস কর। আল্লাহর
ওয়াদা সত্য।” কিন্তু সে বলে, “এসব তো
প্রাচীনকালের বস্তাপচা কাহিনী”
﴿أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ
حَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلْقَوْلُ فِىٓ أُمَمٍۢ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِم مِّنَ ٱلْجِنِّ
وَٱلْإِنسِ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ خَـٰسِرِينَ﴾
১৮। এরাই সেই
সব লোক যাদের ব্যাপারে আযাবের সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। এদের
পূর্বে জ্বীন ও মানুষদের মধ্য থেকে (এই প্রকৃতির) যেসব ক্ষুদ্র দল অতীত হয়েছে এরাও
গিয়ে তাদের সাথে মিলিত হবে। নিশ্চয়ই এরা ক্ষতিগ্রস্ত
হওয়ার লোক।২২
﴿وَلِكُلٍّۢ دَرَجَـٰتٌۭ مِّمَّا
عَمِلُوا۟ ۖ وَلِيُوَفِّيَهُمْ أَعْمَـٰلَهُمْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ﴾
১৯। উভয় দলের
প্রত্যেক মানুষের মর্যাদা হবে তাদের কর্ম অনুযায়ী। যাতে
আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেন। তাদের
প্রতি মোটেই জুলুম করা হবে না।২৩
﴿وَيَوْمَ يُعْرَضُ ٱلَّذِينَ
كَفَرُوا۟ عَلَى ٱلنَّارِ أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَـٰتِكُمْ فِى حَيَاتِكُمُ ٱلدُّنْيَا
وَٱسْتَمْتَعْتُم بِهَا فَٱلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ ٱلْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ
فِى ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَبِمَا كُنتُمْ تَفْسُقُونَ﴾
২০। অতঃপর এসব
কাফেরদের যখন আগুনের সামনে এনে দাঁড় করানো হবে তখন তাদের বলা হবে, ‘তোমরা নিজের
অংশের নিয়ামতসমূহ দুনিয়ার জীবনেই ভোগ করে নিঃশেষ করে ফেলেছো এবং তা ভোগ করেছো এবং
যে নাফরমানি করেছো সে কারণে আজ তোমাদের লাঞ্ছনাকর আযাব দেয়া হবে’।২৪
﴿وَٱذْكُرْ أَخَا عَادٍ إِذْ
أَنذَرَ قَوْمَهُۥ بِٱلْأَحْقَافِ وَقَدْ خَلَتِ ٱلنُّذُرُ مِنۢ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ
خَلْفِهِۦٓ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّا ٱللَّهَ إِنِّىٓ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ
يَوْمٍ عَظِيمٍۢ﴾
২১। এদেরকে
‘আদের ভাই (হূদ)- এর কাহিনী কিছুটা শুনাও যখন সে আহক্বাফে তার কওমকে সতর্ক করেছিলো।২৫ -এ ধরনের
সতর্ককারী পূর্বেও এসেছিলো এবং তার পরেও এসেছে- যে আল্লাহ ছাড়া আর কারো বন্দেগী
করো না। তোমাদের ব্যাপারে আমার এক বড় ভয়ংকর দিনের
আযাবের আশঙ্কা আছে।
﴿قَالُوٓا۟ أَجِئْتَنَا لِتَأْفِكَنَا
عَنْ ءَالِهَتِنَا فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِينَ﴾
২২। তারা বললোঃ
“তুমি কি এ জন্য এসেছো যে, আমাদের প্রতারিত করে আমাদের
উপাস্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে দেবে? ঠিক আছে, তুমি যদি প্রকৃত সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে আমাদের যে আযাবের ভীতি প্রদর্শন
করে থাকো তা নিয়ে এসো।”
﴿قَالَ إِنَّمَا ٱلْعِلْمُ
عِندَ ٱللَّهِ وَأُبَلِّغُكُم مَّآ أُرْسِلْتُ بِهِۦ وَلَـٰكِنِّىٓ أَرَىٰكُمْ قَوْمًۭا
تَجْهَلُونَ﴾
২৩। সে বললোঃ এ
ব্যাপারের জ্ঞান শুধু আল্লাহরই আছে।২৬ যে পয়গাম
দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে আমি সেই পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। তবে আমি
দেখছি, তোমরা অজ্ঞতা প্রদর্শন করছো।২৭
﴿فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًۭا
مُّسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ قَالُوا۟ هَـٰذَا عَارِضٌۭ مُّمْطِرُنَا ۚ بَلْ هُوَ
مَا ٱسْتَعْجَلْتُم بِهِۦ ۖ رِيحٌۭ فِيهَا عَذَابٌ أَلِيمٌۭ﴾
২৪। পরে যখন
তারা সেই আযাবকে তাদের উপত্যকার দিকে আসতে দেখলো, বলতে শুরু
করলোঃ এই তো মেঘ, আমাদের ‘ওপর প্রচুর বারিবর্ষণ করবে- না’,২৮ এটা বরং
সেই জিনিস যার জন্য তোমরা হাড়াহুড়া করছিলে। এটা
প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস, যার মধ্যে কষ্টদায়ক আযাব এগিয়ে আসছে।
﴿تُدَمِّرُ كُلَّ شَىْءٍۭ
بِأَمْرِ رَبِّهَا فَأَصْبَحُوا۟ لَا يُرَىٰٓ إِلَّا مَسَـٰكِنُهُمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِى
ٱلْقَوْمَ ٱلْمُجْرِمِينَ﴾
২৫। তার রবের
নির্দেশে প্রতিটি বস্তুকে ধ্বংস করে ফেলবে। অবশেষে
তাদের অবস্থা দাঁড়ালো এই সে, তাদের বসবাসের স্থান ছাড়া
সেখানে আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হতো না। এভাবেই
আমি অপরাধীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।২৯
﴿وَلَقَدْ مَكَّنَّـٰهُمْ
فِيمَآ إِن مَّكَّنَّـٰكُمْ فِيهِ وَجَعَلْنَا لَهُمْ سَمْعًۭا وَأَبْصَـٰرًۭا وَأَفْـِٔدَةًۭ
فَمَآ أَغْنَىٰ عَنْهُمْ سَمْعُهُمْ وَلَآ أَبْصَـٰرُهُمْ وَلَآ أَفْـِٔدَتُهُم
مِّن شَىْءٍ إِذْ كَانُوا۟ يَجْحَدُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا۟
بِهِۦ يَسْتَهْزِءُونَ﴾
২৬। আমি
তাদেরকে এমন কিছু দিয়েছিলাম যা তোমাদের দেইনি।৩০ আমি
তাদেরকে কান, চোখ, হৃদয়-মন সব কিছু
দিয়েছিলাম। কিন্তু না সে কান তাদের কোন কাজে লেগেছে, না চোখ,
না হৃদয়-মন। কারণ, তারা আল্লাহর
আয়াত সমূহ অস্বীকার করতো।৩১ তারা সেই
জিনিসের পাল্লায় পড়ে গেল যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো।
﴿وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا مَا
حَوْلَكُم مِّنَ ٱلْقُرَىٰ وَصَرَّفْنَا ٱلْـَٔايَـٰتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
২৭। আমি
তোমাদের আশে পাশের বহু এলাকার বহু সংখ্যক জনপদ ধ্বংস করেছি। আমি আমার আয়াত
সমূহ পাঠিয়ে বার বার নানাভাবে তাদের বুঝিয়েছি, হয়তো তারা
বিরত হবে।
﴿فَلَوْلَا نَصَرَهُمُ ٱلَّذِينَ
ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِ ٱللَّهِ قُرْبَانًا ءَالِهَةًۢ ۖ بَلْ ضَلُّوا۟ عَنْهُمْ ۚ وَذَٰلِكَ
إِفْكُهُمْ وَمَا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ﴾
২৮। কিন্তু
আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব সত্তাকে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করে উপাস্য
বানিয়ে নিয়েছিলো৩২ তারা কেন তাদেরকে
সাহায্য করলো না। বরং তারা তাদের থেকে উধাও
হয়ে গিয়েছিলো। এটা ছিল তাদের মিথ্যা এবং মনগড়া
আকীদা-বিশ্বাসের পরিণাম, যা তারা গড়ে নিয়েছিলো।
﴿وَإِذْ صَرَفْنَآ إِلَيْكَ
نَفَرًۭا مِّنَ ٱلْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ ٱلْقُرْءَانَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوٓا۟
أَنصِتُوا۟ ۖ فَلَمَّا قُضِىَ وَلَّوْا۟ إِلَىٰ قَوْمِهِم مُّنذِرِينَ﴾
২৯। (আর সেই
ঘটনাও উল্লেখযোগ্য) যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তারা
কুরআন শোনে।৩৩ যখন তারা
সেইখানে পৌঁছলো (যেখানে তুমি কুরআন পাঠ করছিলে) তখন পরস্পরকে বললোঃ চুপ করো। যখন তা
পাঠ করা শেষ হলো তখন তারা সতর্ককারী হয়ে নিজ কওমের কাছে ফিরে গেল।
﴿قَالُوا۟ يَـٰقَوْمَنَآ
إِنَّا سَمِعْنَا كِتَـٰبًا أُنزِلَ مِنۢ بَعْدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقًۭا لِّمَا بَيْنَ
يَدَيْهِ يَهْدِىٓ إِلَى ٱلْحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ﴾
৩০। তারা গিয়ে
বললোঃ হে আমাদের কওমের লোকজন! আমরা এমন কিতাব শুনেছি যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে। যা
ইতিপূর্বেকার সমস্ত কিতাবকে সমর্থন করে, ন্যায় ও সঠিক পথপ্রদর্শন
করে।৩৪
﴿يَـٰقَوْمَنَآ أَجِيبُوا۟
دَاعِىَ ٱللَّهِ وَءَامِنُوا۟ بِهِۦ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُجِرْكُم مِّنْ
عَذَابٍ أَلِيمٍۢ﴾
৩১। হে আমাদের
কওমের লোকেরা, আল্লাহর প্রতি আহ্বানকারীর আহবানে সাড়া দাও
এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনো। আল্লাহ
তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবেন।৩৫
﴿وَمَن لَّا يُجِبْ دَاعِىَ
ٱللَّهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍۢ فِى ٱلْأَرْضِ وَلَيْسَ لَهُۥ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءُ
ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ فِى ضَلَـٰلٍۢ مُّبِينٍ﴾
৩২। আর যে৩৬ আল্লাহর
পক্ষ থেকে আহ্বানকারীর আহবানে সাড়া দেবে না সে না পৃথিবীতে এমন শক্তি রাখে যে
আল্লাহকে নিরূপায় ও অক্ষম করে ফেলতে পারে, না তার এমন কোন
সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক আছে যে আল্লাহর হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে। এসব লোক
সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ডুবে আছে।
﴿أَوَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّ
ٱللَّهَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ وَلَمْ يَعْىَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَـٰدِرٍ
عَلَىٰٓ أَن يُحْـِۧىَ ٱلْمَوْتَىٰ ۚ بَلَىٰٓ إِنَّهُۥ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ﴾
৩৩। যে আল্লাহ
এই পৃথিবী ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং এগুলো সৃষ্টি করতে যিনি পরিশ্রান্ত হননি তিনি
অবশ্যই মৃতদের জীবিত করে তুলতে সক্ষম, এসব লোক কি তা বুঝে না?
কেন পারবেন না, অবশ্যই তিনি সব কিছু করতে
সক্ষম।
﴿وَيَوْمَ يُعْرَضُ ٱلَّذِينَ
كَفَرُوا۟ عَلَى ٱلنَّارِ أَلَيْسَ هَـٰذَا بِٱلْحَقِّ ۖ قَالُوا۟ بَلَىٰ وَرَبِّنَا
ۚ قَالَ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ﴾
৩৪। যে দিন এসব
কাফেরকে আগুনের সামনে হাজির করা হবে সেদিন তাদের জিজ্ঞেস করা হবে, “এটা কি
বাস্তব ও সত্য নয়?” এরা বলবে “হ্যাঁ, আমাদের
রবের শপথ, (এটা প্রকৃতই সত্য)।” আল্লাহ
বলবেনঃ “ঠিক আছে, তাহলে তোমরা যে অস্বীকার করতে তার পরিণতি
হিসেবে এখন আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো।”
﴿فَٱصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُو۟لُوا۟
ٱلْعَزْمِ مِنَ ٱلرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِل لَّهُمْ ۚ كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ
مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوٓا۟ إِلَّا سَاعَةًۭ مِّن نَّهَارٍۭ ۚ بَلَـٰغٌۭ ۚ فَهَلْ
يُهْلَكُ إِلَّا ٱلْقَوْمُ ٱلْفَـٰسِقُونَ﴾
৩৫। অতএব, হে নবী,
দৃঢ়চেতা রাসূলদের মত ধৈর্য ধারণ করো এবং তাদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া
করো না।৩৭ এদেরকে
এখন যে জিনিসের ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে যেদিন এরা তা দেখবে সেদিন এদের মনে হবে
যেন পৃথিবীতে অল্প কিছুক্ষণের বেশি অবস্থান করেনি। কথা
পৌঁছিয়ে দেয়া হয়েছে। অবাধ্য লোকেরা ছাড়া কি আর
কেউ ধ্বংস হবে?
--- সমাপ্ত ---
কোন মন্তব্য নেই
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।