০০৩. সূরা আলে ইমরান
আয়াতঃ ২০০; রুকুঃ ২০; মাদানী
﴿بِسْمِ اللَّهِ
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে
﴿الم﴾
১। আলিফ
লাম-মীম।
﴿اللَّهُ
لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ﴾
২। আল্লাহ এক
চিরঞ্জীব ও শাশ্বত সত্তা, যিনি বিশ্ব–জাহানের সমগ্র ব্যবস্থাপনাকে ধারণ করে আছেন, আসলে তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ
নেই।১
﴿نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ
بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ﴾
৩। তিনি
তোমার ওপর এই কিতাব নাযিল করেছেন, যা সত্যের বাণী বহন করে এনেছে এবং আগের
কিতাবগুলোর সত্যতা প্রমাণ করছে। এর আগে তিনি মানুষের
হিদায়াতের জন্য তাওরাত ও ইনজীল নাযিল করেছিলেন।২ আর তিনি মানদণ্ড নাযিল করেছেন
(যা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করে দেয়)
﴿مِن قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ
وَأَنزَلَ الْفُرْقَانَ ۗ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ
شَدِيدٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ﴾
৪। এখন যারা
আল্লাহর বিধানসমূহ মেনে নিতে অস্বীকার করবে, তারা অবশ্যি কঠিন শাস্তি পাবে। আল্লাহ
অসীম ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি অন্যায়ের শাস্তি দিয়ে থাকেন।
﴿إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَىٰ
عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ﴾
৫। পৃথিবী ও
আকাশের কোন কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নেই।৩
﴿هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ
فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ﴾
৬। তিনি
মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন।৪ এই প্রবল পরাক্রান্ত
মহাজ্ঞানের অধিকারী সত্তা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।
﴿هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ
الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ
ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ
ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا
اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ
رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ﴾
৭। তিনিই
তোমাদের প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছেন। এ কিতাবে
দুই ধরনের আয়াত আছেঃ এক হচ্ছে, মুহ্কামাত, যেগুলো কিতাবের আসল বুনিয়াদ৫ এবং দ্বিতীয় হচ্ছে, মুতাশাবিহাত।৬ যাদের মনে বক্রতা আছে তারা
ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সবসময় মুতাশাবিহাতের পিছনে লেগে থাকে এবং তার অর্থ করার
চেষ্টা করে থাকে। অথচ সেগুলোর আসল অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ
জানে না। বিপরীত পক্ষে পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারীরা
বলেঃ “আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এসব আমাদের রবের পক্ষ থেকেই এসেছে”।৭ আর প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানবান
লোকেরাই কোন বিষয় থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
﴿رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا
بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ﴾
৮। তারা
আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের রব!যখন তুমি আমাদের সোজা পথে চালিয়েছো
তখন আর আমাদের অন্তরকে বক্রতায় আচ্ছন্ন করে দিয়ো না, তোমার দান ভাণ্ডার থেকে
আমাদের জন্য রহমত দান করো কেননা তুমিই আসল দাতা।
﴿رَبَّنَا
إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ
الْمِيعَادَ﴾
৯। হে আমাদের
রব! অবশ্যি তুমি সমগ্র মানব জাতিকে একদিন একত্রে সমবেত করবে, যে দিনটির আগমনের ব্যাপারে
কোন সন্দেহ নেই। তুমি কখনো ওয়াদা থেকে বিচ্যুত হও না।”
﴿إِنَّ
الَّذِينَ كَفَرُوا لَن تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُم مِّنَ
اللَّهِ شَيْئًا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمْ وَقُودُ النَّارِ﴾
১০। যারা
কুফরী নীতি অবলম্বন করেছে,৮ তাদের না ধন–সম্পদ, না সন্তান–সন্ততি আল্লাহর
মোকাবিলায় কোন কাজে লাগবে। তারা দোজখের ইন্ধনে পরিণত
হবেই।
﴿كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ
وَالَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ
ۗ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
১১। তাদের
পরিণম ঠিক তেমনি হবে যেমন ফেরাউনের সাথী ও তার আগের নাফরমানদের হয়ে গেছেঃ তারা
আল্লাহর আয়াতের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, ফলে আল্লাহ তাদের গোনাহের
জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। আর যথার্থই আল্লাহ কঠোর
শাস্তিদানকারী।
﴿قُل لِّلَّذِينَ
كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ﴾
১২। কাজেই হে
মুহাম্মাদ! যারা তোমরা দাওয়াত গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো, তাদের বলে দাও, সেই সময় নিকটবর্তী যখন হবে, তোমরা পরাজিত হবে এবং তোমাদের
জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, আর জাহান্নাম বড়ই খারাপ আবাস।
﴿قَدْ كَانَ
لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَىٰ
كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ
مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ﴾
১৩। তোমাদের
জন্য সেই দু’টি দলের মধ্যে একটি শিক্ষার নিদর্শন ছিল যারা (বদরে) পরস্পর যুদ্ধে
লিপ্ত হয়েছিল। একটি দল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছিল এবং
অন্য দলটি ছিল কাফের। চোখের দেখায় লোকেরা দেখছিল, কাফেররা মু’মিনদের দ্বিগুণ।৯ কিন্তু ফলাফল (প্রমাণ করলো
যে) আল্লাহ তাঁর বিজয় ও সাহায্য দিয়ে যাকে ইচ্ছা সহায়তা দান করেছেন।
অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য এর মধ্যে বড়ই শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।১০
﴿زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ
الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ
وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ
الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ﴾
১৪। মানুষের
জন্য নারী, সন্তান, সোনারুপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের
প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু
এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র।
প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে।
﴿قُلْ أَؤُنَبِّئُكُم
بِخَيْرٍ مِّن ذَٰلِكُمْ ۚ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي
مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ
مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ﴾
১৫। বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন
করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা
প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র
স্ত্রীরা হবে তাদের সংগিনী১১ এবং তারা
লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তার বান্দাদের
কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন।১২
﴿الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا
إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾
১৬। এ লোকেরাই
বলেঃ “হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহখাতা মাফ করে দাও এবং
জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাচাঁও। এরা
সবরকারী,১৩
﴿الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ
وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ﴾
১৭। সত্যনিষ্ঠ, অনুগত ও দানশীল এবং রাতের
শেষভাগে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করে থাকে।”
﴿شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا
إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا
إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ﴾
১৮। আল্লাহ
নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাই নেই।১৪ আর ফেরেশতা ও সকল জ্ঞানবান
লোকই সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে এ সাক্ষ্য দিচ্ছে১৫ যে, সেই প্রবল পরাক্রান্ত ও
জ্ঞানবান সত্তা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।
﴿إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ
الْإِسْلَامُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا
جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ
اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ﴾
১৯। ইসলাম
আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন–জীবনবিধান।১৬ যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারা এ দীন থেকে সরে গিয়ে
যেসব বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, সেগুলো অবলম্বনের এ ছাড়া আর কোন কারণই ছিল
না যে, প্রকৃত
জ্ঞান এসে যাওয়ার পর তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করার জন্য এমনটি
করেছে।১৭ আর যে কেউ
আল্লাহর হেদায়াতের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে, তার কাছ থেকে হিসেব নিতে
আল্লাহর মোটেই দেরী হয় না।
﴿فَإِنْ حَاجُّوكَ فَقُلْ
أَسْلَمْتُ وَجْهِيَ لِلَّهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِ ۗ وَقُل لِّلَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ
وَالْأُمِّيِّينَ أَأَسْلَمْتُمْ ۚ فَإِنْ أَسْلَمُوا فَقَدِ اهْتَدَوا ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا
فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ﴾
২০। এখন যদি এ
লোকেরা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের বলে দাওঃ “আমি ও আমার অনুগতরা
আল্লাহর সামনে আনুগত্যের শির নত করেছি।” তারপর
আহলি কিতাব ও অ-আহলি কিতাব উভয়কে জিজ্ঞেস করো, “তোমরাও কি তাঁর বন্দেগী কবুল
করেছো?”১৮ যদি করে থাকে তাহলে ন্যায় ও
সত্যের পথ লাভ করেছে আর যদি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে থাকে, তাহলে তোমার ওপর কেবলমাত্র
পয়গাম পৌছিয়ে দেবার দায়িত্বই অর্পিত হয়েছিল। পরবর্তী
পর্যায়ে আল্লাহ নিজেই তার বান্দাদের অবস্থা দেখবেন।
﴿إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ
بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَيَقْتُلُونَ الَّذِينَ
يَأْمُرُونَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ﴾
২১। যারা
আল্লাহর বিধান ও হিদায়াত মানতে অস্বীকার করে এবং তাঁর নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা
করে আর এমন লোকদের প্রাণ সংহার করে, যারা মানুষের মধ্যে ন্যায়, ইনসাফ ও সততার নির্দেশ দেবার
জন্য এগিয়ে আসে, তাদের কঠিন
শাস্তির সুসংবাদ দাও।১৯
﴿أُولَٰئِكَ الَّذِينَ حَبِطَتْ
أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ﴾
২২। এরা এমন
সব লোক যাদের কর্মকাণ্ড (আমল) দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই নষ্ট হয়ে গেছে২০ এবং এদের কোন সাহায্যকারী নেই।২১
﴿أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ
أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ إِلَىٰ كِتَابِ اللَّهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ
ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ وَهُم مُّعْرِضُونَ﴾
২৩। তুমি কি
দেখনি কিতাবের জ্ঞান থেকে যারা কিছু অংশ পেয়েছে, তাদের কি অবস্থা হয়েছে? তাদের যখন আল্লাহর কিতাবের
দিকে সে অনুযায়ী তাদের পরস্পরের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আহবান জানানো হয়২২ তখন তাদের মধ্য থেকে একটি দল
পাশ কাটিয়ে যায় এবং এই ফায়সালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا
لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۖ وَغَرَّهُمْ فِي دِينِهِم
مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ﴾
২৪। তাদের এ
কর্মপদ্ধতির কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “জাহান্নামের আগুন তো আমাদের
স্পর্শও করবে না। আর যদি জাহান্নামের শাস্তি আমরা পাই
তাহলে তা হবে মাত্র কয়েক দিনের।”২৩ তাদের মনগড়া বিশ্বাস নিজেদের
দীনের ব্যাপারে তাদেরকে বড়ই ভুল ধারণার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে।
﴿فَكَيْفَ إِذَا جَمَعْنَاهُمْ
لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيهِ وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ﴾
২৫। কিন্তু
সেদিন কি অবস্থা হবে, যেদিন আমি তাদের একত্র করবো, যেদিনটির আসা একেবারেই
অবধারিত? সেদিন
প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার উপার্জনের পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে এবং কারো ওপর জুলুম
করা হবে না।
﴿قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ
الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ
مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ
قَدِيرٌ﴾
২৬। বলোঃ হে
আল্লাহ! বিশ্ব–জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে
চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত
দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্জিত ও হেয় করো। কল্যাণ
তোমরা হাতেই নিহিত। নিসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর
শক্তিশালী।
﴿تُولِجُ
اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ ۖ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ
مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ ۖ وَتَرْزُقُ مَن تَشَاءُ بِغَيْرِ
حِسَابٍ﴾
২৭। তুমি
রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের মধ্যে। জীবনহীন
থেকে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও এবং জীবন্ত থেকে জীবনহীনের। আর যাকে
চাও তাকে তুমি বেহিসেব রিযিক দান করো।২৪
﴿لَّا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ
الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ
مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَن تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ
اللَّهُ نَفْسَهُ ۗ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ﴾
২৮। মু’মিনরা
যেন ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কখনো কাফেরদেরকে নিজেদের পৃষ্ঠপোষক, বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে গ্রহণ
না করে। যে এমনটি করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক
নেই। তবে হ্যাঁ, তাদের জুলুম থেকে আত্মরক্ষার
জন্য তোমরা যদি বাহ্যত এ নীতি অবলম্বন করো তাহলে তা মাফ করে দেয়া হবে।২৫ কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর
নিজের সত্তার ভয় দেখাচ্ছেন আর তোমাদের তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।২৬
﴿قُلْ إِن تُخْفُوا مَا فِي
صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ ۗ وَيَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
২৯। হে নবী!
লোকদের জানিয়ে দাও, তোমাদের
মনের মধ্যে যা কিছু আছে তাকে তোমরা লুকিয়ে রাখো বা প্রকাশ করো, আল্লাহ তা জানেন। পৃথিবী ও
আকাশের কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে অবস্থান করছে না এবং তার কর্তৃত্ব সবকিছুর
ওপর পরিব্যাপ্ত।
﴿يَوْمَ
تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوءٍ
تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ
نَفْسَهُ ۗ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ﴾
৩০। সেদিন
আসবে, যেদিন
প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের ফল সামনে উপস্থিত পাবে, তা ভালো কাজই হোক আর মন্দ কাজ। সেদিন
মানুষ কামনা করবে, হায়! যদি
এখনো এই দিন এর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতো! আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সত্তার
ভয় দেখাচ্ছেন। আর তিনি নিজের বান্দাদের গভীর শুভাকাংখী।২৭
﴿قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ
اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ
غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
৩১। হে নবী!
লোকদের বলে দাওঃ “যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন
এবং তোমাদের গোহাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই
ক্ষমাশীল ও করুণাময়।” তাদেরকে বলোঃ আল্লাহ ও রাসূলের
আনুগত্য করো।
﴿قُلْ أَطِيعُوا
اللَّهَ وَالرَّسُولَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ﴾
৩২। তারপর যদি
তারা তোমাদের এ দাওয়াত গ্রহণ না করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ এমন লোকদের
ভালোবাসবেন না, যারা তাঁর
ও তাঁর রাসূলদের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে।২৮
﴿إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ
آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ﴾
৩৩। আল্লাহ২৯ আদম, নূহ, ইবরাহীমের বংশধর ও ‘ইমরানের
বংশধরদেরকে৩০ সমগ্র বিশ্ববাসীর ওপর
প্রাধান্য দিয়ে (তাঁর রিসালতের জন্য) মনোনীত করেছিলেন।
﴿ذُرِّيَّةً بَعْضُهَا مِن
بَعْضٍ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾
৩৪। এরা সবাই
একই ধারায় অন্তরগত ছিল, একজনের উদ্ভব ঘটেছিল অন্যজনের বংশ থেকে। আল্লাহ
সবকিছু শোনেন ও জানেন।৩১
﴿إِذْ قَالَتِ امْرَأَتُ عِمْرَانَ
رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّي ۖ إِنَّكَ
أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ﴾
৩৫। (তিনি তখন
শুনছিলেন) যখন ইমরানের মহিলা৩২ বলছিলঃ “হে
আমার রব! আমার পেটে এই যে সন্তানটি আছে এটি আমি তোমাদের জন্য নজরনা দিলাম, সে তোমার জন্য উৎসর্গ হবে। আমার এই
নজরানা কবুল করে নাও। তুমি সবকিছু শোনো ও জানো।”৩৩
﴿فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ
رَبِّ إِنِّي وَضَعْتُهَا أُنثَىٰ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَلَيْسَ الذَّكَرُ
كَالْأُنثَىٰ ۖ وَإِنِّي سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا
مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ﴾
৩৬। তারপর যখন
সেই শিশু কন্যাটি তার ওখানে জন্ম নিল, সে বললোঃ “হে আমার প্রভু! আমার এখানে তো
মেয়ে জন্ম নিয়েছে। অথচ সে যা প্রসব করেছিল তা আল্লাহর জানাই
ছিল। --আর পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মতো হয়
না।৩৪ যা হোক আমি
তার নাম রেখে দিলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার ভবিষ্যৎ
বংশধরদেরকে অভিশপ্ত শয়তানের ফিতনা থেকে রক্ষার জন্য তোমরা আশ্রয়ে সোপর্দ করছি।’’
﴿فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا
بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا
دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ
أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن
يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾
৩৭। অবশেষে
তার রব কন্যা সন্তানটিকে সন্তুষ্টি সহকারে কবুল করে নিলেন, তাকে খুব ভালো মেয়ে হিসেবে
গড়ে তুললেন এবং যাকারিয়াকে বানিয়ে দিলেন তার অভিভাবক। যাকারিয়া৩৫ যখনই তার কাছে মিহরাবে৩৬ যেতো, তার কাছে কিছু না কিছু
পানাহার সামগ্রী পেতো। জিজ্ঞেস করতোঃ ‘‘মারইয়াম
এগুলো তোমরা কাছে কোথা থেকে এলো?’’ সে জবাব দিতোঃ আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। আল্লাহ
যাকে চান, বেহিসেব
দান করেন।
﴿هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا
رَبَّهُ ۖ قَالَ رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ
الدُّعَاءِ﴾
৩৮। এ অবস্থা
দেখে যাকারিয় তার রবের কাছে প্রার্থনা করলোঃ ‘‘হে আমার রব! তোমরা বিশেষ ক্ষমতা বলে
আমাকে সৎ সন্তান দান করো। তুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী’’।৩৭ যখন তিনি মেহরাবে দাঁড়িয়ে
নামায পড়ছিলেন।
﴿فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ
وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ مُصَدِّقًا
بِكَلِمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَسَيِّدًا وَحَصُورًا وَنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِينَ﴾
৩৯। তখন এর
জবাবে তাকে ফেরেশতাগণ বললোঃ ‘‘আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার৩৮ সুসংবাদ দান করেছেন। সে
আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ফরমানের৩৯ সত্যতা
প্রমাণকারী হিসেবে আসবে। তার মধ্যে নেতৃত্ব ও সততার
গুণাবলী থাকবে। সে পরিপূর্ণ সংযমী হবে, নবুওয়াতের অধিকারী হবে এবং
সৎকর্মশীলদের মধ্যে গণ্য হবে।’’
﴿قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ
لِي غُلَامٌ وَقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَأَتِي عَاقِرٌ ۖ قَالَ كَذَٰلِكَ اللَّهُ
يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ﴾
৪০। যাকারিয়া
বললোঃ ‘‘হে আমার রব! আমার সন্তান হবে কেমন করে? আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি এবং
আমার স্ত্রী তো বন্ধা।’’ জবাব এলোঃ ‘‘এমনটিই হবে।৪০ আল্লাহ যা চান তাই করেন।
﴿قَالَ رَبِّ اجْعَل لِّي
آيَةً ۖ قَالَ آيَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا رَمْزًا
ۗ وَاذْكُر رَّبَّكَ كَثِيرًا وَسَبِّحْ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ﴾
৪১। আরজ করলোঃ
‘‘হে প্রভু! তাহলে আমার জন্য কোন নিশানী ঠিক করে দাও।’’৪১ জবাব দিলেনঃ ‘‘নিশানী হচ্ছে
এই যে, তুমি তিন
দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা-ইংগিত ছাড়া কোন কথা বলবে না। এই সময়ে
নিজের রবকে খুব বেশী করে ডাকো এবং সকাল সাঁঝে তার ‘তাস্বীহ করতে থাকো।’’৪২
﴿وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ
يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَىٰ نِسَاءِ الْعَالَمِينَ﴾
৪২। তারপর এক
সময় এলো, ফেরেশতারা মারইয়ামের
কাছে এসে বললোঃ হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন, তোমাকে পবিত্রতা দান করেছেন
এবং সারা বিশ্বের নারী সমাজের মধ্যে তোমাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের সেবার জন্য
বাছাই করে নিয়েছেন।
﴿يَا مَرْيَمُ
اقْنُتِي لِرَبِّكِ وَاسْجُدِي وَارْكَعِي مَعَ الرَّاكِعِينَ﴾
৪৩। হে মারইয়াম!
তোমার রবের ফরমানের অনুগত হয়ে থাকো। তাঁর
সামনে সিজদানত হও এবং যেসব বান্দা তাঁর সামনে অবনত হয় তুমিও তাদের সাথে অবনত হও।
﴿ذَٰلِكَ
مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۚ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُونَ
أَقْلَامَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ﴾
৪৪। হে
মুহাম্মাদ! এসব অদৃশ্য বিষয়ের খবর, অহীর মাধ্যমে আমি এগুলো তোমাকে জানাচ্ছি। অথচ তুমি
সেখানে ছিলে না, যখন
হাইকেলের সেবায়েতরা মারইয়ামের তত্ত্বাবধায়ক কে হবে একথার ফায়সালা করার জন্য
নিজেদের কলম নিক্ষেপ করছিল।৪৩ আর তুমি তখনো সেখানে ছিলো না
যখন তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল।
﴿إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ
يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى
ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ﴾
৪৫। যখন
ফেরেশতারা বললঃ ‘‘হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে তাঁর একটি ফরমানের সুসংবাদ দান করেছেন। তার নাম
হবে মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম। সে দুনিয়ায় ও আখেরাতে
সম্মানিত হবে। আল্লাহর নৈকট্যলাভকারী বান্দাদের
অন্তরভুক্ত হবে।
﴿وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي
الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَمِنَ الصَّالِحِينَ﴾
৪৬। দোলনায়
থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সেও মানুষের সাথে কথা বলবে এবং সে হবে সৎব্যক্তিদের অন্যতম।’’
﴿قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ
لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ اللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ
ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ﴾
৪৭। একথা শুনে
মারইয়াম বললোঃ ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান কেমন করে হবে? আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শও
করেনি।’’ জবাব এলোঃ ‘‘এমনটিই হবে।৪৪ আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন
কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন কেবল এতটুকুই বলেন, হয়ে যাও, তাহলেই তা হয়ে যায়।’’
﴿وَيُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ
وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ﴾
৪৮।
(ফেরেশতারা আবার তাদের আগের কথার জের টেনে বললোঃ) ‘‘আর আল্লাহ তাকে কিতাব ও হিকমত
শিক্ষা দেবেন, তাওরাত ও ইনজীলের জ্ঞান দান করবেন
﴿وَرَسُولًا
إِلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنِّي قَدْ جِئْتُكُم بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ أَنِّي
أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا
بِإِذْنِ اللَّهِ ۖ وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِي الْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ
اللَّهِ ۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ ۚ
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾
৪৯। এবং নিজের
রাসূল বানিয়ে ইসরাঈলদের কাছে পাঠাবেন।’’ (আর বনী
ইসরাঈলদের কাছে রাসূল হিসেবে এসে সে বললোঃ) ‘‘আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের
কাছে নিশানী নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের সামনে মাটি থেকে
পাখির আকৃতি বিশিষ্ট একটি মূর্তি তৈরী করছি এবং তাতে ফুৎকার দিচ্ছি, আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে
যাবে। আল্লাহর হুকুমে আমি জন্মান্ধ ও
কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করি এবং মৃতকে জীবিত করি। আমি
তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি, তোমরা নিজেদের গৃহে কি খাও ও কি মওজুদ করো। এর মধ্যে
তোমাদের জন্য যথেষ্ঠ নিশানী রয়েছে, যদি তোমরা ঈমানদার হও।৪৫
﴿وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ
يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَلِأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ الَّذِي حُرِّمَ عَلَيْكُمْ ۚ
وَجِئْتُكُم بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾
৫০। আমি সেই
শিক্ষা ও হিদায়াতের সত্যতা ঘোষণা করার জন্য এসেছি, যা বর্তমানে আমার যুগে
তাওরাতে আছে।৪৬ আর তোমাদের
জন্য যেসব জিনিস হারাম ছিল তার কতকগুলো হালাল করার জন্য আমি এসেছি।৪৭ দেখো, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে
তোমাদের কাছে আমি নিশানী নিয়ে এসেছি। কাজেই
আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
﴿إِنَّ اللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ
فَاعْبُدُوهُ ۗ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾
৫১। আল্লাহ
আমার রব এবং তোমাদেরও রব। কাজেই তোমরা তার বন্দেগী করো। এটিই
সোজাপথ।৪৮
﴿فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَىٰ
مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ
أَنصَارُ اللَّهِ آمَنَّا بِاللَّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ﴾
৫২। যখন ঈসা
অনুভব করলো, ইসরাঈল
কুফরী ও অস্বীকার করতে উদ্যেগী হয়েছে, সে বললোঃ ‘‘কে হবে আল্লাহর পথে আমার
সাহায্যকারী? হাওয়ারীগণ৪৯ বললোঃ আমরা আল্লাহর
সাহায্যকারী।৫০ আমরা
আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম (আল্লাহর সামনে
আনুগত্যের শির নতকারী)।
﴿رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنزَلْتَ
وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ﴾
৫৩। হে আমাদের
মালিক! তুমি যে ফরমান নাযিল করেছ, আমরা তা মেনে নিয়েছি এবং রাসূলের আনুগত্য
কবুল করে নিয়েছি। সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে আমাদের নাম লিখে
নিয়ো।’’
﴿وَمَكَرُوا
وَمَكَرَ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ﴾
৫৪। তারপর বনী
ইসরাঈল (ঈসার বিরুদ্ধে) গোপন চক্রান্ত করতে লাগলো। জবাবে
আল্লাহও তাঁর গোপন কৌশল খাটালেন। আর আল্লাহ
শ্রেষ্ঠতম কুশলী।
﴿إِذْ قَالَ
اللَّهُ يَا عِيسَىٰ إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ
كَفَرُوا وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ يَوْمِ
الْقِيَامَةِ ۖ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ
تَخْتَلِفُونَ﴾
৫৫। (এটি
আল্লাহরই একটি গোপন কৌশল ছিল) যখন তিনি বললেনঃ ‘‘হে ঈসা! এখন আমি তোমাকে ফিরিয়ে
নেবো৫১ এবং তোমাকে আমার নিজের দিকে
উঠিয়ে নেবো। আর যারা তোমাকে অস্বীকার করেছে তাদের
থেকে (অর্থাৎ তাদের সংগ এবং তাদের পূতিগন্ধময় পরিবেশে তাদের সংগে থাকা থেকে)
তোমাকে পবিত্র করে দেবো এবং তোমাকে যারা অস্বীকার করেছে৫২ তাদের ওপর তোমার অনুসারীদের
কিয়ামত পর্যন্ত প্রাধান্য দান করবো। তারপর
তোমাদের মধ্যে যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর মীমাংসা করে দেবো।
﴿فَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا
فَأُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ﴾
৫৬। যারা
কুফরী ও অস্বীকার করার নীতি অবলম্বন করেছে তাদেরকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে উভয় স্থানে
কঠোর শাস্তি দেবো এবং তারা কোন সাহায্যকারী পাবে না।
﴿وَأَمَّا
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَيُوَفِّيهِمْ أُجُورَهُمْ ۗ وَاللَّهُ
لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ﴾
৫৭। আর যারা
ঈমান ও সৎকাজ করার নীতি অবলম্বন করেছে, তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। ভালো করেই
জেনে রাখো আল্লাহ জালেমদের কখনোই ভালোবাসেন না।’’
﴿ذَٰلِكَ
نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ الْآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ﴾
৫৮। এই আয়াত ও
জ্ঞানগর্ভ আলোচনা আমি তোমাকে শুনাচ্ছি।
﴿إِنَّ
مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ
كُن فَيَكُونُ﴾
৫৯। আল্লাহর
কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মতো। কেননা আল্লাহ তাকে মাটি থেকে
সৃষ্টি করেন এবং হুকুম দেন, হয়ে যাও, আর তা হয়ে যায়।৫৩
﴿الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا
تَكُن مِّنَ الْمُمْتَرِينَ﴾
৬০। এ প্রকৃত
সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কাজেই
তুমি সন্দেহকারীদের অন্তরভুক্ত হয়ো না।৫৪
﴿فَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِن
بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ
وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل
لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ﴾
৬১। এই জ্ঞান
এসে যাওয়ার পর এখন যে কেউ এ ব্যাপারে তোমার সাথে ঝগড়া করে, হে মুহাম্মাদ! তাকে বলে দাওঃ
‘‘এসো আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রগণকে এবং তোমাদের পুত্রগণকে। আর আমাদের
নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে আর আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে, তারপর আল্লাহর কাছে এই মর্মে
দোয়া করি যে, যে
মিথ্যাবাদী হবে তার ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।’’৫৫
﴿إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْقَصَصُ
الْحَقُّ ۚ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا اللَّهُ ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ الْعَزِيزُ
الْحَكِيمُ﴾
৬২। নিসন্দেহ
এটা নির্ভুল সত্য বৃত্তান্ত। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া আর
কোন ইলাহ নেই। আর আল্লাহর সত্তা প্রবল পরাক্রান্ত এবং
তার জ্ঞান ও কর্মকৌশল সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থায় সক্রিয়।
﴿فَإِن
تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِالْمُفْسِدِينَ﴾
৬৩। কাজেই এরা
যদি (এই শর্তে মোকাবিলায় আসার ব্যাপারে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে (তারা যে ফাসাদকারী
একথা পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং) আল্লাহ অবশ্যি ফাসাদকারীদের অবস্থা ভালো করেই জানেন।
﴿قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ
تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا
اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا
مِّن دُونِ اللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ﴾
৬৪। বলঃ৫৬ হে আহলি কিতাব! এসো এমন একটি
কথার দিকে, যা আমাদের
ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের।৫৭ তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া
কারোর বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না। তাঁর সাথে
কাউকে শরীক করবো না। আর আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া
আর কাউকেও নিজের রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। যদি তারা
এ দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত না হয়, তাহলে পরিষ্কার বলে দাওঃ ‘‘তোমরা সাক্ষী
থাকো, আমরা
অবশ্যি মুসলিম (একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যকারী)।’’
﴿يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ
تُحَاجُّونَ فِي إِبْرَاهِيمَ وَمَا أُنزِلَتِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنجِيلُ إِلَّا مِن
بَعْدِهِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾
৬৫। হে আহলি
কিতবা! তোমরা ইবরাহীমের ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া করছো কেন? তাওরাত ও ইনজীল তো ইবরাহীমের
পরে নাযিল হয়েছে। তাহলে তোমরা কি এতকুটু কথাও বুঝো না?৫৮
﴿هَا أَنتُمْ هَٰؤُلَاءِ حَاجَجْتُمْ
فِيمَا لَكُم بِهِ عِلْمٌ فَلِمَ تُحَاجُّونَ فِيمَا لَيْسَ لَكُم بِهِ عِلْمٌ ۚ وَاللَّهُ
يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ﴾
৬৬। তোমরা
যেসব বিষয়ের জ্ঞান রাখো সেগুলোর ব্যাপারে বেশ বিতর্ক করলে, এখন আবার সেগুলোর ব্যাপারে
বিতর্ক করতে চললে কেন যেগুলোর কোন জ্ঞান তোমাদের নেই? আল্লাহ জানেন কিন্তু তোমরা
জানো না।
﴿مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا
وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَٰكِن كَانَ حَنِيفًا مُّسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
৬৭। ইবরাহীম
ইহুদী ছিল না, খৃস্টানও
ছিল না বরং সে তো ছিল একজন একনিষ্ঠ মুসলিম৫৯ এবং সে কখনো মুশরিকদের
অন্তরভুক্ত ছিল না। ইবরাহীমের যারা অনুসরণ করেছে
তারাই তার সাথে ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক রাখার অধিকারী।
﴿إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِإِبْرَاهِيمَ
لَلَّذِينَ اتَّبَعُوهُ وَهَٰذَا النَّبِيُّ وَالَّذِينَ آمَنُوا ۗ وَاللَّهُ وَلِيُّ
الْمُؤْمِنِينَ﴾
৬৮। আর এখন এই
নবী এবং এর ওপর যারা ঈমান এনেছে তারাই এই সম্পর্ক রাখার বেশী অধিকারী। আল্লাহ
কেবল তাদেরই সমর্থক ও সাহায্যকারী যারা ঈমান এনেছে।
﴿وَدَّت
طَّائِفَةٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يُضِلُّونَكُمْ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ
وَمَا يَشْعُرُونَ﴾
৬৯। (হে
ঈমানদারগণ!) আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে একটি দল যে কোন রকমের তোমাদের সত্য ও ন্যায়ের
পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। অথচ তারা নিজেদের ছাড়া আর
কাউকেই বিপথগামী করছে না। কিন্তু তারা এটা উপলব্ধি করে
না।
﴿يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ
تَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ﴾
৭০। হে আহ্লি
কিতাব! কেন আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করছো, অথচ তোমরা নিজেরাই তা প্রত্যক্ষ করছো?৬০
﴿يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ
تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
৭১। হে আহলি
কিতাব! কেন সত্যের গায়ে মিথ্যার প্রলেপ লাগিয়ে তাকে সন্দেহযুক্ত করে তুলছো? কেন জেনে বুঝে সত্যকে গোপন
করছো?
﴿وَقَالَت
طَّائِفَةٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمِنُوا بِالَّذِي أُنزِلَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا
وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوا آخِرَهُ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾
৭২। আহলি
কিতাবদের একটি দল বলে, এই নবীকে যারা মেনে নিয়েছে তাদের ওপর যা কিছু নাযিল হয়েছে, তার প্রতি তোমরা সকাল বেলায়
ঈমান আনো এবং সাঁঝের বেলায় তা অস্বীকার করো। সম্ভবত এই
উপায়ে এই লোকেরা নিজেদের ঈমান থেকে ফিরে যাবে।৬১
﴿وَلَا تُؤْمِنُوا إِلَّا
لِمَن تَبِعَ دِينَكُمْ قُلْ إِنَّ الْهُدَىٰ هُدَى اللَّهِ أَن يُؤْتَىٰ أَحَدٌ مِّثْلَ
مَا أُوتِيتُمْ أَوْ يُحَاجُّوكُمْ عِندَ رَبِّكُمْ ۗ قُلْ إِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ
اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴾
৭৩। তাছাড়া এই
লোকেরা পরস্পর বলাবলি করে, নিজের ধর্মের লোক ছাড়া আর কারো কথা মেনে নিয়ো না। হে নবী!
এদের বলে দাও, ‘‘আল্লাহর
হিদায়াতই তো আসল হিদায়াত এবং এটা তো তাঁরই নীতি যে, এক সময় যা তোমাদের দেয়া
হয়েছিল তাই অন্য একজনকে দেয়া হবে অথবা অন্যেরা তোমাদের রবের কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে
পেশ করার জন্য শক্তিশালী প্রমাণ পেয়ে যাবে।’’ হে নবী!
তাদের বলে দাও, ‘‘গ্রহণ ও
মর্যাদা আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। তিনি
ব্যাপক দৃষ্টির অধিকারী৬২
﴿يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن
يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ﴾
৭৪। এবং
সবকিছু জানেন।৬৩ নিজের রহমতের জন্য তিনি যাকে চান
নির্ধারিত করে নেন এবং তাঁর অনুগ্রহ বিশাল ব্যপ্তির অধিকারী।’’
﴿وَمِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ
مَنْ إِن تَأْمَنْهُ بِقِنطَارٍ يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ وَمِنْهُم مَّنْ إِن تَأْمَنْهُ
بِدِينَارٍ لَّا يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ إِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَائِمًا ۗ ذَٰلِكَ
بِأَنَّهُمْ قَالُوا لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ وَيَقُولُونَ عَلَى
اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ﴾
৭৫। আহলি
কিতাবদের মধ্যে কেউ এমন আছে, তার ওপর আস্থাস্থাপন করে যদি তাকে সম্পদের
স্তূপ দান করো, তাহলেও সে
তোমার সম্পদ তোমাকে ফিরিয়ে দেবে। আবার
তাদের কারো আবস্থা এমন যে, যদি তুমি তার ওপর একটি মাত্র দীনারের ব্যাপারেও আস্থাস্থাপন
করো, তাহলে সে
তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবে না, তবে যদি তোমরা তার ওপর চড়াও হয়ে যাও। তাদের এই
নৈতিক অবস্থার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ নিরক্ষরদের (অ–ইহুদী) ব্যাপারে
আমাদের কোন দায়দায়িত্ব নেই।৬৪ আর এটা একটা সর্ম্পূণ মিথ্যা
বানোয়াট কথা তারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করেছে। অথচ তারা
জানে, (আল্লাহ এমন
কোন কথা বলেননি।)
﴿بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ
وَاتَّقَىٰ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ﴾
৭৬। আচ্ছা, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে
না কেন? যে ব্যক্তিই তার অংগীকার পূর্ণ করবে এবং অসৎকাজ থেকে দূরে
থাকবে, সে আল্লাহর
প্রিয়ভাজন হবে। কারণ আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।
﴿إِنَّ
الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَٰئِكَ
لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
৭৭। আর যারা
আল্লাহর সাথে করা অংগীকার ও নিজেদের শপথ সামান্য দামে বিকিয়ে দেয়, তাদের জন্য আখেরাতে কোন অংশ
নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা
বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পাক–পবিত্র ও করবেন না।৬৫ বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠোর
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
﴿وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا
يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُم بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ
الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ
عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ﴾
৭৮। তাদের
মধ্যে কিছু লোক আছে, তারা কিতাব
পড়ার সময় এমনভাবে জিভ ওলট পালট করে যে, তোমরা মনে করতে থাকো, তারা কিতাবেরই ইবারত পড়ছে, অথচ তা কিতাবের ইবারত নয়।৬৬ তারা বলে, যা কিছু আমরা পড়ছি, তা আল্লাহর কাছ থেকেই পাওয়া
অথচ তা আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া নয়, তারা জেনে বুঝে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ
করে।
﴿مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ
اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا
لِّي مِن دُونِ اللَّهِ وَلَٰكِن كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ
الْكِتَابَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ﴾
৭৯। কোন
ব্যক্তিকে আল্লাহর কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করবেন আর সে লোকদের বলে বেড়াবে, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে আমার
দাস হয়ে যাও, এটা তার
জন্য শোভনীয় নয়। সে তো একথাই বলবে, তোমরা খাঁটি রব্বানী৬৭ হয়ে যাও, যেমন এই কিতাবের দাবী, যা তোমরা পড়ো এবং অন্যদের
পড়াও।
﴿وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُوا
الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا ۗ أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ
أَنتُم مُّسْلِمُونَ﴾
৮০। তারা
তোমাদের কখনো বলবে না, ফেরেশতা বা নবীদেরকে তোমাদের রব হিসেবে গ্রহণ করো। তোমরা যখন
মুসলিম তখন তোমাদেরকে কুফরীর হুকুম দেয়া একজন নবীর পক্ষে কি সম্ভব?৬৮
﴿وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ
النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ
لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ
عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم
مِّنَ الشَّاهِدِينَ﴾
৮১। স্মরণ করো, যখন আল্লাহ নবীদের থেকে এই
মর্মে অংগীকার নিয়েছিলেন, আজ আমি তোমাদের কিতাব ও হিকমত দান করেছি, কাল যদি অন্য একজন রাসূল এই
শিক্ষার সত্যতা ঘোষণা করে তোমাদের কাছে আসে, যা আগে থেকেই তোমাদের কাছে
আছে, তাহলে
তোমাদের তার প্রতি ঈমান আনতে হবে এবং তাকে সাহায্য করতে হবে।৬৯ এই বক্তব্য উপস্থাপন করার পর
আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ তোমরা কি একথার স্বীকৃতি দিচ্ছো এবং আমার পক্ষ থেকে
অংগীকারের গুরুদায়িত্ব বহন করতে প্রস্তুত আছো? তারা বললো, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করলাম।
﴿فَمَن تَوَلَّىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ
فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ﴾
৮২। আল্লাহ
বললেনঃ আচ্ছা, তাহলে
তোমরা সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম, এরপর যারাই এ অংগীকার ভংগ
করবে তারাই হবে ফাসেক।৭০
﴿أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ
يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ
يُرْجَعُونَ﴾
৮৩। এখন কি
এরা আল্লাহর আনুগত্যের পথ (আল্লাহর দীন) ত্যাগ করে অন্য কোন পথের সন্ধান করছে? অথচ আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই
স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর হুকুমের অনুগত (মুসলিম)৭১ এবং তাঁরই দিকে সবাইকে ফিরে
যেতে হবে।
﴿قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا
أُنزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ
وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَالنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا
نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ﴾
৮৪। হে নবী!
বলোঃ আমরা আল্লাহকে মানি, আমাদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকে মানি, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও ইয়াকূব সন্তানদের
ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকেও মানি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেকে তাদের রবের পক্ষ
থেকে যে হিদায়াত দান করা হয় তার ওপরও ঈমান রাখি। আমরা
তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না৭২ এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত (মুসলিম)।
﴿وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ
دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾
৮৫। এ আনুগত্য
(ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ
করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত।
﴿كَيْفَ
يَهْدِي اللَّهُ قَوْمًا كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ وَشَهِدُوا أَنَّ الرَّسُولَ
حَقٌّ وَجَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾
৮৬। ঈমানে
নিয়ামত একবার লাভ করার পর পুনরায় যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে, তাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান
করবেন, এটা কেমন
করে সম্ভব হতে পারে? অথচ তারা
নিজেরা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, রাসূল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তার কাছে উজ্জ্বল
নিদর্শনসমূহও এসেছে।৭৩ আল্লাহ জালেমদের হিদায়াত দান
করেন না।
﴿أُولَٰئِكَ جَزَاؤُهُمْ أَنَّ
عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ﴾
৮৭। তাদের ওপর
আল্লাহ, ফেরেশতা ও
সমস্ত মানুষের লানত, এটিই হচ্ছে
তাদের জুলুমের সঠিক প্রতিদান।
﴿خَالِدِينَ
فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ﴾
৮৮। এই
অবস্থায় তারা চিরদিন থাকবে। তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না
এবং তাদের বিরামও দেয়া হবে না।
﴿إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا
مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
৮৯। তবে যারা
তাওবা করে নিজেদের কর্মনীতির সংশোধন করে নেয় তারা এর হাত থেকে রেহাই পাবে। আল্লাহ
ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
﴿إِنَّ
الَّذِينَ كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَّن تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ
وَأُولَٰئِكَ هُمُ الضَّالُّونَ﴾
৯০। কিন্তু
যারা ঈমান আনার পর আবার কুফরী অবলম্বন করে তারপর নিজেদের কুফরীর মধ্যে এগিয়ে যেতে
থাকে,৭৪ তাদের তাওবা কবুল হবে না। এ ধরনের
লোকেরা তো চরম পথভ্রষ্ট।
﴿إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا
وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَن يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِم مِّلْءُ الْأَرْضِ ذَهَبًا
وَلَوِ افْتَدَىٰ بِهِ ۗ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ﴾
৯১।
নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, যারা কুফরী অবলম্বন করেছে এবং কুফরীর
অবস্থায় জীবন দিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি নিজেকে শাস্তি
থেকে বাঁচাবার জন্য সারা পৃথিবীটাকে স্বর্ণে পরিপূর্ণ করে বিনিময় স্বরুপ পেশ করে
তাহলেও তা গ্রহণ করা হবে না। এ ধরনের
লোকদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তারা নিজেদের জন্য কোন সাহায্যকারীও
পাবে না।
﴿لَن تَنَالُوا
الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ
اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ﴾
৯২। তোমরা নকী
অর্জন করতে পারো না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো।৭৫ আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ
তা থেকে বেখবর থাকবেন না।
﴿كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلًّا
لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرَائِيلُ عَلَىٰ نَفْسِهِ مِن قَبْلِ
أَن تُنَزَّلَ التَّوْرَاةُ ۗ قُلْ فَأْتُوا بِالتَّوْرَاةِ فَاتْلُوهَا إِن كُنتُمْ
صَادِقِينَ﴾
৯৩। এসব
খাদ্যবস্তু (শরীয়াতে মুহাম্মাদীতে যেগুলো হালাল) বনী ইসলাঈলদের জন্যও হালাল ছিল।৭৬ তবে এমন কিছু বস্তু ছিল
যেগুলোকে তাওরাত নাযিল হবার পূর্বে বনী ইসরাঈল৭৭ নিজেই নিজের জন্য হারাম করে
নিয়েছিল। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা (নিজেদের আপত্তির
ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তার কোন বাক্য
পেশ করো।
﴿فَمَنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ
الْكَذِبَ مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ﴾
৯৪। এরপরও
যারা নিজেদের মিথ্যা মনগড়া কথা আল্লাহর প্রতি আরোপ করতে থাকবে তারাই আসলে জালেম।
﴿قُلْ صَدَقَ اللَّهُ ۗ فَاتَّبِعُوا
مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
৯৫। বলে দাও, আল্লাহ যা কিছু বলেছেন, সত্য বলেছেন। কাজেই
তোমাদের একাগ্রচিত্তে ও একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের পদ্ধতির অনুসরণ করা উচিত। আর
ইবরাহীম শিরককারীদের অন্তরভুক্ত ছিল না।৭৮
﴿إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ
لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ﴾
৯৬। নিসন্দেহে
মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ইবাদাত গৃহটি নির্মিত হয় সেটি মক্কায় অবস্থিত। তাকে
কল্যাণ ও বরকত দান করা হয়েছিল এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াতের কেন্দ্রে পরিণত
করা হয়েছিল।৭৯
﴿فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ
مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ
الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ
عَنِ الْعَالَمِينَ﴾
৯৭। তার মধ্যে
রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ৮০ এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থান। আর তার
অবস্থা হচ্ছে এই যে, যে তার মধ্যে
প্রবেশ করেছে, সে
নিরাপত্তা লাভ করেছে।৮১ মানুষের মধ্য থেকে যারা
সেখানে পৌঁছার সামর্থ রাখে, তারা যেন এই গৃহের হজ্জ সম্পন্ন করে, এটি তাদের ওপর আল্লাহর অধিকার। আর যে
ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী
নন।
﴿قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ
لِمَ تَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا تَعْمَلُونَ﴾
৯৮। বলো, হে আহলি কিতাব! তোমরা কেন
আল্লাহর কথা মানতে অস্বীকার করছো? তোমরা যেসব কাজ কারবার করছো, আল্লাহ তা সবই দেখছেন।
﴿قُلْ يَا
أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ مَنْ آمَنَ تَبْغُونَهَا عِوَجًا
وَأَنتُمْ شُهَدَاءُ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ﴾
৯৯। বলো, হে আহলি কিতাব! তোমরা এ কেমন
কর্মনীতি অবলম্বন করেছো, যে ব্যক্তি আল্লাহর কথা মানে তাকে তোমরা আল্লাহর পথ থেকে
বিরত রাখো এবং সে যেন বাকা পথে চলে এই কামনা করে থাকো? অথচ তোমরা নিজেরাই তার (সত্য
পথাশ্রয়ী হবার) সাক্ষী। তোমরা যা কিছু করছো সে
সম্পর্কে আল্লাহ গাফিল নন।
﴿يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا إِن تُطِيعُوا فَرِيقًا مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ يَرُدُّوكُم
بَعْدَ إِيمَانِكُمْ كَافِرِينَ﴾
১০০। হে
ঈমানদারগণ! যদি তোমরা এই আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে একটি দলের কথা মানো, তাহলে তারা তোমাদের ঈমান থেকে
কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
﴿وَكَيْفَ
تَكْفُرُونَ وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ آيَاتُ اللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُ ۗ وَمَن
يَعْتَصِم بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾
১০১। তোমাদের
জন্যে কুফরীর দিকে ফিরে যাবার এখন আর কোন সুযোগটি আছে, যখন তোমাদের শুনানো হচ্ছে
আল্লাহর আয়াত এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর রাসূল? যে ব্যক্তি আল্লাহকে
মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরবে, সে অবশ্যি সত্য সঠিক পথ লাভ করবে।
﴿يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم
مُّسْلِمُونَ﴾
১০২। হে
ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো। মুসলিম
থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়।৮২
﴿وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ
جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ
أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ
عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ
اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾
১০৩। তোমরা
সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু৮৩ মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ
তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা
ছিলে পরস্পরের শক্র। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে
দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা
ভাই ভাই হয়ে গেছো। তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে
ছিলে। আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে
নিয়েছেন।৮৪ এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দশনসমূহ তোমাদের
সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন। হয়তো এই নিদর্শনগুলোর
মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে।৮৫
﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ
يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ
ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
১০৪। তোমাদের
মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান
জানাবে, ভালো কাজের
নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ
দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে।
﴿وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ
تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ
لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴾
১০৫। তোমরা যেন
তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য
হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে।৮৬ যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে
তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে।
﴿يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ
وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ
إِيمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ﴾
১০৬। যেদিন
কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। তাদেরকে
বলা হবে, ঈমানের
নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফরী নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত
অস্বীকৃতির বিনিময়ে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো।
﴿وَأَمَّا
الَّذِينَ ابْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِي رَحْمَةِ اللَّهِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
১০৭। আর যাদের
চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা
আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং তারা চিরদিন এই অবস্থায় থাকবে।
﴿تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا
عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ۗ وَمَا اللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًا لِّلْعَالَمِينَ﴾
১০৮। এগুলো
আল্লাহর বাণী, তোমাকে
যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি
জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।৮৭
﴿وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ﴾
১০৯। আল্লাহ
পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসের মালিক এবং সমস্ত বিষয় আল্লাহর দরবারে পেশ হয়।
﴿كُنتُمْ
خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ
الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا
لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ﴾
১১০। এখন
তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা
হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য।৮৮ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো। এই আহলি কিতাবরা৮৯ ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো
হতো। যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার
পাওয়া যায়, কিন্তু
তাদের অধিকাংশই নাফরমান।
১১১। এরা
তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। বড় জোড়
কিছু কষ্ট দিতে পারে। এরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করলে
পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তারপর এমনি অসহায় হয়ে পড়বে যে কোথাও থেকে কোন সাহায্য পাবে না।
﴿ضُرِبَتْ
عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوا إِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللَّهِ وَحَبْلٍ
مِّنَ النَّاسِ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ
ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ الْأَنبِيَاءَ
بِغَيْرِ حَقٍّ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ﴾
১১২। এদের
যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানেই এদের ওপর লাঞ্জনার মার পড়েছে। তবে কোথাও
আল্লাহর দায়িত্বে বা মানুষের দায়িত্বে কিছু আশ্রয় মিলে গেলে তা অবশ্যি ভিন্ন কথা,৯০ আল্লাহর গযব এদেরকে ঘিরে ফেলেছে। এদের ওপর
মুখাপেক্ষীতা ও পরাজয় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এসব
কিছুর কারণ হচ্ছে এই যে, এরা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করতে থেকেছে এবং নবীদেরকে
অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। এসব হচ্ছে এদের নাফরমানি ও
বাড়াবাড়ির পরিণাম।
﴿لَيْسُوا سَوَاءً ۗ مِّنْ
أَهْلِ الْكِتَابِ أُمَّةٌ قَائِمَةٌ يَتْلُونَ آيَاتِ اللَّهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَهُمْ
يَسْجُدُونَ﴾
১১৩। কিন্তু
সমস্ত আহলি কিতাব এক ধরনের নয়। এদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে
সত্য পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা রাতে আল্লাহর আয়াত পাঠ
করে এবং তাঁর সামনে সিজদানত হয়।
﴿يُؤْمِنُونَ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ
وَيُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَأُولَٰئِكَ مِنَ الصَّالِحِينَ﴾
১১৪। আল্লাহ ও
আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে। সৎকাজের
নির্দেশ দেয়, অসৎকাজ
থেকে বিরত রাখে এবং কল্যাণ ও নেকীর কাজে তৎপর থাকে। এরা সৎলোক।
﴿وَمَا يَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ
فَلَن يُكْفَرُوهُ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ﴾
১১৫। এরা যে
সৎকাজই করবে তার অমর্যাদা করা হবে না। আল্লাহ
মুত্তাকীদেরকে খুব ভালোভাবেই জানেন।
﴿إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا
لَن تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا ۖ وَأُولَٰئِكَ
أَصْحَابُ النَّارِ ۚ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
১১৬। আর যারা
কুফরীনীতি অবলম্বন করেছে, আল্লাহর মোকাবিলায় তাদের ধন-সম্পদ কোন কাজে লাগবে না এবং
তাদের সন্তান–সন্ততিও। তারা তো আগুনের মধ্যে প্রবেশ
করবে এবং সেখানেই তারা থাকবে চিরকাল।
﴿مَثَلُ مَا يُنفِقُونَ فِي
هَٰذِهِ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيحٍ فِيهَا صِرٌّ أَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍ
ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ فَأَهْلَكَتْهُ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَٰكِنْ أَنفُسَهُمْ
يَظْلِمُونَ﴾
১১৭। তারা
তাদের এই দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করছে তার উপমা হচ্ছে এমন বাতাস যার মধ্যে আছে
তূষার কণা। যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে তাদের
শস্যক্ষেতের ওপর দিয়ে এই বাতাস প্রবাহিত হয় এবং তাকে ধ্বংস করে দেয়।৯১ আল্লাহ তাদের ওপর জুলুম
করেননি। বরং প্রকৃতপক্ষে এরা নিজেরাই নিজেদের ওপর
জুলুম করেছে।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا
عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ
أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ﴾
১১৮। হে
ঈমানদারগণ! তোমাদের নিজেদের জামায়াতের লোকদের ছাড়া অন্য কাউকে তোমাদের গোপন কথার
সাক্ষী করো না। তারা তোমাদের দুঃসময়ের সুযোগ গ্রহণ করতে
কুণ্ঠিত হয় না।৯২ যা তোমাদের ক্ষতি করে তাই তাদের কাছে
প্রিয়। তাদের মনের হিংসা ও বিদ্বেষ তাদের মুখ
থেকে ঝরে পড়ে এবং যা কিছু তারা নিজেদের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে তা এর চাইতেও
মারাত্মক। আমি তোমাদের পরিষ্কার হিদায়াত দান করেছি। তবে যদি
তোমরা বুদ্ধিমান ও (তাহলে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার সতর্কতা অবলম্বন করবে)।
﴿هَا أَنتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ
وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا
آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا
بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ﴾
১১৯। তোমরা
তাদেরকে ভালোবাসো কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না অথচ তোমরা সমস্ত আসমানী
কিতাবকে মানো।৯৩ তারা তোমাদের সাথে মিলিত হলে বলে, আমরাও (তোমাদের রাসূল ও
কিতাবকে) মেনে নিয়েছে। কিন্তু তোমাদের থেকে আলাদা
হয়ে যাবার পর তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্রোধ ও আক্রোশ এতবেশী বেড়ে যায় যে, তারা নিজেদের আঙুল কামড়াতে
থাকে। তাদেরকে বলে দাও, নিজেদের ক্রোধ ও আক্রোশে
তোমরা নিজেরাই জ্বলে পুড়ে মরো। আল্লাহ মনের গোপন কথাও জানেন।
﴿إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ
تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا ۖ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا
لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ﴾
১২০। তোমাদের
ভালো হলে তাদের খারাপ লাগে এবং তোমাদের ওপর কোন বিপদ এলে তারা খুশী হয়। তোমরা যদি
সবর করো এবং আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো, তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের
কোন কৌশল কার্যকর হতে পারে না। তারা যা কিছু করছে আল্লাহ তা
চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে আছেন।
﴿وَإِذْ غَدَوْتَ مِنْ أَهْلِكَ
تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِينَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾
১২১। (হে নবী!৯৪ মুসলমানদের সামনে সে সময়ের
কথা বর্ণনা কারো) যখন তুমি অতি প্রত্যুষে নিজের ঘর থেকে বের হয়েছিল এবং (ওহোদের
ময়দানে) মুসলমানদেরকে যুদ্ধের জন্য বিভিন্ন স্থানে নিযুক্ত করেছিলে। আল্লাহ
সমস্ত কথা শুনেন এবং তিনি সবকিছু ভালো করে জানেন।
﴿إِذْ هَمَّت طَّائِفَتَانِ
مِنكُمْ أَن تَفْشَلَا وَاللَّهُ وَلِيُّهُمَا ۗ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
১২২। স্মরণ করো, যখন তোমাদের দু’টি দল
কাপুরুষতার প্রদর্শনী করতে উদ্যেগী হয়েছিল,৯৫ অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যের জন্য বর্তমান
ছিলেন এবং মুমিনদের আল্লাহরই ওপর ভরসা করা উচিত।
﴿وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ
بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾
১২৩। এর আগে
তোমরা অনেক দুর্বল ছিলে। কাজেই আল্লাহর না–শোকরী করা
থেকে তোমাদের দূরে থাকা উচিত, আশা করা যায় এবার তোমরা শোকর গুজার হবে।
﴿إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ
أَلَن يَكْفِيَكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلَاثَةِ آلَافٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ
مُنزَلِينَ﴾
১২৪। স্মরণ করো
যখন তুমি মুমিনদের বলছিলেঃ আল্লাহ তাঁর তিন হাজার ফেরেশতা নামিয়ে দিয়ে তোমাদের
সাহায্য করবেন, এটা কি
তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়?৯৬
﴿بَلَىٰ ۚ إِن تَصْبِرُوا
وَتَتَّقُوا وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ
آلَافٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُسَوِّمِينَ﴾
১২৫। অবশ্যি, যদি তোমরা সবর করো এবং
আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো, তাহলে যে মুহূর্তে দুশমন তোমাদের ওপর চড়াও
হবে ঠিক তখনি তোমাদের রব (তিন হাজার নয়) পাচঁ হাজার চিহ্নযুক্ত ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের
সাহায্য করবেন।
﴿وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا
بُشْرَىٰ لَكُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِ ۗ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ
اللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ﴾
১২৬। একথা
আল্লাহ তোমাদের এ জন্য জানিয়ে দিলেন যে, তোমরা এতে খুশী হবে এবং তোমাদের মন আশ্বস্ত
হবে। বিজয় ও সাহায্য সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ
থেকে আসে। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও মহাজ্ঞানী।
﴿لِيَقْطَعَ طَرَفًا مِّنَ
الَّذِينَ كَفَرُوا أَوْ يَكْبِتَهُمْ فَيَنقَلِبُوا خَائِبِينَ﴾
১২৭। (আর এ
সাহায্য তিনি তোমাদের এ জন্য দেবেন) যাতে কুফরীর পথ অবলম্বনকারীদের একটি বাহু কেটে
দেবার অথবা তাদের এমন লাঞ্জনাপূর্ণ পরাজয় দান করার ফলে তারা নিরাশ হয়ে পশ্চাদপসরণ
করবে।
﴿لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ
شَيْءٌ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ﴾
১২৮। (হে নবী!)
চূড়ান্ত ফায়সালা করার ক্ষমতায় তোমার কোন অংশ নেই। এটা
আল্লাহর ক্ষমতা-ইখতিয়ারভুক্ত, তিনি চাইলে তাদের মাফ করে দেবেন। আবার
চাইলে তাদের শাস্তি দেবেন। কারণ তারা জালেম।
﴿وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ
غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
১২৯। পৃথিবী ও
আকাশে যা কিছু আছে সমস্তই আল্লাহর মালিকানাধীন। যাকে চান
মাফ করে দেন এবং যাকে চান শাস্তি দেন। তিনি
ক্ষমাশীল ও করুণাময়।৯৭
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ
تُفْلِحُونَ﴾
১৩০। হে
ঈমানদারগণ! এ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো৯৮ এবং আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।
﴿وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي
أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ﴾
১৩১। সেই আগুন
থেকে দূরে থাকো, যা
কাফেরদের জন্য তৈরী করা হয়েছে
﴿وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ
لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾
১৩২। এবং
আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম মেনে নাও, আশা করা যায় তোমাদের ওপর রহম করা হবে।
﴿وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ
مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ﴾
১৩৩। দৌড়ে চলো
তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের
দিকে চলে গেছে, যা এমন সব
আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে,
﴿الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي
السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ
ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ﴾
১৩৪। যারা
সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের
দোষ–ক্রটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ
অত্যন্ত ভালোবাসেন।৯৯
﴿وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا
فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ
وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ مَا فَعَلُوا وَهُمْ
يَعْلَمُونَ﴾
১৩৫। আর যারা
কখনো কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা কোন গোনাহের কাজ করে নিজেদের ওপর জুলুম করে
বসলে আবার সংগে সংগে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়ে তাঁর কাছে নিজেদের গোনাহ খাতার জন্য
মাফ চায়– কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে গোনাহ মাফ করতে পারেন– এবং জেনে বুঝে নিজেদের
কৃতকর্মের ওপর জোর দেয় না,
﴿أُولَٰئِكَ جَزَاؤُهُم مَّغْفِرَةٌ
مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا
ۚ وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ﴾
১৩৬। এ ধরনের
লোকদের যে প্রতিদান তাদের রবের কাছে আছে তা হচ্ছে এই যে, তিনি তাদের মাফ করে দেবেন এবং
এমন বাগীচায় তাদের প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সৎকাজ
যারা করে তাদের জন্য কেমন চমৎকার প্রতিদান!
﴿قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ
سُنَنٌ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾
১৩৭। তোমাদের
আগে অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে দেখে
নাও যারা (আল্লাহর বিধান ও হিদায়াতকে) মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।
﴿هَٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ
وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِينَ﴾
১৩৮। এটি মানব
জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট সর্তকবাণী এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য
পথনির্দেশ ও উপদেশ।
﴿وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا
وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১৩৯। মনমরা হয়ো
না, দুঃখ করো
না, তোমরাই
বিজয়ী হবে, যদি তোমরা
মুমিন হয়ে থাকো।
﴿إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ
فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ ۚ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ
النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاءَ ۗ
وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ﴾
১৪০। এখন যদি
তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, তাহলে এর আগে এমনি ধরনের আঘাত লেগেছে তোমাদের বিরোধী পক্ষের
গায়েও।১০০ এ–তো কালের উত্থান পতন, মানুষের মধ্যে আমি এর আবর্তন
করে থাকি। এ সময় ও অবস্থাটি তোমাদের ওপর এ জন্য আনা
হয়েছে যে, আল্লাহ
দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তাদেরকে বাছাই করে
নিতে চান, যারা
যথার্থ (সত্য ও ন্যায়ের) সাক্ষী হবে১০১ --কেননা জালেমদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না
﴿وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ
آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ﴾
১৪১।– এবং তিনি
এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাচ্চা মুমিনদের বাছাই করে নিয়ে কাফেরদের চিহ্নিত করতে
চাইছিলেন।
﴿أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا
الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ﴾
১৪২। তোমরা কি
মনে করে রেখেছ তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো আল্লাহ দেখেনইনি, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে
প্রাণপণ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং কে তাঁর জন্য সবরকারী।
﴿وَلَقَدْ كُنتُمْ تَمَنَّوْنَ
الْمَوْتَ مِن قَبْلِ أَن تَلْقَوْهُ فَقَدْ رَأَيْتُمُوهُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ﴾
১৪৩। তোমরা তো
মৃত্যুর আকাংখা করছিলে! কিন্তু এটা ছিল তখনকার কথা যখন মৃত্যু সামনে আসেনি। তবে এখন
তা তোমাদের সামনে এসে গেছে এবং তোমরা স্বচক্ষে তা দেখছো।১০২
﴿وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ
أَعْقَابِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا
ۗ وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ﴾
১৪৪। মুহাম্মাদ
একজন রাসূল বৈ তো আর কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রাসূলও চলে
গেছে। যদি সে মারা যায় বা নিহত হয়, তাহলে কি পেছনের দিকে ফিরে
যাবে?১০৩ মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে
আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে
তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।
﴿وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن
تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا ۗ وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا
نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الْآخِرَةِ نُؤْتِهِ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِي
الشَّاكِرِينَ﴾
১৪৫। কোন
প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর
সময় তো লেখা আছে।১০৪ যে ব্যক্তি দুনিয়াবী পুরস্কার লাভের আশায়
কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো। আর যে
ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার১০৫ লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার
পাবে এবং শোকরকারীদেরকে১০৬ আমি অবশ্যি প্রতিদান দেবো।
﴿وَكَأَيِّن مِّن نَّبِيٍّ
قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ
اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ﴾
১৪৬। এর আগে
এমন অনেক নবী চলে গেছে যাদের সাথে মিলে বহু আল্লাহ ওয়ালা লড়াই করেছে। আল্লাহর
পথে তাদের ওপর যেসব বিপদ এসেছে তাতে তারা মনমরা ও হতাশ হয়নি, তারা দুর্বলতা দেখায়নি এবং
তারা বাতিলের সামনে মাথা নত করে দেয়নি।১০৭ এ ধরনের সবরকারীদেরকে আল্লাহ
ভালবাসেন।
﴿وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّا
أَن قَالُوا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ
أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ﴾
১৪৭। তাদের
দোয়া কেবল এতটুকুই ছিলঃ হে আমাদের রব! আমাদের ভুল–ক্রুটিগুলো ক্ষমা করে দাও। আমাদের
কাজের ব্যাপারে যেখানে তোমরা সীমালংঘিত হয়েছে, তা তুমি মাফ করে দাও। আমাদের পা
মজবুত করে দাও এবং কাফেরদের মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করো।
﴿فَآتَاهُمُ اللَّهُ ثَوَابَ
الدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ الْآخِرَةِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ﴾
১৪৮। শেষ
পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার পুরস্কারও দিয়েছেন এবং তার চেয়ে ভালো আখেরাতের
পুরস্কারও দান করেছেন। এ ধরনের সৎকর্মশীলদেরকে
আল্লাহ পছন্দ করেন।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
إِن تُطِيعُوا الَّذِينَ كَفَرُوا يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ فَتَنقَلِبُوا
خَاسِرِينَ﴾
১৪৯। হে
ঈমানদারগণ! যদি তোমরা তাদের ইশারায় চলো, যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে, তাহলে তারা তোমাদের উল্টোদিকে
ফিরিয়ে নিয়ে যাবে১০৮ এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
﴿بَلِ اللَّهُ مَوْلَاكُمْ
ۖ وَهُوَ خَيْرُ النَّاصِرِينَ﴾
১৫০। (তাদের
কথা ভুল) প্রকৃত সত্য এই যে, আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী
এবং তিনি সবচেয়ে ভালো সাহায্যকারী।
﴿سَنُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ
كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَا أَشْرَكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا
ۖ وَمَأْوَاهُمُ النَّارُ ۚ وَبِئْسَ مَثْوَى الظَّالِمِينَ﴾
১৫১। শীঘ্রই
সেই সময় এসে যাবে যখন আমি সত্য অস্বীকারকারীদের মনের মধ্যে বিভীষিকা সৃষ্টি করে
দেবো। কারণ তারা আল্লাহর সাথে তাঁর খেদায়ী
কর্তৃত্বে অংশীদার করে, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণপত্র অবর্তীণ করেননি। তাদের শেষ
আবাস জাহান্নাম এবং ঐ জালেমদের ভাগ্যে জুটবে অত্যন্ত খারাপ আবাসস্থল।
﴿وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّهُ
وَعْدَهُ إِذْ تَحُسُّونَهُم بِإِذْنِهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ
فِي الْأَمْرِ وَعَصَيْتُم مِّن بَعْدِ مَا أَرَاكُم مَّا تُحِبُّونَ ۚ مِنكُم مَّن
يُرِيدُ الدُّنْيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ الْآخِرَةَ ۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ
لِيَبْتَلِيَكُمْ ۖ وَلَقَدْ عَفَا عَنكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ﴾
১৫২। আল্লাহ
তোমাদের কাছে (সাহায্য ও সমর্থনদানের) যে ওয়াদা করেছিলেন, তা পূর্ণ করেছেন। শুরুতে
তাঁর হুকুমে তোমরাই তাদেরকে হত্যা করেছিলে। কিন্তু
যখন তোমরা দুর্বলতা দেখালে এবং নিজেদের কাজে পারস্পারিক মতবিরোধে লিপ্ত হলে আর
যখনই আল্লাহ তোমাদের সেই জিনিস দেখালেন যার ভালোবাসায় তোমরা বাঁধা ছিলে (অর্থাৎ
গনীমাতের মাল), তোমরা
নিজেদের নেতার হুকুম অমান্য করে বসলে, কারণ তোমাদের কিছু লোক ছিল দুনিয়ার
প্রত্যাশী আর কিছু লোকের কাম্য ছিল আখেরাত, তখনই আল্লাহ কাফরদের
মোকাবিলায় তোমাদেরকে পিছিয়ে দিলেন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। তবে যথার্থই
আল্লাহ এরপরও তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন।১০৯ কারণ মুমিনদের প্রতি আল্লাহ
বড়ই অনুগ্রহের দৃষ্টি রাখেন।
﴿إِذْ تُصْعِدُونَ وَلَا تَلْوُونَ
عَلَىٰ أَحَدٍ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ فِي أُخْرَاكُمْ فَأَثَابَكُمْ غَمًّا بِغَمٍّ
لِّكَيْلَا تَحْزَنُوا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا مَا أَصَابَكُمْ ۗ وَاللَّهُ خَبِيرٌ
بِمَا تَعْمَلُونَ﴾
১৫৩। স্মরণ করো, যখন তোমরা পালাবার কাজে এমনই
ব্যস্ত ছিলে যে, কারোর দিকে
ফিরে তাকাবার হুঁশও কারো ছিল না এবং রাসূল তোমাদের পেছনে তোমাদের ডাকছিল।১১০ সে সময় তোমাদের এহেন আচরণের
প্রতিফল স্বরুপ আল্লাহ তোমাদের দিলেন দুঃখের পর দুঃখ।১১১ এভাবে তোমরা ভবিষ্যতে এই
শিক্ষা পাবে যে, যা কিছু
তোমাদের হাত থেকে বের হয়ে যায় অথবা যে বিপদই তোমাদের ওপর নাযিল হয়, সে ব্যাপারে দুঃখিত হবে না। আল্লাহ
তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপ সম্পর্কে জানেন।
﴿ثُمَّ أَنزَلَ عَلَيْكُم
مِّن بَعْدِ الْغَمِّ أَمَنَةً نُّعَاسًا يَغْشَىٰ طَائِفَةً مِّنكُمْ ۖ وَطَائِفَةٌ
قَدْ أَهَمَّتْهُمْ أَنفُسُهُمْ يَظُنُّونَ بِاللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ
ۖ يَقُولُونَ هَل لَّنَا مِنَ الْأَمْرِ مِن شَيْءٍ ۗ قُلْ إِنَّ الْأَمْرَ كُلَّهُ
لِلَّهِ ۗ يُخْفُونَ فِي أَنفُسِهِم مَّا لَا يُبْدُونَ لَكَ ۖ يَقُولُونَ لَوْ كَانَ
لَنَا مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ مَّا قُتِلْنَا هَاهُنَا ۗ قُل لَّوْ كُنتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ
لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ إِلَىٰ مَضَاجِعِهِمْ ۖ وَلِيَبْتَلِيَ
اللَّهُ مَا فِي صُدُورِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِي قُلُوبِكُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ
بِذَاتِ الصُّدُورِ﴾
১৫৪। এ দুঃখের
পর আল্লাহ তোমাদের কিছু লোককে আবার এমন প্রশান্তি দান করলেন যে, তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো।১১২ কিন্তু আর একটি দল, নিজের স্বার্থই ছিল যার কাছে
বেশী গুরুত্বপূর্ণ, আল্লাহ
সম্পর্কে নানান ধরনের জাহেলী ধারণা পোষণ করতে থাকলো, যা ছিল একেবারেই সত্য বিরোধী। তারা এখন
বলেছে, এই কাজ
পরিচালনার ব্যাপারে আমাদেরও কি কোন অংশ আছে? তাদেরকে বলে দাও, “(কারো কোন অংশ নেই,) এ কাজেই সমস্ত ইখতিয়ার রয়েছে
এক মাত্র আল্লাহর হাতে”। আসলে এরা নিজেদের মনের মধ্যে
যে কথা লুকিয়ে রেখেছে তা তোমাদের সামনে প্রকাশ করে না। এদের আসল
বক্তব্য হচ্ছে, যদি
(নেতৃত্ব) ক্ষমতায় আমাদের কোন অংশ থাকতো, তাহলে আমরা মারা পড়তাম না। ওদেরকে
বলে দাও, যদি তোমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করতে তাহলেও যাদের মৃত্যু
লেখা হয়ে গিয়েছিল, তারা
নিজেরাই নিজেদের বধ্যভূমির দিকে এগিয়ে আসতো। আর এই যে
বিষয়টি সংঘটিত হলো, এটি এ জন্য
ছিল যে, তোমাদের
বুকের মধ্যে যা কিছু গোপন রয়েছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করে নেবেন এবং তোমাদের মনের
মধ্যে যে গলদ রয়েছে তা দূর করে দেবেন। আল্লাহ
মনের অবস্থা খুব ভালো করেই জানেন।
﴿إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا
مِنكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ
مَا كَسَبُوا ۖ وَلَقَدْ عَفَا اللَّهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ﴾
১৫৫। তোমাদের
মধ্য থেকে যারা মোকাবিলার দিন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল তাদের এ পদস্খলনের কারণ এই
ছিল যে, তাদের কোন
কোন দুর্বলতার কারণ শয়তান তাদের পা টলিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহ
তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও
সহনশীল।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ كَفَرُوا وَقَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ إِذَا ضَرَبُوا فِي
الْأَرْضِ أَوْ كَانُوا غُزًّى لَّوْ كَانُوا عِندَنَا مَا مَاتُوا وَمَا قُتِلُوا
لِيَجْعَلَ اللَّهُ ذَٰلِكَ حَسْرَةً فِي قُلُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ يُحْيِي وَيُمِيتُ
ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ﴾
১৫৬। হে
ঈমানদারগণ! কাফেরদের মতো কথা বলো না। তাদের
আত্মীয়স্বজনরা কখনো সফরে গেলে অথবা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে (এবং সেখানে কোন
দুর্ঘটনায় পতিত হলে) তারা বলে, যদি তারা আমাদের কাছে থাকতো তাহলে মারা
যেতো না এবং নিহত হতো না। এ ধরনের কথাকে আল্লাহ তাদের
মানসিক খেদ ও আক্ষেপের কারণে পরিণত করেন।১১৩ নয়তো জীবন–মৃত্যু তো একমাত্র
আল্লাহই দান করে থাকেন এবং তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপের ওপর তিনি দৃষ্টি রাখেন।
﴿وَلَئِن قُتِلْتُمْ فِي سَبِيلِ
اللَّهِ أَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ﴾
১৫৭। যদি তোমরা
আল্লাহর পথে নিহত হও বা মারা যাও তা হলে তোমরা আল্লাহর যে রহমত ও ক্ষমা লাভ করবে, তা এরা যা কিছু জমা করে তার
চাইতে ভালো।
﴿وَلَئِن مُّتُّمْ أَوْ قُتِلْتُمْ
لَإِلَى اللَّهِ تُحْشَرُونَ﴾
১৫৮। আর তোমরা
মারা যাও বা নিহত হও, সব অবস্থায় তোমাদের অবশ্যি আল্লাহর দিকেই যেতে হবে।
﴿فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ
لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ
فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ﴾
১৫৯। (হে নবী!)
এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল। নয়তো যদি
তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে
যেতো। তাদের ক্রটি ক্ষমা করে দাও। তাদের
জন্য মাগফিরাতে দোয়া করো এবং দীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তরভুক্ত
করো। তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমরা স্থির
সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো। আল্লাহ
তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে।
﴿إِن يَنصُرْكُمُ اللَّهُ
فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا الَّذِي يَنصُرُكُم مِّن بَعْدِهِ
ۗ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
১৬০। আল্লাহ
যদি তোমাদের সাহায্য করেন তাহলে কোন শক্তি তোমাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে
পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের পরিত্যাগ করেন, তাহলে এরপর কে আছেন তোমাদের
সাহায্য করার মতো? কাজেই সাচ্চা মুমিনদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত।
﴿وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن
يَغُلَّ ۚ وَمَن يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ ثُمَّ تُوَفَّىٰ
كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ﴾
১৬১। খেয়ানত
করা কোন নবীর কাজ হতে পারে না।১১৪ যে ব্যক্তি খেয়ানত করবে
কিয়ামতের দিন সে নিজের খেয়ানত করা জিনিস সহকারে হাজির হয়ে যাবে। তারপর
প্রত্যেকেই তার উপার্জনের পুরোপুরি প্রতিদান পেয়ে যাবে এবং কারো প্রতি কোন জুলুম
করা হবে না।
﴿أَفَمَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَ
اللَّهِ كَمَن بَاءَ بِسَخَطٍ مِّنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ ۚ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ﴾
১৬২। যে
ব্যক্তি সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী চলে সে কেমন করে এমন ব্যক্তির মতো কাজ
করতে পারে, যাকে আল্লাহর গযব ঘিরে ফেলেছে এবং যার শেষ আবাস জাহান্নাম, যা সবচেয়ে খারাপ আবাস?
﴿هُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ اللَّهِ
ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ﴾
১৬৩। আল্লাহর
কাছে এ উভয় ধরনের লোকদে মধ্যে বহু পর্যায়ের পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহ
সবার কার্যকলাপের ওপর নজর রাখেন।
﴿لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى
الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ
آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن
قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
১৬৪। আসলে
ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ
করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও
সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর
আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।
﴿أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُم
مُّصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُم مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّىٰ هَٰذَا ۖ قُلْ هُوَ مِنْ
عِندِ أَنفُسِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
১৬৫। তোমাদের
ওপর যখন বিপদ এসে পড়লো তোমরা বলতে লাগলে, এ আবার কোথায় থেকে এলো?১১৫ তোমাদের এ অবস্থা কেন? অথচ (বদরের যুদ্ধে) এর
দ্বিগুণ বিপদ তোমাদের মাধ্যমে তোমাদের বিরোধী পক্ষের ওপর পড়েছিল।১১৬ হে নবী! ওদের বলে দাও, তোমরা নিজেরাই এ বিপদ এনেছো।১১৭ আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের ওপর
শক্তিমান।১১৮
﴿وَمَا أَصَابَكُمْ يَوْمَ
الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيَعْلَمَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১৬৬। যুদ্ধের
দিন তোমাদের যে ক্ষতি হয় তা ছিল আল্লাহর হুকুমে এবং তা এ জন্য ছিল যাতে আল্লাহ
দেখে নেন তোমাদের মধ্যে কে মুমিন
﴿وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ نَافَقُوا
ۚ وَقِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوِ ادْفَعُوا ۖ قَالُوا
لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْ ۗ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ
مِنْهُمْ لِلْإِيمَانِ ۚ يَقُولُونَ بِأَفْوَاهِهِم مَّا لَيْسَ فِي قُلُوبِهِمْ ۗ
وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُونَ﴾
১৬৭। এবং কে
মুনাফিক। এ মুনাফিকদের যখন বলা হলো, এসো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো
অথবা (কমপক্ষে) নিজের শহরের প্রতিক্ষা করো, তারা বলতে লাগলোঃ যদি আমরা
জানতাম আজ যুদ্ধ হবে, তাহলে আমরা অবশ্যি তোমাদের সাথে চলতাম।১১৯ যখন তারা একথা বলছির তখন তারা
ঈমানের তুলনায় কুফরীর অনেক বেশী কাছে অবস্থান করছিল। তারা
নিজেদের মুখে এমন সব কথা বলে, যা তাদের মনের মধ্যে নেই এবং যা কিছু তারা
মনের মধ্যে গোপন করে আল্লাহ তা খুব ভালো করেই জানেন।
﴿الَّذِينَ قَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ
وَقَعَدُوا لَوْ أَطَاعُونَا مَا قُتِلُوا ۗ قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنفُسِكُمُ الْمَوْتَ
إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾
১৬৮। এরা
নিজেরা বসে থাকলো এবং এদের ভাই–বন্ধু যারা লড়াই করতে গিয়ে মারা গিয়েছিল, তাদের সম্পর্কে বলেছিলঃ যদি
তারা আমাদের কথা মেনে নিতো, তাহলে মারা যেতো না। ওদের বলে
দাও, তোমরা
নিজেদের একথায় যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের নিজেদের মৃত্যু যখন আসবে
তখন তা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে দেখাও।
﴿وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ
قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ﴾
১৬৯। যারা
আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না। তারা আসলে
জীবিত।১২০ নিজেদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা লাভ
করছে।
﴿فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ
اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِم مِّنْ خَلْفِهِمْ
أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾
১৭০। আল্লাহ
নিজের অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তাতেই তারা আনন্দিত ও পরিতৃপ্ত ১২১ এবং যেসব ঈমানদার লোক তাদের
পরে এ দুনিয়ায় রয়ে গেছে এবং এখনো সেখানে পৌঁছেনি, তাদের জন্যও কোন ভয় ও দুঃখের
কারণ নেই, একথা জেনে
তারা নিশ্চিন্ত হতে পেরেছে।
﴿يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ
مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১৭১। তারা
আল্লাহর পুরস্কার ও অনুগ্রহ লাভে আনন্দিত ও উল্লসিত এবং তারা জানতে পেরেছে যে, আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান
নষ্ট করেন না।
﴿الَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِلَّهِ
وَالرَّسُولِ مِن بَعْدِ مَا أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ ۚ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ
وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ﴾
১৭২। আহত হবার
পরও যারা আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে১২২ যারা সৎ-নেককার ও মুত্তাকী
তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান। আর
যাদেরকে১২৩
﴿الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ
إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ﴾
১৭৩। লোকেরা
বললোঃ তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটেছে। তাদেরকে
ভয় করো, তা শুনে
তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছেঃ আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং
তিনি সবচেয়ে ভালো কার্য উদ্ধারকারী।
﴿فَانقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ
مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءٌ وَاتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللَّهِ ۗ
وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٍ﴾
১৭৪। অবশেষে
তারা ফিরে এলো আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ সহকারে। তাদের কোন
রকম ক্ষতি হয়নি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর চলার সৌভাগ্যও তারা লাভ করলো। আল্লাহ
বড়ই অনুগ্রহকারী।
﴿إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ
يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১৭৫। এখন তোমরা
জেনে ফেলেছো, সে আসলে
শয়তান ছিল, তার
বন্ধুদের অনর্থক ভয় দেখাচ্ছিলে। কাজেই আগামীতে তোমরা মানুষকে
ভয় করো না, আমাকে ভয়
করো, যদি তোমরা
যথার্থ ঈমানদার হয়ে থাকো।১২৪
﴿وَلَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ
يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ ۚ إِنَّهُمْ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا ۗ يُرِيدُ اللَّهُ
أَلَّا يَجْعَلَ لَهُمْ حَظًّا فِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴾
১৭৬। (হে নবী!)
যারা আজ কুফরীর পথে খুব বেশী দৌড়াদৌড়ি করছে তাদের তৎপরতা যেন তোমাকে মলিন বদন না
করে। এরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ
আখেরাতে এদের কোন অংশ দিতে চান না। আর সবশেষে
তারা কঠোর শাস্তি পাবে।
﴿إِنَّ الَّذِينَ اشْتَرَوُا
الْكُفْرَ بِالْإِيمَانِ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
১৭৭। যারা
ঈমানকে ছেড়ে দিয়ে কুফরী কিনে নিয়েছে তারা নিসন্দেহে আল্লাহর কোন ক্ষতি করছে না। তাদের
জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে।
﴿وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ
كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِّأَنفُسِهِمْ ۚ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ
لِيَزْدَادُوا إِثْمًا ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ﴾
১৭৮। কাফেরদের
আমি যে ঢিল দিয়ে চলছি এটাকে যেন তারা নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে। আমি
তাদেরকে এ জন্য ঢিল দিচ্ছি, যাতে তারা গোনাহের বোঝা ভারী করে নেয়, তারপর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন
অপমানকর শাস্তি।
﴿مَّا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ
الْمُؤْمِنِينَ عَلَىٰ مَا أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىٰ يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ
ۗ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي
مِن رُّسُلِهِ مَن يَشَاءُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا
فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ﴾
১৭৯। তোমরা
বর্তমানে যে অবস্থায় আছো আল্লাহ মুমিনদের কখনো সেই অবস্থায় থাকতে দেবেন না।১২৫ পাক–পবিত্র লোকেদেরকে তিনি নাপাক
ও অপবিত্র লোকদের থেকে আলাদা করেই ছাড়বেন। কিন্তু
তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়।১২৬ গায়েবের খবর জানাবার জন্য
তিনি নিজের রাসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বাছাই করে নেন। কাজেই
(গায়েবের ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান রাখো। যদি তোমরা
ঈমান ও আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করো তাহলে বিরাট প্রতিদান পাবে।
﴿وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ
يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُم ۖ بَلْ هُوَ
شَرٌّ لَّهُمْ ۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَلِلَّهِ
مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ﴾
১৮০। আল্লাহ
যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তারপরও তারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এই কৃপণতাকে নিজেদের
জন্য ভালো মনে না করে। না, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ। কৃপণতা
করে তারা যাকিছু জমাচ্ছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে। পৃথিবী ও
আকাশের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই।১২৭ আর তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা সবই জানেন।
﴿لَّقَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ
الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ فَقِيرٌ وَنَحْنُ أَغْنِيَاءُ ۘ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوا
وَقَتْلَهُمُ الْأَنبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَنَقُولُ ذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ﴾
১৮১। আল্লাহ
তাদের কথা শুনেছেন যারা বলে, আল্লাহ গরীব এবং আমরা ধনী।১২৮ এদের কথাও আমি লিখে নেবো এবং
এর আগে যে পয়গাম্বরদেরকে এরা অন্যায়ভাবে হত্যা করে এসেছে তাও এদের আমলনামায় বসিয়ে
দেয়া হয়েছে। (যখন ফায়সালার সময় আসবে তখন) আমি তাদেরকে
বলবোঃ এই নাও, এবার জাহান্নামের আযাবের মজা চাখো!
﴿ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ
أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ﴾
১৮২। এটা
তোমাদের হাতের উপার্জন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য
জালেম নন।
﴿الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ
اللَّهَ عَهِدَ إِلَيْنَا أَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُولٍ حَتَّىٰ يَأْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ
تَأْكُلُهُ النَّارُ ۗ قُلْ قَدْ جَاءَكُمْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِي بِالْبَيِّنَاتِ وَبِالَّذِي
قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوهُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾
১৮৩। যারা বলেঃ
আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা কাউকে রাসূল বলে স্বীকার করবো না
যতক্ষণ না তিনি আমাদের সামনে এমন কুরবানী করবেন যাকে আগুন (অদৃশ্য থেকে এসে) খেয়ে
ফেলবে। তাদেরকে বলোঃ আমার আগে তোমাদের কাছে অনেক
রাসূল এসেছেন, তারা অনেক
উজ্জ্বল নিদর্শন এনেছিলেন এবং তোমরা যে নিদর্শনটির কথা বলছো সেটিও তারা এনেছিলেন। এ ক্ষেত্রে
(ঈমান আনার জন্য এ শর্ত পেশ করার ব্যাপারে) যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে ঐ রাসূলদেরকে তোমরা
হত্যা করেছিলে কেন?১২৯
﴿فَإِن كَذَّبُوكَ فَقَدْ
كُذِّبَ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ جَاءُوا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيرِ﴾
১৮৪। এখন, হে মুহাম্মাদ! যদি এরা
তোমাদের মিথ্যা বলে থাকে, তাহলে তোমরা পূর্বে বহু রাসূলকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তারা
স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, সহীফা ও
আলোদানকারী কিতাব এনেছিলে।
﴿كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ
ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ
وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ
الْغُرُورِ﴾
১৮৫। অবশেষে
প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান
লাভ করবে। একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন
থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর এ
দুনিয়াটা তো নিছক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়।১৩০
﴿لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ
وَأَنفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَمِنَ
الَّذِينَ أَشْرَكُوا أَذًى كَثِيرًا ۚ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ ذَٰلِكَ
مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ﴾
১৮৬। (হে
মুসলমানগণ!) তোমাদের অবশ্যি ধন ও প্রাণের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে এবং তোমরা
আহলি কিতাব ও মুশরিকদের থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। যদি এমন
অবস্থায় তোমরা সবর ও তাকওয়ার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো১৩১ তাহলে তা হবে বিরাট সাহসিকতার
পরিচায়ক।
﴿وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ
الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ
وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ﴾
১৮৭। এ আহলি
কিতাবদের সেই অংগীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দাও, যা আল্লাহ তাদের থেকে
নিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিলঃ তোমরা কিতাবের শিক্ষা
মানুষের মধ্যে প্রচার করবে, তা গোপন করতো পারবে না।১৩২ কিন্তু তারা কিতাবকে পিছনে
ফেলে রেখেছে এবং সামান্য দামে তা বিক্রি করে দিয়েছে। কতই না
নিকৃষ্ট কারবার তারা করে যাচ্ছে!
﴿لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ
يَفْرَحُونَ بِمَا أَتَوا وَّيُحِبُّونَ أَن يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا فَلَا
تَحْسَبَنَّهُم بِمَفَازَةٍ مِّنَ الْعَذَابِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
১৮৮। যারা
নিজেদের কার্যকলাপে আনন্দিত এবং যে কাজ যথার্থই তারা নিজেরা করেনি সে জন্য প্রশংশা
পেতে চায়, তাদেরকে
তোমরা আযাব থেকে সংরক্ষিত মনে করো না।১৩৩ আসলে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি তৈরী রয়েছে।
﴿وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
১৮৯। আল্লাহ
পৃথিবী ও আকাশের মালিক এবং তাঁর শক্তি সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে।
﴿إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ﴾
১৯০। পৃথিবী১৩৪ ও আকাশের সৃষ্টি এবং রাত ও
দিনের পালাক্রমে যাওয়া আসার মধ্যে
﴿الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ
قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾
১৯১। যে সমস্ত
বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও
শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা-
ভাবনা করে, তাদের জন্য
রয়েছে বহুতর নিদর্শন।১৩৫ (তারা আপনা আপনি ওঠেঃ) হে
আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীনভাবে সৃষ্টি করোনি। বাজে ও
নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত।
﴿رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ
النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ﴾
১৯২। কাজেই হে
প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।১৩৬ তুমি যাকে জাহান্নামে ফেলে
দিয়েছো, তাকে আসলে
বড়ই লাঞ্ছনা ও অপমানের মধ্যে ঠেলে দিয়েছো এবং এহেন জালেমদের কোন সাহায্যকারী হবে
না।
﴿رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا
مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا ۚ رَبَّنَا فَاغْفِرْ
لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ﴾
১৯৩। হে আমাদের
মালিক! আমরা একজন আহবানকারীর আহবান শুনেছিলাম। তিনি
ঈমানের দিকে আহবান করছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা নিজেদের রবকে মেনে নাও। আমরা তার
আহবান গ্রহণ করেছি।১৩৭ কাজেই, হে আমাদের প্রভু! আমরা যেসব
গোনাহ করছি তা মাফ করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি
আছে সেগুলো আমাদের থেকে দূর করে দাও এবং নেক লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান
করো।
﴿رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدتَّنَا
عَلَىٰ رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ﴾
১৯৪। হে আমাদের
রব! তোমরা রাসূলদের মাধ্যেমে তুমি যেসব ওয়াদা করেছো আমাদের সাথে, সেগুলো পূর্ণ করো এবং
কিয়ামতের দিন আমাদের লাঞ্ছনার গর্তে ফেলে দিয়ো না। নিসন্দেহে
তুমি ওয়াদা খেলাপকারী নও।১৩৮
﴿فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ
أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ ۖ بَعْضُكُم مِّن
بَعْضٍ ۖ فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي
وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ
جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ
عِندَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ﴾
১৯৫। জবাবে
তাদের রব বললেনঃ আমি তোমাদের কারো কর্মকাণ্ড নষ্ট করবো না। পুরুষ হও
বা নারী, তোমরা সবাই
একই জাতির অন্তরভুক্ত।১৩৯ কাজেই যারা আমার জন্য নিজেদের
স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করেছে এবং আমার পথে যাদেরকে নিজেদের ঘর বাড়ি থেকে বের করে দেয়া
ও কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং যারা আমার জন্য লড়েছে ও মারা গেছে, তাদের সমস্ত গোনাহ আমি মাফ
করে দেবো এবং তাদেরকে এমন সব বাগানে প্রবেশ করাবো যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে চলবে। এসব হচ্ছে
আল্লাহর কাছে তাদের প্রতিদান এবং সবচেয়ে ভালো প্রতিদান আল্লাহর কাছেই আছে।১৪০
﴿لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ
الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلَادِ﴾
১৯৬। হে নবী!
দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে আল্লাহর নাফরমান লোকদের চলাফেরা যেন তোমাকে ধোঁকায় ফেলে না
দেয়।
﴿مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ
جَهَنَّمُ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ﴾
১৯৭। এটা নিছক
কয়েক দিনের জীবনের সামান্য আনন্দ ফূর্তি মাত্র। তারপর এরা
সবাই জাহান্নামে চলে যাবে, যা সবচেয়ে খারাপ স্থান।
﴿لَٰكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا
رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا نُزُلًا
مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۗ وَمَا عِندَ اللَّهِ خَيْرٌ لِّلْأَبْرَارِ﴾
১৯৮। বিপরীত
পক্ষে যারা নিজেদের রবকে ভয় করে জীবন যাপন করে তাদের জন্য এমন সব বাগান রয়েছে, যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে
চলছে। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। এ হচ্ছে
আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য মেহমানদারীর সরঞ্জাম। আর যা
কিছু আল্লাহর কাছে আছে, নেক লোকদের জন্য তাই ভালো।
﴿وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ
لَمَن يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِينَ
لِلَّهِ لَا يَشْتَرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۗ أُولَٰئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ
عِندَ رَبِّهِمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ﴾
১৯৯। আহলি
কিতাবদের মধ্যেও এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহকে মানে
তোমাদের কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তার ওপর ঈমান আনে এবং এর আগে তাদের নিজেদের
কাছে যে কিতাব পাঠানে হয়েছিল তার ওপরও ঈমান রাখে, যারা আল্লাহর সামনে বিনত
মস্তক এবং আল্লাহর আয়াতকে সামান্য দামে বিক্রি করে না। তাদের
প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে। আর তিনি
হিসেব চুকিয়ে দেবার ব্যাপারে দেরী করেন না।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
২০০। হে
ঈমানদানগণ! সবরের পথ অবলম্বন করো, বাতিলপন্থীদের মোকাবলায় দৃঢ়তা দেখাও,১৪১ হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং
আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে।
--- সমাপ্ত ---
কোন মন্তব্য নেই
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।