সূরা আল কাদর - ভূমিকা, অনুবাদ ও তাফসীর

Share:


০৯৭. সূরা আল কাদর

আয়াতঃ ০৫;  রুকুঃ ০১; মাক্কী

ভূমিকা

নামকরণঃ

প্রথম আয়াতের ‘আল কদর’ اَلْقَدْرٍ শব্দটিকে এর নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে

নাযিলের সময়-কালঃ

এর মক্কী বা মাদানী হবার ব্যাপারে দ্বিমত রয়ে গেছে আবু হাইয়ান বাহরুল মুহীত গ্রন্থে দাবী করেছেন, অধিকাংশ আলেমের মতে এটা মাদানী সূরা আলী ইবনে আহমাদুল ওয়াহেদী তাঁর তাফসীরে বলেছেন, এটি মদীনায় নাযিলকৃত প্রথম সূরা অন্যদিকে আল মাওয়ারদী বলেন, অধিকাংশ আলেমের মতে এটি মক্কী সূরা ইমাম সুয়ূতী ইতকান গ্রন্থে একথাই লিখেছেন ইবনে মারদুইয়া, ইবনে আব্বাস রা., ইবনে যুবাইর রা. ও হযরত আয়েশা রা. থেকে এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, সূরাটি মক্কায় নাযিল হয়েছিল সূরার বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলেও একথাই প্রতীয়মান হয় যে, এর মক্কায় নাযিল হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত সামনের আলোচনায় আমি একথা সুস্পষ্ট করে তুলে ধরবো

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ

লোকদেরকে কুরআন মজীদের মূল্য, মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করাই এই সূরাটির বিষয়বস্তু কুরআন মজীদের বিন্যাসের ক্ষেত্রে একে সূরা আল আলাকের পরে রাখাই একথা প্রকাশ করে যে সূরা আল আলাকের প্রাথমিক পাঁচটি আয়াতের মাধ্যমে যে পবিত্র কিতাবটির নাযিল শুরু হয়েছিল তা কেমন ভাগ্য নির্ণয়কারী রাতে নাযিল হয়, কেমন মহান মর্যাদা সম্পন্ন কিতাব এবং তার এই নাযিল হওয়ার অর্থ কি এই সূরায় সে কথাই লোকদেরকে জানানো হয়েছে

প্রথমেই আল্লাহ্‌ বলেছেন, আমি এটি নাযিল করেছি অর্থাৎ এটি মুহাম্মাদ সা. এর নিজের রচনা নয় বরং আমিই এটি নাযিল করেছি

এরপর বলেছেন, কদরের রাতে আমার পক্ষ থেকে এটি নাযিল হয়েছে কদরের রাতের দু’টি অর্থ দু’টি অর্থই এখানে প্রযোজ্য একঃ এটি এমন একটি রাত যে রাতে তকদীরের ফায়সালা করা হয় অথবা অন্য কথায় এটি সাধারণ রাতের মতো কোন মামুলি রাত নয় বরং ভাগ্যের ভাঙা গড়া চলে এই রাতে এই কিতাব নাযিল হওয়া নিছক একটি কিতাব নাযিল নয় বরং এটি শুধুমাত্র কুরাঈশ ও আরবের নয়, সারা দুনিয়ার ভাগ্য পাল্টে দেবে একথাটিই সূরা আদ দুখানেও বলা হয়েছে (দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আদ দুখানের ভূমিকা ও ৩ নম্বর টীকা) দুইঃ এটি বড়ই মর্যাদা, মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের রাত সামনের দিকে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এটি হাজার মাসের চাইতেও উত্তম এর সাহায্যে মক্কার কাফেরদেরকে পরোক্ষভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা নিজেদের অজ্ঞতার কারণে মুহাম্মাদ সা. এর পেশকৃত এই কিতাবকে নিজেদের জন্য একটি বিপদ মনে করেছো তোমাদের ওপর এ এক আপদ এসে পড়েছে বলে তোমরা তিরস্কার করছো অথচ যে রাতে এর নাযিল হবার ফায়সালা জারী করা হয় সেটি ছিল পরম কল্যাণ ও বরকতের রাত এই একটি রাতে মানুষের কল্যাণের জন্য এত বেশী কাজ করা হয়েছে যা মানুষের ইতিহাসে হাজার মাসেও করা হয়নি একথাটি সূরা আদ দুখানের তৃতীয় আয়াতে অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আদ দুখানের ভূমিকায় আমি এ বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছি

সবশেষে বলা হয়েছে, এই রাতে ফেরেশতারা এবং জিব্রাঈল আ. নিজেদের রবের অনুমতি নিয়ে সব রকমের আদেশ নির্দেশ সহকারে নাযিল হন (সূরা আদ দুখানের চতুর্থ আয়তে একে اَمْرٍ حَكِيْمٍ জ্ঞানময় বা সুষ্ঠু বিধান বলা হয়েছে, সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত এটি হয় পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার রাত অর্থাৎ কোনো প্রকার অনিষ্ট এ রাতে প্রভাব ফেলতে পারে না কারণ আল্লাহ্‌র সমস্ত ফায়সালার মূল লক্ষ্য হয় কল্যাণ মানুষের জন্য তার মধ্যে কোন অকল্যাণ থাকে না এমনকি তিনি কোন জাতিকে ধ্বংস করার ফায়সালা করলেও তা করেন মানুষের কল্যাণের জন্য, তার অকল্যাণের জন্য নয়

তরজমা ও তাফসীর

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾

পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে

﴿إِنَّآ أَنزَلْنَـٰهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْرِ﴾

আমি এ (কুরআন) নাযিল করেছি কদরের রাতে

১. মূল শব্দ হচ্ছে আন্‌যালনাহু (اَنْزَلْنَاهُ) “আমি একে নাযিল করেছি” কিন্তু আগে কুরআনের কোন উল্লেখ না করেই কুরআনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এর কারণ হচ্ছে, “নাযিল করা” শব্দের মধ্যেই কুরআনের অর্থ রয়ে গেছে যদি আগের বক্তব্য বা বর্ণনাভঙ্গি থেকে কোন সর্বনাম কোন বিশেষ্যের জায়গায় বসেছে তা প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে এমন অবস্থায় আগে বা পরে কোথাও সেই বিশেষ্যটির উল্লেখ না থাকলেও সর্বনামটি ব্যবহার করা যায় কুরআনে এর একাধিক দৃষ্টান্ত রয়ে গেছে (এ ব্যাপারে আরো বেশী জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন আন্ নাজম ৯ টীকা)

এখানে বলা হয়েছে আমি কদরের রাতে কুরআন নাযিল করেছি আবার সূরা আল বাকারায় বলা হয়েছেشَهْرُ رَمَضاَنَ الَّذِىْ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاَانُ  রমযান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে” (১৮৫ আয়াতে) এ থেকে জানা যায়, নবী সা. এর কাছে হেরা গুহায় যে রাতে আল্লাহ‌র ফেরেশতা, ওহী নিয়ে এসেছিলেন সেটি ছিল রমযান মাসের একটি রাত এই রাতকে এখানে কদরের রাত বলা হয়েছে সূরা আদ দুখানে একে মুবারক রাত বলা হয়েছে বলা হয়েছেঃ اِناَّ اَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ مُّباَرَكَةٍ “অবশ্যই আমি একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি” (সূরা দুখানঃ ৩)

এই রাতে কুরআন নাযিল করার দু’টি অর্থ হতে পারে একঃ এই রাতে সমগ্র কুরআন অহীর ধারক ফেরেশতাদেরকে দিয়ে দেয়া হয় তারপর অবস্থা ও ঘটনাবলী অনুযায়ী তেইশ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে জিব্রাঈল আ. আল্লাহ‌র হুকুমে তার আয়াত ও সূরাগুলো রাসূলুল্লাহ্ সা. এর ওপর নাযিল করতে থাকেন ইবনে আব্বাস রা. এ অর্থটি বর্ণনা করেছেন (ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে আবী হাতেম, হাকেম, ইবনে মারদুইয়া ও বায়হাকী) এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এই রাত থেকেই কুরআন নাযিলের সূচনা হয় এটি ইমাম শা’বীর উক্তি অবশ্যি ইবনে আব্বাসের রা. ওপরে বর্ণিত বক্তব্যের মতো তাঁর একটি উক্তিও উদ্ধৃত করা হয় (ইবনে জারীর) যা হোক, উভয় অবস্থায় কথা একই থাকে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সা. এর ওপর কুরআন নাযিলের সিলসিলা এই রাতেই শুরু হয় এবং এই রাতেই সূরা আল আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাযিল হয় তবুও এটি একটি অভ্রান্ত সত্য, রাসূলুল্লাহ্ সা. এর এবং তাঁর ইসলামী দাওয়াতের জন্য কোন ঘটনা বা ব্যাপারে সঠিক নির্দেশ লাভের প্রয়োজন দেখা দিলে তখনই আল্লাহ‌ কুরআনের সূরা ও আয়াত গুলো রচনা করতেন না বরং সমগ্র বিশ্ব-জাহান সৃষ্টির পূর্বে অনাদিকালে মহান আল্লাহ‌ পৃথিবীতে মানব জাতির সৃষ্টি, তাদের মধ্যে নবী প্রেরণ, নবীদের ওপর কিতাব নাযিল, সব নবীর পরে মুহাম্মাদ সা. কে পাঠানো এবং তাঁর প্রতি কুরআন নাযিল করার সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছিলেন কদরের রাতে কেবলমাত্র এই পরিকল্পনার শেষ অংশের বাস্তবায়ন শুরু হয় এই সময় যদি সমগ্র কুরআন অহী ধারক ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়ে থাকে তাহলে তা মোটেই বিস্ময়কর নয়

কোন কোন তাফসীরকার কদরকে তকদীর অর্থে গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ এই রাতে আল্লাহ‌ তকদীরের ফয়সালা জারী করার জন্য তা ফেরেশতাদের হাতে তুলে দেন সূরা আদ দুখানের নিম্নোক্ত আয়াতটি এই বক্তব্য সমর্থন করেঃ

فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ اَمْرٍ حَكِيْمٍ

এই রাতে সব ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ ফয়সালা প্রকাশ করা হয়ে থাকে” (আদ দুখানঃ ৪) অন্যদিকে ইমাম যুহরী বলেন, কদর অর্থ হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা অর্থাৎ এটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ রাত এই অর্থ সমর্থন করে এই সূরার নিম্নোক্ত আয়াতটি “কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কোন রাত ছিল? এ ব্যাপারে ব্যাপক মতবিরোধ দেখা যায় এ সম্পর্কে প্রায় ৪০ টি মতের সন্ধান পাওয়া যায় তবে আলেম সমাজের সংখ্যাগুরু অংশের মতে রমযানের শেষ দশ তারিখের কোন একটি বেজোড় রাত হচ্ছে এই কদরের রাত আবার তাদের মধ্যেও বেশীরভাগ লোকের মত হচ্ছে সেটি সাতাশ তারিখের রাত এ প্রসঙ্গে বর্ণিত নির্ভরযোগ্য হাদীসগুলো এখানে উল্লেখ করেছি

হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেনঃ সেটি সাতাশের বা উনত্রিশের রাত (আবু দাউদ) হযরত আবু হুরাইরার রা. অন্য একটি রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে সেটি রমযানের শেষ রাত (মুসনাদে আহমাদ)

যির ইবনে হুবাইশ হযরত উবাই ইবনে কা’বকে রা. কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তিনি হলফ করে কোন কিছুকে ব্যতিক্রম হিসেবে দাঁড় না করিয়ে বলেন, এটা সাতাশের রাত (আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে হিব্বান)

হযরত আবু যারকে রা. এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি বলেন, হযরত উমর রা., হযরত হুযাইফা রা. এবং রাসূলুল্লাহ্ সা. এর বহু সাহাবার মনে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না যে, এটি রমযানের সাতাশতম রাত (ইবনে আবী শাইবা)

হযরত উবাদাহ ইবনে সামেত রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন, রমযানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতগুলোর যেমন একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ বা শেষ রাতের মধ্যে রয়েছে কদরের রাত (মুসনাদে আহমাদ)

হযরত আবদুল্লাহ্‌ ইবনে আব্বাস রাহি. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন, তাকে খোঁজ রমযানের শেষ দশ রাতের মধ্যে যখন মাস শেষ হতে আর নয় দিন বাকি থাকে অথবা সাত দিন বা পাঁচ দিন বাকি থাকে (বুখারী) অধিকাংশ আলেম এর অর্থ করেছেন এভাবে যে, রাসূলুল্লাহ্ সা. এখানে বেজোড় রাতের কথা বলতে চেয়েছেন

হযরত আবু বকর রাহি. রেওয়ায়াত করেছেন, নয় দিন বাকি থাকতে বা সাত দিন বা পাঁচ দিন বা এক দিন বাকি থাকতে শেষ রাত তাঁর বক্তব্যের অর্থ ছিল, এই তারিখগুলোতে কদরের রাতকে তালাশ করো (তিরমিযী, নাসায়ী)

হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেনঃ কদরের রাতকে রমযানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, তিরমিযী) হযরত আয়েশা রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. এও বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সা. ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত রমযানের শেষ দশ রাতে ইতিকাফ করেছেন

এ প্রসঙ্গে হযরত মুআ’বীয়া রাহি., হযরত ইবনে উমর, হযরত ইবনে আব্বাস রা. এবং অন্যান্য সাহাবীগণ যে রেওয়ায়াত করেছেন তার ভিত্তিতে পূর্ববর্তী আলেমগণের বিরাট অংশ সাতাশ রমযানকেই কদরের রাত বলে মনে করেন সম্ভবত কদরের রাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য থেকে লাভবান হবার আগ্রহে যাতে লোকেরা অনেক বেশী রাত ইবাদাতে কাটাতে পারে এবং কোন একটি রাতকে যথেষ্ট মনে না করে সেজন্য আল্লাহ‌ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোন একটি রাত নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি এখানে প্রশ্ন দেখা দেয়, যখন মক্কা মুআ’যযমায় রাত হয় তখন দুনিয়ার একটি বিরাট অংশে থাকে দিন, এ অবস্থায় এসব এলাকার লোকেরা তো কোন দিন কদরের রাত লাভ করতে পারবে না এর জবাব হচ্ছে, আরবী ভাষায়, রাত শব্দটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে দিন ও রাতের সমষ্টিকে বলা হয় কাজেই রমযানের এই তারিখগুলোর মধ্য থেকে যে তারিখটিই দুনিয়ার কোন অংশে পাওয়া যাবে তার দিনের পূর্বেকার রাতটিই সেই এলাকার জন্য কদরের রাত হতে পারে

﴿وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ﴾

তুমি কি জানো, কদরের রাত কি?

﴿لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌۭ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍۢ﴾

কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও বেশী ভালো

২. মুফাসসিরগণ সাধারণভাবে এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎকাজ হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে ভালো কদরের রাত এ গণনার বাইরে থাকবে সন্দেহ নেই একথাটির মধ্যে যথার্থ সত্য রয়ে গেছে এবং রাসূলুল্লাহ্ সা. এই রাতের আমলের বিপুল ফযীলত বর্ণনা করেছেন কাজেই বুখারী ও মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেনঃ

مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ اِيْماَنً وَّاِحْتِسَاباً غُفِرَ لَهُوْ ماَ تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ 

যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সাথে এবং আল্লাহ‌র কাছ থেকে প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদাতের জন্য দাঁড়ালো তার পিছনের সমস্ত গোনাহ মাফ করা হয়েছে

মুসনাদে আহমাদে হযরত উবাদাহ ইবনে সামেত রা. বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেনঃ “কদরের রাত রয়েছে রমযানের শেষ দশ রাতের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রতিদান লাভের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এসব রাতে ইবাদাতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে আল্লাহ‌ তার আগের পিছনের সব গোনাহ্‌ মাফ করে দেবেন” কিন্তু আয়াতে উচ্চারিত শব্দগুলোয় একথা বলা হয়নি اَلْعَمَلُ فِىْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنَ الْعَمَلِ فِىْ اَلْفِ شَهْرٍ (কদরের রাতের আমল হাজার রাতের আমলের চেয়ে ভালো) বরং বলা হয়েছে, “কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে ভালো” আর মাস বলতে একেবারে গুণে গুণে তিরাশি বছর চার মাস নয় বরং আরববাসীদের কথার ধরনই এই রকম ছিল, কোন বিপুল সংখ্যার ধারণা দেবার জন্য তারা ‘হাজার’ শব্দটি ব্যবহার করতো তাই আয়াতের অর্থ হচ্ছে, এই একটি রাতে এত বড় নেকী ও কল্যাণের কাজ হয়েছে যা মানবতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে কোন দীর্ঘতম কালেও হয়নি

﴿تَنَزَّلُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍۢ﴾

ফেরেশতারা ও রূহ এই রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাযিল হয়

৩. রূহ বলতে জিব্রাঈল আ. কে বুঝানো হয়েছে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তাঁর উল্লেখ করা হয়েছে

৪. অর্থাৎ তারা নিজেদের তরফ থেকে আসে না বরং তাদের রবের অনুমতিক্রমে আসে আর প্রত্যেকটি হুকুম বলতে সূরা আদ দুখানের ৫ আয়াতে “আমরে হাকীম” (বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ) বলতে যা বুঝানো হয়েছে এখানে তার কথাই বলা হয়েছে

﴿سَلَـٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِ﴾

এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত

৫. অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু কল্যাণে পরিপূর্ণ সেখানে ফিতনা, দুস্কৃতি ও অনিষ্টকারিতার ছিটেফোঁটাও নেই

--- সমাপ্ত ---


কোন মন্তব্য নেই

মতামতের জন্য ধন্যবাদ।