সূরা আল মুতাফফিফীন - ভূমিকা, অনুবাদ ও তাফসীর

Share:

 


০৮৩. সূরা আল মুতাফফিফীন

আয়াতঃ ৩৬;  রুকুঃ ০১; মাক্কী

ভূমিকা

নামকরণঃ

প্রথম আয়াত وَيُلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ থেকে সূরার নামকরণ করা হয়েছে

নাযিলের সময়-কালঃ

এই সূরার বর্ণনাভঙ্গী ও বিষয়বস্তু থেকে পরিষ্কার জানা যায়, এটি মক্কা মুআ’যযামায় প্রথম দিকে নাযিল হয় সে সময় আখেরাত বিশ্বাসকে মক্কাবাসীদের মনে পাকা-পোক্তভাবে বসিয়ে দেবার জন্য একের পর এক সূরা নাযিল হচ্ছিল সূরাটি ঠিক তখনই নাযিল হয় যখন মক্কার লোকেরা পথে-ঘাটে-বাজারে-মজলিসে-মাহফিলে মুসলমানদেরকে টিটকারী দিচ্ছিল এবং তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করছিল তবে জুলুম, নিপীড়ন ও মারপিট করার যুগ তখনো শুরু হয়নি কোন কোন মুফাস্সির এই সূরাকে মদীনায় অবতীর্ণ বলেছেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর নিম্নোক্ত বর্ণনাটিই মূলত এ ভুল ধারণার পেছনে কাজ করছে তিনি বর্ণনা করেছেন, নবী সা. যখন মদীনায় এলেন তখন এখানকার লোকদের মধ্যে ওজনে ও মাপে কম দেবার রোগ ভীষণভাবে বিস্তার লাভ করেছিল তখন আল্লাহ নাযিল করেন وَيُلٌ لِّلْمُطَفِّفِيْنَ সূরাটি এরপর থেকে লোকেরা ভালোভাবে ওজন ও পরিমাপ করতে থাকে (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে মারদুইয়া, ইবনে জারীর, বাইহাকী ফী শুআ’বিল ঈমান) কিন্তু যেমন ইতিপূর্বে সূরা দাহারের ভূমিকায় আমি বলে এসেছি, সাহাবা ও তাবেঈগণ সাধারণত কোন একটি আয়াত যে ব্যাপারটির সাথে খাপ খেতো সে সম্পর্কে বলতেন, এ আয়াতটি এ ব্যাপারে নাযিল হয়েছে কাজেই ইবনে আব্বাস রা.- এর রেওয়ায়াত থেকে যা কিছু প্রমাণ হয় তা কেবল এতটুকু যে, নবী সা. হিজরতের পরে যখন মদীনার লোকদের মধ্যে এ বদঅভ্যাসটির ব্যাপক প্রসার দেখেন তখন আল্লাহর হুকুমে তাদের এ সূরাটি শুনান এবং এর ফলে তারা সংশোধিত হয়ে যায়

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ

এর বিষয়বস্তুও আখেরাত

ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে সাধারণ বেঈমানীটির ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল প্রথম ছ’টি আয়াতে সে জন্য তাদের পাকড়াও করা হয়েছে তারা অন্যের থেকে নেবার সময় ওজন ও মাপে পুরো করে নিতো কিন্তু যখন অন্যদেরকে দেবার সময় আসতো তখন ওজন ও মাপে প্রত্যেককে কিছু না কিছু কম দিতো সমাজের আরো অসংখ্য অসৎকাজের মধ্যে এটি এমন একটি অসৎকাজ ছিল যার অসৎ হবার ব্যাপারটি কেউ অস্বীকার করতে পারতো না এ ধরনের একটি অসৎকাজকে এখানে দৃষ্টান্ত স্বরূপ পেশ করে বলা হয়েছে এটি আখেরাত থেকে গাফেল হয়ে থাকার অপরিহার্য ফল যতদিন লোকদের মনে এ অনুভূতি জাগবে না যে, একদিন তাদের আল্লাহর সামনে পেশ হতে হবে এবং সেখানে এক এক পাইয়ের হিসেব দিতে হবে ততদিন তাদের নিজেদের কাজ-কারবার ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পূর্ণ সততা অবলম্বন সম্ভবই নয় সততা ও বিশ্বস্ততাকে “উত্তম নীতি” মনে করে কোন ব্যক্তি কিছু ছোট ছোট বিষয়ে সততার নীতি অবলম্বন করলেও করতে পারে কিন্তু যেখানে বেঈমানী একটি “লাভজনক নীতি” প্রমাণিত হয় সেখানে সে কখনই সততার পথে চলতে পারে না মানুষের মধ্যে একমাত্র আল্লাহর ভয়ে ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসের ফলেই সত্যিকার ও স্থায়ী সত্যতা বিশ্বস্ততা সৃষ্টি হতে পারে কারণ এ অবস্থায় সততা একটি ‘নীতি’ নয়, একটি ‘দায়িত্ব’ গণ্য হয় এবং দুনিয়ায় সততার নীতি লাভজনক হোক বা অলাভজনক তার ওপর মানুষের সততার পথ অবলম্বন করা বা না করা নির্ভর করে না

এভাবে নৈতিকতার সাথে আখেরাত বিশ্বাসের সম্পর্ককে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও মনোমুগ্ধকর পদ্ধতিতে বর্ণনা করার পর ৭ থেকে ১৭ পর্যন্ত আয়াতে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতিকারীদের কাজের বিবরণী প্রথমেই অপরাধজীবীদের রেজিষ্টার (Black list) লেখা হচ্ছে এবং আখেরাতে তাদের মারাত্মক ধ্বংসের সম্মুখীন হতে হবে তারপর ১৮ থেকে ২৮ পর্যন্ত আয়াতে সৎলোকদের উত্তম পরিণামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, তাদের আমলনামা উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের রেজিষ্টারে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতারা এ কাজে নিযুক্ত রয়েছেন

সবশেষে ঈমানদারদেরকে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে এবং এই সংগে কাফেরদেরকে এই মর্মে সতর্কও করে দেয়া হয়েছে যে, আজ যারা ঈমানদারদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করার কাজে ব্যাপৃত আছে কিয়ামতের দিন তারা অপরাধীর পর্যায়ে থাকবে এবং নিজেদের এ কাজের অত্যন্ত খারাপ পরিণাম দেখবে আর সেদিন এ ঈমানদাররা এ অপরাধীদের খারাপ ও ভয়াবহ পরিণাম দেখে নিজেদের চোখ শীতল করবে

তরজমা ও তাফসীর

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾

পরম করুণাময় মেহেরবানী আল্লাহর নামে

﴿وَيْلٌۭ لِّلْمُطَفِّفِينَ﴾

ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়

১. মূলে مُطَفِّفِيْنَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এ শব্দটি এসেছে تَطْفِيْفِ  থেকে আরবী ভাষার তাফীফ طَفِيْف  ছোট্ট, তুচ্ছ ও নগণ্য জিনিসকে বলা হয়ে থাকে পারিভাষিক অর্থে তাফীফ মানে হচ্ছে মাপে ও ওজনে চুরি করা কারণ এ কাজ করার সময় এক ব্যক্তি মাপ ও ওজনের মাধ্যমে কোন বড় পরিমাণ জিনিস চুরি করে না বরং হাত সাফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক ক্রেতার অংশ থেকে সামান্য সামান্য করে বাঁচিয়ে নেয় ফলে বিক্রেতা কি জিনিস কতটুকু চুরি করেছে ক্রেতা তা টেরও পায় না

﴿ٱلَّذِينَ إِذَا ٱكْتَالُوا۟ عَلَى ٱلنَّاسِ يَسْتَوْفُونَ﴾

তাদের অবস্থা এই যে, লোকদের থেকে নেবার সময় পুরোমাত্রায় নেয়

﴿وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ﴾

এবং তাদেরকে ওজন করে বা মেপে দেবার সময় কম করে দেয় 

২. কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে ওজনে ও মাপে কম করার কঠোর নিন্দা এবং সঠিকভাবে ওজন ও পরিমাণ করার জন্য কড়া তাগিদ করা হয়েছে সূরা আল আনআ’মে বলা হয়েছেঃ “ইনসাফ সহকারে পুরো ওজন ও পরিমাপ করো আমি কাউকে তার সামর্থ্যের চাইতে বেশীর জন্য দায়িত্বশীল করি না” (আয়াতঃ ১৫২) সূরা বনী ইসরাঈলে বলা হয়েছেঃ “মাপার সময় পুরো মাপবে এবং সঠিক পাল্লা দিয়ে ওজন করবে” (আয়াতঃ ৩৫) সূরা আর রাহমানে তাগিদ করা হয়েছেঃ “ওজনে বাড়াবাড়ি করো না, ঠিকভাবে ইনসাফের সাথে ওজন করো এবং পাল্লায় কম করে দিয়ো না (আয়াতঃ ৮-৯) শো’আইবের সম্প্রদায়ের ওপর এ অপরাধের কারণে আযাব নাযিল হয় যে, তাদের মধ্যে ওজনে ও মাপে কম দেবার রোগ সাধারণভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং হযরত শোআ’ইব আ. --এর বারবার নসীহত করা সত্ত্বেও এ সম্প্রদায়টি এ অপরাধমূলক কাজটি থেকে বিরত থাকেনি

﴿أَلَا يَظُنُّ أُو۟لَـٰٓئِكَ أَنَّهُم مَّبْعُوثُونَ﴾

এরা কি চিন্তা করে না, একটি মহাদিবসে 

৩. কিয়ামতের দিনটিকে মহাদিবস হিসেবে উপস্থাপিত করে বলা হয়েছেঃ সেদিন আল্লাহর আদালতে সকল জিন ও মানুষের কাজের হিসেব নেয়া হবে একই সঙ্গে এবং আযাব ও সওয়াব দানের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ফায়সালা করা হবে

﴿لِيَوْمٍ عَظِيمٍۢ﴾

এদেরকে উঠিয়ে আনা হবে?

﴿يَوْمَ يَقُومُ ٱلنَّاسُ لِرَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ﴾

যেদিন সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে

﴿كَلَّآ إِنَّ كِتَـٰبَ ٱلْفُجَّارِ لَفِى سِجِّينٍۢ﴾

কখ্খনো নয়, নিশ্চিতভাবেই পাপীদের আমলনামা কয়েদখানার দফতরে রয়েছে

৪. অর্থাৎ দুনিয়ায় এ ধরনের অপরাধ করার পর তারা এমনি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াবে এবং কখনো এদের আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করার জন্য হাযির হতে হবে না, তাদের এ ধারণা একেবারে ভুল

৫. আসলে সিজ্জীন سِجِّيْنُ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এ শব্দটি এসেছে সিজন سِجْن  থেকে সিজন মানে জেলখানা বা কয়েদখানা সামনের দিকে যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তা থেকে জানা যায়, এর অর্থ হচ্ছে এমন ধরনের রেজিষ্টার খাতা যাকে শাস্তিলাভ যোগ্য লোকদের আমলনামা লেখা হচ্ছে

﴿وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا سِجِّينٌۭ﴾

আর তুমি কি জানো সেই কয়েদখানার দফতরটা কি?

﴿كِتَـٰبٌۭ مَّرْقُومٌۭ﴾

একটি লিখিত কিতাব

﴿وَيْلٌۭ يَوْمَئِذٍۢ لِّلْمُكَذِّبِينَ﴾

১০ সেদিন মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য ধ্বংস সুনিশ্চিত,

﴿ٱلَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوْمِ ٱلدِّينِ﴾

১১ যারা কর্মফল দেবার দিনটিকে মিথ্যা বলেছে

﴿وَمَا يُكَذِّبُ بِهِۦٓ إِلَّا كُلُّ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ﴾

১২ আর সীমালংঘনকারী পাপী ছাড়া কেই একে মিথ্যা বলে না

﴿إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِ ءَايَـٰتُنَا قَالَ أَسَـٰطِيرُ ٱلْأَوَّلِينَ﴾

১৩ তাকে যখন আমার আয়াত শুনানো হয় সে বলে, এ তো আগের কালের গল্প

৬. অর্থাৎ যেসব আয়াতে বিচার দিনের খবর দেয়া হয়েছে সেই সব আয়াত

﴿كَلَّا ۖ بَلْ ۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ﴾

১৪ কখ্খনো নয়, বরং এদের খারাপ কাজের জং ধরেছে

৭. অর্থাৎ শাস্তি ও পুরস্কারকে গল্প বা উপকথা গণ্য করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই কিন্তু যে কারণে তারা একে গল্প বলছে তা হচ্ছে এই যে, এরা যেসব গোনাহ করতে থেকেছে এদের দিলে পুরোপুরি তার মরীচা ধরেছে ফলে পুরোপুরি যুক্তিসঙ্গত কথাও এদের কাছে গল্প বলে মনে হচ্ছে এই জং ও মরীচার ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ বান্দা যখন কোন গোনাহ করে, তার দিলে একটি কালো দাগ পড়ে যায় সে তওবা করলে দাগটি উঠে যায় কিন্তু যদি সে গোনাহ করে যেতেই থাকেই তাহলে সমগ্র দিলের ওপর তা ছেয়ে যায় (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে জারীর, হাকেম, ইবনে আবী হাতেম, ইবনে হিব্বান ইত্যাদি)

﴿كَلَّآ إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍۢ لَّمَحْجُوبُونَ﴾

১৫ কখ্খনো নয়, নিশ্চিতভাবেই সেদিন তাদের রবের দর্শন থেকে বঞ্চিত রাখা হবে

৮. অর্থাৎ একমাত্র নেক লোকেরাই আল্লাহর সাক্ষাতের সৌভাগ্য লাভ করবে এবং পাপীরা তার থেকে বঞ্চিত হবে (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল কিয়ামাহঃ ১৭ টীকা)

﴿ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُوا۟ ٱلْجَحِيمِ﴾

১৬ তারপর তারা গিয়ে পড়বে জাহান্নামের মধ্যে

﴿ثُمَّ يُقَالُ هَـٰذَا ٱلَّذِى كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ﴾

১৭ এরপর তাদেরকে বলা হবে, এটি সেই জিনিস যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে

﴿كَلَّآ إِنَّ كِتَـٰبَ ٱلْأَبْرَارِ لَفِى عِلِّيِّينَ﴾

১৮ কখ্খনো নয়, অবশ্যি নেক লোকদের আমলনামা উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের দফতরে রয়েছে

৯. অর্থাৎ মানুষের ভালো ও মন্দ কাজের কোন পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে না, তাদের এ ধারণা একেবারেই ভুল

﴿وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا عِلِّيُّونَ﴾

১৯ আর তোমরা কি জানো, এ উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের দফতরটি কি?

﴿كِتَـٰبٌۭ مَّرْقُومٌۭ﴾

২০ এটি একটি লিখিত কিতাব

﴿يَشْهَدُهُ ٱلْمُقَرَّبُونَ﴾

২১ নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতারা এর দেখাশুনা করে 

﴿إِنَّ ٱلْأَبْرَارَ لَفِى نَعِيمٍ﴾

২২ নিঃসন্দেহে নেক লোকেরা থাকবে বড়ই আনন্দে 

﴿عَلَى ٱلْأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ﴾

২৩ উঁচু আসনে বসে দেখতে থাকবে 

﴿تَعْرِفُ فِى وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ ٱلنَّعِيمِ﴾

২৪ তাদের চেহারায় তোমরা সচ্ছলতার দীপ্তি অনুভব করবে 

﴿يُسْقَوْنَ مِن رَّحِيقٍۢ مَّخْتُومٍ﴾

২৫ তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধতম শরাব পান করানো হবে

﴿خِتَـٰمُهُۥ مِسْكٌۭ ۚ وَفِى ذَٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ ٱلْمُتَنَـٰفِسُونَ﴾

২৬ তার ওপর মিশক-এর মোহর থাকবে১০ যারা অন্যদের ওপর প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চায় তারা যেন এই জিনিসটি হাসিল করার জন্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হবার চেষ্টা করে 

১০. মূলে “খিতামুহু মিস্ক” خِتَامُهُو مِسْكٌ বলা হয়েছে এর একটি অর্থ হচ্ছে, যেসব পাত্রে এই শরাব রাখা হবে তার ওপর মাটি বা মোমের পরিবর্তে মিশ্কের মোহর লাগানো থাকবে এ অর্থের দিক দিয়ে আয়াতের মানে হয়ঃ এটি হবে উন্নত পর্যায়ের পরিচ্ছন্ন শরাব ঝরণায় প্রবাহিত শরাবের থেকে এটি বেশী উন্নত গুণাবলী সম্পন্ন হবে জান্নাতের খাদেমরা মিশ্কের মোহর লাগানো পাত্রে করে এনে এগুলো জান্নাতবাসীদের পান করাবে এর দ্বিতীয় মানে হতে পারেঃ এই শরাব যখন পানকারীদের গলা থেকে নামবে তখন শেষের দিকে তারা মিশকের খুশবু পাবে এই অবস্থাটি দুনিয়ার শরাবের সম্পূর্ণ বিপরীত এখানে শরাবের বোতল খোলার সাথে সাথেই একটি বোটকা গন্ধ নাকে লাগে পান করার সময়ও এর দুর্গন্ধ অনুভূত হতে থাকে এবং গলা দিয়ে নামবার সময় মস্তিস্কের অভ্যন্তরেও পচা গন্ধ পৌঁছে যায় এর ফলে শরাবীর চেহারায় বিস্বাদের একটা ভাব জেগে ওঠে

﴿وَمِزَاجُهُۥ مِن تَسْنِيمٍ﴾

২৭ সে শরাবে তাসনীমের১১ মিশ্রণ থাকবে 

১১. তাসনীম মানে উন্নত ও উঁচু কোন ঝরণাকে তাসনীম বলার মানে হচ্ছে এই যে, তা উঁচু থেকে প্রবাহিত হয়ে নীচের দিকে আসে

﴿عَيْنًۭا يَشْرَبُ بِهَا ٱلْمُقَرَّبُونَ﴾

২৮ এটি একটি ঝরণা, নৈকট্য লাভকারীরা এর পানির সাথে শরাব পান করবে 

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ أَجْرَمُوا۟ كَانُوا۟ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يَضْحَكُونَ﴾

২৯ অপরাধীরা দুনিয়াতে ঈমানদারদের বিদ্রূপ করতো 

﴿وَإِذَا مَرُّوا۟ بِهِمْ يَتَغَامَزُونَ﴾

৩০ তাদের কাছ দিয়ে যাবার সময় চোখ টিপে তাদের দিকে ইশারা করতো

﴿وَإِذَا ٱنقَلَبُوٓا۟ إِلَىٰٓ أَهْلِهِمُ ٱنقَلَبُوا۟ فَكِهِينَ﴾

৩১ নিজেদের ঘরের দিকে ফেরার সময় আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ফিরতো১২ 

১২. অর্থাৎ একথা ভাবতে ভাবতে ঘরের দিকে ফিরতোঃ আজ তো বড়ই মজা উমুক মুসলমানকে বিদ্রূপ করে, তাকে চোখা চোখা বাক্যবাণে বিদ্ধ করে বড়ই মজা পাওয়া গেছে এবং সাধারণ মানুষের সামনে তাকে চরমভাবে অপদস্থ করা গেছে

﴿وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوٓا۟ إِنَّ هَـٰٓؤُلَآءِ لَضَآلُّونَ﴾

৩২ আর তাদেরকে দেখলে বলতো, এরা হচ্ছে পথভ্রষ্ট১৩ 

১৩. অর্থাৎ এরা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেছে মুহাম্মাদ সা. এদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের চক্করে ফেলে দিয়েছেন ফলে এরা নিজেরা নিজেদেরকে দুনিয়ার লাভ স্বার্থ ও ভোগ-বিলাসিতা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে এবং সব রকমের আশঙ্কা ও বিপদ আপদের মুখোমুখি হয়েছে যা কিছু এদের সামনে উপস্থিত আছে তা কেবল এ অনিশ্চিত আশায় ত্যাগ করছে যে, এদের সাথে মৃত্যুর পরে কি এক জান্নাত দেবার ওয়াদা করা হয়েছে, আর পরবর্তী জগতে নাকি কোন জাহান্নাম হবে, এদেরকে তার আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে এবং তার ফলেই এরা আজ এ দুনিয়ায় সবকিছু কষ্ট বরদাশ্ত করে যাচ্ছে

﴿وَمَآ أُرْسِلُوا۟ عَلَيْهِمْ حَـٰفِظِينَ﴾

৩৩ অথচ তাদেরকে এদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠানো হয়নি১৪ 

১৪. এই ছোট বাক্যটিতে বিদ্রূপকারীদের জন্য বড়ই শিক্ষাপ্রদ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে অর্থাৎ ধরে নেয়া যাক মুসলমানরা যা কিছুর প্রতি ঈমান এনেছে সবকিছুই ভুল কিন্তু তাতে তারা তোমাদের তো কোন ক্ষতি করছে না যে জিনিসকে তারা সত্য মনে করেছে সেই অনুযায়ী তারা নিজেরাই একটি নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি অবলম্বন করেছে এখন বলো, আল্লাহ‌ কি তোমাকে কোন সেনা নায়ক বানিয়ে পাঠিয়েছেন? যে তোমাকে আক্রমণ করছে না তুমি তাকে আক্রমণ করছো কেন? যে তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে না তুমি তাকে অযথা কষ্ট দিচ্ছো কেন? আল্লাহ‌ কি তোমাকে এই দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন?

﴿فَٱلْيَوْمَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مِنَ ٱلْكُفَّارِ يَضْحَكُونَ﴾

৩৪ আজ ঈমানদাররা কাফেরদের ওপর হাসছে 

﴿عَلَى ٱلْأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ﴾

৩৫ সুসজ্জিত আসনে বসে তাদের অবস্থা দেখছে

--- সমাপ্ত ---

কোন মন্তব্য নেই

মতামতের জন্য ধন্যবাদ।