০০২. সূরা আল বাকারাহ
আয়াতঃ ২৮৬; রুকুঃ ৪০; মাদানী
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
الم ১) আলিফ লাম মীম। |
ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ ২) এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকী’দের জন্য |
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ
الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ ৩) যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস
করে, নামায কায়েম করে। |
وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ
وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ ৪) এবং যে রিযিক আমি
তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে খরচ করে। আর যে কিতাব তোমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন) এবং তোমার আগে
যেসব কিতাব নাযিল করা হয়েছিল সে সবগুলোর ওপর ঈমান আনে আর আখেরাতের ওপর একীন রাখে। |
أُولَٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ৫) এ ধরনের লোকেরা তাদের
রবের পক্ষ থেকে সরল সত্য পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারা কল্যাণ লাভের অধিকারী। |
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ
أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ৬) যেসব লোক (একথাগুলো মেনে
নিতে) অস্বীকার করেছে, তাদের
জন্য সমান –তোমরা তাদের সতর্ক করো বা না করো, তারা
মেনে নেবে না। |
خَتَمَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْ
ۖ وَعَلَىٰ أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ৭) আল্লাহ তাদের হৃদয়ে ও
কানে মোহর মেরে দিয়েছেন। এবং তাদের চোখের ওপর আবরণ পড়ে গেছে। তারা
কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। |
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ
الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ ৮) কিছু লোক এমনও আছে যারা
বলে, আমরা
আল্লাহর ওপর ও আখেরাতের দিনের ওপর ঈমান এনেছি, অথচ আসলে তারা মু’মিন নয়। |
يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا
يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ ৯) তারা আল্লাহর সাথে ও
যারা ঈমান এনেছে তাদের সাথে ধোঁকাবাজি করেছে। কিন্তু
আসলে তারা নিজেদেরকেই প্রতারণ করছে, তবে তারা এ ব্যাপারে সচেতন
নয়। |
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا
ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ ১০) তাদের হৃদয়ে আছে একটি
রোগ, আল্লাহ
সে রোগ আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার
বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। |
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ
قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ ১১) যখনই তাদের বলা হয়েছে, যমীনে
ফাসাদ সৃষ্টি করো না, তারা
একথাই বলেছে, আমরা তো
সংশোধনকারী। |
أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَٰكِن لَّا
يَشْعُرُونَ ১২) সাবধান! এরাই ফাসাদ
সৃষ্টিকারী, তবে তারা
এ ব্যাপারে সচেতন নয়। |
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ
قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ ১৩) আর যখন তাদের বলা হয়েছে, অন্য
লোকেরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো তখন তারা এ জবাবই দিয়েছে-
আমরা কি ঈমান আনবো নির্বোধদের মতো? সাবধান!আসলে এরাই নির্বোধ, কিন্তু
এরা জানে না। |
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا
وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ
مُسْتَهْزِئُونَ ১৪) যখন এরা মু’মিনদের সাথে
মিলিত হয়, বলেঃ “আমরা
ঈমান এনেছি,” আবার যখন
নিরিবিলিতে নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলেঃ “আমরা তো
আসলে তোমাদের সাথেই আছি আর ওদের সাথে তো নিছক তামাশা করছি।” |
اللَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ
يَعْمَهُونَ ১৫) আল্লাহ এদের সাথে
তামাশা করছেন, এদের রশি
দীর্ঘায়িত বা ঢিল দিয়ে যাচ্ছেন এবং এরা নিজেদের আল্লাহদ্রোহিতার মধ্যে অন্ধের
মতো পথ হাতড়ে মরছে। |
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ
فَمَا رَبِحَت تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ ১৬) এরাই হিদায়াতের বিনিময়ে
গোমরাহী কিনে নিয়েছে, কিন্তু এ
সওদাটি তাদের জন্য লাভজনক নয় এবং এরা মোটেই সঠিক পথে অবস্থান করছে না। |
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَارًا
فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ
لَّا يُبْصِرُونَ ১৭) এদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন এক
ব্যক্তি আগুন জ্বালালো এবং যখনই সেই আগুন চারপাশ আলোকিত করলো তখন আল্লাহ তাদের
দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদের ছেড়ে দিলেন এমন অবস্থায় যখন অন্ধকারের মধ্যে
তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। |
صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ ১৮) তারা কালা, বোবা, অন্ধ। তারা আর
ফিরে আসবে না। |
أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاءِ فِيهِ ظُلُمَاتٌ
وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ
الْمَوْتِ ۚ وَاللَّهُ مُحِيطٌ بِالْكَافِرِينَ ১৯) অথবা এদের দৃষ্টান্ত
এমন যে, আকাশ
থেকে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। তার
সাথে আছে অন্ধকার মেঘমালা, বজ্রের গর্জন ও বিদ্যুৎ চমক।
বজ্রপাতের আওয়াজ শুনে নিজেদের প্রাণের ভয়ে এরা কানে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়। আল্লাহ
এ সত্য অস্বীকারকারীদেরকে সবদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। |
يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ ۖ كُلَّمَا أَضَاءَ لَهُم مَّشَوْا فِيهِ وَإِذَا
أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوا ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ
لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ২০) বিদ্যুৎ চমকে তাদের
অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যেন বিদ্যুৎ শীগগির তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেবে। যখন
সামান্য একটু আলো তারা অনুভব করে তখন তার মধ্যে তারা কিছুদূর চলে এবং যখন তাদের
ওপর অন্ধকার ছেয়ে যায় তারা দাঁড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ
চাইলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি একেবারেই কেড়ে নিতে পারতেন। নিঃসন্দেহে
তিনি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী। |
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي
خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ২১) হে মানব জাতি। ইবাদাত
করো তোমাদের রবের, যিনি
তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, এভাবেই
তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো। |
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ
عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ
اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ২৩) আর যে কিতাবটি আমি আমার
বান্দার ওপর নাযিল করেছি সেটি আমার কিনা- এ ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করে
থাকো তাহলে তার মতো একটি সূরা তৈরি করে আনো এবং নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্টীকে
ডেকে আনো–এক
আল্লাহকে ছাড়া আর যার যার চাও তার সাহায্য নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও
তাহলে এ কাজটি করে দেখাও। |
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا
النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ۖ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ ২৪) কিন্তু যদি তোমরা এমনটি
না করো আর নিসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবে না, তাহলে ভয়
করো সেই আগুনকে, যার
ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা তৈরি
রাখা হয়েছে সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য। |
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا
ۙ قَالُوا هَٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ২৫) আর হে নবী, যারা এ
কিতাবের ওপর ঈমান আনবে এবং(এর বিধান অনুযায়ী) নিজেদের কার্যধারা সংশোধন করে নেবে
তাদেরকে এ মর্মে সুখবর দাও যে, তাদের জন্য এমন সব বাগান
আছে যার নিম্নদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে ঝর্ণাধারা। সেই
বাগানের ফল দেখতে দুনিয়ার ফলের মতই হবে। যখন কোন
ফল তাদের দেয়া হবে খাবার জন্য, তারা বলে উঠবেঃ এ ধরনের ফলই
ইতিপূর্বে দুনিয়ায় আমাদের দেয়া হতো। তাদের
জন্য সেখানে থাকবে পাক- পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে থাকবে |
إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي أَن يَضْرِبَ مَثَلًا
مَّا بَعُوضَةً فَمَا فَوْقَهَا ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ
آمَنُوا فَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۖ وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا فَيَقُولُونَ مَاذَا
أَرَادَ اللَّهُ بِهَٰذَا مَثَلًا ۘ يُضِلُّ بِهِ كَثِيرًا
وَيَهْدِي بِهِ كَثِيرًا ۚ وَمَا يُضِلُّ
بِهِ إِلَّا الْفَاسِقِينَ ২৬) অবশ্য আল্লাহ লজ্জা
করেন না মশা বা তার চেয়ে তুচ্ছ কোন জিনিসের দৃষ্টান্ত দিতে। যারা
সত্য গ্রহণকারী তারা এ দৃষ্টান্ত –উপমাগুলো
দেখে জানতে পারে এগুলো সত্য, এগুলো এসেছে তাদের রবেরই
পক্ষ থেকে, আর যারা
(সত্যকে) গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় তারা এগুলো শুনে বলতে থাকে, এ ধরনের
দৃষ্টান্ত –উপমার সাথে আল্লাহর কী সম্পর্ক? এভাবে
আল্লাহ একই কথার সাহায্যে অনেককে গোমরাহীতে লিপ্ত করেন আবার অনেককে দেখান সরল
সোজা পথ। |
الَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ
مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي
الْأَرْضِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ ২৭) আর তিনি গোমরাহীর মধ্যে
তাদেরকেই নিক্ষেপ করেন যারা ফাসেক, যারা আল্লাহর সাথে
মজবুতভাবে অংগীকার করার পর আবার তা ভেঙ্গে ফেলে, আল্লাহ যাকে জোড়ার হুকুম দিয়েছেন
তাকে কেটে ফেলে এবং
যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে চলে। আসলে
এরাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত। |
كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا
فَأَحْيَاكُمْ ۖ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ
ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ২৮) তোমরা আল্লাহর সাথে
কেমন করে কুফরীর আচরণ করতে পারো। অথচ
তোমরা ছিলে প্রাণহীন,তিনি
তোমাদের জীবন দান করেছেন। অতপর
তিনি তোমাদের প্রাণ হরণ করবেন এবং অতপর তিনি তোমাদের জীবন দান করবেন। তরাপর
তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে। |
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا
ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ২৯) তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের
জন্য সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করলেন। তারপর
ওপরের দিকে লক্ষ করলেন এবং সাত আকাশ বিন্যস্ত করলেন তিনি সব
জিনিসের জ্ঞান রাখেন। |
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ
لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا
وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ ৩০) আবার সেই
সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি
পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই।” তারা
বললো, “আপনি কি
পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে
এবং রক্তপাত করবে? আপনার
প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই
যাচ্ছি।” আল্লাহ
বললেন, “আমি জানি
যা তোমরা জানো না।” |
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ
عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَٰؤُلَاءِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ৩১) অতপর আল্লাহ আদমকে
সমস্ত জিনিসের নাম শেখালেন তারপর সেগুলো পেশ করলেন
ফেরেশতাদের সামনে এবং বললেন, “যদি তোমাদের ধারণা সঠিক হয়
(অর্থাৎ কোন প্রতিনিধি নিযুক্ত করলে ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হবে) তাহলে একটু বলতো
দেখি এই জিনিসগুলোর নাম?” |
قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا
عَلَّمْتَنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ
الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ ৩২) তারা বললোঃ “ত্রুটিমুক্ত
তো একমাত্র আপনারই সত্তা, আমরা তো
মাত্র ততটুকু জ্ঞান রাখি ততটুকু আপনি আমাদের দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে
আপনি ছাড়া আর এমন কোন সত্তা নেই যিনি সবকিছু জানেন ও সবকিছু বোঝেন।” |
قَالَ يَا آدَمُ أَنبِئْهُم بِأَسْمَائِهِمْ ۖ فَلَمَّا أَنبَأَهُم بِأَسْمَائِهِمْ قَالَ أَلَمْ
أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا
تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ ৩৩) তখন আল্লাহ আদমকে বললেন, “তুমি
ওদেরকে এই জিনিসগুলোর নাম বলে দাও।”যখন সে তাদেরকে
সেসবের নাম জানিয়ে দিল তখন
আল্লাহ বললেনঃ “আমি না তোমাদের বলেছিলাম, আমি আকাশ
ও পৃথিবীর এমন সমস্ত নিগূঢ় তত্ত্ব জানি যা তোমাদের অগোচরে রয়ে গেছে? যা কিছু
তোমরা প্রকাশ করে থাকো তা আমি জানি এবং যা কিছু তোমরা গোপন করো তাও আমি জানি।” |
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ
فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ ৩৪) তারপর যখন ফেরেশতাদের
হুকুম দিলাম, আদমের
সামনে নত হও, তখন সবাই অবনত হলো, কিন্তু
ইবলিস অস্বীকার
করলো। সে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের
অহংকারে মেতে উঠলো এবং নাফরমানদের অন্তরভুক্ত হলো। |
وَقُلْنَا يَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ
وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا
مِنَ الظَّالِمِينَ ৩৫) তখন আমরা আদমকে বললাম, “তুমি ও
তোমার স্ত্রী উভয়েই জান্নাতে থাকো এবং এখানে স্বাচ্ছন্দের সাথে ইচ্ছে মতো খেতে
থাকো, তবে এই
গাছটির কাছে যেয়ো না। অন্যথায়
তোমরা দু’জন
যালেমদের অন্তরভুক্ত
হয়ে যাবে।” |
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا
مِمَّا كَانَا فِيهِ ۖ وَقُلْنَا اهْبِطُوا
بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ
مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ ৩৬) শেষ পর্যন্ত শয়তান
তাদেরকে সেই গাছটির লোভ দেখিয়ে আমার হুকুমের আনুগত্য থেকে সরিয়ে দিল এবং যে
অবস্থার মধ্যে তারা ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে ছাড়লো। আমি
আদেশ করলাম,
“ এখন তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও। তোমরা
একে অপরের শত্রু। তোমাদের একটি নিদিষ্ট সময়
পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান করতে ও জীবন অতিবাহিত করতে হবে।” |
فَتَلَقَّىٰ آدَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ
عَلَيْهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ ৩৭) তখন আদম তার রবের কাছ
থেকে কয়েকটি বাক্য শিখে নিয়ে তাওবা করলো। তার রব তার এই তাওবা কবুল
করে নিলেন। কারণ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও
অনুগ্রহকারী। |
قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ
هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ৩৮) আমরা বললাম, “ তোমরা
সবাই এখান থেকে নেমে যাও। এরপর যখন
আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত তোমাদের কাছে পৌছুবে তখন যারা আমার সেই হিদায়াতের
অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ বেদনা। |
وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ
أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ৩৯) আর যারা একে গ্রহণ করতে
অস্বীকৃতি জানাবে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেবে তারা
হবে আগুনের মধ্যে প্রবেশকারী। সেখানে
তারা থাকবে চিরকাল।” |
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي
أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَوْفُوا بِعَهْدِي أُوفِ بِعَهْدِكُمْ وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ ৪০) হে বনী ইসরাঈল। আমার সেই
নিয়ামতের কথা মনে করো, যা আমি
তোমাদের দান করেছিলাম, আমার
সাথে তোমাদের যে অংগীকার ছিল, তা পূর্ণ করো, তা হলে
তোমাদের সাথে আমার যে অংগীকার ছিল,তা আমি
পূর্ণ করবো এবং তোমরা একমাত্র আমাকেই ভয় করো। |
وَآمِنُوا بِمَا أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ
وَلَا تَكُونُوا أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ ۖ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ ৪১) আর আমি যে কিতাব
পাঠিয়েছি তার ওপর ঈমান আন। তোমাদের
কাছে আগে থেকেই যে কিতাব ছিল এটি তার সত্যতা সমর্থনকারী। কাজেই
সবার আগে তোমরাই এর অস্বীকারকারী হয়ো না। সামান্য
দামে আমার আয়াত বিক্রি করো না। আমার গযব
থেকে আত্মরক্ষা করো। |
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا
الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ ৪২) মিথ্যার রঙে রাঙিয়ে
সত্যকে সন্দেহযুক্ত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করার চেষ্টা করো না। |
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا
مَعَ الرَّاكِعِينَ ৪৩) নামায কায়েম করো, যাকাত
দাও এবং যারা
আমার সামনে অবনত হচ্ছে তাদের সাথে তোমরাও অবনত হও। |
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ
وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ৪৪) তোমরা অন্যদের
সৎকর্মশীলতার পথ অবলম্বন করতে বলো কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ
তোমরা কিতাব পাঠ করে থাকো। তোমরা
কি জ্ঞান বুদ্ধি একটুও কাজে লাগাও না? |
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ ৪৫) সবর ও নামায সহকারে
সাহায্য নাও। নিসন্দেহে
নামায বড়ই কঠিন কাজ, |
الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو رَبِّهِمْ
وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ৪৬) কিন্তু সেসব অনুগত
বান্দাদের জন্য কঠিন নয় যারা মনে করে, সবশেষে
তাদের মিলতে হবে তাদের রবের সাথে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। |
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي
أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ ৪৭) হে বনী ইসরাঈল! আমার
সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো, যা আমি তোমাদের দান
করেছিলাম এবং একথাটিও যে, আমি
দুনিয়ার সমস্ত জাতিদের ওপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম। |
وَاتَّقُوا يَوْمًا لَّا تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ
شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ
يُنصَرُونَ ৪৮) আর ভয় করো সেই দিনকে
যেদিন কেউ কারো সামান্যতমও কাজে লাগবে না, কারো পক্ষ থেকে সুপারিশ
গৃহীত হবে না, বিনিময়
নিয়ে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না এবং অপরাধীরা কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে পারবে না। |
وَإِذْ نَجَّيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ
سُوءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُم بَلَاءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ ৪৯) স্মরণ করো সেই সময়ের
কথা যখন আমরা
ফেরাউনী দলের দাসত্ব
থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম। তারা
তোমাদের কঠিন যন্ত্রণায় নিমজ্জিত করে রেখেছিল, তোমাদের
পুত্র সন্তানদের যবেহ করতো এবং তোমাদের কন্যা সন্তানদের জীবিত রেখে দিতো। মূলত এ
অবস্থায় তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বড় কঠিন পরীক্ষা ছিল। |
وَإِذْ فَرَقْنَا بِكُمُ الْبَحْرَ فَأَنجَيْنَاكُمْ
وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ ৫০) স্মরণ করো সেই সময়ের
কথা যখন আমরা সাগর চিরে তোমাদের জন্য পথ করে দিয়েছিলাম, তারপর
তার মধ্য দিয়ে তোমাদের নির্বিঘ্নে পার করে দিয়েছিলাম, আবার
সেখানে তোমাদের চোখের সামনেই ফেরাউনী দলকে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। |
وَإِذْ وَاعَدْنَا مُوسَىٰ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِن بَعْدِهِ وَأَنتُمْ ظَالِمُونَ ৫১) স্মরণ করো সেই সময়ের
কথা যখন আমরা মূসাকে চল্লিশ দিন-রাত্রির জন্য ডেকে নিয়েছিলাম, তখন তার
অনুপস্থিতিতে তোমরা বাছুরকে নিজেদের উপাস্যে পরিণত করেছিল। সে সময়
তোমরা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করেছিলে। |
ثُمَّ عَفَوْنَا عَنكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ لَعَلَّكُمْ
تَشْكُرُونَ ৫২) কিন্তু এরপরও আমরা
তোমাদের মাফ করে দিয়েছিলাম এ জন্য যে, হয়তো এবার তোমরা কৃতজ্ঞ হবে। |
وَإِذْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَالْفُرْقَانَ
لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ৫৩) স্মরণ করো (ঠিক যখন
তোমরা এই যুলুম করছিলে সে সময়) আমরা মূসাকে কিতাব ও ফুরকান দিয়েছিলাম, যাতে তার
মাধ্যমে তোমরা সোজা পথ পেতে পারো। |
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِنَّكُمْ
ظَلَمْتُمْ أَنفُسَكُم بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوبُوا إِلَىٰ بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوا
أَنفُسَكُمْ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِندَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ ৫৪) স্মরণ করো যখন মূসা(এই
নিয়ামত নিয়ে ফিরে এসে) নিজের জাতিকে বললো, “ হে লোকেরা! তোমরা বাছুরকে
উপাস্য বানিয়ে নিজেদের ওপর বড়ই যুলুম করেছো, কাজেই তোমরা নিজেদের
স্রষ্টার কাছে তাওবা করো এবং নিজেদেরকে হত্যা করো, এরি
মধ্যে তোমাদের স্রষ্টার কাছে তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সে সময়
তোমাদের স্রষ্টা তোমাদের তাওবা কবুল করে নিয়েছিলেন, কারণ
তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী। |
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَن نُّؤْمِنَ لَكَ
حَتَّىٰ نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ ৫৫) স্মরণ করো, যখন
তোমরা মূসাকে বলেছিলে, “আমরা
কখনো তোমার কথায় বিশ্বাস করবো না, যতক্ষণ
না আমরা স্বচক্ষে আল্লাহকে তোমার সাথে প্রকাশ্যে (কথা বলতে)দেখবো।” সে সময়
তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের ওপর একটি ভয়াবহ বজ্রপাত হলো, তোমরা
নিস্প্রাণ হয়ে পড়ে গেলে। |
ثُمَّ بَعَثْنَاكُم مِّن بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ
تَشْكُرُونَ ৫৬) কিন্তু আবার আমরা
তোমাদের বাঁচিয়ে জীবিত করলাম, হয়তো এ অনুগ্রহের পর তোমরা
কৃতজ্ঞ হবে। |
وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا
عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ
مَا رَزَقْنَاكُمْ ۖ وَمَا ظَلَمُونَا
وَلَٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ৫৭) আমরা তোমাদের ওপর মেঘমালার ছায়া দান করলাম, তোমাদের
জন্য সরবরাহ করলাম মান্না ও সালওয়ার খাদ্য এবং
তোমাদের বললাম, যে
পবিত্র দ্রব্য-সামগ্রী আমরা তোমাদের দিয়েছি তা থেকে খাও। কিন্তু
তোমাদের পূর্বপুরুষরা যা কিছু করেছে তা আমাদের ওপর যুলুম ছিল না বরং তারা
নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে। |
وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُوا هَٰذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُوا
مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًا وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَقُولُوا حِطَّةٌ
نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطَايَاكُمْ ۚ وَسَنَزِيدُ الْمُحْسِنِينَ ৫৮) আরো স্মরণ করো যখন আমরা
বলেছিলাম, “তোমাদের
সামনের এই জনপদে প্রবেশ
করো এবং সেখানকার উৎপন্ন দ্রব্যাদি যেমন ইচ্ছা খাও মজা করে। কিন্তু
জনপদের দুয়ারে সিজদানত হয়ে প্রবেশ করবে ‘হিত্তাতুন’ ‘হিত্তাতুন’ বলতে
বলতে। আমরা
তোমাদের ত্রুটিগুলো মাফ করে দেবো এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি অত্যধিক অনুগ্রহ করবো।” |
فَبَدَّلَ الَّذِينَ ظَلَمُوا قَوْلًا غَيْرَ الَّذِي
قِيلَ لَهُمْ فَأَنزَلْنَا عَلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا رِجْزًا مِّنَ السَّمَاءِ بِمَا
كَانُوا يَفْسُقُونَ ৫৯) কিন্তু যে কথা বলা
হয়েছিল যালেমরা তাকে বদলে অন্য কিছু করে ফেললো। শেষ
পর্যন্ত যুলুমকারীদের ওপর আমরা আকাশ থেকে আযাব নাযিল করলাম। এ ছিল
তারা যে নাফরমানি করছিল তার শাস্তি। |
وَإِذِ اسْتَسْقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ فَقُلْنَا
اضْرِب بِّعَصَاكَ الْحَجَرَ ۖ فَانفَجَرَتْ مِنْهُ
اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ
أُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْ ۖ كُلُوا وَاشْرَبُوا
مِن رِّزْقِ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ ৬০) স্মরণ করো, যখন মূসা
তার জাতির জন্য পানির দোয়া করলো, তখন আমরা
বললাম, অমুক পাথরের ওপর তোমার লাঠিটি মারো। এর ফলে
সেখান থেকে বারোটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত হলো। প্রত্যেক
গোত্র তার পানি গ্রহণের স্থান জেনে নিল। (সে সময়
এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে,) আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক খাও, পান করো
এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। |
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَن نَّصْبِرَ عَلَىٰ
طَعَامٍ وَاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ
مِن بَقْلِهَا وَقِثَّائِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا ۖ قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أَدْنَىٰ
بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ ۚ اهْبِطُوا مِصْرًا
فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ ۗ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ
الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ
اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ ৬১) স্মরণ করো, যখন
তোমরা বলেছিলে, “হে
মূসা!আমরা একই ধরনের খাবারের ওপর সবর করতে পারি না, তোমার
রবের কাছে দোয়া করো যেন তিনি আমাদের জন্য শাক-সব্জি, গম, রসুন, পেঁয়াজ, ডাল
ইত্যাদি কৃষিজাত দ্রব্যাদি উৎপন্ন করেন।” তখন মূসা
বলেছিল, “তোমরা কি
একটি উৎকৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিস নিতে চাও? তাহলে তোমরা কোন নগরে গিয়ে বসবাস করো, তোমরা যা
কিছু চাও সেখানে পেয়ে যাবে।”অবশেষে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছলো যার ফলে লাঞ্ছনা, অধপতন, দুরবস্থা
ও অনটন তাদের ওপর চেপে বসলো এবং আল্লাহর গযব তাদেরকে ঘিরে ফেললো। এ ছিল
তাদের ওপর আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী করার এবং পয়গম্বরদেরকে
অন্যায়ভাবে হত্যা করার ফল। এটি ছিল
তাদের নাফরমানির এবং শরীয়াতের সীমালংঘনের ফল। |
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالنَّصَارَىٰ
وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ
أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ৬২) নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো, যারা শেষ
নবীর প্রতি ঈমান আনে কিংবা ইহুদি, খৃষ্টান বা সাবি তাদের মধ্য
থেকে যে ব্যক্তিই আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তার
প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের জন্য কোন ভয় ও মর্মবেদনার অবকাশ নেই। |
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ
الطُّورَ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ৬৩) স্মরণ করো সেই সময়ের
কথা যখন আমরা ‘তূর’কে তোমাদের ওপর উঠিয়ে
তোমাদের থেকে পাকাপোক্ত অংগীকার নিয়েছিলাম এবং বলেছিলামঃ “ যে মধ্যে
যে সমস্ত নির্দেশ ও বিধান রয়েছে সেগুলো স্মরণ রেখো। এভাবেই
আশা করা যেতে পারে যে, তোমরা
তাকওয়ার পথে চলতে পারবে।” |
ثُمَّ تَوَلَّيْتُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ ۖ فَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ
لَكُنتُم مِّنَ الْخَاسِرِينَ ৬৪) কিন্তু এরপর তোমরা
নিজেদের অংগীকার ভংগ করলে। তবুও
আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত তোমাদের সংগ ছাড়েনি নয়তো তোমরা কবেই ধ্বংস হয়ে যেতে। |
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَوْا مِنكُمْ
فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ ৬৫) নিজেদের জাতির সেইসব
লোকের ঘটনা তো তোমাদের জানাই আছে যারা শনিবারের বিধান ভেঙেছিল। আমরা
তাদের বলে দিলামঃ বানর হয়ে যাও এবং এমনভাবে অবস্থান করো যাতে তোমাদের সবদিক থেকে
লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়। |
فَجَعَلْنَاهَا نَكَالًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا
وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ ৬৬) এভাবে আমরা তাদের
পরিণতিকে সমকালীন লোকদের এবং পরবর্তী বংশধরদের জন্য শিক্ষণীয় এবং যারা আল্লাহকে
ভয় করে তাদের জন্য মহান উপদেশে পরিণত করেছি। |
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ
أَن تَذْبَحُوا بَقَرَةً ۖ قَالُوا أَتَتَّخِذُنَا
هُزُوًا ۖ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ ৬৭) এরপর স্মরণ করো সেই
ঘটনার কথা যখন মূসা তার জাতিকে বললো, আল্লাহ তোমাদের একটি গাভী
যবেহ করা হুকুম দিচ্ছেন। তারা
বললো, তুমি কি
আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো? মূসা
বললো,নিরেট মূর্খদের মতো কথা বলা থেকে আমি
আল্লাহ কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। |
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا
هِيَ ۚ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا فَارِضٌ
وَلَا بِكْرٌ عَوَانٌ بَيْنَ ذَٰلِكَ ۖ فَافْعَلُوا مَا
تُؤْمَرُونَ ৬৮) তারা বললো, আচ্ছা
তাহলে তোমার রবের কাছে আবেদন করো তিনি যেন সেই গাভীর কিছু বিস্তারিত বিবরণ
আমাদের জানিয়ে দেন। মূসা
জবাব দিল আল্লাহ বলছেন, সেটি
অবশ্যি এমন একটি গাভী হতে হবে যে বৃদ্ধা নয়, একেবারে
ছোট্ট বাছুরটিও নয় বরং হবে মাঝারি বয়সের। কাজেই
যেমনটি হুকুম দেয়া হয় ঠিক তেমনটিই করো। |
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا
لَوْنُهَا ۚ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَاءُ
فَاقِعٌ لَّوْنُهَا تَسُرُّ النَّاظِرِينَ ৬৯) আবার তারা বলতে লাগলো, তোমার
রবের কাছে আরো জিজ্ঞেস করো, তার রংটি কেমন?মূসা
জবাব দিল, তিনি
বলছেন, গাভীটি
অবশ্যি হলুদ রংয়ের হতে হবে, তার রং এতই উজ্জল হবে যাতে
তা দেখে মানুষের মন ভরে যাবে। |
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا
هِيَ إِنَّ الْبَقَرَ تَشَابَهَ عَلَيْنَا وَإِنَّا إِن شَاءَ اللَّهُ لَمُهْتَدُونَ ৭০) আবার তারা বললো, তোমার
রবের কাছ থেকে এবার পরিষ্কার ভাবে জেনে নাও, তিনি কেমন ধরনের গাভী চান? গাভীটি
নির্ধারণ করার ব্যাপারে আমরা সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছি। আল্লাহ
চাইলে আমরা অবশ্যি এটি বের করে ফেলবো। |
قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا ذَلُولٌ
تُثِيرُ الْأَرْضَ وَلَا تَسْقِي الْحَرْثَ مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيهَا ۚ قَالُوا الْآنَ جِئْتَ بِالْحَقِّ ۚ فَذَبَحُوهَا وَمَا كَادُوا يَفْعَلُونَ ৭১) মূসা জবাব দিল আল্লাহ
বলছেন,সেটি এমন
একটি গাভী যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করা হয়না, জমি চাষ বা ক্ষেতে পানি সেচ
কোনটিই করে না, সুস্থ-সবল
ও নিখুঁত। একথায় তারা বলে উঠলো, হাঁ, এবার
তুমি ঠিক সন্ধান দিয়েছো। অতপর তারা
তাকে যবেহ করলো, অন্যথায়
তারা এমনটি করতো বলে মনে হচ্ছিল না। |
وَإِذْ قَتَلْتُمْ نَفْسًا فَادَّارَأْتُمْ فِيهَا
ۖ وَاللَّهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ ৭২) আর স্মরণ করো সেই ঘটনার
কথা যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে এবং একজন আর একজনের বিরুদ্ধে হত্যার
অভিয়োগ আনছিলে। আর আল্লাহ সিদ্ধান্ত
করেছিলেন তোমরা যা কিছু গোপন করছো তা তিনি প্রকাশ করে দেবেন। |
فَقُلْنَا اضْرِبُوهُ بِبَعْضِهَا ۚ كَذَٰلِكَ يُحْيِي اللَّهُ الْمَوْتَىٰ وَيُرِيكُمْ
آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ৭৩) সে সময় আমরা হুকুম
দিলাম, নিহতের
লাশকে তার একটি অংশ দিয়ে আঘাত করো। দেখো
এভাবে আল্লাহ মৃতদের জীবন দান করেন এবং তোমাদেরকে নিজের নিশানী দেখান, যাতে
তোমরা অনুধাবন করতে পারো। |
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ فَهِيَ
كَالْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً ۚ وَإِنَّ مِنَ الْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ الْأَنْهَارُ
ۚ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ
الْمَاءُ ۚ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ
ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ৭৪) কিন্তু এ ধরনের নিশানী
দেখার পরও তোমাদের দিল কঠিন হয়ে গেছে, পাথরের মত কঠিন বরং তার
চেয়েও কঠিন। কারণ এমন অনেক পাথর আছে
যার মধ্য দিয়ে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয় আবার অনেক পাথর ফেটে গেলে তার মধ্য থেকে
পানি বের হয়ে আসে, আবার কোন
কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পড়েও যায়। আল্লাহ
তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে বেখবর নন। |
أَفَتَطْمَعُونَ أَن يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ
فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِن بَعْدِ
مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ৭৫) হে মুসলমানরা! তোমরা কি
তাদের থেকে আশা করো তারা তোমাদের দাওয়াতের ওপর ঈমান আনবে? অথচ তাদের একটি দলের চিরাচরিত রীতি এই চলে আসছে যে, আল্লাহর
কালাম শুনার পর খুব ভালো করে জেনে বুঝে সজ্ঞানে তার মধ্যে ‘তাহরীফ’ বা
বিকৃতি সাধন করেছে। |
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا
وَإِذَا خَلَا بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ قَالُوا أَتُحَدِّثُونَهُم بِمَا فَتَحَ
اللَّهُ عَلَيْكُمْ لِيُحَاجُّوكُم بِهِ عِندَ رَبِّكُمْ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ৭৬) (মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহর
ওপর) যারা ঈমান এনেছে তাদের সাথে সাক্ষাত হলে বলে, আমরাও তাঁকে মানি। আবার
যখন পরস্পরের সাথে নিরিবিলিতে কথা হয় তখন বলে, তোমরা কি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে
গেলে? এদেরকে
তোমরা এমন সব কথা বলে দিচ্ছো যা আল্লাহ তোমাদের কাছে প্রকাশ করে দিয়েছেন, ফলে এরা
তোমাদের রবের কাছে তোমাদের মোকাবিলায় তোমাদের একথাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করবে? |
أَوَلَا يَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا
يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ৭৭) এরা কি জানে না, যা কিছু
এরা গোপন করছে এবং যা কিছু প্রকাশ করছে সমস্তই আল্লাহ জানেন? |
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ
إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ ৭৮) এদের মধ্যে দ্বিতীয়
একটি দল হচ্ছে নিরক্ষরদের। তাদের
কিতাবের জ্ঞান নেই, নিজেদের
ভিত্তিহীন আশা-আকাংখাগুলো নিয়ে বসে আছে এবং নিছক অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করে
চলছে। |
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ
ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنْ عِندِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا
ۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ
لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ ৭৯) কাজেই তাদের জন্য ধ্বংস
অবধারিত যারা স্বহস্তে শরীয়াতের লিখন লেখে তারপর লোকদের বলে এটা আল্লাহর পক্ষ
থেকে এসেছে। এভাবে তারা এর বিনিময়ে
সামান্য স্বার্থ লাভ করে। তাদের হাতের এই লিখন তাদের ধ্বংসের কারণ এবং তাদের এই
উপার্জনও তাদের ধ্বংসের উপকরণ। |
وَقَالُوا لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا
مَّعْدُودَةً ۚ قُلْ أَتَّخَذْتُمْ
عِندَ اللَّهِ عَهْدًا فَلَن يُخْلِفَ اللَّهُ عَهْدَهُ ۖ أَمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ৮০) তারা বলে, জাহান্নামের
আগুন আমাদের কখনো স্পর্শ করবে না, তবে কয়েক
দিনের শাস্তি হলেও হয়ে যেতে পারে। এদেরকে
জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি
আল্লাহর কাছ থেকে কোন অংগীকার নিয়েছো, যার বিরুদ্ধাচারণ তিনি করতে
পারেন না? অথবা
তোমরা আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিয়ে এমন কথা বলছো যে কথা তিনি নিজের ওপর চাপিয়ে
নিয়েছেন বলে তোমাদের জানা নেই? আচ্ছা জাহান্নামের আগুন
তোমাদেরকে স্পর্শ করবে না কেন? |
بَلَىٰ مَن كَسَبَ سَيِّئَةً وَأَحَاطَتْ بِهِ خَطِيئَتُهُ
فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ৮১) যে ব্যক্তিই পাপ করবে
এবং পাপের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়বে সে-ই জাহান্নামী হবে এবং জাহান্নামের
আগুনে পুড়তে থাকবে চিরকাল। |
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَٰئِكَ
أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ৮২) আর যারা ঈমান আনবে এবং
সৎকাজ করবে তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। |
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا
تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ
وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ
ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنكُمْ وَأَنتُم مُّعْرِضُونَ ৮৩) স্মরণ করো যখন ইসরাঈল
সন্তানদের থেকে আমরা এই মর্মে পাকাপোক্ত অংগীকার নিয়েছিলাম যে, আল্লাহ
ছাড়া আর কারোর ইবাদাত করবে না, মা-বাপ, আত্মীয়-পরিজন, ইয়াতিম ও
মিসকিনদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, লোকদেরকে ভালো কথা বলবে, নামায
কায়েম করবে ও যাকাত দেবে। কিন্তু
সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা সবাই অংগীকার ভংগ করেছিলে এবং এখনো ভেঙে চলছো। |
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ لَا تَسْفِكُونَ دِمَاءَكُمْ
وَلَا تُخْرِجُونَ أَنفُسَكُم مِّن دِيَارِكُمْ ثُمَّ أَقْرَرْتُمْ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ ৮৪) আবার স্মরণ করো, যখন আমরা
তোমাদের থেকে মজুবত অংগীকার নিয়েছিলাম এই মর্মে যে, তোমরা
পরস্পরের রক্ত প্রবাহিত করবে না এবং একে অন্যকে গৃহ থেকে উচ্ছেদ করবে না। তোমরা
এর অংগীকার করেছিলে, তোমরা
নিজেরাই এর সাক্ষী। |
ثُمَّ أَنتُمْ هَٰؤُلَاءِ تَقْتُلُونَ أَنفُسَكُمْ
وَتُخْرِجُونَ فَرِيقًا مِّنكُم مِّن دِيَارِهِمْ تَظَاهَرُونَ عَلَيْهِم بِالْإِثْمِ
وَالْعُدْوَانِ وَإِن يَأْتُوكُمْ أُسَارَىٰ تُفَادُوهُمْ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْكُمْ
إِخْرَاجُهُمْ ۚ أَفَتُؤْمِنُونَ
بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ
الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ
الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ৮৫) কিন্তু আজ সেই তোমরাই
নিজেদের ভাই-বেরাদারদেরকে হত্যা করছো, নিজেদের গোত্রীয়
সম্পর্কযুক্ত কিছু লোককে বাস্তভিটা ছাড়া করছো, যুলুম ও অত্যধিক বাড়াবাড়ি
সহকারে তাদের বিরুদ্ধে দল গঠন করছো এবং তারা যুদ্ধবন্দী
হয়ে তোমাদের কাছে এলে তাদের মুক্তির জন্য তোমরা মুক্তিপণ আদায় করছো। অথচ
তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে উচ্ছেদ করাই তোমাদের জন্য হারাম ছিল। তাহলে
কি তোমরা কিতাবের একটি অংশের ওপর ঈমান আনছো এবং অন্য অংশের সাথে কুফরী করছো? তারপর তোমাদের মধ্য থেকে
যারাই এমনটি করবে তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হতে পারে যে, দুনিয়ার
জীবনে লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত হবে এবং আখেরাতে তাদেরকে কঠিনতম শাস্তির দিকে ফিরিয়ে
দেয়া হবে? তোমাদের
কর্মকান্ড থেকে আল্লাহ বেখবর নন। |
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
بِالْآخِرَةِ ۖ فَلَا يُخَفَّفُ
عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ ৮৬) এই লোকেরাই আখেরাতের
বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন কিনে নিয়েছে। কাজেই
তাদের শাস্তি কমানো হবে না এবং তারা কোন সাহায্যও পাবে না। |
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَقَفَّيْنَا
مِن بَعْدِهِ بِالرُّسُلِ ۖ وَآتَيْنَا عِيسَى
ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ۗ أَفَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولٌ بِمَا لَا تَهْوَىٰ
أَنفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقًا كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقًا تَقْتُلُونَ ৮৭) আমরা মূসাকে কিতাব
দিয়েছি। তারপর ক্রমাগতভাবে রসূল
পাঠিয়েছি। অবশেষে ঈসা ইবনে মারয়ামকে
পাঠিয়েছি উজ্জ্বল নিশানী দিয়ে এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেছি। এরপর তোমরা এ কেমনতর আচরণ করে চলছো,যখনই কোন
রসূল তোমাদের প্রবৃত্তির কামনা বিরোধী কোন জিনিস নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে তখনই
তোমরা তার বিরুদ্ধাচরণ করেছো, কাউকে মিথ্যা বলেছো এবং
কাউকে হত্যা করেছো। |
وَقَالُوا قُلُوبُنَا غُلْفٌ ۚ بَل لَّعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلًا
مَّا يُؤْمِنُونَ ৮৮) তারা বলে, আমাদের
হৃদয় সুরক্ষিত। না, আসলে
তাদের কুফরীর কারণে তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে, তাই তারা
খুব কমই ঈমান এনে থাকে। |
وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ
مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ
كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُم مَّا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ ۚ فَلَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَافِرِينَ ৮৯) আর এখন আল্লাহর পক্ষ
থেকে তাদের কাছে যে একটি কিতাব এসেছে তার সাথে তারা কেমন ব্যবহার করছে? তাদের
কাছে আগে থেকেই কিতাবটি ছিল যদিও এটি তার সত্যতা স্বীকার করতো এবং যদিও এর
আগমনের পূর্বে তারা নিজেরাই কাফেরদের মোকাবিলায় বিজয় ও সাহায্যের দোয়া চাইতো, তবুও যখন
সেই জিনিসটি এসে গেছে এবং তাকে তারা চিনতেও পেরেছে তখন তাকে মেনে নিতে তারা
অস্বীকার করেছে। আল্লাহর
লানত এই অস্বীকারকারীদের ওপর। |
بِئْسَمَا اشْتَرَوْا بِهِ أَنفُسَهُمْ أَن يَكْفُرُوا
بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ بَغْيًا أَن يُنَزِّلَ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ
مِنْ عِبَادِهِ ۖ فَبَاءُوا بِغَضَبٍ
عَلَىٰ غَضَبٍ ۚ وَلِلْكَافِرِينَ
عَذَابٌ مُّهِينٌ ৯০) যে জিনিসের সাহায্যে
তারা মনের সান্ত্বনা লাভ করে, তা কতই না নিকৃষ্ট! সেটি
হচ্ছে, আল্লাহ
যে হিদায়াত নাযিল করেছেন তারা কেবল এই জিদের বশবর্তী হয়ে তাকে মেনে নিতে
অস্বীকার করছে যে, আল্লাহ
তাঁর যে বান্দাকে চেয়েছেন নিজের অনুগ্রহ (অহী ও রিসালাত) দান করেছেন। কাজেই
এখন তারা উপর্যুপরি গযবের অধিকারী হয়েছে। আর এই
ধরনের কাফেরদের জন্য চরম লাঞ্ছনার শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। |
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ
قَالُوا نُؤْمِنُ بِمَا أُنزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُونَ بِمَا وَرَاءَهُ وَهُوَ
الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمْ ۗ قُلْ فَلِمَ تَقْتُلُونَ
أَنبِيَاءَ اللَّهِ مِن قَبْلُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ৯১) যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ
যা কিছু নাযিল করেছেন তার ওপর ঈমান আনো, তারা বলে, “আমরা
কেবল আমাদের এখানে (অর্থাৎ বনী ইসরাঈলদের মধ্যে)যা কিছু নাযিল হয়েছে তার ওপর
ঈমান আনি।”এর বাইরে যা কিছু এসেছে তার প্রতি ঈমান
আনতে তারা অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। অথচ তা
সত্য এবং তাদের কাছে পূর্ব থেকে যে শিক্ষা ছিল তার সত্যতার স্বীকৃতিও দিচ্ছে। তাদেরকে
বলে দাওঃ যদি তোমরা তোমাদের ওখানে যে শিক্ষা নাযিল হয়েছিল তার ওপর ঈমান এনে থাকো, তাহলে
ইতিপূর্বে আল্লাহর নবীদেরকে (যারা বনী ইসরাঈলদের মধ্যে জন্ম নিয়েছিলেন) হত্যা
করেছিলে কেন? |
وَلَقَدْ جَاءَكُم مُّوسَىٰ بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ
اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِن بَعْدِهِ وَأَنتُمْ ظَالِمُونَ ৯২) তোমাদের কাছে মূসা
এসেছিল কেমন সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে। তারপরও
তোমরা এমনি যালেম হয়ে গিয়েছিলে যে, সে একটু আড়াল হতেই তোমরা
বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে বসেছিলে। |
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ
الطُّورَ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاسْمَعُوا ۖ قَالُوا سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَأُشْرِبُوا فِي
قُلُوبِهِمُ الْعِجْلَ بِكُفْرِهِمْ ۚ قُلْ بِئْسَمَا
يَأْمُرُكُم بِهِ إِيمَانُكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ৯৩) তারপর সেই অংগীকারের
কথাটাও একবার স্মরণ করো, যা আমি
তোমাদের থেকে নিয়েছিলাম তূর পাহাড়কে তোমাদের ওপর উঠিয়ে রেখে। আমি জোর
দিয়েছিলাম, যে
পথনির্দেশ আমি তোমাদেরকে দিচ্ছি, দৃঢ়ভাবে তা মেনে চলো এবং মন
দিয়ে শুনো। তোমাদের পূর্বসূরীরা
বলেছিল, আমরা
শুনেছি কিন্তু মানবো না। তাদের
বাতিলপ্রিয়তা ও অন্যায় প্রবণতার কারণে তাদের হৃদয় প্রদেশে বাছুরই অবস্থান গেড়ে
বসেছি।। যদি তোমরা মু’মিন হয়ে
থাকো, তাহলে এ
কেমন ঈমান, যা
তোমাদেরকে এহেন খারাপ কাজের নির্দেশ দেয়? |
قُلْ إِن كَانَتْ لَكُمُ الدَّارُ الْآخِرَةُ عِندَ
اللَّهِ خَالِصَةً مِّن دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ৯৪) তাদেরকে বলো, যদি
সত্যিসত্যিই আল্লাহ সমগ্র মানবতাকে বাদ দিয়ে একমাত্র তোমাদের জন্য আখেরাতের ঘর
নিদিষ্ট করে থাকেন, তাহলে তো
তোমাদের মৃত্যু কামনা করা উচিত-যদি তোমাদের এই ধারণায় তোমরা সত্যবাদী
হয়ে থাকো। |
وَلَن يَتَمَنَّوْهُ أَبَدًا بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ
ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ ৯৫) নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, তারা
কখনো এটা কামনা করবে না। কারণ
তারা স্বহস্তে যা কিছু উপার্জন করে সেখানে পাঠিয়েছে তার স্বাভাবিক দাবী এটিই
(অর্থাৎ তারা সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে না)। আল্লাহ
ঐ সব যালেমদের অবস্থা ভালোভাবেই জানেন। |
وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَىٰ حَيَاةٍ
وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا ۚ يَوَدُّ أَحَدُهُمْ
لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنَ الْعَذَابِ أَن يُعَمَّرَ
ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ ৯৬) বেঁচে থাকার ব্যাপারে
তোমরা তাদেরকে পাবে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে লোভী। এমনকি এ
ব্যাপারে তারা মুশরিকদের চাইতেও এগিয়ে রয়েছে। এদের
প্রত্যেকে চায় কোনক্রমে সে যেন হাজার বছর বাঁচতে পারে। অথচ
দীর্ঘ জীবন কোন অবস্থায়ই তাকে আযাব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। যে
ধরনের কাজ এরা করছে আল্লাহ তার সবই দেখছেন। |
قُلْ مَن كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ
نَزَّلَهُ عَلَىٰ قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللَّهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى
وَبُشْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ ৯৭) ওদেরকে বলে দাও, যে
ব্যক্তি জিব্রীলের সাথে শত্রুতা করে তার জেনে রাখা উচিত, জিব্রীল
আল্লাহরই হুকুমে এই কুরআন তোমার দিলে অবতীর্ণ করেছে এটি
পূর্বে আগত কিতাবগুলোর সত্যতা স্বীকার করে ও তাদের প্রতি সমর্থন যোগায় এবং
ঈমানদারদের জন্য পথনির্দেশনা ও সাফল্যের বার্তাবাহী। |
مَن كَانَ عَدُوًّا لِّلَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ
وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِّلْكَافِرِينَ ৯৮) (যদি এই কারণে তারা
জিব্রীলের প্রতি শত্রুতার মনোভাব পোষণ করে থাকে তাহলে তাদেরকে বলে দাও)যে
ব্যক্তি আল্লাহ তাঁর ফেরেশতা, তাঁর রসূলগণ, জিব্রীল
ও মীকাইলের শত্রু আল্লাহ সেই কাফেরদের শত্রু। |
وَلَقَدْ أَنزَلْنَا إِلَيْكَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ
ۖ وَمَا يَكْفُرُ بِهَا إِلَّا الْفَاسِقُونَ ৯৯) আমি তোমার প্রতি এমন সব
আয়াত নাযিল করেছি যেগুলো দ্ব্যর্থহীন সত্যের প্রকাশে সমুজ্জ্বল। একমাত্র
ফাসেক গোষ্ঠী ছাড়া আর কেউ তার অনুগামিতায় অস্বীকৃতি জানায়নি। |
أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوا عَهْدًا نَّبَذَهُ فَرِيقٌ
مِّنْهُم ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ১০০) যখনই তারা কোন অংগীকার
করেছে তখনই কি তাদের কোন না কোন উপদল নিশ্চিতরূপেই তার বুড়ো আঙুল দেখায়নি। বরং
তাদের অধিকাংশই সাচ্চা ঈমান আনে না। وَلَمَّا جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ
مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ كِتَابَ
اللَّهِ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ১০১) আর যখনই তাদের কাছে
পূর্ব থেকে রক্ষিত কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করে ও তার প্রতি সমর্থন দিয়ে কোন রসূল
এসেছে তখনই এই আহলি কিতাবদের একটি উপদল আল্লাহর কিতাবকে এমনভাবে পেছনে ঠেলে
দিয়েছে যেন তারা কিছু জানেই না। |
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ
سُلَيْمَانَ ۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ
كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ
هَارُوتَ وَمَارُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ
مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ
بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ ۚ وَمَا هُم بِضَارِّينَ
بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي
الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ ۚ وَلَبِئْسَ مَا
شَرَوْا بِهِ أَنفُسَهُمْ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ ১০২) আর এই সংগে তারা এমন
সব জিনিসের অনুসরণ করাতে মেতে ওঠে, যেগুলো
শয়তানরা পেশ করতো সুলাইমানী রাজত্বের নামে। অথচ
সুলাইমান কোন দিন কুফরী করেনি। কুফরী
করেছে সেই শয়তানরা, যারা
লোকদেরকে যাদু শেখাতো। তারা
ব্যবিলনে দুই ফেশেতা হারূত ও মারূতের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছির তা আয়ত্ব করার জন্য
উঠে পড়ে লাগে। অথচ তারা(ফেরেশতারা)যখনই
কাউকে এর শিক্ষা দিতো, তাকে
পরিষ্কার ভাষায় এই বলে সতর্ক করে দিতোঃ দেখো, আমরা
নিছক একটি পরীক্ষা মাত্র, তুমি
কুফরীতে লিপ্ত হয়ো না। এরপরও তারা তাদের থেকে এমন
জিনিস শিখতো, যা
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা এনে দিতো। একথা
সুস্পষ্ট, আল্লাহর
হুকুম ছাড়া এ উপায়ে তারা কাউকেও ক্ষতি করতে পারতো না। কিন্তু
এ সত্ত্বেও তারা এমন জিনিস শিখতো যা তাদের নিজেদের জন্য লাভজনক ছিল না বরং ছিল
ক্ষতিকর। তারা ভালো করেই জানতো, এর
ক্রেতার জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। কতই না
নিকৃষ্ট জিনিসের বিনিময়ে তারা বিকিয়ে দিল নিজেদের জীবন!হায়, যদি তারা
একথা জানতো! |
وَلَوْ أَنَّهُمْ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَمَثُوبَةٌ
مِّنْ عِندِ اللَّهِ خَيْرٌ ۖ لَّوْ كَانُوا
يَعْلَمُونَ ১০৩) যদি তারা ঈমান ও
তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে
আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান লাভ করতো এটি তাদের জন্য হোত বেশ ভালো। হায়, যদি তারা
একথা জানতো। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقُولُوا رَاعِنَا
وَقُولُوا انظُرْنَا وَاسْمَعُوا ۗ وَلِلْكَافِرِينَ
عَذَابٌ أَلِيمٌ ১০৪) হে ঈমানদারগণ! ‘রাইনা’ বলো না
বরং ‘উন্যুরনা’ বলো এবং
মনোযোগ সহকারে কথা শোনো। এই
কাফেররা তো যন্ত্রণাদায়ক আযাব লাভের উপযুক্ত। |
مَّا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ
وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم مِّنْ خَيْرٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ ১০৫) আহলি কিতাব বা
মুশরিকদের মধ্য থেকে যারা সত্যের দাওয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা কখনোই
তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর কোন কল্যাণ নাযিল হওয়া পছন্দ করে না। কিন্তু
আল্লাহ যাকে চান নিজের রহমত দানের জন্য বাছাই করে নেন এবং তিনি বড়ই অনুগ্রহশীল। |
مَا نَنسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ
مِّنْهَا أَوْ مِثْلِهَا ۗ أَلَمْ تَعْلَمْ
أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ১০৬) আমি যে আয়াতকে ‘মানসুখ’ করি বা
ভুলিয়ে দেই, তার
জায়গায় আনি তার চাইতে ভলো অথবা কমপক্ষে ঠিক তেমনটিই। |
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ ۗ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا
نَصِيرٍ ১০৭) তুমি কি জানো না, আল্লাহ
সব জিনিসের ওপর ক্ষমতাশালী?তুমি কি জানো না, পৃথিবী ও
আকাশের শাসন কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর? আর তিনি ছাড়া তোমাদের আর
কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই। |
أَمْ تُرِيدُونَ أَن تَسْأَلُوا رَسُولَكُمْ كَمَا
سُئِلَ مُوسَىٰ مِن قَبْلُ ۗ وَمَن يَتَبَدَّلِ
الْكُفْرَ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ ১০৮) তাহলে তোমরা কি
তোমাদের রসূলের কাছে সেই ধরনের প্রশ্ন ও দাবী করতে চাও যেমন এর আগে মূসার কাছে
করা হয়েছিল? অথচ যে
ব্যক্তি ঈমানী নীতিকে কুফরী নীতিতে পরিবর্তিত করেছে, সে-ই
সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। |
وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُم
مِّن بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّن بَعْدِ
مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ ۖ فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا
حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ
عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ১০৯) আহ্লি কিতাবদের
অধিকাংশই তোমাদেরকে কোনক্রমে ঈমান থেকে আবার কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নিতে চায়। যদিও হক
তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে গেছে তবুও নিজেদের হিংসাত্মক মনোবৃত্তির কারণে এটিই তাদের
কামনা। এর জবাবে তোমরা ক্ষমা ও
উপেক্ষার নীতি অবলম্বন করো। যতক্ষণ
না আল্লাহ নিজেই এর কোন ফায়সালা করে দেন। নিশ্চিত
জেনো, আল্লাহ
সব কিছুর ওপর ক্ষমতাশীল। |
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ
عِندَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ
بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ১১০) নামায কায়েম কায়েম করো
ও যাকাত দাও। নিজেদের পরকালের জন্য
তোমরা যা কিছু সৎকাজ করে আগে পাঠিয়ে দেবে, তা সবই
আল্লাহর ওখানে মজুত পাবে। তোমরা
যা কিছু করো সবই আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে। |
وَقَالُوا لَن يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ
هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ ۗ تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ
ۗ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ১১১) তারা বলে, কোন
ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না, যে পর্যন্ত না সে ইহুদি হয়
অথবা (খৃস্টানদের ধারণামতে)খৃস্টান হয়। এগুলো
হচ্ছে তাদের আকাংখা। তাদেরকে বলে দাও, তোমাদের
প্রমাণ আনো, যদি
নিজেদের দাবীর ব্যাপারে তোমরা সত্যবাদী হও। |
بَلَىٰ مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ
فَلَهُ أَجْرُهُ عِندَ رَبِّهِ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ১১২) (আসলে তোমাদের বা অন্য
কারোর কোন বিশেষত্ব নেই।) সত্য
বলতে কি যে ব্যক্তিই নিজের সত্ত্বাকে আল্লাহর আনুগত্যে সোপর্দ করবে এবং কার্যত
সৎপথে চলবে, তার জন্য
তার রবের কাছে এর প্রতিদান। আর এই
ধরনের লোকদের জন্য কোন ভয় বা মর্মবেদনার অবকাশ নেই। |
وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَىٰ عَلَىٰ
شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَىٰ لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ
الْكِتَابَ ۗ كَذَٰلِكَ قَالَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ مِثْلَ
قَوْلِهِمْ ۚ فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ১১৩) ইহুদিরা বলে, খৃস্টানদের
কাছে কিছুই নেই। খৃস্টানরা বলে ইহুদিদের
কাছে কিছুই নেই। অথচ তারা উভয়ই কিতাব পড়ে। আর
যাদের কাছে কিতাবের জ্ঞান নেই তারাও এ ধরনের কথা বলে থাকে। এরা যে
মত বিরোধে লিপ্ত হয়েছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ এর চূড়ান্ত মীমাংসা করে দেবেন। |
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ
أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ أُولَٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ
عَذَابٌ عَظِيمٌ ১১৪) আর তার চাইতে বড় যালেম
আর কে হবে যে আল্লাহর ঘরে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে মানুষকে বাধা দেয় এবং সেগুলো
ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়? এই ধরনের লোকেরা এসব
ইবাদাতগৃহে প্রবেশের যোগ্যতা রাখে না আর যদি কখনো প্রবেশ করে, তাহলে
ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় প্রবেশ করতে পারে। তাদের
জন্য রয়েছে এ দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে বিরাট শাস্তি। |
وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ১১৫) পূর্ব ও পশ্চিম সব
আল্লাহর। তোমরা যেদিকে মুখ ফিরাবে
সেদিকেই আল্লাহর চেহারা বিরাজমান। আল্লাহ
বড়ই ব্যাপকতার অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জ্ঞাত। |
وَقَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۖ بَل لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ كُلٌّ لَّهُ قَانِتُونَ ১১৬) তারা বলে, আল্লাহ
কাউকে ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ
পবিত্র এসব কথা থেকে। আসলে
পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসই তাঁর মালিকানাধীন, সবকিছুই তাঁর নির্দেশের
অনুগত। |
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ
كُن فَيَكُونُ ১১৭) তিনি আকাশসমূহ ও
পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি যে বিষয়ের সিদ্ধান্ত
নেন সে সম্পর্কে কেবলমাত্র হুকুম দেন ‘হও’, তাহলেই
তা হয়ে যায়। |
وَقَالَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ لَوْلَا يُكَلِّمُنَا
اللَّهُ أَوْ تَأْتِينَا آيَةٌ ۗ كَذَٰلِكَ قَالَ
الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّثْلَ قَوْلِهِمْ ۘ تَشَابَهَتْ قُلُوبُهُمْ ۗ قَدْ بَيَّنَّا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ ১১৮) অজ্ঞ লোকেরা বলে, আল্লাহ
নিজে আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন অথবা কোন নিশানী আমাদের কাছে আসে না কেন? এদের
আগের লোকেরাও এমনি ধারা কথা বলতো। এদের
সবার (আগের ও পরের পথভ্রষ্টদের)মানসিকতা একই। দৃঢ়
বিশ্বাসীদের জন্য আমরা নিশানীসমূহ সুস্পষ্ট করে দিয়েছি। |
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا
ۖ وَلَا تُسْأَلُ عَنْ أَصْحَابِ الْجَحِيمِ ১১৯) (এর চাইতে বড় নিশানী
আর কি হতে পারে যে) আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সত্য জ্ঞান সহকারে সুসংবাদ দানকারী ও
ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে। যারা
জাহান্নামের সাথে সম্পর্ক জুড়েছে তাদের জন্য তুমি দায়ী নও এবং তোমাকে জবাবদিহি
করতে হবে না। |
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ
حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى
اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ
أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ ১২০) ইহুদি ও খৃস্টানরা
তোমার প্রতি কখনোই সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের পথে
চলতে থাকো। পরিস্কার
বলে দাও, পথ মাত্র
একটিই, যা
আল্লাহ বাতলে দিয়েছেন। অন্যথায়
তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তারপরও যদি তুমি তাদের ইচ্ছা ও বাসনা অনুযায়ী চলতে
থাকো, তাহলে
আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষাকারী তোমর কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী থাকবে না। |
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ
تِلَاوَتِهِ أُولَٰئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ ১২১) যাদেরকে আমি কিতাব
দিয়েছি তারা তাকে
যথাযথভাবে পাঠ করে। তারা
তার ওপর সাচ্চা দিলে ঈমান আনে। আর যারা
তার সাথে কুফরীর নীতি অবলম্বন করে তারাই আসলে ক্ষতিগ্রস্ত। |
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي
أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ ১২২) হে বনী ইসরাঈল!
তোমাদের আমি যে নিয়ামত দান করেছিলাম এবং বিশ্বের জাতিদের ওপর তোমাদের যে
শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম তার কথা স্মরণ করো। |
وَاتَّقُوا يَوْمًا لَّا تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ
شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا تَنفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ ১২৩) আর সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন
কেউ কারো কোন কাজে আসবে না, কারোর থেকে ফিদিয়া
(বিনিময়)গ্রহণ করা হবে না, কোন সুপারিশ মানুষের জন্য
লাভজনক হবে না এবং অপরাধীরা কোথাও কোন সাহায্য পাবে না। |
وَإِذِ ابْتَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ
فَأَتَمَّهُنَّ ۖ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ
لِلنَّاسِ إِمَامًا ۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي
ۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ ১২৪) স্মরণ করো যখন
ইবরাহীমকে তার রব কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সেসব পরীক্ষায় সে
পুরোপুরি উত্রে গেলো, তখন তিনি
বললেনঃ “আমি তোমাকে সকল মানুষের নেতার পদে
অধিষ্ঠত করবো।” ইবরাহীম
বললোঃ “আর আমার সন্তানদের সাথেও কি এই অংগীকার?” জবাব
দিলেনঃ “আমার এ অংগীকার যালেমদের ব্যাপারে নয়।” |
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ
وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى ۖ وَعَهِدْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ
أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ ১২৫) আর স্মরণ করো তখনকার
কথা যখন আমি এই গৃহকে (কা’বা)লোকদের জন্য কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল
গণ্য করেছিরাম এবং ইবরাহীম যেখানে ইবাদাত করার জন্য দাঁড়ায় সে স্থানটিকে
স্থায়ীভাবে নামাযের স্থানে পরিণত করার হুকুম দিয়েছিলাম। আর
ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে তাকীদ করে বলেছিলাম, আমার এই গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী
ও রুকূ’-সিজদাকারীদের
জন্য পাক-পবিত্র রাখো। |
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَٰذَا
بَلَدًا آمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُم بِاللَّهِ
وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ قَالَ وَمَن كَفَرَ
فَأُمَتِّعُهُ قَلِيلًا ثُمَّ أَضْطَرُّهُ إِلَىٰ عَذَابِ النَّارِ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ ১২৬) আর এও স্মরণ করো যে,ইবরাহীম
দোয়া করেছিলঃ “হে আমার রব!এই শহরকে শান্তি ও
নিরাপত্তার শহর বানিয়ে দাও। আর এর
অধিবাসীদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও আখেরাতেকে মানবে তাদেরকে সব রকমের ফলের
আহার্য দান করো।” জবাবে
তার রব বললেনঃ “আর যে মানবে না, দুনিয়ার
গুটিকয় দিনের জীবনের সামগ্রী আমি তাকেও দেবো। কিন্তু
সব শেষে তাকে জাহান্নামের আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করবো এবং সেটি নিকৃষ্টতম আবাস।” |
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ
الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ১২৭) আর স্মরণ করো, ইবরাহীম
ও ইসমাঈল যখন এই গৃহের প্রাচীর নির্মাণ করছিল, তারা দোয়া করে বলছিলঃ “হে
আমাদের রব! আমাদের এই খিদমত কবুল করে নাও। তুমি
সবকিছু শ্রবণকারী ও সবকিছু জ্ঞাত। |
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا
أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ ১২৮) হে আমাদের রব!আমাদের
দু’জনকে
তোমার মুসলিম (নির্দেশের অনুগত)বানিয়ে দাও। আমাদের
বংশ থেকে এমন একটি জাতির সৃষ্টি করো যে হবে তোমার মুসলিম। তোমার
ইবাদাতের পদ্ধতি আমাদের বলে দাও এবং আমাদের ভুলচুক মাফ করে দাও। তুমি
বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী। |
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو
عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ১২৯) হে আমাদের রব! এদের
মধ্যে স্বয়ং এদের জাতি পরিসর থেকে এমন একজন রসূল পাঠাও যিনি এদেরকে তোমার আয়াত
পাঠ করে শুনাবেন, এদেরকে
কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং এদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করবেন। অবশ্যি
তুমি বড়ই প্রতিপত্তিশালী ও জ্ঞানবান। |
وَمَن يَرْغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا
مَن سَفِهَ نَفْسَهُ ۚ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ
فِي الدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُ فِي
الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ ১৩০) এখন কে ইবরাহীমের
পদ্ধতিকে ঘৃণা করবে?হ্যাঁ, যে
নিজেকে মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতায় আচ্ছন্ন করেছে সে ছাড়া আর কে এ কাজ করতে পারে? ইবরাহীমকে
তো আমি দুনিয়ায় নিজের জন্য নির্বাচিত করেছিলাম আর আখেরাতে সে সৎকর্মশীলদের মধ্যে
গণ্য হবে। |
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ ۖ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ১৩১) তার অবস্থা এই যে, যখন তার
রব তাকে বললো, “মুসলিম
হয়ে যাও।” তখনই সে
বলে উঠলো, “আমি
বিশ্ব-জাহানের প্রভুর ‘মুসলিম’ হয়ে গেলাম।” |
وَوَصَّىٰ بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ
يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم
مُّسْلِمُونَ ১৩২) ঐ একই পথে চলার জন্য
সে তার সন্তানদের উপদেশ দিয়েছিল এবং এরি উপদেশ দিয়েছিল ইয়াকুবও তার সন্তানদেরকে। সে
বলেছিল, “আমার
সন্তানেরা! আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দীনটিই পছন্দ করেছেন। কাজেই
আমৃত্যু তোমরা মুসলিম থেকো।” |
أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ
إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِن بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ
آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَٰهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ
مُسْلِمُونَ ১৩৩) তোমরা কি তখন সেখানে
উপস্থিত ছিলে,যখন
ইয়াকুব এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছিল?মৃত্যুকালে সে তার
সন্তানদের জিজ্ঞেস করলোঃ“আমার পর
তোমরা কার বন্দেগী করবে?” তারা
সবাই জবাব দিলঃ“ আমরা সেই
এক আল্লাহর বন্দেগী করবো, যাকে
আপনি এবং আপনার পূর্বপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক ইলাহ হিসেবে
মেনে এসেছেন আর আমরা তাঁরই অনুগত- মুসলিম।” |
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ ۖ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ ১৩৪) এরা ছিল কিছু লোক। এরা তো
অতীত হয়ে গেছে। তারা যা কিছু উপার্জন
করেছে, তা তাদের
নিজেদের জন্যই আর তোমরা যা উপার্জন করবে, তা তোমাদের জন্য। তারা কি
করতো সে কথা তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে না। |
وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا
ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ১৩৫) ইহুদিরা বলে, “ইহুদি
হয়ে যাও, তাহলে
সঠিক পথ পেয়ে যাবে।” খৃস্টানরা বলে, “খৃস্টান
হয়ে যাও, তা হলে
হিদায়াত লাভ করতে পারবে।” ওদেরকে
বলে দাও, “না, তা নয়; বরং এ
সবকিছু ছেড়ে একমাত্র ইবরাহীমের পদ্ধতি অবলম্বন করো। আর
ইবরাহীম মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিল না।” |
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا
وَمَا أُنزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ
وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا
نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ ১৩৬) হে মুসলমানরা!তোমরা
বলো, “আমরা
ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, যে হিদায়াত আমাদের জন্য
নাযিল হয়েছে তার প্রতি এবং যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও
ইয়াকুবের সন্তানদের তাদের রবের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল তার প্রতি। তাদের
করোর মধ্যে আমরা কোন পার্থক্য করি না। আমরা
সবাই আল্লাহর অনুগত মুসলিম।” |
فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ
اهْتَدَوا ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ
ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ১৩৭) তোমরা যেমনি ঈমান
এনেছো তারাও যদি ঠিক তেমনিভাবে ঈমান আনে, তাহলে তারা হিদায়াতের ওপর
প্রতিষ্ঠিত বলতে হবে। আর যদি
তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে
সোজা কথায় বলা যায়, তারা
হঠধর্মিতার পথ অবলম্বন করেছে। কাজেই
নিশ্চিন্ত হয়ে যাও, তাদের
মোকাবিলায় তোমাদের সহায়তার জন্য আল্লাহ-ই যথেষ্ট। তিনি
সবকিছু শুনেন ও জানেন। |
صِبْغَةَ اللَّهِ ۖ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً ۖ وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ ১৩৮) বলোঃ “আল্লাহর
রঙ ধারণ করো! আর কার
রঙ তার চেয়ে ভলো? আমরা তো
তাঁরই ইবাদাতকারী।” |
قُلْ أَتُحَاجُّونَنَا فِي اللَّهِ وَهُوَ رَبُّنَا
وَرَبُّكُمْ وَلَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُخْلِصُونَ ১৩৯) হে নবী! এদেরকে বলে
দাওঃ“তোমরা কি
আল্লাহর ব্যাপারে আমাদের সাথে ঝগড়া করছো? অথচ তিনিই আমাদের রব এবং
তোমাদেরও। আমাদের
কাজ আমাদের জন্য, তোমাদের
কাজ তোমাদের জন্য। আর আমরা
নিজেদের ইবাদাতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করেছি। |
أَمْ تَقُولُونَ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ
وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطَ كَانُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ ۗ قُلْ أَأَنتُمْ أَعْلَمُ أَمِ اللَّهُ ۗ وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَتَمَ شَهَادَةً عِندَهُ
مِنَ اللَّهِ ۗ وَمَا اللَّهُ
بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ১৪০) অথবা তোমরা কি একথা
বলতে চাও যে, ইবরাহীম, ইসমাঈর, ইসহাক, ইয়াকুব ও
ইয়াকুব-সন্তানরা সবাই ইহুদি বা খৃস্টান ছিল?” বলো, “তোমরা
বেশী জানো, না
আল্লাহ বেশী জানেন? তার চেয়ে
বড় জালেম আর কে হতে পারে, যার কাছে
আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সাক্ষ রয়েছে এবং সে তা গোপন করে চলে? তোমাদের
কর্মকান্ডের ব্যাপারে আল্লাহ গাফেল নন। তারা ছিল
কিছু লোক। তারা আজ আর নেই। |
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ ۖ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ ১৪১) তারা যা কিছু উপার্জন
করেছিল তা ছিল তাদের নিজেদের জন্য। আর
তোমরা যা উপার্জন করবে তা তোমাদের জন্য তাদের কাজের ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস
করা হবে না।” |
سَيَقُولُ السُّفَهَاءُ مِنَ النَّاسِ مَا وَلَّاهُمْ
عَن قِبْلَتِهِمُ الَّتِي كَانُوا عَلَيْهَا ۚ قُل لِّلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ ১৪২) অবশ্যি নির্বোধ লোকেরা
বলবে, “এদের কি
হয়েছে, প্রথমে
এরা যে কিব্লার দিকে মুখ করে নামায পড়তো, তা থেকে হাঠৎ মুখ ফিরিয়ে
নিয়েছে? হে নবী!
ওদেরকে বলে দাও, “পূর্ব ও
পশ্চিম সবই আল্লাহর। আল্লাহ
যাকে চান তাকে সোজা পথ দেখান।” |
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا
شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا ۗ وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا
إِلَّا لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ
ۚ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلَّا عَلَى الَّذِينَ
هَدَى اللَّهُ ۗ وَمَا كَانَ اللَّهُ
لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ
بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ ১৪৩) আর এভাবেই আমি
তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে
পরিণত করেছি, যাতে
তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী। প্রথমে
যে দিকে মুখ করে তুমি নামায পড়তে, তাকে তো
কে রসূলের অনুসরণ করে এবং কে উল্টো দিকে ফিরে যায়, আমি শুধু
তা দেখার জন্য কিব্লাহ নির্দিষ্ট করেছিলাম। এটি ছিল
অত্যন্ত কঠিন বিষয়, তবে
তাদের জন্য মোটেই কঠিন প্রমাণিত হয়নি যারা আল্লাহর হিদায়াত লাভ করেছিল। আল্লাহ
তোমাদের এই ঈমানকে কখনো নষ্ট করবেন না।
নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, তিনি
মানুষের জন্য অত্যন্ত স্নেহশীল ও করুণাময়। |
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ
أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا اللَّهُ
بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ ১৪৪) আমরা তোমাকে বার বার
আকাশের দিকে তাকাতে দেখছি। নাও, এবার
তাহলে সেই কিব্লার দিকে তোমার মুখ ফিরিয়ে দিচ্ছি, যাকে
তুমি পছন্দ করো। মসজিদুল হারামের দিকে মুখ
ফিরাও।এখন তোমরা যেখানেই হও না
কেন এদিকেই মুখ করে নামায পড়তে থাকো। এসব লোক, যাদেরকে
কিতাব দেয়া হয়েছিল, খুব ভালো
করেই জানে, (কিব্লাহ
পরিবর্তনের) এ হুকুমটি এদের রবের পক্ষ থেকেই এসেছে এবং এটি একটি যথার্থ সত্য
হুকুম। কিন্তু এ সত্ত্বেও এরা যা
কিছু করছে আল্লাহ তা থেকে গাফেল নন। |
وَلَئِنْ أَتَيْتَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ
بِكُلِّ آيَةٍ مَّا تَبِعُوا قِبْلَتَكَ ۚ وَمَا أَنتَ بِتَابِعٍ قِبْلَتَهُمْ ۚ وَمَا بَعْضُهُم بِتَابِعٍ قِبْلَةَ بَعْضٍ ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم مِّن بَعْدِ مَا
جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ إِنَّكَ إِذًا
لَّمِنَ الظَّالِمِينَ ১৪৫) তুমি এই আহ্লি
কিতাবদের কাছে যে কোন নিশানীই আনো না কেন, এরা
তোমার কিব্লার অনুসারী কখনোই হবে না। তোমাদের
পক্ষেও তাদের কিব্লার অনুগাম হওয়া সম্ভব নয় আর এদের কোন একটি দলও অন্য দলের
কিব্লার অনুসারী হতে প্রস্তুত নয়। তোমাদের
কাছে যে জ্ঞান এসেছে তা লাভ করার পর যদি তোমরা তাদের ইচ্ছা ও বাসনার অনুসারী হও, তাহলে
নিসন্দেহে তোমরা জালেমদের অন্তরভুক্ত হবে। |
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ
كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ ۖ وَإِنَّ فَرِيقًا
مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ১৪৬) যাদেরকে আমি কিতাব
দিয়েছি তারা এই স্থানটিকে (যাকে কিব্লাহ বানানো হয়েছে) এমনভাবে চেনে যেমন
নিজেদের সন্তানদেরকে চেনে। |
الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ ۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ ১৪৭) কিন্তু তোমাদের রবের
পক্ষ থেকে আগত একটি চূড়ান্ত সত্য, কাজেই এ ব্যাপারে তোমরা
কখনোই কোন প্রকার সন্দেহের শিকার হয়ো না। |
وَلِكُلٍّ وِجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيهَا ۖ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ ۚ أَيْنَ مَا تَكُونُوا يَأْتِ بِكُمُ اللَّهُ جَمِيعًا
ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ১৪৮) প্রত্যেকের জন্য একটি
দিক আছে, সে দিকেই
সে ফেরে। কাজেই তোমরা ভালোর দিকে
এগিয়ে যাও। যেখানেই
তোমরা থাকো না কেন আল্লাহ তোমাদেরকে পেয়ে যাবেন। তাঁর
ক্ষমতার বাইরে কিছুই নেই। |
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ
الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۖ وَإِنَّهُ لَلْحَقُّ
مِن رَّبِّكَ ۗ وَمَا اللَّهُ
بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ১৪৯) তুমি যেখান থেকেই
যাওনা কেন, সেখানেই
তোমার মুখ(নামাযের সময়)মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও। কারণ
এটা তোমার রবের সম্পূর্ণ সত্য ভিত্তিক ফায়সালা। আল্লাহ
তোমাদের কর্মকান্ডের ব্যাপারে বেখবর নন। |
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ
الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ
فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ إِلَّا
الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِي وَلِأُتِمَّ نِعْمَتِي
عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ১৫০) আর যেখান থেকেই তুমি
চল না কেন তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও এবং যেখানেই তোমরা থাকো না কেন
সে দিকেই মুখ করে নামায পড়ো, যাতে লোকেরা তোমাদের
বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ খাড়া করতে না পারে - তবে যারা যালেম, তাদের
মুখ কোন অবস্থায়ই বন্ধ হবে না। কাজেই
তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো – আর এ
জন্য যে, আমি
তোমাদের ওপর নিজের অনুগ্রহ পূর্ণ করে দেবো এবং এই আশায় যে, আমার এই
নির্দেশের আনুগত্যের ফলে তোমরা ঠিক তেমনিভাবে সাফল্যের পথ লাভ করবে |
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُو
عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم
مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ ১৫১) যেমনিভাবে (তোমরা এই
জিনিসটি থেকেও সাফল্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছো যে,)আমি
তোমাদের মধ্যে স্বয়ং তোমাদের থেকেই একজন রসূল পাঠিয়েছি, যে
তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শুনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে
সুসজ্জিত করে, তোমাদেরকে
কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং এমন সব কথা তোমাদের শেখায়, যা তোমরা
জানতে না। |
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا
تَكْفُرُونِ ১৫২) কাজেই তোমরা আমাকে
স্মরণ রাখো, আমিও
তোমাদেরকে স্মরণ রাখবো আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং আমার নিয়ামত
অস্বীকার করো না। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ
وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ
مَعَ الصَّابِرِينَ ১৫৩) হে ঈমানদারগণ! সবর ও
নামাযের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো, আল্লাহ
সবরকারীদের সাথে আছেন। |
وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ ১৫৪) আর যারা আল্লাহর পথে
নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না। এই
ধরনের লোকেরা আসলে জীবিত। কিন্তু
তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোন চেতনা থাকে না। |
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ
وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ১৫৫) আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও
সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ
অবস্থায় যারা সবর করে |
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ১৫৬) এবং যখনই কোন বিপদ আসে
বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে
আমাদের ফিরে যেতে হবে, |
أُولَٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ
وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ ১৫৭) তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও।তাদের
রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর
রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকরাই হয় সত্যানুসারী। |
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ
ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ
عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ
خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ ১৫৮) নিসন্দেহে সাফা ও
মারওয়া আল্লাহর নিশানীসমূহের অন্তরভুক্ত। কাজেই
যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর হ্জ্জ বা উমরাহ করে তার জন্য ঐ দুই পাহাড়ের
মাঝখানে ‘সাঈ’ করায় কোন গোনাহ নেই। আর যে
ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে কোন সৎ ও কল্যাণের কাজ করে, আল্লাহ
তা জানেন এবং তার যথার্থ মর্যাদা ও মূল্য দান করবেন। |
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ
الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ
ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ
اللَّاعِنُونَ ১৫৯) যারা আমার অবতীর্ণ
উজ্জল শিক্ষাবলী ও বিধানসমূহ গোপন করে, অথচ
সমগ্র মানবতাকে পথের সন্ধান দেবার জন্য আমি সেগুলো আমার কিতাবে বর্ণনা করে
দিয়েছি, নিশ্চিতভাবে
জেনে রাখো, আল্লাহ
তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন এবং সকল অভিশাপ বর্ষণকারীরাও তাদের ওপর অভিশাপ
বর্ষণ করে। |
إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا
فَأُولَٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنَا التَّوَّابُ
الرَّحِيمُ ১৬০) তবে যারা এই নীতি
পরিহার করে, নিজেদের
কর্মনীতি সংশোধন করে নেয় এবং যা কিছু গোপন করে যাচ্ছিল সেগুলো বিবৃত করতে থাকে, তাদেরকে
আমি ক্ষমা করে দেবো আর আসলে আমি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। |
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ
أُولَٰئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ১৬১) যারা কুফরীর নীতি অবলম্বন
করেছে এবং কুফরীর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের ওপর আল্লাহর ফেরেশতাদের
ও সমগ্র মানবতার লানত। |
خَالِدِينَ فِيهَا ۖ لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ ১৬২) এই লানত বিদ্ধ অবস্থায়
তারা চিরকাল অবস্থান করবে, তাদের শাস্তি হ্রাস পাবে না
এবং তাদের অন্য কোন অবকাশও দেয়া হবে না। |
وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ ১৬৩) তোমাদের আল্লাহ এক ও
একক। সেই দয়াবান ও করুণাময়
আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। |
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ
اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ
النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ
بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ
الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ ১৬৪) (এই সত্যটি চিহ্নিত
করার জন্য যদি কোন নিদর্শন বা আলামতের প্রয়োজন হয় তাহলে)যারা বুদ্ধি-বিবেক
ব্যবহার করে তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর ঘটনাকৃতিতে, রাত্রদিনের
অনবরত আবর্তনে, মানুষের
প্রয়োজনীয় ও উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগর দরিয়ার চলমান জলযানসমূহে, বৃষ্টিধারার
মধ্যে, যা
আল্লাহ বর্ষণ করেন ওপর থেকে তারপর তার মাধ্যমে মৃত ভূমিকে জীবন দান করেন এবং
নিজের এই ব্যবস্থাপনার বদৌলতে পৃথিবীতে সব রকমের প্রাণী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন, আর বায়ু
প্রবাহে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় অসংখ্যা নিদর্শন রয়েছে। |
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ
أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ ۗ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ
الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ ১৬৫) কিন্তু(আল্লাহর
একত্বের প্রমাণ নির্দেশক এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও) কিছু লোক আল্লাহ
ছাড়া অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ দাঁড় করায় এবং
তাদেরকে এমন ভালোবাসে যেমন আল্রাহকে ভালোবাসা উচিত – অথচ
ঈমানদাররা সবচেয়ে বেশী আল্লাহকে ভালোবাসে। হায়!
আযাব সামনে দেখে এই যালেমরা যা কিছু অনুধাবন করার তা যদি আজই অনুধাবন করতো যে, সমস্ত
শক্তি ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর অধীন এবং শাস্তি ব্যাপারে আল্লাহ অত্যন্ত কঠোর। |
إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُوا مِنَ الَّذِينَ
اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ ১৬৬) যখন তিনি শাস্তি দেবেন
তখন এই সমস্ত নেতা ও প্রধান ব্যক্তিরা, দুনিয়ায়
যাদের অনুসরণ করা হতো, তাদের
অনুগামীদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করতে থাকবে। কিন্তু
শাস্তি তারা পাবেই এবং তাদের সমস্ত উপায়- উপকরণের ধারা ছিন্ন হয়ে যাবে। |
وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً
فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا مِنَّا ۗ كَذَٰلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ ۖ وَمَا هُم بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ ১৬৭) আর যেসব লোক দুনিয়ায়
তাদের অনুসার ছিল তারা বলতে থাকবে, হায়! যদি আমাদের আর একবার
সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে আজ
এরা যেমন আমাদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছে তেমনি আমরাও এদের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে দেখিয়ে দিতাম। এভাবেই
দুনিয়ায় এরা যে সমস্ত কাজ করছে সেগুলো আল্লাহ তাদের সামনে এমনভাবে উপস্থিত করবেন
যাতে তারা কেবল দুঃখ ও আক্ষেপই করতে থাকবে কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে বের
হবার কোন পথই খুঁজে পাবে না। |
يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ
حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ১৬৮) হে মানব জাতি!
পৃথিবীতে যে সমস্ত হালাল ও পাক জিনিস রয়েছে সেগুলো খাও এবং শয়তানের দেখানো পথে
চলো না। |
إِنَّمَا يَأْمُرُكُم بِالسُّوءِ وَالْفَحْشَاءِ
وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ১৬৯) সে তোমাদের প্রকাশ্য
শত্রু। সে তোমাদের অসৎকাজ ও
অনাচারের নির্দেশ দেয় আর একথাও শেখায় যে, তোমরা আল্লাহর নামে এমন সব
কথা বলো যেগুলো আল্লাহ বলেছেন বলে তোমাদের জানা নেই। |
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ
قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا ۗ أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا
وَلَا يَهْتَدُونَ ১৭০) তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ
যে বিধান নাযিল করেছেন তা মেনে চলো, জবাবে
তারা বলে,আমাদের বাপ-দাদাদের যে পথের অনুসারী
পেয়েছি আমরা তো সে পথে চলবো। আচ্ছা, তাদের
বাপ-দাদারা যদি একটুও বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ না করে থেকে থাকে এবং সত্য-সঠিক পথের
সন্ধান না পেয়ে থাকে তাহলেও কি তারা তাদের অনুসরণ করে যেতে থাকবে? |
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ
بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً ۚ صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ ১৭১) আল্লাহ প্রদর্শিত পথে
চলতে যারা অস্বীকার করেছে তাদের অবস্থা ঠিক তেমনি যেমন রাখাল তার পশুদের ডাকতে
থাকে কিন্তু হাঁক ডাকের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই তাদের কানে পৌছে না। তারা
কালা, বোবা ও
অন্ধ, তাই
কিছুই বুঝতে পারে না। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ
مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ ১৭২) হে ঈমানদারগণ! যদি
তোমরা যথার্থই আল্লাহর ইবাদাতকারী হয়ে থাকো, তাহলে যে সমস্ত পাক-পবিত্র
জিনিস আমি তোমাদের দিয়েছি সেগুলো নিশ্চিন্তে খাও এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করো। |
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ
وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا
إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ
غَفُورٌ رَّحِيمٌ ১৭৩) আল্লাহর পক্ষ থেকে
তোমাদের ওপর যদি কোন নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে তা হচ্ছে এই যে, মৃতদেহ
খেয়ো না, রক্ত ও
শূকরের গোশত থেকে দূরে থাকো। আর এমন
কোন জিনিস খেয়ো না যার ওপর আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নাম নেয়া হয়েছে। হবে যে
ব্যক্তি অক্ষমতার মধ্যে অবস্থান করে এবং এ অবস্থায় আইন ভংগ করার কোন প্রেরণা
ছাড়াই বা প্রয়োজনের সীমা না পেরিয়ে এর মধ্য থেকে কোনটা খায়, সে জন্য
তার কোন গোনাহ হবে না। আল্লাহ
ক্ষমাশীল ও করুণাময়। |
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ
مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا
يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ
أَلِيمٌ ১৭৪) মূলত আল্লাহ তাঁর
কিতাবে যে সমস্ত বিধান অবতীর্ণ করেছেন সেগুলো যারা গোপন করে এবং সামান্য পার্থিব
স্বার্থের বেদীমূলে সেগুলো বিসর্জন দেয় তারা আসলে আগুন দিয়ে নিজেদের পেট ভর্তি
করছে। কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথাই বলবেন না, তাদের পত্রিতার ঘোষণাও
দেবেন না এবং
তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। |
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ
وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ ۚ فَمَا أَصْبَرَهُمْ
عَلَى النَّارِ ১৭৫) এরাই হিদায়াতের
বিনিময়ে ভ্রষ্টতা কিনে নিয়েছে এবং ক্ষমার বিনিময়ে কিনেছে শাস্তি। এদের কী
অদ্ভুত সাহস দেখো।
জাহান্নামের আযাব বরদাস্ত করার জন্যে এরা প্রস্তুত হয়ে গেছে। |
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ نَزَّلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ
ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِي الْكِتَابِ لَفِي
شِقَاقٍ بَعِيدٍ ১৭৬) এসব্ কিছুই ঘটার কারণ
হচ্ছে এই যে, আল্লাহ
তো যথার্থ সত্য অনুযায়ী কিতাব নাযিল করেছিলেন কিন্তু যারা কিতাবে মতবিরোধ
উদ্ভাবন করেছে তারা নিজেদের বিরোধের ক্ষেত্রে সত্য থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। |
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ
الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ
الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ
حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ
وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ
إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ
فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ ১৭৭) তোমাদের মুখ পূর্ব
দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোন পুণ্য নেই। বরং
সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ
আল্লাহ, কিয়ামতের
দিন, ফেরেশতা
আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে
উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, এতীম, মিসকীন,মুসাফির, সাহায্য
প্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে। আর
নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দান করবে। যারা
অংগীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক–বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে
তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ
الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى ۖ الْحُرُّ بِالْحُرِّ
وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنثَىٰ بِالْأُنثَىٰ ۚ فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ
وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ۗ ذَٰلِكَ تَخْفِيفٌ
مِّن رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ ۗ فَمَنِ اعْتَدَىٰ
بَعْدَ ذَٰلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ ১৭৮) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের
জন্য হত্যার ব্যাপারে কিসাসের বিধান লিখে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন
ব্যক্তি হত্যা করে থাকলে তার বদলায় ঐ স্বাধীন ব্যক্তিকেই হত্যা করা হবে, দাস
হত্যাকারী হলে ঐ দাসকেই হত্যা করা হবে, আর নারী এই অপরাধ সংঘটিত
করলে সেই নারীকে হত্যা করেই এর কিসাস নেয়া হবে। তবে কোন
হত্যাকারীর সাথে তার ভাই যদি কিছু কোমল ব্যবহার করতে প্রস্তুত হয়, তাহলে
প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী রক্তপণ
দানের ব্যবস্থা হওয়া উচিত এবং সততার সঙ্গে রক্তপণ আদায় করা হত্যাকারীর জন্য
অপরিহার্য। এটা তোমাদের রবের পক্ষ
থেকে দন্ড হ্রাস ও অনুগ্রহ। এরপরও
যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করবে তার জন্য রয়েছে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। |
وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ
لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ১৭৯) হে বুদ্ধি – বিবেক
সম্পন্ন লোকেরা! তোমাদের জন্য কিসাসের মধ্যে জীবন রয়েছে। আশা করা
যায়, তোমরা এই
আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ব্যাপারে সতর্ক হবে। |
كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ
إِن تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ بِالْمَعْرُوفِ
ۖ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ ১৮০) তোমাদের কারোর মৃত্যুর
সময় উপস্থিত হলে এবং সে ধন –সম্পত্তি ত্যাগ করে যেতে
থাকলে পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য প্রচলিত ন্যায়নীতি অনুযায়ী অসিয়ত করে
যাওয়াকে তার জন্য ফরয করা হয়েছে, মুত্তাকীদের জন্য এটা একটা
অধিকার। |
فَمَن بَدَّلَهُ بَعْدَمَا سَمِعَهُ فَإِنَّمَا إِثْمُهُ
عَلَى الَّذِينَ يُبَدِّلُونَهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ
سَمِيعٌ عَلِيمٌ ১৮১) তারপর যদি কেউ এই
অসিয়ত শুনার পর তার মধ্যে পরিবর্তন করে ফেলে তাহলে ঐ পরিবর্তনকারীরাই এর সমস্ত
গোনাহের ভাগী হবে। আল্লাহ
সবকিছুশোনেন ও জানেন। |
فَمَنْ خَافَ مِن مُّوصٍ جَنَفًا أَوْ إِثْمًا فَأَصْلَحَ
بَيْنَهُمْ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ
غَفُورٌ رَّحِيمٌ ১৮২) তবে যদি কেউ
অসিয়তকারীর পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পক্ষপাতিত্ব বা হক নষ্ট হবার
আশংকা করে এবং সে বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তাহলে
তার কোন গোনাহ হবে না। আল্লাহ
ক্ষমাশীল ও করুণাময়। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ
الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ১৮৩) হে ঈমানদাগণ! তোমাদের
ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয
করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের
মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে। |
أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ
فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ
يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ ۚ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ১৮৪) এ কতিপয় নিদিষ্ট দিনের
রোযা। যদি তোমাদের কেউ হয়ে থাকে
রোগগ্রস্ত অথবা মুসাফির তাহলে সে যেন অন্য দিনগুলোয় এই সংখ্যা পূর্ণ করে। আর
যাদের রোযা রাখার সামর্থ আছে (এরপরও রাখে না)তারা যেন ফিদিয়া দেয়। একটি
রোযার ফিদিয়া একজন মিসকিনকে খাওয়ানো। আর যে
ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে কিছু বেশী সৎকাজ করে, তা তার
জন্য ভালো। তবে যদি তোমরা সঠিক বিষয়
অনুধাবন করে থাকো। তাহলে
তোমাদের জন্য রোযা রাখাই ভালো। |
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ
مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ
بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا
اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ১৮৫) রমযানের মাস, এ মাসেই
কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানব
জাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য –সঠিক পথ
দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। কাজেই
এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা
রাখা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় বা সফরে থাকে, সে যেন
অন্য দিনগুলোয় রোযার সংখ্যা পূর্ণ করে। আল্লাহ
তোমাদের সাথে নরম নীতি অবলম্বন করতে চান, কঠোর নীতি অবলম্বন করতে চান
না। তাই তোমাদেরকে এই পদ্ধতি
জানানো হচ্ছে, যাতে
তোমরা রোযার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে হিদায়াত দান করেছেন
সে জন্য যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার স্বীকৃতি দিতে এবং তাঁর
প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো। |
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ
ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ
يَرْشُدُونَ ১৮৬) আর হে নবী! আমার
বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি
তাদের কাছেই আছি। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক
শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই
তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত একথা
তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো
সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে। |
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ
نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ
أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ
الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي
الْمَسَاجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ
اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ
اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ ১৮৭) রোযার সময় রাতের বেলা
স্ত্রীদের কাছে যাওয়া তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। তারা
তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ
জানতে পেরেছেন, তোমরা
চুপি চুপি নিজেরাই নিজেদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছিলে। কিন্তু
তিনি তোমাদের অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন। এখন
তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে রাত্রিবাস করো এবং যে স্বাদ আল্লাহ তোমাদের জন্য
বৈধ করে দিয়েছেন তা গ্রহণ করো। আর
পানাহার করতে থাকো। যতক্ষণ না রাত্রির কালো
রেখার বুক চিরে প্রভাতের সাদা রেখা সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। তখন এসব
কাজ ত্যাগ করে রাত পর্যন্ত নিজের রোযা পূর্ণ করো। আর যখন
তোমরা মসজিদে ই’তিকাফে
বসো তখন স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না। এগুলো
আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা, এর ধারে কাছেও যেয়ো না। এভাবে
আল্লাহ তাঁর বিধান লোকদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, আশা করা
যায় এর ফলে তারা ভুল কর্মনীতি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। |
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ
وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ
بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ ১৮৮) আর তোমরা নিজেদের
মধ্যে এক অন্যের অবৈধ পদ্ধতিতে খেয়ো না এবং শাসকদের সামনেও এগুলোকে এমন কোন
উদ্দেশ্যে পেশ করো না যার ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে তোমরা অন্যের সম্পদের কিছু অংশ
খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাও। |
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ ۖ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ ۗ وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَن تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِن
ظُهُورِهَا وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَىٰ ۗ وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ১৮৯) লোকেরা তোমাকে চাঁদ
ছোট বড়ো হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে। বলে
দাওঃ এটা হচ্ছে লোকদের জন্য তারিখ নির্ণয় ও হজ্জের আলামত তাদেরকে
আরো বলে দাওঃ তোমাদের পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করার মধ্যে কোন নেকী নেই। আসলে
নেকী রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার মধ্যেই, কাজেই
তোমরা দরজা পথেই নিজেদের গৃহে প্রবেশ করো। তবে
আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, হয়তো
তোমরা সাফল্য লাভে সক্ষম হবে। |
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ
وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ
لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ ১৯০) আর তোমরা আল্লাহর পথে
তাদের সাথে যুদ্ধ করো, যারা
তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, কিন্তু
বাড়াবাড়ি করো না। কারণ যারা বাড়াবাড়ি করে
আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না। |
وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ وَأَخْرِجُوهُم
مِّنْ حَيْثُ أَخْرَجُوكُمْ ۚ وَالْفِتْنَةُ
أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ۚ وَلَا تُقَاتِلُوهُمْ
عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّىٰ يُقَاتِلُوكُمْ فِيهِ ۖ فَإِن قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ ۗ كَذَٰلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ ১৯১) তাদের সাথে যেখানেই
তোমাদের মোকাবিলা হয় তোমরা যুদ্ধ করো এবং তাদের উৎখাত করো সেখান থেকে যেখান থেকে
তারা তোমাদেরকে উৎখাত করেছে। কারণ
হত্যা যদিও খারাপ, ফিতনা
তার চেয়েও বেশী খারাপ। আর মসজিদে হারামের কাছে
যতক্ষণ তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে, তোমরাও যুদ্ধ করো না। কিন্তু
যদি তারা সেখানে যুদ্ধ করতে সংকোচবোধ না করে, তাহলে তোমরাও নিসংকোচে
তাদেরকে হত্যা করো। কারণ
এটাই এই ধরনের কাফেরদের যোগ্য শাস্তি। |
فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ১৯২) তারপর যদি তারা বিরত
হয় তাহলে জেনে রাখো আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী। |
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ
الدِّينُ لِلَّهِ ۖ فَإِنِ انتَهَوْا
فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ ১৯৩) তোমরা তাদের সাথে
যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দীন একমাত্র আল্লাহর জন্য
নিদিষ্ট হয়ে যায়। তারপর
যদি তারা বিরত হয় তাহলে জেনে রাখো যালেমদের ছাড়া আর করোর ওপর হস্তক্ষেপ করা বৈধ
নয়। |
الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَاتُ
قِصَاصٌ ۚ فَمَنِ اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ
بِمِثْلِ مَا اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ
وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ ১৯৪) হারাম মাসের বিনিময়
হারাম মাসই হতে পারে এবং সমস্ত মর্যাদা সমপর্যায়ের বিনিময়ের অধিকারী হবে। কাজেই যে
ব্যক্তি তোমার ওপর হস্তক্ষেপ করবে তুমিও তার ওপর ঠিক তেমনিভাবে হস্তক্ষেপ করো। তবে
আল্লাহকে ভয় করতে থাকো এবং একথা জেনে রাখো যে, আল্লাহ
তাদের সাথে আছেন যারা তাঁর নির্ধারিত সীমালংঘন করা থেকে বিরত থাকে। |
وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا
بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ১৯৫) আল্লাহর পথে ব্যয় করো
এবং নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। অনুগ্রহ
প্রদর্শনের পথ অবলম্বন করো, কেননা আল্লাহ অনুগ্রহ
প্রদর্শনকারীদেরকে ভালোবাসেন। |
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ ۚ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ
ۖ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّىٰ يَبْلُغَ
الْهَدْيُ مَحِلَّهُ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم
مَّرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ
أَوْ نُسُكٍ ۚ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ
إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ۚ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ
إِذَا رَجَعْتُمْ ۗ تِلْكَ عَشَرَةٌ
كَامِلَةٌ ۗ ذَٰلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ
الْحَرَامِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ
الْعِقَابِ ১৯৬) আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জনের জন্য যখন হজ্জ ও উমরাহ করার নিয়ত করো তখন তা পূর্ণ করো। আর যদি
কোথাও আটকা পড়ো তাহলে যে কুরবানী তোমাদের আয়ত্বাধীন হয় তাই আল্লাহর উদ্দেশ্যে
পেশ করো। আর
কুরবানী তার নিজের জায়গায় পৌছে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা নিজেদের মাথা মুণ্ডন করো
না। তবে যে
ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় অথবা যার মাথায় কোন কষ্ট থাকে এবং সেজন্য মাথা মুণ্ডন করে
তাহলে তার ‘ফিদিয়া’ হিসেবে রোযা রাখা বা সাদকা
দেয়া অথবা কুরবানী করা উচিত। তারপর
যদি তোমাদের নিরাপত্তা অর্জিত হয় (এবং তোমরা হজ্জের আগে
মক্কায় পৌছে যাও) তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি হজ্জের সময় আসা পর্যন্ত
উমরাহর সুযোগ লাভ করে সে যেন সামর্থ অনুযায়ী কুরবানী করে। আর যদি
কুরবানীর যোগাড় না হয়, তাহলে
হজ্জের যামানায় তিনটি রোযা এবং সাতটি রোযা ঘরে ফিরে গিয়ে, এভাবে
পুরো দশটি রোযা যেন রাখে। এই
সুবিধে তাদের জন্য যাদের বাড়ী-ঘর মসজিদে হারামের কাছাকাছি নয়। আল্লাহর
এ সমস্ত বিধানের বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকো এবং ভালোভাবে জেনে নাও আল্লাহ কঠিন
শাস্তি প্রদানকারী। |
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ ۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا
فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ ۗ وَمَا تَفْعَلُوا
مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللَّهُ ۗ وَتَزَوَّدُوا
فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَىٰ ۚ وَاتَّقُونِ يَا
أُولِي الْأَلْبَابِ ১৯৭) হজ্জের মাসগুলো সবার
জানা। যে ব্যক্তি এই নিদিষ্ট
মাসগুলোতে হজ্জ করার নিয়ত করে, তার জেনে রাখা উচিত, হজ্জের
সময়ে সে যেন যৌন সম্ভোগ, দুষ্কর্ম ও ঝগড়া –বিবাদে লিপ্ত না
হয়। আর যা কিছু সৎকাজ তোমরা
করবে আল্লাহ তা জানেন। হজ্জ
সফরের জন্য পাথেয় সংগে নিয়ে যাও আর সবচেয়ে ভালো পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। কাজেই
হে বুদ্ধিমানেরা! আমার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো। |
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَبْتَغُوا فَضْلًا
مِّن رَّبِّكُمْ ۚ فَإِذَا أَفَضْتُم
مِّنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِندَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ ۖ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِن كُنتُم مِّن
قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ ১৯৮) আর হজ্জের সাথে সাথে
তোমরা যদি তোমাদের রবের অনুগ্রহের সন্ধান করতে থাকো তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। তারপর
আরাফাত থেকে অগ্রসর হয়ে ‘মাশআরুর হারাম’ (মুয্দালিফা)
এর কাছে থেমে আল্লাহকে স্মরণ করো এবং এমনভাবে স্মরণ করো যেভাবে স্মরণ করার জন্য
তিনি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। নয়তো
ইতিপূর্বে তোমরা তো ছিলে পথভ্রষ্টদের অন্তরভুক্ত। |
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا
اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ১৯৯) তারপর যেখান থেকে আর
সবাই ফিরে আসে তোমরাও সেখান থেকে ফিরে এসো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিসন্দেহে
তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। |
فَإِذَا قَضَيْتُم مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ
كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا ۗ فَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا وَمَا
لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ ২০০) অতপর যখন তোমরা
নিজেদের হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করবে তখন আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করবে যেমন
ইতিপূর্বে তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে স্মরণ করতে বরং তার চেয়ে অনেক বেশী করে
স্মরণ করবে। (তবে আল্লাহকে স্মরণকারী
লোকদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে) তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে যে বলে, হে আমাদের
রব! আমাদের দুনিয়ায় সবকিছু দিয়ে দাও। এই
ধরনের লোকের জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। |
وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا
حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ২০১) আবার কেউ বলে, হে
আমাদের রব! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দাও এবং আখেরাতেও কল্যাণ দাও এবং আগুনের আযাব
থেকে আমাদের বাঁচাও। |
أُولَٰئِكَ لَهُمْ نَصِيبٌ مِّمَّا كَسَبُوا ۚ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ ২০২) এই ধরনের লোকেরা
নিজেদের উপার্জন অনুযায়ী (উভয় স্থানে)অংশ পাবে। মূলত
হিসেব সম্পন্ন করতে আল্লাহর একটুও বিলন্ব হয় না। |
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ
ۚ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ
وَمَن تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ لِمَنِ اتَّقَىٰ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ
وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ ২০৩) এই হাতেগোণা কয়েকটি
দিন, এ দিন ক’টি
তোমাদের আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করতে হবে। যদি কেউ
তাড়াতাড়ি করে দু’দিনে
ফিরে আসে, তাতে কোন
ক্ষতি নেই। আর যদি কেউ একটু বেশীক্ষণ
অবস্থান করে ফিরে আসে তবে তাতেও কোন ক্ষতি নেই। তবে শর্ত
হচ্ছে, এই
দিনগুলো তাকে তাকওয়ার সাথে অতিবাহিত করতে হবে। আল্লাহর
নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো এবং খুব ভালোভাবে জেনে রাখো, একদিন
তাঁর দরবারে তোমাদের হাযির হতে হবে। |
وَمِنَ النَّاسِ مَن يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ
الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللَّهَ عَلَىٰ مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ ২০৪) মানুষের মধ্যে এমন লোক
আছে পার্থিব জীবনে যার কথা তোমার কাছে বড়ই চমৎকার মনে হয় এবং নিজের সদিচ্ছার
ব্যাপারে সে বারবার আল্লাহকে সাক্ষী মানে। কিন্তু
আসলে সে সত্যের নিকৃষ্টতম শত্রু। |
وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ
فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ ২০৫) যখন সে কর্তৃত্ব লাভ
করে, পৃথিবীতে
তার সমস্ত প্রচেষ্টা-সাধনা নিয়োজিত করে বিপর্যয় সৃষ্টি এবং শস্যক্ষেত ও মানব বংশ
ধ্বংস করার কাজে। অথচ আল্লাহ (যাকে সে
সাক্ষী মেনেছিল)বিপর্যয় মোটেই পছন্দ করেন না। |
وَإِذَا قِيلَ لَهُ اتَّقِ اللَّهَ أَخَذَتْهُ الْعِزَّةُ
بِالْإِثْمِ ۚ فَحَسْبُهُ جَهَنَّمُ ۚ وَلَبِئْسَ الْمِهَادُ ২০৬) আর যখন তাকে বলা হয়, আল্লাহকে
ভয় করো তখন তার আত্মাভিমান তাকে পাপের পথে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়, এই ধরনের
লোকের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট এবং সেটি নিকৃষ্টতম আবাস। |
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ
مَرْضَاتِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ رَءُوفٌ
بِالْعِبَادِ ২০৭) অন্যদিকে মানুষের
মধ্যে এমন লোকও আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অভিযানে যে নিজের প্রাণ সমর্পণ করে। এই
ধরনের বান্দার ওপর আল্লাহ অত্যন্ত স্নেহশীল ও মেহেরবান। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ
كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ২০৮) হে ঈমানদারগণ! তোমরা
পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না,কেননা সে
তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন। |
فَإِن زَلَلْتُم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ
فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ২০৯) তোমাদের কাছে যে
সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হিদায়াত এসে গেছে তা লাভ করার পরও যদি তোমাদের পদস্খলন
ঘটে তাহলে ভালোভাবে জেনে রাখো আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। |
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن يَأْتِيَهُمُ اللَّهُ
فِي ظُلَلٍ مِّنَ الْغَمَامِ وَالْمَلَائِكَةُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ ২১০) (এই সমস্ত উপদেশ ও
হিদায়াতের পরও যদি লোকেরা সোজা পথে না চলে, তাহলে)তারা কি এখন এই
অপেক্ষায় বসে আছে যে, আল্লাহ
মেঘমালার ছায়া দিয়ে ফেরেশতাদের বিপুল জমায়েত সংগে নিয়ে নিজেই সামনে এসে যাবেন
এবং তখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে? সমস্ত
ব্যাপার তো শেষ পর্যন্ত আল্লাহরই সামনে উপস্থাপিত হবে। |
سَلْ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَمْ آتَيْنَاهُم مِّنْ
آيَةٍ بَيِّنَةٍ ۗ وَمَن يُبَدِّلْ
نِعْمَةَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ২১১) বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস
করো, কেমন
সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো আমি তাদেরকে দেখিয়েছি! আবার তাদেরকে একথাও জিজ্ঞেস করো
আল্লাহর নিয়ামত লাভ করার পর যে জাতি কাকে দুর্ভাগ্য পরিণত করে তাকে আল্লাহ কেমন
কঠিন শাস্তিদান করেন। |
زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا
وَيَسْخَرُونَ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا ۘ وَالَّذِينَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ ২১২) যারা কুফরীর পথ
অবলম্বন করেছে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবন বড়ই প্রিয় ও মনোমুগ্ধকর করে সাজিয়ে দেয়া
হয়েছে। এ ধরনের লোকেরা ঈমানের পথ
অবলম্বনকারীদেরকে বিদ্রুপ করে। কিন্তু
কিয়ামতের দিন তাকওয়া অবলম্বন –কারীরাই তাদের মোকাবিলায়
উন্নত মর্যাদার আসীন হবে। আর
দুনিয়ার জীবিকার ক্ষেত্রে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত দান করে থাকেন। |
كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ
النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ
لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَمَا اخْتَلَفَ فِيهِ إِلَّا الَّذِينَ أُوتُوهُ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ
الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۖ فَهَدَى اللَّهُ
الَّذِينَ آمَنُوا لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ ۗ وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ ২১৩) প্রথমে সব মানুষ একই
পথের অনুসারী ছিল। (তারপর
এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকেনি, তাদের মধ্যে মতভেদের সূচনা
হয়) তখন আল্লাহ নবী পাঠান। তারা
ছিলেন সত্য সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং অসত্য ও বেঠিক পথ
অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতিপ্রদর্শনকারী। আর
তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের
মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়। ---(এবং
প্রথমে তাদেরকে সত্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হয়নি বলে এ মতভেদগুলো সৃষ্টি হয়েছিল, তা নয়)
মতভেদ তারাই করেছিল যাদেরকে সত্যের জ্ঞান দান করা হয়েছিল। তারা
সুস্পষ্ট পথনির্দেশ লাভ করার পরও কেবলমাত্র পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিল
বলেই সত্য পরিহার করে বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করে। --- কাজেই
যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ
দিয়েছেন,যে
ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল। আল্লাহ
যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন। |
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا
يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ
الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ ২১৪) তোমরা কি মনে
করেছো, এমনিতেই
তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান
এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি। তাদের
ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা
হয়েছিল। এমনকি সমকালীন রসূল এবং
তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চীৎকার করে বলে উঠেছিল, অবশ্যিই
আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। |
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ ۖ قُلْ مَا أَنفَقْتُم مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ
وَالْأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ
عَلِيمٌ ২১৫) লোকেরা জিজ্ঞেস করছে, আমরা কি
ব্যয় করবো? জবাব দাও, যে অর্থই
তোমরা ব্যয় কর না কেন তা নিজেদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকিন ও
মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করো। আর যে সৎকাজই
তোমরা করবে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবগত হবেন। |
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ
ۖ وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ
لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ
ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ২১৬) তোমাদের যুদ্ধ করার
হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর। হতে
পারে কোন জিনিস তোমরা পছন্দ করো অথচ তা তোমাদের জন্য খারাপ। আল্লাহ
জানেন, তোমরা
জানো না। |
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ
فِيهِ ۖ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ ۖ وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ
الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِندَ اللَّهِ ۚ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ ۗ وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ
عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا ۚ وَمَن يَرْتَدِدْ
مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ
فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ وَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ
النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ২১৭) লোকেরা তোমাকে হারাম
মাসে যুদ্ধ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে। বলে
দাওঃ ঐ মাসে যুদ্ধ করা অত্যন্ত খারাপ কাজ। কিন্তু
আল্লাহর পথ থেকে লোকদেরকে বিরত রাখা, আল্লাহর
সাথে কুফরী করা, মসজিদে
হারামের পথ আল্লাহ–বিশ্বাসীদের
জন্য বন্ধ করে দেয়া এবং হারাম শরীফের অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া এবং
হারাম শরীফের অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর নিকট তার চাইতেও
বেশী খারাপ কাজ। আর ফিত্না হত্যাকান্ডের
চাইতেও গুরুতর অপরাধ। তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ
করেই যাবে, এমন কি
তাদের ক্ষমতায় কুলোলে তারা তোমাদেরকে এই দীন থেকেও ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। (আর
একথা খুব ভালোভাবেই জেনে রাখো), তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই
এই দীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়ায়
ও আখেরাতে উভয় স্থানে তার সমস্ত কর্মকান্ড ব্যর্থ হয়ে যাবে। এই
ধরনের সমস্ত লোকই জাহান্নামের বাসিন্দা এবং তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। |
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَجَاهَدُوا
فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَتَ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ২১৮) বিপরীত পক্ষে যারা
ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে বাড়ি-ঘর ত্যাগ করেছে ও জিহাদ করেছে তারা
সংগতভাবেই আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর
আল্লাহ তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদের প্রতি নিজের করুণাধারা বর্ষণ
করবেন। |
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ
وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ
تَتَفَكَّرُونَ ২১৯) তারা তোমাকে জিজ্ঞেস
করছেঃ মদও জুয়ার ব্যাপারে নির্দেশ কি? বলে দাওঃ ঐ দু’টির
মধ্যে বিরাট ক্ষতিকর বিষয় রয়েছে যদিও লোকদের জন্য তাতে কিছুটা উপকারিতাও আছে, কিন্তু
তাদের উপকারিতার চেয়ে গোনাহ অনেক বেশী। |
فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۗ وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْيَتَامَىٰ ۖ قُلْ إِصْلَاحٌ لَّهُمْ خَيْرٌ ۖ وَإِن تُخَالِطُوهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ الْمُفْسِدَ مِنَ الْمُصْلِحِ
ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَأَعْنَتَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ২২০) তোমাকে জিজ্ঞেস করছেঃ
আমরা আল্লাহর পথে কি ব্যয় করবো? বলে দাওঃ যা কিছু তোমাদের
প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়। এভাবে
আল্লাহ তোমাদের জন্য দ্ব্যর্থহীন সুস্পষ্ট বিধান বর্ণনা করেন, হয়তো
তোমরা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানের জন্য চিন্তা করবে। জিজ্ঞেস
করছেঃ এতিমদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে? বলে দাওঃ যে কর্মপদ্ধতি
তাদের জন্য কল্যাণকর তাই অবলম্বন করা ভালো। তোমারা
যদি তোমাদের নিজেদের ও তাদের খরচপাতি ও থাকা-খাওয়া যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাখো তাহলে
তাতে কোন ক্ষতি নেই। তারা তো
তোমাদের ভাই। অনিষ্টকারী ও হীতকারী
উভয়ের অবস্থা আল্লাহ জানেন। আল্লাহ
চাইলে এ ব্যাপারে তোমাদের কঠোর ব্যবহার করতেন। কিন্তু
তিনি ক্ষমতা ও পরাক্রমের অধিকারী হবার সাথে সাথে জ্ঞান ও হিকমতের অধিকারী। |
وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ
ۚ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ
وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ ۗ وَلَا تُنكِحُوا
الْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا ۚ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ
خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ ۗ أُولَٰئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ ۖ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ২২১) মুশরিক নারীদেরকে কখনো
বিয়ে করো না, যতক্ষণ
না তারা ঈমান আনে। একটি
সম্ভান্ত মুশরিক নারী তোমাদের মনহরণ করলেও একটি মু’মিন দাসী
তার চেয়ে ভালো। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে
নিজেদের নারীদের কখনো বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন
সম্ভান্ত মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও একজন মুসলিম দাস তার চেয়ে ভালো। তারা
তোমাদের আহবান জানাচ্ছে আগুনের দিকে আর আল্লাহ নিজ ইচ্ছায়
তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। তিনি
নিজের বিধান সুস্পষ্ট ভাষায় লোকদের সামনে বিবৃত করেন। আশা করা
যায়, তারা
শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করবে। |
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ
ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ
اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ
الْمُتَطَهِّرِينَ ২২২) তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, হায়েয
সম্পর্কে নির্দেশ কি? বলে দাওঃ
সেটি একটি অশুচিকর ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থা। এ সময়
স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকো এবং তারা পাক-সাফ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধারে কাছেও
যেয়ো না। তারপর
যখন তারা পাক-পবিত্র হয়ে যায়, তাদের কাছে যাও যেভাবে
যাবার জন্য আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ
তাদেরকে ভালোবাসেন যারা অসৎকাজ থেকে বিরত থাকে ও পবিত্রতা অবলম্বন করে। |
نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ
أَنَّىٰ شِئْتُمْ ۖ وَقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُمْ
ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُم مُّلَاقُوهُ
ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ ২২৩) তোমাদের স্ত্রীরা
তোমাদের কৃষিক্ষেত। তোমরা
যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের কৃষিক্ষেতে যাও। তবে
নিজেদের ভবিষ্যতের চিন্তা করো। এবং
আল্লাহর অসন্তোষ থেকে দূরে থাকো। একদিন
তোমাদের অবশ্যি তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে হবে, একথা ভালোভাবেই জেনে রাখো। আর হে
নবী! যারা তোমার বিধান মেনে নেয় তাদেরকে সাফল্য ও সৌভাগ্যের সুখবর শুনিয়ে দাও। |
وَلَا تَجْعَلُوا اللَّهَ عُرْضَةً لِّأَيْمَانِكُمْ
أَن تَبَرُّوا وَتَتَّقُوا وَتُصْلِحُوا بَيْنَ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ২২৪) যে শপথের উদ্দেশ্য হয়
সৎকাজ, তাকওয়া ও
মানব কল্যাণমূলক কাজ থেকে বিরত থাকা, তেমন
ধরণের শপথবাক্য উচ্চারণ করার জন্য আল্লাহর নাম ব্যবহার করো না। আল্লাহ
তোমাদের সমস্ত কথা শুনছেন এবং তিনি সবকিছু জানেন। |
لَّا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ
وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ ২২৫) তোমরা অনিচ্ছায় যেসব
অর্থহীন শপথ করে ফেলো সেগুলোর জন্য আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না, কিন্তু
আন্তরিকতার সাথে তোমরা যেসব শপথ গ্রহণ করো সেগুলোর জন্য অবশ্যি পাকড়াও করবেন। আল্লাহ
বড়ই ক্ষমাশীল ও সহিষ্ণু। |
لِّلَّذِينَ يُؤْلُونَ مِن نِّسَائِهِمْ تَرَبُّصُ
أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ ۖ فَإِن فَاءُوا
فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ২২৬) যেসব লোক নিজেদের
স্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক না রাখার কসম খেয়ে বসে তাদের জন্য রয়েছে চার মাসের অবকাশ। যদি তারা
রুজ করে (ফিরে আসে) তাহলে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। |
وَإِنْ عَزَمُوا الطَّلَاقَ فَإِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ
عَلِيمٌ ২২৭) আর যদি তারা তালাক
দেবার সংকল্প করে তাহলে
জেনে রাখো আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন। |
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ
ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ۚ وَلَا يَحِلُّ
لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ وَبُعُولَتُهُنَّ
أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَٰلِكَ إِنْ أَرَادُوا إِصْلَاحًا ۚ وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ
ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ২২৮) তালাক প্রাপ্তাগণ
তিনবার মাসিক ঋতুস্রাব পর্যন্ত নিজেদেরকে বিরত রাখবে। আর
আল্লাহ তাদের গর্ভাশয়ে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাকে গোপন করা তাদের জন্য বৈধ নয়। তাদের
কখনো এমনটি করা উচিত নয়, যদি তারা
আল্লাহও পরকালে বিশ্বাসী হয়, তাদের স্বামীরা পুনরায়
সম্পর্ক স্থাপনে প্রস্তুত হয়, তাহলে তারা এই অবকাশ কালের
মধ্যে তাদেরকে নিজের স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নেবার অধিকারী হবে। নারীদের
জন্যও ঠিক তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন পুরুষদের অধিকার আছে তাদের ওপর। তবে
পুরুষদের তাদের ওপর একটি মর্যাদা আছে। আর সবার
ওপরে আছেন আল্লাহ সর্বাধিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী, বিচক্ষণ
ও জ্ঞানী। |
الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ ۖ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ ۗ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ
شَيْئًا إِلَّا أَن يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ
فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ
الظَّالِمُونَ ২২৯) তালাক দু’বার। তারপর
সোজাসুজি স্ত্রীকে রেখে দিবে অথবা ভালোভাবে বিদায় করে দেবে। আর
তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো বিদায় করার সময় তা থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য
বৈধ নয়। তবে এটা
স্বতন্ত্র, স্বামী-স্ত্রী
যদি আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না বলে আশংকা করে, তাহলে
এহেন অবস্থায় যদি তোমরা আশংকা করো, তারা উভয়ে আল্লাহ নির্ধারিত
সীমার মধ্যে অবস্থান করতে পারবে না, তাহলে
স্ত্রীর কিছু বিনিময় দিয়ে তার স্বামী থেকে বিচ্ছেদ লাভ করায় কোন ক্ষতি নেই। এগুলো
আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা, এগুলো অতিক্রম করো না। মূলত
যারাই আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করবে তারাই জালেম। |
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ
حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا
فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ
ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ
يَعْلَمُونَ ২৩০) অতপর যদি (দু’বার
তালাক দেবার পর স্বামী তার স্ত্রীকে তৃতীয় বার) তালাক দেয়, তাহলে ঐ
স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না। তবে যদি
দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হয় এবং সে তাকে তালাক দেয়, তাহলে এ
ক্ষেত্রে প্রথম স্বামী এবং এই মহিলা যদি আল্লাহর সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করতে
পারবে বলে মনে করে তাহলে তাদের উভয়ের জন্য পরস্পরের দিকে ফিরে আসায় কোন ক্ষতি
নেই। এগুলো
আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। (এগুলো
ভংগ করার পরিণতি) যারা জানে তাদের হিদায়াতের জন্য এগুলো সুস্পষ্ট করে তুরে
ধরেছেন। |
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ
فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ ۚ وَلَا تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُوا ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ
ۚ وَلَا تَتَّخِذُوا آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا
أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُم بِهِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ
شَيْءٍ عَلِيمٌ ২৩১) আর যখন তোমরা
স্ত্রীদের তালাক দিয়ে দাও এবং তাদের ইদ্দত পূর্ণ হবার পর্যায়ে পৌছে যায় তখন হয়
সোজাসুজি তাদেরকে রেখে দাও আর নয়তো ভালোভাবে বিদায় করে দাও। নিছক
কষ্ট দেবার জন্য তাদেরকে আটকে রেখো না। কারণ
এটা হবে বাড়াবাড়ি। আর যে
ব্যক্তি এমনটি করবে সে আসলে নিজের ওপর জুলুম করবে। আল্লাহর
আয়াতকে খেলা –তামাসায় পরিণত করো না। ভুলে
যেয়ো না আল্লাহ তোমাদের কত বড় নিয়ামত দান করেছেন। তিনি
তোমাদের উপদেশ দান করছেন, যে কিতাব
ও হিকমাত তিনি তোমাদের ওপর নাযিল করেছেন তাকে মর্যাদা দান করো। আল্লাহকে
ভয় করো এবং ভালোভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ সব কথা জানেন। |
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ
فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُم بِالْمَعْرُوفِ
ۗ ذَٰلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ مِنكُمْ يُؤْمِنُ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۗ ذَٰلِكُمْ أَزْكَىٰ
لَكُمْ وَأَطْهَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ
وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ২৩২) তোমরা নিজেদের
স্ত্রীদের তালাক দেয়ার পর যখন তারা ইদ্দত পূর্ণ করে নেয় তখন তাদের নিজেদের
প্রস্তাবিত স্বামীদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে তোমরা বাধা দিয়ো না, যখন তারা
প্রচলিত পদ্ধতি পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সম্মত হয়। ২৫৬ এ ধরনের পদক্ষেপ কখনো গ্রহণ
না করার জন্য তোমাদের উপদেশ দেয়া হচ্ছে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের
প্রতি ঈমান এনে থাকো। এ থেকে
বিরত থাকাই তোমাদের জন্য সবচেয়ে পরিমার্জিত ও সর্বাধিক পবিত্র পদ্ধতি। আল্লাহ
জানেন কিন্তু তোমরা জানো না। |
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ
كَامِلَيْنِ ۖ لِمَنْ أَرَادَ أَن يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ ۚ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ
بِالْمَعْرُوفِ ۚ لَا تُكَلَّفُ
نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَا تُضَارَّ وَالِدَةٌ
بِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُودٌ لَّهُ بِوَلَدِهِ ۚ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَٰلِكَ ۗ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالًا عَن تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا
جُنَاحَ عَلَيْهِمَا ۗ وَإِنْ أَرَدتُّمْ
أَن تَسْتَرْضِعُوا أَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُم مَّا
آتَيْتُم بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ
وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ২৩৩) যে পিতা তার সন্তানের
দুধ পানের সময়-কাল পূর্ণ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে মায়েরা পুরো দু’বছর
নিজেদের সন্তানদের দুধ পান করাবে। এ
অবস্থায় সন্তানদের পিতাকে প্রচলিত পদ্ধতিতে মায়েদের খোরাক পোশাক দিতে হবে। কিন্তু
কারোর ওপর তার সামর্থের বেশী বোঝা চাপিয়ে দেয়া উচিৎ নয়। কোন মা’কে এ
জন্য কষ্ট দেয়া যাবে না যে সন্তানটি তার। আবার
কোন বাপকেও এ জন্য কষ্ট দেয়া যাবে না যে, এটি তারই সন্তান। দুধ
দানকারিণীর এ অধিকার যেমন সন্তানের পিতার ওপর আছে তেমনি আছে তার ওয়ারিশের ওপরও। কিন্তু
যদি উভয় পক্ষ পারস্পারিক সম্মতি ও পরামর্শক্রমে দুধ ছাড়াতে চায়,তাহলে
এমনটি করায় কোন ক্ষতি নেই। আর যদি
তোমার সন্তানদের অন্য কোন মহিলার দুধ পান করাবার কথা তুমি চিন্তা করে থাকো, তাহলে
তাতেও কোন ক্ষতি নেই, তবে এ
ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, এ জন্য
যা কিছু বিনিময় নির্ধারণ করবে তা প্রচলিত পদ্ধতিতে আদায় করবে।
আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু করো না কেন
সবই আল্লাহর নজরে আছে। |
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا
يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ۖ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ
فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ২৩৪) তোমাদের মধ্য থেকে
যারা মারা যায়, তাদের
পরে যদি তাদের স্ত্রীরা জীবিত থাকে, তাহলে তাদের চার মাস দশ দিন
নিজেদেরকে (বিবাহ থেকে) বিরত রাখতে হবে। তারপর
তাদের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেলে তারা ইচ্ছামতো নিজেদের ব্যাপারে প্রচলিত পদ্ধতিতে যা
চায় করতে পারে, তোমাদের
ওপর এর কোন দায়িত্ব নেই। আল্লাহ
তোমাদের সবার কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত। |
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ
مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَٰكِن
لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ
الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ
اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ ২৩৫) ইদ্দতকালে তোমরা এই
বিধবাদেরকে বিয়ে করার ইচ্ছা ইশারা ইংগিতে প্রকাশ করলে অথবা মনের গোপন কোণে
লুকিয়ে রাখলে কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহ
জানেন, তাদের
চিন্তা তোমাদের মনে জাগবেই। কিন্তু
দেখো, তাদের
সাথে কোন গোপন চুক্তি করো না। যদি কোন
কথা বলতে হয়, প্রচলিত
ও পরিচিত পদ্ধতিতে বলো। তবে
বিবাহ বন্ধনের সিদ্ধান্ত ততক্ষণ করবে না যতক্ষণ না ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যায়। খুব
ভালোভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ
তোমাদের মনের অবস্থাও জানেন। কাজেই
তাঁকে ভয় করো। এবং একথাও জেনে রাখো, আল্লাহ
ধৈর্যশীল এবং ছোট খাটো ত্রুটিগুলো এমনিতেই ক্ষমা করে দেন। |
لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ
مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى
الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ ২৩৬) নিজেদের স্ত্রীদেরকে
স্পর্শ করার বা মোহরানা নির্ধারণ করার আগেই যদি তোমরা তালাক দিয়ে দাও তাহলে এতে
তোমাদের কোন গোনাহ নেই। এ
অবস্থায় তাদেরকে অবশ্যি কিছু না কিছু দিতে হবে। সচ্ছল
ব্যক্তি তার সাধ্যমত এবং দরিদ্র তার সংস্থান অনুযায়ী প্রচলিত পদ্ধতিতে দেবে।
সৎলোকদের ওপর এটি একটি অধিকার। |
وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ
وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَن يَعْفُونَ
أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ ۚ وَأَن تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۚ وَلَا تَنسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ২৩৭) আর যদি তাদেরকে স্পর্শ
করার আগেই তোমরা তালাক দিয়ে দাও কিন্তু মোহরানা নির্ধারিত হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে এ
অবস্থায় মোহরানার অর্ধেক তাদেরকে দিতে হবে। স্ত্রী
যদি নরম নীতি অবলম্বন করে,(এবং মোহরানা না নেয়)অথবা সেই ব্যক্তি
নরমনীতি অবলম্বন করে, যার হাতে
বিবাহ বন্ধন নিবদ্ধ (এবং সম্পূর্ণ মোহরানা দিয়ে দেয়)তাহলে সেটা অবশ্য স্বতন্ত্র
কথা। আর তোমরা (অর্থাৎ পুরুষরা)
নরম নীতি অবলম্বন করো। এ
অবস্থায় এটি তাকওয়ার সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যশীল।
পারস্পরিক ব্যাপারে তোমরা উদারতা ও সহৃদয়তার নীতি ভুলে যেয়ো না। তোমাদের
কার্যাবলী আল্লাহ দেখছেন। |
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ ২৩৮) তোমাদের নামাযগুলো সংরক্ষণ
করো, বিশেষ
করে এমন নামায যাতে নামাযের সমস্ত গুণের সমন্বয় ঘটেছে। আল্লাহর
সামনে এমনভাবে দাঁড়াও যেমন অনুগত সেবকরা দাঁড়ায়। |
فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا ۖ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَمَا عَلَّمَكُم
مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ ২৩৯) অশান্তি বা গোলযোগের
সময় হলে পায়ে হেঁটে অথবা বাহনে চড়ে যেভাবেই সম্ভব নামায পড়ো। আর যখন
শান্তি স্থাপিত হয়ে যায় তখন আল্লাহকে সেই পদ্ধতিতে স্মরণ করো, যা তিনি
তোমাদের শিখিয়েছেন, যে
সম্পর্কে ইতিপূর্বে তোমরা অনবহিত ছিলে। |
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا
وَصِيَّةً لِّأَزْوَاجِهِم مَّتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ ۚ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِي مَا
فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ مِن مَّعْرُوفٍ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ২৪০) তোমাদের মধ্য
থেকে যারা মারা যায় এবং তাদের পরে তাদের স্ত্রীরা বেঁচে থাকে, তাদের
স্ত্রীদের যাতে এক বছর পর্যন্ত ভরণপোষণ করা হয় এবং ঘর থেকে বের করে না দেয়া হয়
সে জন্য স্ত্রীদের পক্ষে মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করে যাওয়া উচিৎ। তবে যদি
তারা নিজেরাই বের হয়ে যায় তাহলে তাদের নিজেদের ব্যাপারে প্রচলিত পদ্ধতিতে তারা
যাই কিছু করুক না কেন তার কোন দায়-দায়িত্ব তোমাদের ওপর নেই। আল্লাহ
সবার ওপর কর্তৃত্ব ও ক্ষমাতাশালী এবং তিনি অতি বিজ্ঞ। |
وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ ২৪১) অনুরূপভাবে যেসব
স্ত্রীকে তালাক দেয়া হয়েছে তাদেরকেও সংগতভাবে কিছু না কিছু দিয়ে বিদায় করা উচিত। এটা
মুত্তাকীদের ওপর আরোপিত অধিকার। |
كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ
تَعْقِلُونَ ২৪২) এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর
বিধান পরিষ্কার ভাষায় তোমাদের জানিয়ে দেন। আশা করা
যায়, তোমরা
ভেবেচিন্তে কাজ করবে। |
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُوا مِن دِيَارِهِمْ
وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُوا ثُمَّ أَحْيَاهُمْ
ۚ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَٰكِنَّ
أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ ২৪৩) তুমি কি তাদের
অবস্থা সম্পর্কে কিছু চিন্তা করেছো, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের
বাড়ি-ঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়েছিল এবং তারা সংখ্যায়ও ছিল হাজার হাজার? আল্লাহ
তাদের বলেছিলেনঃ মরে যাও, তারপর
তিনি তাদের পুনর্বার জীবন দান করেছিলেন। আসলে
আল্লাহ মানুষের ওপর বড়ই অনুগ্রহকারী কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। |
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ
اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ২৪৪) হে মুসলমানরা! আল্লাহর
পথে যুদ্ধ করো এবং ভালোভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ শ্রবণকারী ও সর্বজ্ঞ। |
مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا
فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً ۚ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ২৪৫) তোমাদের মধ্যে কে
আল্লাহকে ‘করযে হাসানা’ দিতে
প্রস্তুত, যাতে
আল্লাহ তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে তাকে ফেরত দেবেন?কমাবার
ক্ষমতা আল্লাহর আছে, বাড়াবারও এবং তাঁরই দিকে
তোমাদের ফিরে যেতে হবে। |
أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ
مِن بَعْدِ مُوسَىٰ إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلْ
فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ
إِن كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا ۖ قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدْ
أُخْرِجْنَا مِن دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا ۖ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا
مِّنْهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ ২৪৬) আবার তোমরা কি এ
ব্যাপারেও চিন্তা করেছো, যা মূসার
পরে বনী ইসরাঈলের সরদারদের সাথে ঘটেছিল? তারা
নিজেদের নবীকে বলেছিলঃ আমাদের জন্য একজন বাদশাহ ঠিক করে দাও, যাতে
আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করতে পারি। নবী
জিজ্ঞেস করলোঃ তোমাদের লড়াই করার হুকুম দেয়ার পর তোমরা লড়তে যাবে না, এমনটি
হবে না তো?তারা
বলতে লাগলোঃ এটা কেমন করে হতে পারে, আমরা আল্লাহর পথে লড়বো না,অথচ
আমাদের বাড়ি-ঘর থেকে আমাদের বের করে দেয়া হয়েছে, আমাদের সন্তানদের আমাদের
থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে? কিন্তু যখন তাদের লড়াই করার
হুকুম দেয়া হলো, তাদের
স্বল্পসংখ্যক ছাড়া বাদবাকি সবাই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করলো। আল্লাহ
তাদের প্রত্যেকটি জালেমকে জানেন। |
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ
لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا ۚ قَالُوا أَنَّىٰ
يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ
سَعَةً مِّنَ الْمَالِ ۚ قَالَ إِنَّ اللَّهَ
اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ ۖ وَاللَّهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ২৪৭) তাদের নবী তাদেরকে
বললোঃআল্লাহ তোমাদের জন্য তালুতকে বাদশাহ বানিয়ে দিয়েছেন। একথা
শুনে তারা বললোঃ “সে কেমন করে আমাদের ওপর বাদশাহ হবার
অধিকার লাভ করলো? তার
তুলনায় বাদশাহী লাভের অধিকার আমাদের অনেক বেশী। সে তো
কোন বড় সম্পদশালী লোকও নয়।” নবী জবাব
দিলঃ “আল্লাহ তোমাদের মোকাবিলায় তাকেই নবী
মনোনীত করেছেন। এবং তাকে
বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক উভয় ধরনের যোগ্যতা ব্যাপকহারে দান করেছেন। আর
আল্লাহ তাঁর রাজ্য যাকে ইচ্ছা দান করার ইখতিয়ার রাখেন। আল্লাহ
অত্যন্ত ব্যাপকতার অধিকারী এবং সবকিছুই তাঁর জ্ঞান-সীমার মধ্যে রয়েছে।” |
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ
أَن يَأْتِيَكُمُ التَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا
تَرَكَ آلُ مُوسَىٰ وَآلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلَائِكَةُ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ২৪৮) এই সংগে তাদের নবী
তাদের একথাও জানিয়ে দিলঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বাদশাহ নিযুক্ত করার আলামত
হচ্ছে এই যে, তার আমলে
সেই সিন্ধুকটি তোমরা ফিরিয়ে পাবে, যার মধ্যে রয়েছে তোমাদের
রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী, যার
মধ্যে রয়েছে মূসার পরিবারের ও হারুনের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র এবং
যাকে এখন ফেরেশতারা বহন করে ফিরছে। যদি
তোমরা মু’মিন হয়ে
থাকো তাহলে এটি তোমাদের জন্য অনেক বড় নিশানী। |
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ
اللَّهَ مُبْتَلِيكُم بِنَهَرٍ فَمَن شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَن لَّمْ
يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ ۚ فَشَرِبُوا مِنْهُ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۚ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ
قَالُوا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ ۚ قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو
اللَّهِ كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ ২৪৯) তারপর তালুত যখন
সেনাবিহনী নিয়ে এগিয়ে চললো, সে বললোঃ “ আল্লাহর
পক্ষ থেকে একটি নদীতে তোমাদের পরীক্ষা হবে। যে তার
পানি পান করবে সে আমার সহযোগী নয়। একমাত্র
সে-ই আমার সহযোগী যে তার পানি থেকে নিজের পিপাসা নিবৃ্ত্ত করবে না। তবে এক
আধ আজঁলা কেউ পান করতে চাইলে করতে পারে। কিন্তু
স্বল্প সংখ্যক লোক ছাড়া বাকি সবাই সেই নদীর পানি আকন্ঠ পান করলো। অতপর
তালুত ও তার সাথী মুসলমানরা যখন নদী পেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো তখন তারা তালুতকে
বলে দিল, আজ জালুত
ও তার সেনাদলের মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু
যারা একথা মনে করছিল যে, তাদের
একদিন আল্লাহর সাথে মোলাকাত হবে,তারা বললোঃ “ অনেক
বারই দেখা গেছে, স্বল্প
সংখ্যক লোকের একটি দল আল্লাহর হুকুমে একটি বিরাট দলের ওপর বিজয় লাভ করেছে। আল্লাহ
সবরকারীদের সাথি।” |
وَلَمَّا بَرَزُوا لِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالُوا
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ
الْكَافِرِينَ ২৫০) আর যখন তারা জালুত ও
তার সেনাদলের মোকাবিলায় বের হলো, তারা
দোয়া করলোঃ “ হে আমাদের রব! আমাদের সবর
দান করো, আমাদের
অবিচলিত রাখ এবং এই কাফের দলের ওপর আমাদের বিজয় দান করো।” |
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ
جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ
لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ ২৫১) অবশেষে আল্লাহর হুকুমে
তারা কাফেরদের পরাজিত করলো। আর দাউদ জালুতকে
হত্যা করলো এবং আল্লাহ তাকে রাজ্য ও প্রজ্ঞা দান করলেন আর এই সাথে যা যা তিনি
চাইলেন তাকে শিখিয়ে দিলেন। এভাবে
আল্লাহ যদি মানুষদের একটি দলের সাহায্যে আর একটি দলকে দমন না করতে থাকতেন, তাহলে
পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হতো। কিন্তু
দুনিয়াবাসীদের ওপর আল্লাহর অপার করুণা (যে, তিনি এভাবে বিপর্যয় রোধের
ব্যবস্থা করতেন)। |
تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ
ۚ وَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ ২৫২) এগুলো আল্লাহর আয়াত। আমি
ঠিকমতো এগুলো তোমাকে শুনিয়ে যাচ্ছি। আর তুমি
নিশ্চিতভাবে প্রেরিত পুরুষদের (রসূলদের) অন্তরভুক্ত। |
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ
ۘ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ اللَّهُ ۖ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ ۚ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ
وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ۗ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ
مَا اقْتَتَلَ الَّذِينَ مِن بَعْدِهِم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ
وَلَٰكِنِ اخْتَلَفُوا فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَٰكِنَّ
اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ ২৫৩) এই রসূলদের (যারা আমার
পক্ষ থেকে মানবতার হিদায়াতের জন্য নিযুক্ত) একজনকে আর একজনের ওপর আমি অধিক
মর্যাদাশালী করেছি। তাদের
কারোর সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন, কাউকে তিনি অন্য দিক দিয়ে
উন্নত মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন, অবশেষ
ঈসা ইবনে মারয়ামকে উজ্জ্বল নিশানীসমূহ দান করেছেন এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে
সাহায্য করেছেন। যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে
এই রসূলদের পর যারা উজ্জ্বল নিশানীসমূহ দেখেছিল তারা কখনো পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধে
লিপ্ত হতো না। কিন্তু (লোকদেরকে বলপূর্বক
মতবিরোধ থেকে বিরত রাখা আল্লাহর ইচ্ছা ছিল না, তাই)
তারা পরস্পর মতবিরোধ করলো, তারপর তাদের মধ্য থেকে কেউ
ঈমান আনলো আর কেউ কুফরীর পথ অবলম্বন করলো। হাঁ, আল্লাহ
চাইলে তারা কখ্খনো যুদ্ধে লিপ্ত হতো না, কিন্তু আল্লাহ যা চান, তাই করেন। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِمَّا
رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا
شَفَاعَةٌ ۗ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ ২৫৪) হে ঈমানদারগণ! আমি
তোমাদের যা কিছু ধন-সম্পদ দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো, সেই
দিনটি আসার আগে, যেদিন
কেনাবেচা চলবে না, বন্ধুত্ব
কাজে লাগবে না এবং কারো কোন সুপারিশও কাজে আসবে না। আর
জালেম আসলে সেই ব্যক্তি যে কুফরী নীতি অবলম্বন করে। |
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ
ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ
ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ
ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا
بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ২৫৫) আল্লাহ এমন এক
চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি
ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও
তাঁকে স্পর্শ করে না। পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে
সবই তাঁর। কে আছে
তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু
মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি
অবগত। তিনি নিজে যে জিনিসের
জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর
কর্তৃত্ব আকাশ ও
পৃথিবী ব্যাপী। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না। মূলত
তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা। |
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ
فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ২৫৬) দীনের ব্যাপারে কোন
জোর-জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক
মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এখন যে
কেউ তাগুতকে অস্বীকার
করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন
আঁকড়ে ধরে, যা কখনো
ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ (যাকে সে
অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে) সবকিছু শোনেন ও জানেন। |
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ
الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا
أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ২৫৭) যারা ঈমান আনে আল্লাহ
তাদের সাহায্যকার ও সহায়। তিনি
তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন। আর যারা
কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত। সে তাদের
আলোক থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এরা
আগুনের অধিবাসী। সেখানে থাকবে এরা চিরকালের
জন্য। |
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي
رَبِّهِ أَنْ آتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّيَ الَّذِي
يُحْيِي وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ ۖ قَالَ إِبْرَاهِيمُ فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ
فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِي كَفَرَ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ ২৫৮) তুমি সেই ব্যক্তির
অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করোনি, যে ইবরাহীমের সাথে তর্ক
করেছিল? তর্ক
করেছিল এই কথা নিয়ে যে, ইবরাহীমের
রব কে? এবং তর্ক
এ জন্য করেছিল যে, আল্লাহ
তাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছিলেন। যখন
ইবরাহীম বললোঃ যার হাতে জীবন ও মৃত্যু তিনিই আমার রব। জবাবে
সে বললোঃ জীবন ও মৃত্যু আমার হাতে। ইবরাহীম
বললোঃ তাই যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে, আল্লাহ পূর্ব দিক থেকে
সূর্য উঠান,দেখি তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উঠাও। একথা
শুনে সেই সত্য অস্বীকারকারী হতবুদ্ধি হয়ে গেলো কিন্তু আল্লাহ জালেমদের
সঠিক পথ দেখান না। |
أَوْ كَالَّذِي مَرَّ عَلَىٰ قَرْيَةٍ وَهِيَ خَاوِيَةٌ
عَلَىٰ عُرُوشِهَا قَالَ أَنَّىٰ يُحْيِي هَٰذِهِ اللَّهُ بَعْدَ مَوْتِهَا ۖ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَهُ
ۖ قَالَ كَمْ لَبِثْتَ ۖ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ ۖ قَالَ بَل لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانظُرْ إِلَىٰ
طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْ ۖ وَانظُرْ إِلَىٰ حِمَارِكَ وَلِنَجْعَلَكَ آيَةً لِّلنَّاسِ ۖ وَانظُرْ إِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنشِزُهَا ثُمَّ
نَكْسُوهَا لَحْمًا ۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ
لَهُ قَالَ أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ২৫৯) অথবা দৃষ্টান্তস্বরূপ
সেই ব্যক্তিকে দেখো যে এমন একটি লোকালয় অতিক্রম করেছিল, যার
গৃহের ছাদগুলো উপুড় হয়ে পড়েছিল। সে বললোঃ
এই ধ্বংসপ্রাপ্ত জনবসতি, একে
আল্লাহ আবার কিভাবে জীবিত করবেন? একথায়
আল্লাহ তার প্রাণ হরণ করলেন এবং সে একশো বছর পর্যন্ত মৃত পড়ে রইলো। তারপর
আল্লাহ পুনর্বার তাকে জীবন দান করলেন, এবং তাকে
জিজ্ঞেস করলেনঃ বলো, তুমি কত
বছর পড়েছিলে?জবাব দিলঃ এই, এক দিন
বা কয়েক ঘন্টা পড়েছিলাম। আল্লাহ
বললেনঃ “বরং একশোটি বছর এই অবস্থায় তোমার ওপর
দিয়ে চলে গেছে। এবার নিজের খাবার ও
পানীয়ের ওপর একবার নজর বুলাও, দেখো তার মধ্যে কোন সামান্য
পরিবর্তনও আসেনি। অন্যদিকে তোমার গাধাটিকে
দেখো(তাঁর পাঁজরগুলোও পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে)। আর এটা
আমি এ জন্য করেছি যে, মানুষের
জন্য তোমাকে আমি একটি নিদর্শন হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। তারপর
দেখো, এই
অস্থিপাঁজরটি, কিভাবে
একে উঠিয়ে এর গায়ে গোশত ও চামড়া লাগিয়ে দিই।” এভাবে
সত্য যখন তার সামনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠলো তখন সে বলে উঠলোঃ “আমি জানি, আল্লাহ
সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।” |
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ
تُحْيِي الْمَوْتَىٰ ۖ قَالَ أَوَلَمْ
تُؤْمِن ۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَٰكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي ۖ قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ
إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ
يَأْتِينَكَ سَعْيًا ۚ وَاعْلَمْ أَنَّ
اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ২৬০) আর সেই ঘটনাটিও সামনে
রাখো, যখন ইবরাহীম
বলেছিলঃ “আমার প্রভু! আমাকে দেখিয়ে দাও কিভাবে
তুমি মৃতদের পুনজীবিত করো।” বললেনঃ
তুমি কি বিশ্বাস করো না? ইবরাহীম
জবাব দিলঃ বিশ্বাস তো করি, তবে মানসিক নিশ্চিন্ততা লাভ
করতে চাই। বললেনঃ
ঠিক আছে, তুমি
চারটি পাখি নাও এবং তাদেরকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও। তারপর
তাদের এক একটি অংশ এক একটি পাহাড়ের ওপর রাখো। এরপর
তাদেরকে ডাকো। তারা তোমার কাছে দৌড়ে চলে
আসবে। ভালোবাবে জেনে রাখো, আল্লাহ
প্রবল পরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়। |
مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي
سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ
مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ
لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ
عَلِيمٌ ২৬১) যারা নিজেদের
ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের ব্যয়ের দৃষ্টান্ত
হচ্ছেঃ যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হয় এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, যার
প্রত্যেকটি শীষে থাকে একশতটি করে শস্যকণা। এভাবে
আল্লাহ যাকে চান, তার কাজে
প্রাচুর্য দান করেন। তিনি
মুক্তহস্ত ও সর্বজ্ঞ। |
الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ
اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ
عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ২৬২) যারা নিজেদের ধন-সম্পদ
আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর নিজেদের অনুগ্রহের কথা বলে বেড়ায় না আর
কাউকে কষ্টও দেয় না, তাদের
প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন দুঃখ মর্মবেদনা ও ভয় নেই। |
قَوْلٌ مَّعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِّن صَدَقَةٍ
يَتْبَعُهَا أَذًى ۗ وَاللَّهُ غَنِيٌّ
حَلِيمٌ ২৬৩) একটি মিষ্টি কথা এবং
কোন অপ্রীতিকর ব্যাপারে সামান্য উদারতা ও ক্ষমা প্রদর্শন এমনি দানের চেয়ে ভালো, যার
পেছনে আসে দুঃখ ও মর্মজ্বালা। মূলত
আল্লাহ করো মুখাপেক্ষী নন, সহনশীলতাই তাঁর গুণ। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم
بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ
صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا
ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ২৬৪) হে ঈমানদারগণ!তোমরা
অনুগ্রহের কথা বলে বেড়িয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাতকে সেই ব্যক্তির মতো
নষ্ট করে দিয়ো না যে নিছক লোক দেখাবার জন্য নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, অথচ সে
আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে না এবং পরকালেও বিশ্বাস করে না। তার
ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ একটি মসৃণ পাথরখন্ডের ওপর মাটির আস্তর জমেছিল। প্রবল
বর্ষণের ফলে সমস্ত মাটি ধুয়ে গেলো। এখন
সেখানে রয়ে গেলো শুধু পরিষ্কার পাথর খন্ডটি। এই ধরনের
লোকেরা দান – খয়রাত করে যে নেকী অর্জন
করে বলে মনে করে তার কিছুই তাদের হাতে আসে না। আর
কাফেরদের সোজা পথ দেখানো আল্লাহর নিয়ম নয়। |
وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ
مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا
وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ২৬৫) বিপরীত পক্ষে যারা
পূর্ণ মানসিক একাগ্রতা ও অবিচলতা সহকারে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের
লক্ষে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের এই ব্যয়ের দৃষ্টান্ত
হচ্ছেঃ কোন উচ্চ ভূমিতে একটি বাগান, প্রবল বৃষ্টিপাত হলে সেখানে
দ্বিগুণ ফলন হয়। আর প্রবল বৃষ্টিপাত না হলে
সামান্য হালকা বৃষ্টিপাতই তার জন্য যথেষ্ট। আর তোমরা
যা কিছু করো সবই আল্লাহর দৃষ্টি সীমার মধ্যে রয়েছে। |
أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَن تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ مِّن
نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ لَهُ فِيهَا مِن كُلِّ
الثَّمَرَاتِ وَأَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهُ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَاءُ فَأَصَابَهَا إِعْصَارٌ
فِيهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْ ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ
اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ ২৬৬) তোমাদের কেউ কি পছন্দ
করে, তার একটি
সবুজ শ্যামল বাগান থাকবে, সেখানে
ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, খেজুর, আংগুর ও
সব রকম ফলে পরিপূর্ণ থাকবে এবং বাগানটি ঠিক এমন এক সময় প্রবল উষ্ণ বায়ু প্রবাহে
জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে সে নিজে বৃদ্ধ হয়ে গেছে এবং তার সন্তানরাও তখনো
যোগ্য হয়ে উঠেনি? এভাবেই
আল্লাহ তাঁর কথা তোমাদের সামনে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা
করতে পারো। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ
مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ ۖ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ
وَلَسْتُم بِآخِذِيهِ إِلَّا أَن تُغْمِضُوا فِيهِ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ ২৬৭) হে ঈমানদারগণ! যে অর্থ
তোমরা উপার্জন করেছো এবং যা কিছু আমি জমি থেকে তোমাদের জন্য বের করে দিয়েছি, তা থেকে
উৎকৃষ্ট অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করো। তাঁর
পথে ব্যয় করার জন্য তোমরা যেন সবচেয়ে খারাপ জিনিস বাছাই করার চেষ্টা করো না অথচ
ঐ জিনিসই যদি কেউ তোমাদের দেয়, তাহলে তোমরা কখনো তা নিতে
রাযী হও না, যদি না
তা নেবার ব্যাপারে তোমরা চোখ বন্ধ করে থাকো। তোমাদের
জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ
করো মুখাপেক্ষী নন এবং তিনি সর্বোত্তম গুণে গণান্বিত। |
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم
بِالْفَحْشَاءِ ۖ وَاللَّهُ يَعِدُكُم
مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ
عَلِيمٌ ২৬৮) শয়তান তোমাদের
দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং লজ্জাকর কর্মনীতি অবলম্বন করতে প্রলুব্ধ করে কিন্তু
আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের আশ্বাস দেন। আল্লাহ
বড়ই উদারহস্ত ও মহাজ্ঞানী। |
يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا
كَثِيرًا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ ২৬৯) তিনি যাকে চান, হিকমত
দান করেন। আর যে ব্যক্তি হিকমত লাভ
করে সে আসলে বিরাট সম্পদ লাভ করেছে। এই কথা
থেকে কেবলমাত্র তারাই শিক্ষা লাভ করে যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী। |
وَمَا أَنفَقْتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُم
مِّن نَّذْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُهُ ۗ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ ২৭০) তোমরা যা কিছু ব্যয়
করেছো এবং যা মানতও করেছো আল্লাহ তা সবই জানেন। আর
জালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই। |
إِن تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ ۖ وَإِن تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ
خَيْرٌ لَّكُمْ ۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم
مِّن سَيِّئَاتِكُمْ ۗ وَاللَّهُ بِمَا
تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ২৭১) যদি তোমাদের দান-সাদ্কাগুলো
প্রকাশ্যে করো, তাহলে
তাও ভালো, তবে যদি
গোপনে অভাবীদের দাও, তাহলে
তোমাদের জন্য এটিই বেশী ভালো। এভাবে
তোমাদের অনেক গোনাহ নির্মুল হয়ে যায়। আর তোমরা
যা কিছু করে থাকো আল্লাহ অবশ্যি তা জানেন। |
لَّيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي
مَن يَشَاءُ ۗ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنفُسِكُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ
ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ
وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ ২৭২) মানুষকে হিদায়াত দান
করার দায়িত্ব তোমাদের ওপর অর্পিত হয়নি। আল্লাহ
যাকে চান তাকে হিদায়াত দান করেন। তোমরা
যে ধন-সম্পদ দান –খয়রাত করো, তা
তোমাদের নিজেদের জন্য ভালো। তোমরা
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্যই তো অর্থ ব্যয় করে থাকো। কাজেই
দান-খয়রাত করে তোমরা যা কিছু অর্থ ব্যয় করবে, তার
পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোন ক্রমেই তোমাদের প্রাপ্য থেকে
বঞ্চিত করা হবে না। |
لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ
اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ
مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُم بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا
ۗ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ
عَلِيمٌ ২৭৩) বিশেষ করে এমন সব গরীব
লোক সাহায্য লাভের অধিকারী, যারা আল্লাহর কাজে এমনভাবে
জড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে
তারা নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থোপার্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারে না এবং তাদের
আত্মমর্যাদাবোধ দেখে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে সচ্ছল বলে মনে করে। তাদের
চেহারা দেখেই তুমি তাদের ভেতরের অবস্থা জানতে পারো। মানুষের
পেছনে লেগে থেকে কিছু চাইবে, এমন লোক তারা নয়। তাদের
সাহায্যার্থে তোমরা যা কিছু অর্থ ব্যয় করবে, তা
আল্লাহর দৃষ্টির অগোচরে থাকবে না। |
الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ
وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ২৭৪) যারা নিজেদের ধন-সম্পদ
দিনরাত গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের
রবের কাছে এবং তাদের কোন ভয় ও দুঃখ নেই। |
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا
كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ
مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ
الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ
مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ
ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ২৭৫) কিন্তু যারা সুদ খায় তাদের
অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই
অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “ ব্যবসা
তো সুদেরই মতো।” অথচ
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। কাজেই যে
ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে
সে বিরত হয়, সে
ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে
সোপর্দ হয়ে গেছে। আর এই
নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে, সে
জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে
সে থাকবে চিরকাল। |
يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ
ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ ২৭৬) আল্লাহ সুদকে
নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত ও বিকশিত করেন। আর
আল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না। |
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا
خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ২৭৭) অবশ্যি যারা ঈমান আনে, সৎকাজ
করে, নামায
কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাদের প্রতিদান
নিসন্দেহে তাদের রবের কাছে আছে এবং তাদের কোন ভয় ও মর্মজ্বালাও নেই। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ
وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ২৭৮) হে ঈমানদারগণ!
আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি
যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো। |
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ
اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ
فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ ২৭৯) কিন্তু যদি তোমরা
এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। এখনো
তাওবা করে নাও (এবং সুদ ছেড়ে দাও) তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে। তোমরা
জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না। |
وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَىٰ مَيْسَرَةٍ
ۚ وَأَن تَصَدَّقُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ২৮০) তোমাদের ঋণগ্রহীতা
অভাবী হলে সচ্ছলতা লাভ করা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। আর যদি
সাদ্কা করে দাও, তাহলে
এটা তোমাদের জন্য বেশী ভালো হবে, যদি
তোমরা জানতে। |
وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ
ۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ
لَا يُظْلَمُونَ ২৮১) যেদিন তোমরা আল্লাহর
দিকে ফিরে আসবে সেদিনের অপমান ও বিপদ থেকে বাঁচো। সেখানে
প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার উপার্জিত সৎকর্মের ও অপকর্মের পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া
হবে এবং কারো ওপর কোন জুলুম করা হবে না। |
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم
بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ ۚ وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ ۚ وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَن يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ
اللَّهُ ۚ فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ
وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا ۚ فَإِن كَانَ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيهًا
أَوْ ضَعِيفًا أَوْ لَا يَسْتَطِيعُ أَن يُمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهُ بِالْعَدْلِ
ۚ وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِن رِّجَالِكُمْ ۖ فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ
مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ أَن تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا
الْأُخْرَىٰ ۚ وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَاءُ إِذَا مَا دُعُوا ۚ وَلَا تَسْأَمُوا أَن تَكْتُبُوهُ صَغِيرًا أَوْ
كَبِيرًا إِلَىٰ أَجَلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ أَقْسَطُ
عِندَ اللَّهِ وَأَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَأَدْنَىٰ أَلَّا تَرْتَابُوا ۖ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيرُونَهَا
بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَلَّا تَكْتُبُوهَا ۗ وَأَشْهِدُوا إِذَا تَبَايَعْتُمْ ۚ وَلَا يُضَارَّ كَاتِبٌ وَلَا شَهِيدٌ ۚ وَإِن تَفْعَلُوا فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّهُ ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ২৮২) হে ঈমানদাগণ! যখন কোন
নির্ধারিত সময়ের জন্য তোমরা পরস্পরে মধ্যে ঋণের লেনদেন করো তখন লিখে
রাখো উভয়
পক্ষের মধ্যে ইনসাফ সহকারে এক ব্যক্তি দলীল লিখে দেবে। আল্লাহ
যাকে লেখাপড়ার যোগ্যতা দিয়েছেন তার লিখতে অস্বীকার করা উচিত নয়। সে
লিখবে এবং লেখার বিষয়বস্তু বলে দেবে সেই ব্যক্তি যার ওপর ঋণ চাপছে (অর্থাৎ
ঋণগ্রহীতা)। তার রব আল্লাহকে ভয় করা
উচিত। যে বিষয় স্থিরীকৃত হয়েছে
তার থেকে যেন কোন কিছুর কম বেশি না করা হয়। কিন্তু
ঋণগ্রহীতা যদি বুদ্ধিহীন বা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে না পারে, তাহলে
তার অভিভাবক ইনসাফ সহকারে লেখার বিষয়বস্তু বলে দেবে। তারপর
নিজেদের পুরুষদের মধ্য থেকে দুই ব্যক্তিকে তার স্বাক্ষী
রাখো। আর যদি দু’জন পুরুষ
না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলা সাক্ষী হবে, যাতে
একজন ভুলে গেলে অন্যজন তাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। এসব
সাক্ষী এমন লোকদের মধ্য থেকে হতে হবে যাদের সাক্ষ্য তোমাদের কাছে গ্রহণীয়। সাক্ষীদেরকে
সাক্ষ দেবার জন্য বললে তারা যেন অস্বীকার না করে। ব্যাপার
ছোট হোক বা বড়,সময়সীমা
নির্ধারণ সহকারে দলীল লেখাবার ব্যাপারে তোমরা গুড়িমসি করো না। আল্লাহর
কাছে তোমাদের জন্য এই পদ্ধতি অধিকতর ন্যায়সংগত, এর সাহায্যে সাক্ষ
প্রতিষ্ঠা বেশী সহজ হয় এবং তোমাদের সন্দেহ-সংশয়ে লিপ্ত হবার সম্ভবনা কমে যায়। তবে
যেসব ব্যবসায়িক লেনদেন তোমরা পরস্পরের মধ্যে হাতে হাতে করে থাকো, সেগুলো
না লিখলে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু
ব্যবসায়িক বিষয়গুলো স্থিরীকৃত করার সময় সাক্ষী রাখো। লেখক ও
সাক্ষীকে কষ্ট দিয়ো না। এমনটি করলে গোনাহের কাজ
করবে। আল্লাহর গযব থেকে
আত্মরক্ষা করো। তিনি তোমাদের সঠিক
কর্মপদ্ধতি শিক্ষা দান করেন এবং তিনি সবকিছু জানেন। |
وَإِن كُنتُمْ عَلَىٰ سَفَرٍ وَلَمْ تَجِدُوا كَاتِبًا
فَرِهَانٌ مَّقْبُوضَةٌ ۖ فَإِنْ أَمِنَ
بَعْضُكُم بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ
رَبَّهُ ۗ وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ ۚ وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ ২৮৩) যদি তোমরা সফরে থাকো
এবং এ অবস্থায় দলীল লেখার জন্য কোন লেখক না পাও, তাহলে বন্ধক রেখে কাজ
সম্পন্ন করো। যদি
তোমাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি অন্যের ওপর ভরসা করে তার সাথে কোন কাজ কারবার করে, তাহলে
যার ওপর ভরসা করা হয়েছে সে যেন তার আমানত যথাযথরূপে আদায় করে এবং নিজের রব
আল্লাহকে ভয় করে। আর সাক্ষ কোনক্রমেই গোপন
করো না। যে
ব্যক্তি সাক্ষ গোপন করে তার হৃদয় গোনাহর সংস্পর্শে কলুষিত। আর
আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বেখবর নন। |
لِّلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ
ۗ وَإِن تُبْدُوا مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ
يُحَاسِبْكُم بِهِ اللَّهُ ۖ فَيَغْفِرُ لِمَن
يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ
كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ২৮৪) আকাশসমূহে ও
পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই
আল্লাহর। তোমরা
নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করো বা লুকিয়ে রাখো, আল্লাহ
অবশ্যি তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। তারপর
তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন, এটা তাঁর
আখতিয়ারাধীন। তিনি সব জিনিসের ওপর শক্তি
খাটাবার অধিকারী। |
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ
وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ
وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ
ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ ২৮৫) রসূল তার রবের পক্ষ
থেকে তার ওপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে। আর যেসব
লোক ঐ রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করে নিয়েছে। তারা
সবাই আল্লাহকে, তাঁর
ফেরেশতাদেরকে, তাঁর
কিতাবসমূহকে ও তাঁর রসূলদেরক মানে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ “ আমরা
আল্লাহর রসূলদের একজনকে আর একজন থেকে আলাদা করি না। আমরা
নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি। হে
প্রভু! আমরা তোমার কাছে গোনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের
তোমারই দিকে ফিরে যেতে হবে। |
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
ۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا
حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ ২৮৬) আল্লাহ কারোর ওপর তার
সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না। প্রত্যেক
ব্যক্তি যে নেকী উপার্জন করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য এবং যে গোনাহ সে অর্জন
করেছে, তার
প্রতিফলও তারই বর্তাবে। (হে ঈমানদারগণ, তোমরা
এভাবে দোয়া চাওঃ) হে আমাদের রব! ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি, তুমি
সেগুলো পাকড়াও করো না। হে
প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না, যা তুমি আমাদের
পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলে। হে
আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ আমাদের নেই, তা
আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের
প্রতি কোমল হও, আমাদের
অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমি
আমাদের অভিভাবক। কাফেরদের মোকাবিলায় তুমি
আমাদের সাহায্য করো। |
কোন মন্তব্য নেই
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।